আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা- ২২ | আমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি

কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে ভালোই আছি। আমার বাংলা ব্লগ সব সময় ইউজারদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কনটেস্টের আয়োজন করে থাকে। আমার বাংলা ব্লগ কর্তক আয়োজিত এবারের কনটেস্ট 'শেয়ার করো তোমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি' সত্যিই অসাধারণ একটি কনটেস্টের আয়োজন করা হয়েছে। এই কনটেস্টের মাধ্যমে সেই পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে গেলো। এজন্য প্রথমেই ধন্যবাদ দিতে চাই শুভ ভাইকে সুন্দর এই কনটেস্টের ঘোষণা দেওয়ার জন্য। তো আমি আজকে আমার প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আশা করি সবার ভালো লাগবে।

Source

বর্তমানে আমরা তথ্য প্রযুক্তির যুগে বসবাস করছি।এখন সবার হাতে হাতে মোবাইল, কমিউটার, লেপটপ সবই আছে। তবে আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগেই এতো কিছু সবার হাতের নাগালে ছিলো না। তখন গ্রামের মধ্যে হাতে গুনা কিছু লোকের কাছেই মোবাইল ছিলো। আর সেই মোবাইলের মধ্যে কোনো টার্চ ফোন ছিলো না। তখন বাটন ফোনই অনেক জনপ্রিয় ছিলো। তখন মূলত গ্রামের মানুষ কথা বলার জন্য পল্লীফোনের দোকানে যেতো। যেহেতু কথা বলার খরচ ছিলো অনেক বেশি তাই মানুষ খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ফোনে কথা বলতো না। তবে যাদের লোক বাইরের দেশে থাকে তাদের সাথে কথা বলার জন্য তারা মূলত সেই পল্লীফোনের দোকান থেকে ফোন করতো। সে সময়ে বাইরের দেশ থেকে কল আসলেও টাকা দিয়েই কথা বলতে হতো। তবে টাকা না দিয়ে কথা বলার কোনো সিস্টেম ছিলো না। তাই মূলত গ্রামের লোকজন সকল শর্ত মেনেই তাদের প্রয়োজন মেটাতো। সবার কাছে ফোন থাকলেও সবাই মোটামুটি ভালোই সময় কাটাতো। ঐ সময়টা তে ছেলে মেয়েদের মোবাইলের কোনো নেশা ছিলো না। তারা সময় কাটাতো বিভিন্ন খেলাধুলার মাধ্যমে। সময়টা ডিজিটাল না থাকলেও অনেক ভালো ছিলো।

Source

আমার প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ারর অনুভূতি

২০১২ সাল, তখন আমি নবম শেণীতে পড়ি। আমার বন্ধুদের মধ্যে কয়েকজন মোবাইল নিয়ে আসতো। তখন মোবাইল স্কুলে নিয়ে আসা শাস্তিযোগ্য অপরাধ ছিলো। বন্ধুদের মোবাইল চালানো দেখে তখনই খুবই ইচ্ছা হতো মোবাইল কিনতে। তবে আমার পরিবারের লোক অনেক কড়া ছিলো তাই মোবাইল কিনার কথা বলতে পারতাম না। তবে মনের মধ্যে খুবই ইচ্ছা ছিলো একদিন আমারও নিজের মোবাইল হবে। তবে আমার আম্মু সব সময় বলতো আমাকে ইন্টারে ভর্তি হওয়ার পর মোবাইল কিনে দিবে, যদি এস এস সি তে ভালো রেজাল্ট করতে পারি। এর আগে মোবাইল কিনে দিবে না। আমিও সেই আশাতেই ছিলাম। এর মধ্যে আমার এস এস পরীক্ষা চলে আসে, ভালোভাবেই পরীক্ষা দেই।

এর চলে আসে সেই কাঙ্ক্ষিত সময় সেদিন ছিলো রবিবার আমার এস এস সি রেজাল্ট বের হয়। আল্লাহর রহমতে আমি জিপিএ-৫ পাই। আমার আনন্দ আর কে দেখে। বাসায় সবাই অনেক খুশি ছিলো আমার রেজাল্ট নিয়ে। এতো খুশির মধ্যে আমার আরো একটা খুশির কারণ ঘটে রাতের বেলা। আমার মা আমার জন্য রেজাল্ট শোনার পরই মোবাইল কিনে আনে। রাতে খাওয়ার পর আমাকে মোবাইলের বক্স সহ হাতে দেয়। সেই সময়টাতে আমার যে কতটা খুশি লাগতেছিলো বলে বুঝাতে পারবো না। বেস্ট একটা মুহুর্ত ছিলো। আমি মোবাইল বের করে দেখি নোকিয়া মোবাইল। যদিও সেই সময়ে মোবাইলটি অনেক ভালো ছিলো। আমার প্র‍থম মোবাইল ছিলো নোকিয়া ২৭০০ ক্লাসিক আম্মুর গিফট। এই মোবাইলের ক্যামারা ছিলো ২ মেগা পিক্সেল। ইন্টারনেট চালানোর ব্যবস্থা ছিলো, ছিলো গেম খেলার ব্যবস্থা। তবে তখন এন্ড্রয়েড ফোনের চল ছিলো না। ছিলো জাভা এবং সিম্বিয়ান ফোন। আমার ফোনের অপারেটিং সিস্টেম ছিলো জাভা।

Source
আমি যে সময়ে মোবাইল হাতে পাই তখন টুকটাক সবাই ফেসবুক ব্যবহার করে৷ নতুন মোবাইল পাওয়ার পর আমি ফেসবুক একাউন্ট খুলে ফেলি। তবে ফেসবুক অপারেটিং সিস্টেম বর্তমানের চেয়ে অনেকটাই ভিন্নছিলো। তবে খুবই ভালো ছিলো। আমি তো প্রথম সাত দিনেই সবাইকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠিয়ে ৫০০০ ফ্রেন্ড বানিয়ে ফেলি। আসলে নতুন নতুন সব কিছুতেই অনেক বেশি আকর্ষন কাজ করে। সারা রাত করে জেগে জেগে মোবাইলে গেমই খেলতাম। ঐ সময়ে আমার প্রিয় গেইম ছিলো 'প্রিন্স অফ পারশিয়া' এটা আমি অনেক খেলেছি। আর তখন এই জাভা ফোনের জন্য বেস্ট ওয়েবসাইট ছিলো 'ওয়েবট্রিক ডট কম' এই ওয়েব সাইট থেকে অনেক কিছুই ডাউনলোড করেছি।

যাইহোক এই ছিলো আমার জীবনে প্রথম মোবাবাইল ফোন হাতে পাওয়ার অনুভূতি। এখন অনেক ভালো ফোন ব্যবহার করলেও সেই সময়টাকে অনেক মিস করি।

আমার পোস্ট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

"আমি সাইদুল ইসলাম কাকন। আমি বর্তমানে অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। আমি ভ্রমন প্রিয় মানুষ। ছবি আঁকতে অনেক ভালোবাসি। এছাড়াও রান্না করতে পছন্দ করি। আমি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান তবু্ও চেষ্টা করি গরীবদের সাহায্য করতে। "