বেদনার বছর ২০২৩ এর বিদায়
বন্ধুরা, সবাই কেমন আছেন ? আশা করি ভালোই আছেন, আমিও আলহামদুল্লিাহ ভাল আছি।
প্রথমে সবাইকে জানাচ্ছি নতুন বছরে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। হ্যাঁ বন্ধুরা গতকাল কমিউনিটির সকলেই আমরা হ্যাংআউট এ ধুমধামের সাথে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছি। সকলেই খুব ইনজয় করেছিলাম হ্যাংআউট অনুষ্ঠানটি।চলে গেল ২০২৩, হয়ে গেল সকলের কাছে আজ অতীত।
আমার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের বছরটি ছিল ২০২৩ ।কারণ এ বছর আমি আমার প্রিয় বাবাকে হারিয়েছি। ২০২৩ এর ফেব্রুয়ারির ২ তারিখ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরে বাবা আমাদেরকে ছেড়ে চিরতরে চলে যান। বাবার এই মৃত্যুর খবর আমি সর্বপ্রথম আমাদের এই ডিসকর্ড চ্যানেল থেকেই পেয়েছিলাম।সিয়াম যখন মডারেশন প্যানেলে একটি মেসেজ করেছিল সেখান থেকেই আমি আমার বাবার মৃত্যুর খবর প্রথম জানতে পারি।খবরটি জেনে আমার তখন কেমন অনুভূতি হয়েছিল তা ভাষায় বোঝানো সম্ভব নয়। আপন মানুষ গুলোর মৃত্যুর সংবাদ প্রবাস থেকে যদি পাওয়া যায় তাহলে খুবই কষ্ট হয়।আর তখন যদি হয় নিজের বাবার মৃত্যুর সংবাদ! তাহলে চিন্তা করে দেখুন অবস্থা কেমন হয়? ওই সময় মৃত্যুর সংবাদটি শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছিলাম না।তখন হাজবেন্ড বাসায় ছিল। সে আমাকে শান্ত করেছে। এখনও সিয়ামের ওই মেসেজটি যখন আমার মনে পড়ে তখনই বুকটি ফেটে যায় কষ্টে। এ কথা ভাবলেই কষ্ট হয় বাবাকে আর আব্বু বলে ডাকতে পারব না।বাংলাদেশে গেলে আর বাবাকে দেখতে পারব না।
বাবার হঠাৎ করে স্ট্রক হয়েছিল কয়েক বছর আগ।এরপর ডক্টরের কাছে গিয়ে বিভিন্ন চেকআপ করানো হয়। সিটি স্ক্যান করানো হয়। তখন সিটিস্ক্যান এ ধরা পড়ে তার ব্রেইন শুকিয়ে গিয়েছে। যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন এভাবে অবনতি হতে থাকবে। এর কোন চিকিৎসা নেই। ধীরে ধীরে বাবার কথা বলা কমে গেল।খুবই কম কথা বলতেন এবং ডক্টররা খুবই পাওয়ারফুল ওষুধ দিল। এমন ওষুধ দিল অলটাইম শুধু ঘুমিয়েই থাকতো চোখ খুলতেই পারতো না। বেশিরভাগ সময়ই ঘুমিয়ে থাকত।মাঝে মাঝে উঠত, কিন্তু তখন আর কথা বলতে পারতো না। কিছু কিছু কথা বাসার সবাই বুঝতে পারতো এবং কিছু কথা মোটেও বুঝতে পারত না।তখন শুধু বাবার দুচোখ দিয়ে পানি ঝরঝর করে পড়তো।একজন মানুষ যদি তার কথা অন্যকে বোঝাতে না পারে তাহলে তার মতো কষ্ট মনে হয় না দুনিয়ায় আর কারও হয়। যাইহোক এ কথাগুলো বললে কষ্ট শুধু বেড়েই যায়।
অনেক স্মৃতি রয়েছে বাবার সাথে। ছোটবেলায় বাবা যখন যেখানে যেতেন তখনই তার সাথে পিছু নিতাম যাওয়ার জন্য। বিশেষ করে বাবা প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ছুটির দিনে গ্রামের বাড়িতে যেতেন। তখন আগে থেকেই বায়না করে রাখতাম আমাকে নিতেই হবে।বাবা কখনো না করতেন না।সাথে করে নিয়ে যেতেন। আমি আমার বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। তাই আমার প্রতি আমার বাবার একটি অন্যরকম টান ছিল সব সময়।আর আমারও বাবার প্রতি খুব বেশি টান ছিল।বাবা ও মায়ের একটু রাগারাগি হলে আমি সব সময় বাবার পক্ষে যেতাম। ছোটবেলায় বাবা ছাড়া কিছুই বুঝতাম না।বাবা যদি কখনও কোন কাজে বাইরে যেত, আসতে রাত হয়ে যেত তখন টেনশনে অস্থির হয়ে পড়তাম কখন আসবে বাসায়? আমাদের ভাই বোনের পরীক্ষার সময় আব্বু খুবই চিন্তিত থাকতেন আমাদের পরীক্ষা নিয়ে। ঘন্টার পর ঘন্টা আব্বু পড়াতে থাকতেন আমাদেরকে।খাওয়ার কথা ভুলে যেতেন।আব্বু আমাদেরকে সব জায়গায় সাথে করে নিয়ে যেতেন।হাঁট, বাজার, মেলা সব জায়গায় আব্বুর সাথে গিয়েছি।অনেক স্মৃতি রয়েছে যা একদিনে বলে শেষ করা যাবেনা। সবচেয়ে বেশি ইনজয় করতাম ছোটবেলায় বাবার কাছ থেকে তাঁর ছোটবেলার গল্প শুনতে।এছাড়া ভূতের গল্প সহ আরও অনেক মজার মজার গল্প প্রতিদিন রাতে বাবার কাছ থেকে শুনতাম। আসলে আমার জীবনে আমার বাবার মত এত শান্ত, নরম, সৎ মানুষ খুব কম দেখেছি।খুবই নরম প্রকৃতির মানুষ ছিলেন আমার বাবা।
এরপর আমার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর অনেকটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়।সবাইকে ফেলে চলে আসি লন্ডনে। তারপরও প্রতিদিন যোগাযোগ রেখেছি।এরপর এখানে আসার পরও ৫/৬ বার গিয়েছি বাংলাদেশে। বাবা অসুস্থ হওয়ার কারণে পরাপর দু বছর বাংলাদেশে যাই। প্রতিবার লন্ডন থেকে বাংলাদেশে যাওয়ার পর বাবা আমাকে দেখে কত খুশি হয়েছেন। এরপর আবার যখন যাব তখন আর বাবাকে দেখতে পাব না! একথা মনে পড়লেই কষ্টে বুকটা ফেঁটে যায়।
যাইহোক সবাইকেই একদিন এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে, এটাই চিরন্তন সত্য।এভাবেই একটি একটি করে বছর ফুরিয়ে যাবে, আর আমাদেরও যাওয়ার সময় হয়ে যাবে।এ কথা ভাবলেই আসলে খুব কষ্ট হয়।যাইহোক অনেক কথা বলে ফেলেছি।সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন বাবা যেন জান্নাতুল ফেরদৌসে দাখিল হন।
বন্ধুরা এটিই ছিল আমার আজকের আয়োজন।নতুন কিছু নিয়ে হাজির হব।
ধন্যবাদ,
👉 আমাদের discord চ্যানেল এ JOIN করুন :
VOTE @bangla.witness as witness
OR
[](https://steemitwallet.com/~witnesses
২০২৩ সাল টি আপনাদের জীবনের খুবই বেদনাদায়ক একটা বছর ছিল, এটা বুঝতেই পারতেছি আপু। আপনার আব্বুর চলে যাওয়াতে আপনারা সবাই অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছেন। আসলে কাছের মানুষটা যদি এভাবেই চলে যায় তাহলে কষ্ট তো লাগবেই। আর যদি হয় প্রিয় বাবা তাহলে তো কথা নেই। সব সময় এটাই সৃষ্টির কর্তার কাছে কামনা করি, যেন আপনার আব্বু বেহেস্ত নসিব হয়।
আসলে কোন বছরে যদি প্রিয় মানুষকে হারানো যায় তাহলে সেই বছরটা স্মরণীয় হয়ে থাকে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আপনি আপনার বাবাকে হারিয়েছেন তার জন্যই এ বছরটা আপনার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সবশেষে আঙ্কেলের জন্য দোয়া রইল যেন আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন আমিন।
সত্যিই আপু প্রিয় মানুষ বিশেষ করে বাবা যখন হারিয়ে যায় তখন সেই বছরটি খুবই বেদনার বছর হয়ে থাকে স্মৃতির পাতায়।তাছাড়া বড় সন্তানের জন্য মা-বাবার অন্য রকম একটা টান থাকে।প্রিয় মানুষটি হারিয়ে গেলে আর ফিরে পাওয়া যায় না। দোয়া করি আপু আপনার বাবা জান্নাতবাসী হোন।দেশে এলে বাবাকে আর দেখতে পাবেন না। খুব কষ্টের একটা অনুভূতি আপু।এই অনুভূতি সত্যি বোঝানো যায় না। আল্লাহ আপনাকে সহ্য ক্ষমতা বাড়িয়ে দিন,আমিন।
আসলে আপনার পোস্টটি পড়ে অনেক কষ্ট পেলাম। আমি যতদূর জানি বাবাদের জন্য মেয়েরা বেশি পাগল হয় এবং বাবা ও মেয়েকে অনেক বেশি আদর করে। তবে মায়ের ক্ষেত্রে একটু ব্যাতিক্রম। মা সব সময় ছেলেদেরকে বেশি ভালোবাসে এবং ছেলেরাও মাকে বেশি ভালোবাসে। যাই হোক যখন আপনার বাবা মারা গিয়েছিল তখন আমরা ডিসকোর্ডে জানতে পারি এবং শুনে অনেক কষ্ট পাই তখন। আর এটা ঠিক বলেছেন প্রবাস থেকে মৃত সংবাদ শুনলে একটু বেশিই কষ্ট লাগে। আর সেই জায়গাতে বাবার মৃত্যুর কথা শুনলে তো কি পরিমাণ কষ্ট লাগার কথা, বা বুক ফেটে যাওয়ার কথা, সেটা আসলে মুখে বলে বা লিখে প্রকাশ করার মত উপায় নেই। আপনার বাবাকে জড়িয়ে আপনার ছোটবেলা থেকে এই পর্যন্ত অনেক স্মৃতি বিজড়িত ঘটনায় পড়লাম আপনার আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে। হয়তো এই পোষ্ট না পড়লে কখনো জানতাম।সর্বোপরি আপু আপনার বাবার জন্য অনেক অনেক দোয়া থাকবে ভালো থাকবেন আপু।
আপু আপনার লেখাগুলো যখন পড়ছিলাম তখন দু চোখে পানি চলে এসেছিল। আসলে বাবা নামক মানুষটা নিঃস্বার্থভাবে আমাদেরকে ভালোবেসে যান। আর যদি হঠাৎ করে তার মৃত্যুর খবর শোনা হয় তাহলে এর থেকে কষ্টের আর কিছুই হবে না। সত্যি আপু আপনার লেখাগুলো পড়ে দু চোখের কোণে পানি চলে এসেছিল। জীবনে হয়তো কোন একদিন হঠাৎ করে আমরাও এই পরিস্থিতিতে পরবো। আর বাবা কিংবা আপনজনের মৃত্যুর খবরটা শোনা সত্যি অনেক কঠিন। তবুও আমরা চাই প্রত্যেক বাবা ভালো থাকুক। আসলে পরিবার থেকে দূরে থাকা সত্যিই অনেক কষ্টের। 😭😭😭
আব্বুর পুরনো সব স্মৃতি গুলো এক নজরে চোখের সামনে ভেসে উঠল। আসলে ওই দিনটির কথা মনে পরলে এখনো গায়ের লোমগুলো দাঁড়িয়ে যায়। যখন এই খবরটি পেয়েছিলাম। আসলে এ কষ্ট কোনভাবে প্রকাশ করার নয়। এখনো রাতের বেলায় কখনো কারেন্ট চলে গেলে আব্বুর কথা খুব মনে পড়ে। কারণ রাতের বেলায় কারেন্ট চলে গেলে আব্বু আমাদেরকে বিভিন্ন ধরনের গল্প শুনাতো। আসলেই গত বছরটি আমাদের জীবনের সবথেকে খারাপ বছর গিয়েছে।
প্রিয় মানুষগুলোকে হারানোর কষ্ট সব থেকে বেশি হয়। গত বছরে আপনারা আপনাদের সব থেকে কাছের একজন মানুষকে হারিয়েছিলেন আপু। আপনার আব্বুর কথা শুনেছিলাম যখন তখন আমার কাছেও খুব খারাপ লেগেছিল। আসলে সব মানুষকে একদিন এই পৃথিবীটা ছেড়ে চলে যেতে হবে। আর এটাই মেনে নিতে হবে। সব সময় আপনার আব্বুর জন্য দোয়া করি আপু, যেন তিনি জান্নাতবাসী হয়। আপনাদের ভেতরে থাকা কষ্টটা বুঝতে পারতেছি। আসলে এরকম কষ্ট গুলো বোঝানো যায় না।
আজ কিন্তু আপু আপনার পোস্ট পরে মনটাই খারাপ হয়ে গেল। আপনার জন্য ২০২৩ সালটি বেশ খারাপই কেটেছে। আসলে কমিউনিটির ডিসকোর্ড চ্যানেল হতে নিজের বাবার মৃত্যুর সংবাদটি শোনা যে কতটা মর্মান্তিক সেটা বলে শেষ করা যাবে না। আর আপনার কথা গুলো পড়তে পড়তে আমিও হারিয়ে গিয়েছিলাম আমার বাবা কে হারানোর সেই বেদনার দিনগুলোতে। ধন্যবাদ সুন্দর করে গুছিয়ে পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
প্রবাস জীবনে আপন মানুষ হারানোর কষ্ট একমাত্র তারাই বুঝে,যারা প্রবাসে থাকে। আসলেই প্রতিটি বাবা সন্তানদেরকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। সন্তানদের মাথার উপর সবসময় বটগাছের মতো ছায়া হয়ে থাকে। প্রবাস জীবনে মানুষ যখন একাকী থাকে, তখন আপন মানুষ হারানোর যন্ত্রণা হয় সবচেয়ে বেশি। আপনার বাবা তো তাহলে অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। আল্লাহ তায়ালা উনাকে যেন জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন। সবসময় আঙ্কেলের জন্য বেশি বেশি দোয়া করবেন আপু। ভালো থাকবেন সবসময়।
আসলে যার হারায় সেই উপলব্ধি করতে পারে বেশি। বাবা কত মূল্যবান জিনিস এটা বাবা হারা সন্তানরাই বোঝে। আপনি সিয়াম ভাইয়ার এনাউন্সমেন্ট দেখে শুনেছেন।আপু আপনাকে বাড়ি থেকে ফোন করা হয়নি আপনার বাবার এই দুঃসংবাদ শোনানোর জন্য? জাযাকাল্লাহ তায়ালা আমাদের কে এই বছর রহমত ও বরকত দিয়ে পরিপূর্ণ করে তুলুক।