জীবন, মৃত্যু ও পরকাল - পর্বঃ ৩

in আমার বাংলা ব্লগlast year (edited)

আসসালামুআলাইকুম

বন্ধুরা, সবাই কেমন আছেন ? আশা করি ভালই আছেন, আমিও আলহামদুল্লিাহ ভাল আছি। জীবন, মৃত্যু ও পরকাল নিয়ে ৩য় পর্বে হাজির হয়ে গেলাম।আজকের পর্বে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে আমাদের যে অবস্থা হয় সে বিষয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে আর মনটাও অনেক নরম হবে।চলুন চলে যাওয়া যাক তাহলে মূল পর্বে।

C513F2C4-E36C-42D9-92E5-6730FE907363.jpeg

Image source

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন “প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে”।অর্থাৎ যে যখন যেভাবেই মৃত্যুবরণ করুক না কেন মৃত্যুর স্বাদ তাকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। কোন প্রাণীই এ থেকে বাদ পড়বে না। অনেকেই ঘুমের মধ্যে মারা যায়। আমরা মনে করি তার খুব ভালো মৃত্যু হয়েছে, সে কোন কষ্ট পায়নি।কিন্তু বিষয়টি এমন নয়। অবশ্যই মৃত্যুর যন্ত্রণা তাঁকেও ভোগ করতে হয়েছে। কিন্তু তার কম ও বেশি রয়েছে। কারও কারও ক্ষেত্রে খুব বেশি কষ্ট হয় এবং কারও কারও ক্ষেত্রে একটু কম কষ্ট হয়, কিন্তু কষ্ট সবারই হবে। মৃত্যুর ঠিক পূর্ব মুহূর্তে শয়তান তার দলবল নিয়ে আসে আমাদের ঈমান হরণ করার উদ্দেশ্যে।যে ঈমানদার, সব সময় ভালো কাজ করে এবং আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলে শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারে না।তার ঈমান নষ্ট করতে পারে না ।কিন্তু যে খারাপ কাজ করেছে ঈমান আনেনি, সে শয়তানের প্রলোভনে পড়ে সহজেই তার ঈমান নষ্ট করে ফেলে,ফলে তাকে ঈমানহারা হয়ে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়।

মৃত্যুর সময় প্রতিটি মানুষের কাছেই শয়তান আসে তার ঈমান নিয়ে যাওয়ার জন্য। কারণ শয়তানের উদ্দেশ্যই হচ্ছে সে যেন কোনোভাবেই জান্নাতে যেতে না পারে।কিন্তু সেই ব্যক্তি যদি সব সময় ভাল কাজ করে এবং সঠিক পথে চলে এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস ও ঈমান থাকে তাহলে তার কোনো ভয় নেই।আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। এ সময়ে মালাকুল মউত অর্থাৎ যে জান কবজ করে জান্নাত থেকে জান্নাতি রুমাল নিয়ে 500 ফেরেশতার সাথে মৃত ব্যক্তির কাছে আসে।এসে বলে হে প্রশান্ত আত্মা বের হয়ে এসো, বের হয়ে এসো চির কল্যাণের জন্য যা কুরআনে বলা হয়েছে। তখন ফেরেশতারা রুহ বা আত্মা খুব ধীরে বের করে নিয়ে আসে। এ সময় যদিও তার কষ্ট হয় কিন্তু ওই সময় তাঁর সামনে জান্নাত তুলে ধরা হয় আর বলা হয় এইখানে তোমার স্থান হবে।সে তখন এত খুশি হয়ে যায় যে তখন তার কষ্টতা এতটা বুঝতে পারে না। এ কারণে কোন কোন মানুষের মৃত্যুর পর মুখটি উজ্জ্বল লাগে দেখতে। এরপর ফেরেশতারা তার রুহটিকে জান্নাতি রুমাল দিয়ে প্যাঁচিয়ে ঊর্ধ্ব আকাশে ইল্লিয়িন এ নিয়ে যায় তার নামটি রেজিস্ট্রেশন করার জন্য। ভালো মানুষের আত্মা থাকে ইল্লিয়িন এ এবং খারাপ মানুষের আত্মা থাকে সিজ্জিল এ যা কুরআনে বলা হয়েছে।

আর যে ব্যক্তি খারাপ ঈমান আনেনি, তার অবস্থা মৃত্যুর সময় হয় খুবই ভয়ানক। শয়তান যখন তাকে ঈমানহারা করে দিয়ে চলে যায় তখন মালাকুল মউত আসে। মালাকুল মউত তখন বলে হে পাপিষ্ঠ আত্মা বের হয়ে আয় শাস্তি ভোগের জন্য।যখন রুহ বের করে নিয়ে আসতে চায় তখন রুহ সহজেই বেরিয়ে আসতে চায়না। দেহের এক পাশ থেকে অন্য পাশে ছোটাছুটি করে,আঁকড়ে ধরে বসে থাকে তার দেহের সাথে।তখন ৫০০ ফেরেশতা তাকে চাপ দিয়ে ধরে। আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন এ সময় মৃত ব্যক্তির অবস্থা এমন হয় যে একটি জীবিত পশুকে উল্টা ভাবে তার দেহের ছাল টেনে বের করলে যেমন লাগে মৃত ব্যক্তির অবস্থা ঠিক তেমনই হয়।তাহলে চিন্তা করে দেখুন কত ভয়ানক অবস্থা। আপনাদের একটি ঘটনা বলি।হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকে খ্রীস্টানরা বলে জেসাস তিনি আল্লাহর আদেশে মৃত মানুষকে জীবিত করতে পারতেন। এটা আমরা বিশ্বাস করি, এমনকি খ্রিস্টানরাও বিশ্বাস করে। তিনি কবর থেকে মানুষকে জীবিত করতে পারতেন। একবার একজন বলেছিলেন আপনিতো নতুন নতুন কবরের মানুষকে জীবিত করেন। বহু বছরের পুরানো ওই কবরে মানুষটিকে জীবিত করে দেখান তো। তখন নবী ওই মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করেন, তিনি ছিলেন হযরত নূহ (আঃ) এর ছেলে শাম। তখন তাকে বলা হয়েছিল আপনাকে যদি আবার এই পৃথিবীতে থাকতে দেওয়া হয় তাহলে কি আপনি থাকবেন? তখন তিনি বলেছিলেন আমার আত্মা কি আবার মালাকুল মউত বের করে নিবে? তখন নবী বলেন হ্যাঁ।তখন তিনি বলেন না, আমার দরকার নেই কবরের জীবনই আমার জন্য উত্তম। তখন শামকে বলা হয়েছিল আপনি মালাকুল মউত কে কেন এতো ভয় পান? তখন তিনি বলেছিলেন আপনার তো মৃত্যু হয়নি তাই আপনি বুঝতে পারছেন না , মৃত্যু যখন হবে তখন বুঝবেন। কত ভয়ানক অবস্থা! আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে মাফ করে দেন, ঈমানের সাথে যেন আমরা সবাই মৃত্যুবরণ করতে পারি।

বন্ধুরা এটিই ছিল আমার আজকের আয়োজন। আমার এই ক্ষুদ্র জ্ঞানের পরিসর থেকে এতোটুকুই আলোচনা করলাম।আশা করি আপনাদের ভাল লেগেছে। পরবর্তীতে নতুন কিছু নিয়ে হাজির হব।

ধন্যবাদ,

@tangera

1927F0BC-A81B-459C-A2F6-B603E4B2106C.png


👉 আমাদের discord চ্যানেল এ JOIN করুন :

👉 আমাদের discord চ্যানেল এ JOIN করুন :

VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png

Sort:  
 last year 

আপু আজ পযন্ত তিন টি পর্ব ৷ আপনার লেখা গুলোর মাঝে রয়েছে সত্যি কারের কথা গুলো ৷
নিয়তির নিয়ম জন্ম,বিবাহ মৃত্যু সবাই ঈশ্বরে কাছে৷ তবে জন্ম যখন নিয়েছি মৃত্যুর স্বাদ পেতেই হবে ৷ কেউ আগে কিংবা পড়ে৷ এই দুনিয়া কেউ চিরস্থায়ী নয় ৷

আপনি বলেছেন যে কারো সহজে কারো কষ্ট ৷
তবে আমার কথা হচ্ছে মৃত্যু টা সহজ হলেও কিন্তু অনেক কঠিন আর যন্ত্রণার৷ আমার ধর্ম মতে বলে যেদিন যে ব্যাক্তির আয়ু কাল শেষ ৷ সেদিন যমদূত এসে বুকে ভর করে জীবন নামক আত্মা কে নিতে আসে ৷

তবে অনেক অসুস্থতার পর মৃত্যু আবার কেউ হুট করে মৃত্যু ৷ তাহলে আমরা ভাববো যে ভালো কাজ করেছে তার কষ্ট কম৷ আমি বলবো মৃত্যুর মতো যন্ত্রণা কিছুই নেই ৷
ভালো মন্দের বিচার হবে মৃত্যুর পর ৷ যদি ভালো সৎ সততা কাজ যে স্বর্গে এবং স্বয়ং ঈশ্বরের নিকট স্থান পাবে ৷ যে অসৎ সে নরগ ভয়ংকর যন্ত্রণা৷

আগের পর্বে বলেছিলাম যে প্রত্যেক ধর্মের লেখা কথা গুলো বা বানী গুলো একদম যথার্থ ৷

 last year 

মৃত্যু আমাদের যেমন চিরন্তন সত্য তেমনি মৃত্যু অনেক ভয়ঙ্কর। আসলে যে প্রাণী একবার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে সে আর কিছুতেই সেই মৃত্যুর ভয়ঙ্কর স্বাদ গ্রহণ করতে চায় না। আপু আপনার লেখাগুলো পড়ে সত্যিই ভীষণ ভালো লাগলো। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো তুলে ধরেছেন আপু। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু।

 last year 

আপু ভাল আছেন আশাকরি। আপনার পোস্টটি পড়লাম। পড়ে কেমন যেন হয়ে গেলাম।ভাবছি আমরা দুনিয়ার মিথ্যে মায়ায় বসবাস করছি।একথাগুলো আমরা কম বেশি সবাই জানি। কিন্তু দুনিয়ার মায়ায় সবাই একথা গুলো ভুলতে বসেছি। এ কথাগুলো চর্চা হওয়া দরকার প্রতিটি পরিবারে। তবে মন নরম হয়ে সবাই আল্লাহর পথে ফিরে আসবে। অনেক ভাল লাগলো আপু। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 last year 

কথা গুলো পড়ে শরীরের পশমগুলো দাড়িয়ে গিয়েছে,এগুলা আমরা সকলেই কম বেশি জানি কিন্তু সমস্যা শয়তানের প্রলোভনে পরে তা কতটুকুই বা মানতে পারি।আসলে আমরা আমাদের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।আসলে আমরা দুনিয়ায় চাকচিক্য এতটাই জরিয়ে গিয়েছি যে আমরা পরকালের সুখ শান্তির কথা চিন্তা করি না।যাই হোক আল্লাহ আমাদের সকলকেই সুন্দর মৃত্যু দান করুক ঈমানের সাথে যেন পৃথিবী থেকে সবাই বিদায় হতে পারি, ভালো কাজ করতে পারি যেন সবসময়ই। আমিন।

 last year 

তিনি বলেছিলেন আপনার তো মৃত্যু হয়নি তাই আপনি বুঝতে পারছেন না , মৃত্যু যখন হবে তখন বুঝবেন।

আমাদের সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।যখন জান কবজ করা হবে কতটা কষ্ট হবে আমি সেটাই চিন্তা করছি।

কেউ মৃত্যুবরণ করার পরে যদি তার চেহারাটা অনেক উজ্জ্বল হত বা হাসিখুশি মত থাকতো তাহলে মুরব্বিরা বলতো এই ব্যক্তি একদম নিষ্পাপ এজন্য তার মৃত্যুর পরে তার চেহারা দিয়ে নূরের আলো ঝরছে।

 last year 

আপনার পোস্ট পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। প্রত্যেক জীবকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আসলে আমরা কখনো ভাবি না মৃত্যুর কথা, যদি ভাবতাম তাহলে হয়তো কখনো শয়তানের ধোকায় পরতাম না। দুনিয়ায় সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে পরকালের কথা মনে হয় না। তবে যাইহোক আমাদের সব সময় মৃত্যুর কথা স্মরণ করে চলতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ঈমানের সাথে চলার তৌফিক দান করুন।

 last year (edited)

গতদিনের পর্বটি আমি পড়েছিলাম। ঠিক তেমনভাবে আজকে পড়ার চেষ্টা করলাম আপনার এই সুন্দর পোস্ট। আপনার এই পোস্টগুলো যতই পড়ি ততই জানো নিজের মধ্যে নতুন কোন দৃষ্টিভঙ্গি জাগ্রত হয়। কিছু কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো নিজেদের বিবেকে আঘাত লেগে, নিজের বিবেককে জাগ্রত করে দেয় এবং সঠিক পথ দেখায়। আপনার এই পোষ্টের মধ্যে ঠিক তেমনি অনেক দিক রয়েছে। এত সুন্দর পোস্ট আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।

 last year 

জীবন মৃত্যু ও পরকাল এর তিন নম্বর পর্ব টাও পড়ে আমার কাছে বেশ ভালো লাগলো ‌‌। আসলে এর মধ্যে থেকে অনেকগুলো কথায় আমি আগে থেকেই শুনেছি ‌‌। আবার অনেকগুলো কথায় আমি আজকে প্রথম জানতে পারলাম। তবে এসব বিষয় নিয়ে যখন আরো পড়াশোনা করি বা কোথাও কথাগুলো শুনি তখন আবার নিজের বিবেক জাগ্রত হয়ে যায়। ধন্যবাদ আপু আপনাকে এই সুন্দর পোস্ট হচ্ছে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 63595.77
ETH 3415.98
USDT 1.00
SBD 2.49