ছোট ভাইকে ডাক্তার দেখানোর অভিজ্ঞতা || ১০% লাজুক খ্যাঁকের জন্য

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি। আজকে আমি আমার ভাইকে ডাক্তার দেখনোর অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।

• ০৯-০২-২০২২ তারিখের ঘটনা

আমি আমার বাংলা কমিউনিটিতে প্রবেশ করার পর আমার ছোট ভাইকে নিয়ে একটা পোস্ট করেছিলাম। আপনারা অনেকেই সেই পোস্ট পড়েছেন। সেই পোস্টের লিংক-পূর্বের পোস্ট দেখতে
তারপরও সংক্ষেপে একটু বলি আমার ছোট ভাইয়ের নাম জাহিদ। ছয় মাস আগে জাহিদের অনেক পেট ব্যাথা হয়। আমি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষার করতে দেয় এবং রিপোর্ট দেখে শনাক্ত করে তার একিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস হইছে। বিভিন্ন ঝামেলার পর তাকে অপারেশন করতে হয়েছিলো। আমার ছোট ভাইয়ের অপারেশন হইছে প্রায় ছয় মাস হয়ে গেছে।

তার পেটে এখনো একটা ড্রেন দেওয়া আছে, পেটের ভেতরের এক প্রকার লিকুইড বের হওয়ার জন্য। মূলত প্রায় ১ মাস আগে তাকে ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। ডাক্তার বলছিলেন তার পেটের ড্রেন খুলে দেবে ১ মাস পর। তাই গ্রাম থেকে ছোটভাই কে ঢাকা নিয়ে আসছি। জাহিদকে যে ডাক্তার অপারেশন করছে তার নাম ডা. রফিকুস সালেহীন। তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর সার্জারী বিভাগের প্রধান।

ঢাকা এসে তাকে ফোন করে বলি তার সাথে কোথায় দেখা করতে হবে। সে আমাকে বলে কাকরাইল ইসলামি ব্যাংক সেন্টাল হাসপাতালে দেখা করতে। সে সেখানে ৭-৯ টা পর্যন্ত রোগী দেখেন। তাই আমি আমার ভাইকে নিয়ে ৫ টায় বের হই। কিন্তু এতো জ্যাম থাকে সন্ধ্যায় বলার মতো না। গেন্ডারিয়া থেকে কাকরাইল যেতে ৩ ঘন্টা লাগছে। যাওয়ার পর ডাক্টারের চেম্বারের সামনে গেলাম। সেখানে এক লোক ছিলো তার সাথে কথা বললাম যে আমাদের টিকিট কাটতে বললো।

টিকিট কিনে তার পর ডাক্তারের রোমে প্রবেশ করার পরই ডাক্তার বললো, তুমি তাহলে ফোন করেছিলে?

আমিঃ জ্বি স্যার আমি ফোন করেছিলাম। আসলে স্যার অনেক দিনতো হয়ে গেলো আপনি গত মাসে বলেছিলেন ১ মাস পর খুলে দিবেন।
ডাক্তারঃ তোমার ভাই যে বেঁচে আছে এটাই অনেক। আসলে এই রোগে অপারেশন অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। সেইটা তোমার ভাইকে দেখে অবশ্যই বুঝতে পারছো!
আমিঃ স্যার তাহলে এখন তো লিকুয়েড একদমই কম আসছে। এখন কি খুলে দেওয়া যাবে?
ডাক্তারঃ তুমি এক কাজ করো, আমি লিখে দিচ্ছি তুমি একটা আল্ট্রা টেস্ট করে আমার সাথে দেখা করো।
আমিঃ স্যার আল্ট্রা করে এখনে আসলেই আপনাকে পাবো?
ডাক্তারঃ হ্যা, চাইলে এই হাসপাতাল থেকেই করে নিতে পারো।
আমিঃ ঠিক আছে, তাহলে আল্ট্রা করে রিপোর্ট নিয়ে আসি।

এর পর আমি আমার গেলাম আল্ট্রা করার টাকা জমা দেওয়ার জন্য। টাকা জমা দিয়ে গেলাম আল্ট্রা করার জায়গায়, গিয়ে দেখি অনেক মানুষ সিরিয়াল দিয়ে বসে আছে। আসলে এই টেস্টটা মোটামুটি কমন তাই ভিড়ে পড়ে গেছে। যাইহোক, এক আন্টির কাছে আল্টার বিল এর কাগজ দিলাম। সে জানালো সিরিয়াল আসলে নাম ডাকবে।

আমি আর জাহিদ বসে রইলাম। প্রায় ৪০ মিনিট পর নাম ডাকলো জিহাদ। জাহিদ শুনেই বুঝতে পারছে ঔ আন্টি নাম বলতে ভুল করছে। জাহিদ এগিয়ে গিয়ে বললো আন্টি মনে হয় জাহিদ হবে। পরে আন্টি বলে সরি দেখতে ভুল হইছে। যাইহোক, জাহিদ ভেতরে গেলো। আমি বাইরে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম। ১০ মিনিট পর জাহিদ বের হলো এরপর রিপোর্ট আসতে আরো ১০ মিনিট লাগলো। রিপোর্ট হাতে পেলাম।

এর পর ডাক্তারের রোমের কাছে গিয়ে শুনি সে আবার অন্য হাসপাতালে চলে গেছে। তাকে ফোন দিলাম -

আমিঃ স্যার, জাহিদের রিপোর্ট নিয়ে আপনার রোমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আপনি কোথায় আছেন?
ডাক্তারঃ আমি তো চলে এসেছি ইনসাফ বারাকা কিডনি & জেনারেল হাসপাতালে। এখানে আসো রিপোর্ট দেখিয়ে যাও।

কি আর করার, আবার রিক্সা নিয়ে গেলাম ইনসাফ বারাকা হাসপাতালে। সেখানে যাওয়ার পর আবার রোগী দেখার সিরিয়াল। আবার বসে রইলাম সেই সিরিয়ালের আশায়। সবার শেষে জাহিদের নাম ডাকলো। জাহিদ ভেতরে গিয়ে রিপোর্ট দেখালো।

আসলে আল্ট্রার রিপোর্টে তেমন কিছু খারাপ নেই। তবে হালকা একটু তরল পানি আছে পেটে। তাই ডাক্তার বললো, চিন্তার কোনো কারণ নেই আর কিছুদিন দেখো যদি তরল আর না আসে ব্যাগে, তাহলে ড্রেন খুলে দিবো। আসলে এখন তো একদম হালকা পরিমাণে আসছে, তাই কষ্ট তো অনেক করলা আর কিছু দিন কষ্ট করো। আমি নিজেও ভাবলাম ঠিকই আছে আর কিছু দিন দেখে খোলাই ভালো হবে।

এরপর বের হলাম বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে। তখন ঘড়িতে সময় ১০ঃ২৭, বাসায় আসার সময় ঘটলো আরেক বিপদ। রাতের বেলা রাস্তা একটু উল্টা পাল্টা লাগে। মূলত আমার কাকরাইলের রাস্তাঘাট বেশি পরিচিত না। যাওয়া আসা হয় না বললেই চলে। রাস্তায় দাঁড়ানো সাথে সাথে সদরঘাট এর ভিক্টর ক্লাসিক বাস পাই। কিন্তু কথা হচ্ছে বাসটা সদর ঘাট থেকে আসছে আমরা সেই বাসেই উঠে পড়ি। ভালোই কিছুক্ষন বাস যাওয়ার জাহিদ বলতেছে কি ব্যাপার বাস এটা কই জায়? আমরা তো রামপুরা চলে এসেছি। রাস্তার পাশেই বিটিভি ভবন দেখেই মূলত আমরা বিষয়টা বুঝতে পারলাম। আমরা উল্টা বাসে উঠে পড়েছি। দুইজন খুব দ্রুত বাস থেকে নেমে পড়লাম।

এর পর পাশের রাস্তায় গিয়ে বাসে উঠে সোজা সদরঘাট ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে নেমে একটা রিক্সা নিলাম। বাসার আসতে আসতে ১২ঃ২০ বেজে গিয়েছিলো। যেহেতু বাসায় খালা আসে না কিছুদিন হলো, তাই নিজেই আবার রান্না করলাম সব মিলিয়ে রাত ১টাক বেজে গিয়েছিলো।

এই ছিলো আমার ছোট ভাইকে দ্বিতীয় বার ডাক্তার দেখনোর অভিজ্ঞতা। প্রাইভেট হাসপাতালে যে ভিড়! তাহলে সরকারি হাসপাতালে কি পরিমান ভিড় হতে পারে চিন্তা করা যায়!!!

সবার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো। আর সবার কাছে অনুরোধ আমার ভাইয়ের জন্য একটু মন থেকে দোয়া করবেন, যাতে খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে যায়।