নিজের মনে জমে থাকা কিছু কষ্টের কথা

মানুষের জীবন বড়ই অদ্ভুত। এই জীবনে কখনো দুঃখ এসে সাগরের ঢেউয়ের মতো একদম ভাসিয়ে নিয়ে যায় আর কখনও সুখ এসে তা ভুলিয়ে জীবন পরিবর্তন করে দিয়ে যায়। কিন্তু সুখের কথাগুলো তেমন মনে থাকে না কিন্তু কষ্টের কথা একদম মনের অন্তরস্থলে গেঁথে যায় আর যখন মনে পড়ে তখন খুব কষ্ট লাগে। এই পৃথিবীর মানুষ গুলো খুবই স্বার্থপর হয়ে গিয়েছে। যদি আপনি চুপ থাকেন তাহলে সবার কাছেই ভালো থাকবেন কিন্তু যখনই আপনার মুখ দিয়ে কথা বের হয়ে যাবে তখন আপনার চেয়ে খারাপ আর কেউ নয়। তাছাড়া আপনার সব কিছু থেকেও যখন না থাকে তখন নিজেকে চুপ রাখাই ভালো।

গতকাল ভেবেছিলাম সন্ধ্যার দিকে পোস্ট করবো কিন্তু মায়ের সাথে কথা বলে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় সেজন্য আর পোস্ট করা হয়নি। তারজন্য সকাল সকাল পোস্ট নিয়ে চলে এসেছি। নিজের ঘরের কথা কখনও বলতে হয়না, কিন্তু গতকাল এতটাই মায়ের কথাগুলো শুনে খুব খারাপ লাগলো তারজন্য কিছু কথা শেয়ার করতে চলে আসলাম। যখন আমার আব্বু জীবিত ছিল তখন আমার মায়ের শক্তি ছিল আর পায়ের নিচে মাটিও শক্ত ছিল। কেউ কিছু বলার সাহস ছিল না কিন্তু আজ মা খুব দুর্বল। যে কেউ যা খুশি বলে চলে যেতে পারে। অবশ্যই একটু হলেও আমিই সেই সুযোগ করে দিয়েছি।

আমি আবার কেউ কিছু বললে তা অন্যায় হলে সহ্য করতে পারিনা। সেজন্য মায়ের সাথে ভাবিদের সামনেই মাঝে মাঝে রাগারাগি করতাম আর সেই সুযোগটাই তারা নিচ্ছে। আমি মেয়ে হয়ে মায়ের সাথে রাগারাগি করতেই পারি আবার সেকেন্ডের মধ্যে ভালোও হয়ে যাবো। কিন্তু তারা বউ হয়ে কিভাবে এগুলো করে। আমার মা যেমন চেয়েছিলো তেমন বউ পেলো না এটাই আমার মায়ের সবচেয়ে বড় কষ্ট। আমার শ্বাশুড়ি যদি কখনও আমাকে কোনো বিষয় নিয়ে বকা দেয় কিন্তু সেসব কথা নিজেই হজম করে নেই। এসব কথা কখনও আমার হাজবেন্ড কে বলি না কারণ জানি বললে হয়তো এটা নিয়ে আরও ঝামেলা হতে পারে। তাছাড়া দরকার কি এসব কথা ছেলেদের বলে তাদের মন বিষিয়ে দেওয়ার।

সোর্স

কিন্তু আমার দুই ভাইয়ের বউ তা কখনো করে না। তারা পান থেকে চুন খসলেই বলে দেয়। তারা মনে করে আমার মা তাদের জন্য শত্রু। আমার বড় ভাইয়ের বউ সবার সামনে বলেনি কিন্তু যার কাছে বলেছে সে আবার এসে বললো, মা মরলেই নাকি তারা শান্তিতে থাকবে🥹। যদিও এই কথা সবাই শুনেছি কিন্তু কেউ কিছুই বলিনি আর ভাইয়াও কিছু বলেনি। আমি যদি তাদের বউদের বিরুদ্ধে কিছু বলি তাহলেই খারাপ হয়ে যাই আর সাথে মা কে ও কথা শুনতে হয়। তারা ভাবে মা আমার কাছে তাদের নামে নালিশ করেছে তাই আমি জিজ্ঞেস করছি। কিন্তু মা যে কষ্ট থেকে কথা গুলো আমাকে বলছে আর মেয়ে হয়ে সহ্য করতে না পেরে জিজ্ঞেস করছি তা বুঝতে চায় না। আজ যদি আব্বু থাকতো তাহলে হয়তো এমনটা হতো না। আমি যেমন শক্তি পেতাম তেমনি মায়ের ও তাদের কাছে মূল্য থাকতো।

আমি এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি না পারছি এদিকে যাইতে,না পারি ঐদিকে যাইতে। মা কে যে নিজের কাছে নিয়ে আসবো তা ও সম্ভব নয়। মা কখনও আসবে না। আমার ভাইয়েরা যে দেখে না তা কিন্তু নয়, আমার ভাই দু'টো খুবই ভালো কিন্তু ভাবি দু'টো তেমন ভালো হয়নি। তাদের মধ্যে কটুনামী স্বভাব রয়েছে। তারা সবসময় অন্যদের নিয়ে আলোচনা করতে আর মানুষের নামে কটু কথা বলতে বেশি পছন্দ করে। তারা যখন আমার ভাইদের কানে সবসময় মা কে নিয়ে বিভিন্ন কথা বলতে থাকে তখন তারা ভাবে হয়তো তা সত্যি। মা কে শুধু মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করে মা আপনি এসব কথা বলেন কেন,আবার কিন্ত মায়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু তারা দুই বউ সবসময় চায় মা ছেলের সম্পর্ক যেনো খারাপ থাকে।

এই যে আমি তাদের জন্য এত কিছু করি, তারপরও তারা আমাকে ছাড়ে না। সরাসরি কিছু না বললেও হাসি ঠাট্টার মাধ্যমে বলে দেয়। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি জানেন,আমি খুবই নরম মনের একজন মেয়ে যারজন্য তাদের কিছু বলতে পারি না। আমি সবসময় মনে করি কিছু বললে যদি তারা কষ্ট পায়,তাহলে নিজের কাছে খারাপ লাগবে। সেজন্য তাদের কথা গুলো শুনে চুপ থাকার চেষ্টা করি।এরজন্য অবশ্য হাজবেন্ড এর কাছে বকা খেতে হয়,সে বলে তুমি এত ভালো কেন? তোমায় সবাই নানা কথা বলে চলে যায় আর তুমি কিছু বলো না। আমি তো সহ্য করতে পারি না আর আমি জামাই মানুষ কিছু বললে তো দোষ হয়ে যাবে। তারজন্য চুপ করে বসে থাকি। কিন্তু কতদিন এভাবে থাকবো। আজ সত্যিই নিজেকে খুব অসহায় লাগে আর মায়ের কথা চিন্তা করি।

প্রতিটা পরিবারেই এই সমস্যা গুলো রয়েছে। কিন্তু কেন এই সমস্যা থাকে বুঝি না,কেন তারা শ্বাশুড়ি কে মা আর শ্বাশুড়ি বউ কে মেয়ের মতো দেখে না বুঝি না। তাহলে প্রতিটা সংসার সুখী হতো। অনেক ছেলেরা রয়েছে কি করবে বুঝতে না পেরে বউ নিয়ে আলাদা থাকে। একটি ছেলের কাছে মা যেমন গুরুত্বপূর্ণ পূর্ণ তেমনি বউ ও গুরুত্বপূর্ণ। একটি সংসারে দু'জন মানুষের অবদান রয়েছে। নিজের মনে জমে থাকা কিছু কষ্টের কথা শেয়ার করে যেনো মনটা একটু হালকা লাগছে। যাই হোক নিজের ভিতরের আর পরিবারকে নিয়ে অনেক কথা বলেছি আজ আর নয় আবার দেখা হবে নতুন কোনো পোস্টের মাধ্যমে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং নিরাপদে থাকবেন।

আমি ছবি আঁকতে, পড়তে, লিখতে ফটোগ্রাফি, রেসিপি এবং ডাই বানাতে খুব পছন্দ করি। আবার আমি ভ্রমণ বা ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে খুব পছন্দ করি। আমি চেষ্টা করি সব সময় যেন নতুন কোনো কিছু করা যায়।