অনুগল্প || এক কাপ চা

in আমার বাংলা ব্লগ11 days ago

মার বাংলা ব্লগের সকল বাংলাভাষী সদস্যগনকে জানাই আমার সালাম। সবাই কেমন আছেন? আশা করি মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে সবাই অনেক ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়ায় অনেক ভালো আছি। সবাইকে আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমার আজকের ব্লগ।


আজকে আবারও প্রতিদিনের মতো নতুন একটি গল্প নিয়ে চলে এসেছি। গল্প লিখতে ও পড়তে আমি খুব পছন্দ করি। একটা সময় প্রচুর গল্প ও উপন্যাসের বই পড়া হতো। কিন্তু বর্তমানে সেই সুযোগ ও সময় কোনোটাই হয়ে ওঠে না। আমি যখন গল্প পড়া শুরু করি তখন নিজেকে কল্পনায় সেই জায়গায় নিয়ে যাই। তখন যেনো মনে হয় এই ঘটনা গুলো আমার সাথে ঘটছে। সেই জায়গায় নিজেকে রেখে কল্পনা করতে খুব ভালো লাগে। নিজেকে সেই গল্পের নায়িকা বানিয়ে কল্পনা করতে আরও বেশি ভালো লাগে। তখন যেনো মনে হয় নিজেকে ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করেছি সবার মাঝে। যাই হোক তাহলে চলুন শুরু করি ----


শীতকাল চলছে আর সেই বছর প্রচন্ড শীত ছিল। এতটাই বেশি ছিল মনে হচ্ছিল তুষার ঝড় শুরু হবে কিন্তু না বাংলাদেশের মতো দেশে তুষার ঝড় হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে প্রচন্ড ঠান্ডা ছিল আর এমন ঠান্ডার মধ্যে ভোরবেলা পাড়ার দোকানে বসে চা খেতে খুব ভালো লাগে। আবির শুয়ে শুয়ে সেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করে আর তখনই তার মা এসে ডাকা শুরু করে। আবির ঘুম থেকে উঠে দেখে বেশি সকাল হয়নি মাত্র ৮টা বাজে। তখন সে চাদড় মুড়ি দিয়ে পাড়ার দোকানে গরম চা খেতে চলে গেলো। এদিকে তার মা নাস্তা করার জন্য পিছনে ডাকছে কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল নেই।


retiree-7390179_1280.jpg


সোর্স


এরপর আবিরের পরিচিত পাড়ার এক চাচার দোকানে চা খেতে বসলো। চাচার হাতে জাদু রয়েছে,ওনার চা যে খাবে সেই প্রশংসা করবে। এমনেতেই শীতের সকাল তার মধ্যে আবার মাত্র ৮ টা বাজে, যারজন্য রাস্তায় মানুষের আনাগোনা খুবই কম আর থাকবেই বা কিভাবে রোদের কোনো দেখা নেই তারমধ্যে বেশ কিছু দিন ধরে প্রচন্ড ঠান্ডা পড়েছে। আবির চা খেতে খেতে কুয়াশা ঘেরা রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে। এমন সময় দেখতে পায় একটি মেয়ে বউ সেজে এদিকে হেঁটে আসছে। আবির অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে এই সাঁঝ সকাল বেলা আকাশ থেকে একটি পরী নেমে এসেছে বুঝি।


মেয়েটি শীতে কাঁপতে কাঁপতে আবিরের পাশেই বেঞ্চের মধ্যে বসলো। আবির লক্ষ্য করলো মেয়েটির গায়ে কোনো ধরনের চাদর নেই আর সেজন্য আবির নিজের চাদর খুলে মেয়েটিকে দেয়। এরপর চাচাকে এক কাপ চা দিতে বলে। মেয়েটি চা খেয়ে যেনো একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। এরপর আবির জিজ্ঞেস করলো আপনার নাম কি,বাড়ি কোথায় আর এভাবে বউ সেজে আছেন কেন? এরপর মেয়েটির কথা শুনে আবির অবাক হয়ে যায়। আমার নাম অন্তরা,বেশ কিছুদিন দিন আগে, কিছু ছেলে আমাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে আসে। তারা জানতো আমার বাবার অনেক টাকা-পয়সা রয়েছে আর আমি বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। আমাকে কিডন্যাপ করলে অনেক টাকা পাবে।


এরপর এক কাপ চা খেতে খেতে আবির অন্তরার কাছে থেকে তার জীবনে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারে। অন্তরার বাবা তাদের কথা মতো সব টাকা পয়সা, সম্পত্তিসহ সব কিছু নিয়ে তাদের কাছে যায়। প্রথমে অন্তরাকে ফেরত দেবার আশ্বাস দেয় ঠিকই, কিন্তু যখন অন্তরা ফিরে যাবে তখন সেই লোকগুলো অন্তরার বাবা-মা কে মেরে ফেলে। অন্তরা এটা দেখে অজ্ঞান হয়ে যায়। এরপর সেখানেই একটি ছেলে অন্তরাকে পছন্দ করে বসে আর বলে বিয়ে করবে। তারপর জোর করে তাকে বউ সাজানো হয়। তারপর অন্তরা চিন্তা করে এখান থেকে যেভাবেই হোক বের হতে হবে। এরপর অবশেষে একটু সুযোগ পেলো আর সোজা এদিকে চলে আসে। কথা শেষ হতে না হতেই অন্তরা হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। তখন আবির অন্তরার মাথায় হাত দিতেই অন্তরা আবিরকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে।


এরপর আবির অন্তরা কে তার বাসায় নিয়ে যায় আর বাড়ির সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। এরপর পরিবারের সবাই চিন্তা করে মেয়েটিও দেখতে খুব সুন্দর আর তার যেহেতু কেউ নেই, এদিকেও আবিরের বিয়ের বয়স হয়েছে তাহলে তাদের বিয়ে দিয়ে দেই। এরপর অন্তরার সাথে আবিরের বিয়ে হয়ে যায় আর তারা সুখে শান্তিতে সংসার করতে থাকে। একদিন শীতের সকাল বেলা বয়স্ক আবির ও অন্তরা বারান্দায় বসে এক কাপ চা খেতে খেতে তাদের সেই সুন্দর মুহূর্তের কথা কল্পনা করে। কত সুন্দর ছিল সেই দিন গুলো। এখন সবকিছুই স্মৃতির পাতায় জমা হয়ে গিয়েছে। যাই হোক আমার গল্প এখানেই শেষ করলাম। এতক্ষণ যে গল্প পড়েছেন সম্পূর্ণটাই ছিল আবির আর অন্তরার কল্পনা। তারা দু'জন বৃদ্ধ বয়সে এসে শীতের সকালে একসাথে চা পান করতে গিয়ে সেই পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। আশা করি তাদের দু'জনের এই গল্প পড়ে আপনাদের কাছেও ভালো লাগবে। আজ এই পর্যন্তই আবার দেখা হবে নতুন কোনো পোস্টের মাধ্যমে।


এতক্ষণ সময় নিয়ে আমার পোস্ট পড়ার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

IMG_20220215_193615.png



1693314960932.jpg

আমি তানজিমা। আমি একজন বাংলাদেশী। আমার মাতৃভাষা বাংলা বলে আমি নিজেকে নিয়ে অনেক গর্ববোধ করি। আমি ফিন্যান্স বিভাগ থেকে বিবিএ শেষ করেছি।

আমি ছবি আঁকতে, পড়তে, লিখতে ফটোগ্রাফি, রেসিপি এবং ডাই বানাতে খুব পছন্দ করি। আবার আমি ভ্রমণ বা ঘুরাঘুরি করতে খুব পছন্দ করি। এছাড়াও আমি বিভিন্ন ধরনের রেসিপি তৈরি করতে খুব পছন্দ করি। আমি চেষ্টা করি সব সময় যেন নতুন কোনো কিছু করা যায়।



C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNpz9QdwayY5Yi9CLY9MtT8LrEqRdgJNMVyDhfNXBpAU4Pibi529MgNWfUK56xyKKaicF23jVAW.png


C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ (1).png


PB8ro82ZpZP35bVGjGoE93K3E4U5KX8KtMBJ2rhmkyLqtRRZvVw9YH8hEBg7DJQKSJLWf7VJRhnjGRYSDmuGDMSHAPBRbiRis5HV4ATHTF7QvLHc.png

2r8F9rTBenJQfQgENfxADE6EVYabczqmSF5KeWefV5WL9WP87ckB6VoL3UD42BtkosJzLXYjuCC4ws3sxuihZ3nhDfd815qMJiiETpWAiutfN7bjurhaBbivMFVTYEDiv.png

|| আমার বাংলা ব্লগ-শুরু করো বাংলা দিয়ে ||

PB8ro82ZpZP35bVGjGoE93K3E4U5KX8KtMBJ2rhmkyLqtRRZvVw9YH8hEBg7DJQKSJLWf7VJRhnjGRYSDmuGDMSHAPBRbiRis5HV4ATHTF7QvLHc.png

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9ms6NJyqDC7SoahBpoJnjzoXmRuaVTHyxffJTSjt3HCAJgZmTWQYSXVqA6yXF9TSJcoosKhzkudZxYGzUmXmso6pY5QuuDF.gif

>>>>>|| এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য ||<<<<<

PB8ro82ZpZP35bVGjGoE93K3E4U5KX8KtMBJ2rhmkyLqtRRZvVw9YH8hEBg7DJQKSJLWf7VJRhnjGRYSDmuGDMSHAPBRbiRis5HV4ATHTF7QvLHc.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP


RGgukq5E6HBM2jscGd4Sszpv94XxHH2uqxMY9z21vaqHt1rDaeRdtDvsXGmDbuRg1s1soomTEddbTFxfMMYzob4oRFK8fTZQyYP8LbQ4tbMTAd2enV3Wq9Ze3N8TTU2.png

|| Join Heroism Discord Server for more Details ||

Sort:  
 10 days ago 

আপনার গল্পটা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। আসলে আপু আমাদের সমাজে এখনো অনেক ভালো মানুষ রয়েছে। যেমন অন্তরাকে আবির বিয়ে করলো।আবার খারাপ মানুষ ও অনেক রয়েছে। তবে জেনে অনেক ভালো লাগলো যে অন্তরা এখন আবিরের সাথে বেশ সুখে আছে। ধন্যবাদ আপু সুন্দর লিখেছেন।

 8 days ago 

হ্যাঁ আপু ভালো মানুষ রয়েছে বলেই এখনো দুনিয়া টিকে রয়েছে। ধন্যবাদ আপু সুন্দর মতামতের জন্য।

 10 days ago (edited)

আবির এবং অন্তরার শীতের সকালের এক কাপ চা খাওয়ার সময় তাদের কল্পনা করা কথা গুলো সম্পূর্ণ পড়ে অনেক ভালো লাগলো। অন্তরার জীবনের এরকম দুঃখের একটা মুহূর্তের কথা শুনে অনেক খারাপ লেগেছে। তবে ঐ লোকগুলোর কাছ থেকে সে বেঁচে আসতে পেরেছে এটাই ভালো লাগলো জেনে। কিন্তু তার বাবার মৃত্যুর কথাটা অনেক খারাপ লেগেছে। যাই হোক আবিরের সাথে দেখা হওয়ার পর তাদের দুজনের বিয়ে হয় আর সুখের সংসার করার বিষয়টা ভালো লেগেছে। অনেক সুন্দর করে লিখেছেন আপনি এই ছোট্ট গল্পটা।

 8 days ago 

জীবনে দুঃসময় যেমন আসে তেমনি সুসময় ও আসে। অন্তরা আবির কে পেয়ে সুখে দিন কাটাতে থাকে। আপনার সুন্দর মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

 10 days ago 

মেয়েটির ভাগ্য ভালো যে সে ঐজায়গা থেকে পালিয়ে এসে আবিরের মত একটা ছেলের কাছে এসে পড়েছে। অন্তরার এই দুঃখের কাহিনী শুনলে যে কারো মন নরম হবার কথা। যাক দুজনের বিয়ে হওয়ার পর অনেক বছর পার হয়েছে দেখে ভালো লাগলো। গল্পটি খুব সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন। ধন্যবাদ আপু।

 8 days ago 

অন্তরার ভাগ্য ভালো ছিল বলে আবিরের মতো ছেলের দেখা পেয়েছে। ধন্যবাদ।

 10 days ago 

মেয়েটা তার এরকম দুঃসময়ে আবির কে পাশে পেয়েছে এটা দেখে অনেক ভালো লাগলো। তবে মেয়েটার বাবার মৃত্যুর খবরটা অনেক খারাপ লেগেছে। তবে মেয়েটা সুস্থভাবে ওই কিডন্যাপারদের কাছ থেকে পালিয়ে আসতে পেরেছে এটা অনেক ভালো লাগলো। আর আবিরের সাথে দেখা হওয়াতে আস্তে আস্তে সব কিছুই বলেছে সে নিজের সম্পর্কে। পরবর্তীতে আবার তাদের দুজনের বিয়ে হয়েছে, আর দুজনে এখন ভালো আছে এটা অনেক ভালো লেগেছে শেষে পড়ে। তারা দেখছি চা খাওয়ার সময় এই বিষয়গুলো কল্পনা করছিল। সুন্দর হয়েছে পুরো গল্পটা।

 8 days ago 

দুঃসময়ে যারা পাশে থাকে তারাই প্রকৃত বন্ধু। আপনার কাছে এই গল্প ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। ধন্যবাদ।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 63595.77
ETH 3415.98
USDT 1.00
SBD 2.49