দায়িত্ববোধ
আমরা মানুষ।তবে আমরা কি আসলেই মানুষ? মানুষের মত দেখতে হলেই কি মানুষ হওয়া যায়? যদি তাই হয় তাইলে বলা যায় আমরা জন্মসূত্রে মানুষ।আমরা প্রকৃত মানুষ নই।
আমরা মানুষ হয়ে জন্মনিলেও কিন্তু আমরা মানুষ নই। মানুষ হবার জন্য আমাদের ভেতরে আনতে হয় অনেক
পরিবর্তন আয়ত্ব করতে হয় অনেক মানবিক গুণাবলী।
এই মানবিক গুণাবলী কারো মাঝে উপস্থিত না থাকলে তাকে ঠিক মানুষ বলা যায়না।তার আর পশুর মাঝে কোন তফাৎ থাকে না।একটি গল্প শুনাই তাইলেই বুঝবেন।
কিছুদিন আগে একটি বিয়েতে গিয়েছিলাম জানেন আপনারা। তো বিয়েতে আমরা ভাই বোনরা যাতে আনন্দ করতে পারি তাই পরিবেশন ও অন্যান্য কাজের জন্য ক্যাটারিং সার্ভিস ঠিক করা হয়েছিল।যখন ক্যাটারিং সার্ভিস ঠিক করা হয় তখন তাদের সাথে কথা ছিল তারা দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সার্ভিস দিবে,তারপর আবার রাতে ১০টা থেকে বরযাত্রীদের খাওয়াবে।এই অনু্যায়ী তাদের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে কোম্পানির মালিক।
কিন্তু সন্ধ্যা থেকেই তাদের তালবাহানা শুরু হল। তারা আর কাজ করতে চায় না।যদি রাতেও তাদের দিয়ে কাজ করানো হয় তবে তাদের দ্বিগুণ পরিশ্রম করতে হবে।তাদেরকে চুক্তির ব্যাপারে বলা হল কিন্তু তাদের এক কথা তারা কাজ করবে না।তাদের ম্যানেজার এর সাথেও যোগাযোগ করা গেল না।
তাদের আবার বোঝানো হল,যে এখন বরযাত্রীদের খাওয়াদাওয়া টাই আসল তাই তারা না থাকলে সমস্যা হবে।কিন্তু তারা কিছুতেই তাদের জায়গা থেকে নড়বে না।তখন আমি দাদা কে বললাম, "এখন কোন ভাবেই পেমেন্ট করবি না।কাল ম্যানেজার এর সাথে কথা হবে। ওরা কেন চুক্তি ভাঙল।" আমার সাথে আরেকটা ছোট ভাই ছিল।সে আমার ইমিডিয়েট জুনিয়র।সে দাদাকে বলল দাদা আমরাই সব করব।তুমি চাপ নিওনা।দাদা ওকে বলল দায়িত্ব তো নিচ্ছিস সামলাতে পারবি তো? সে খুব কনফিডেন্ট।ওর কনফিডেন্ট দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল ক্যাটারিং সার্ভিস ছেড়ে দেওয়া হবে।
এখন আমি প্রথমে দায়িত্ব নিতে চাইনি কারন আমার সব গুলো ভাই বেশ ছোট।তারা তা সামলাতে পারবে কিনা তা জানিনা।তারপর সবাইকে নিয়ে বসলাম।সবাইকে দায়িত্ব ভাগ করে দিলাম।এরপর বরযাত্রী আসলে দেখি সেই ছোট ভাই গায়েব।তার দায়িত্ব ছিল যখন তরকারির বা পোলাওয়ের গামলা ফাকা হবে তা ভরে দেওয়া।আর আমরা তা টেবিলে নিয়ে যাব।
কাজটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বাকিদের মাঝে কাউকে যদি সেই কাজে লাগাই তাইলে একটা টেবিলে সার্ভ করতে সমস্যা হবে।কাউকে হয়ত ভাত দিলাম তরকারি দিতে দেরি হবে।এতে অতিথি আপ্যায়ন হয়না।সম্মানের ক্ষতি হয়।আমি কাজের ফাকে ফাকে ওকে খুজতে লাগলাম।
একটু পর দেখি ভাই আমারা কমপ্লিট ড্রেস পরে ফটোগ্রাফার দের পিছে ঘুরছে আর ছবি তুলছে।ওকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম,তুই যে দায়িত্ব নিলি সার্ভ করার তাইলে এখন দায়িত্ব ফেলে ঘুরছিস কেন? লোক কম ওদিকে চল।ও আমাকে উত্তর দিল,এই ড্রেস পরে সার্ভ করে ড্রেসে দাগ লাগাবো নাকি? তোমরা করো আমি করতে পারব না,প্রোফাইল পিকচারের জন্য কয়েকটা ভাল ছবি লাগবে।
আমি বললাম তাইলে তখন দায়িত্ব নিলি কেন? তুই এখন দায়িত্ব নিয়ে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াবি আর আমরা মজা করা বাদ দিয়ে কাজ করব একেমন কথা? তখন দাদাকে বললেই দাদা অন্যকিছু ম্যানেজ করত।ও বলল তোমরাও ঘুরে বেড়াও কে মানা করছে।তুমি তো আর দাদাকে বলো নি।তাই তোমার দোষ ও হবে না।
এটা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু ওকে আর কিছু বলার রুচি পর্যন্ত হল না। আমার এমন লোক একদম পছন্দ না যারা দায়িত্ব নেয় ঠিকই, কিন্তু পালনের সময় তাদের আর কোন খোজ থাকে না।অবশেষে বাকি ছোট ভাইদের নিয়েই কাজ সারলাম।বেশ ভালভাবেই কাজ শেষ করেছিলাম,যদিও এর ফলে বিয়ে দেখতে পারি নি,ভ্লগ বানানোর ইচ্ছা ছিল তাও করতে পারিনি।এমনকি আমরা কজন বিয়ে উপলক্ষ্যে যে ড্রেস কিনেছিলাম সেগুলো পর্যন্ত পড়তে পারিনি।
হ্যা হয়ত আমিও ওর মত দায়িত্ব ছেড়ে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরতে পারতাম।সবই করতে পারতাম।কিন্তু তাহলে আর অতিথিদের কাছে বাড়ির সম্মান থাকে না।তাই কোনটা না হবার পরেও কিন্তু আমরা বাকিরা কাজ ফেলে যাইনি।অথচ পুরো দুইটি দিন সে শুধু ছবি তুলেছে,আর বিয়ের ক্যামেরা যেখানে ছোড় ভাইও সেখানে।খালি ছোট ভাই নয় আরো কয়েকটা বোনকেও দেখলাম একই অবস্থা।
এদের দেখে খুব আফসোস হল।আগে যেখানে সবাই মিলে কাজ করে অনুষ্ঠান ভালভাবে শেষ করা হত। অন্যকে কাজ করতে দেখলেও মানুষ নিজে এগিয়ে কাজ করত।অথচ এখন মানুষ কাজ দেখলে পালায়। শো-অফে ব্যস্ত সবাই।
আবার ক্যাটারিং সার্ভিস টার কথাও চিন্তা করুন।তারা চুক্তি কিন্তু ঠিকই করেছিল,কিন্তু বেশি পয়সা পাবার আশায় তারা আমাদের বেকায়দায় ফেলেছিল।অথচ তারা কিন্তু পুরোটা ভালভাবে শেষ করার দায়িত্ব নিয়েছিল।অথচ তারা লোভে পড়ে গেল।বর্তমানে মানুষদের এসব দেখে মনে হয় আমরা শুধুই জন্মসূত্রে মানুষ এছাড়া আমাদের মাঝে মানুষের গুণগুলো দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে।আমরা হয়ে উঠছি পশু।
আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।
ভাইয়া প্রথমত কাটিং সার্ভিসের লোক গুলো ঝামেলা করলো তারপরে আবার আপনার ছোট ভাই ও দায়িত্ব নিয়ে দায়িত্ব অবহেলা করলো। যদি সে দায়িত্ব পালন না করতে পারে তাহলে দায়িত্ব নেওয়া টা তার ঠিক হয়নি। এরকম অনেক মানুষ রয়েছে যারা দায়িত্ব নেওয়ার আগে অনেক বড় বড় কথা বলে কিন্তু বাস্তবতার সাথে তাদের কোনো মিল নেই। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনি দায়িত্ব নিয়ে খাওয়া-দাওয়ার কাজটি সমাধান করলেন।
আপনাকেও ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
অনেক ভালো লাগলো ভাই আপনার এমন দিকনির্দেশনামূলক পোস্টটি পড়ে।। সত্যি আমরা নামে মাত্র মানুষ আমাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ মূল্যবোধ ভাতৃত্বের বন্ধন সব হারিয়ে গিয়েছে।। আমরা শুধু অহেতুক নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকি অন্যের ক্ষতি করে।।
আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে তাহলেই সমাজ বদলানো সম্ভব।।
ভাল বলেছেন ভাইয়া। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মতামতের জন্য।
ওই ক্যাটারিং এর লোক গুলো যদি এখানে হতো তাহলে একটাও হেঁটে বাড়ি যেতে পারত না। পা হাত সব ভেঙে রেখে দিত।
পোস্ট পড়ে যতটা বুঝলাম, ধোঁকাবাজি তো অনেক জায়গায় হয়েছে। নিজের ভাই ব্রাদার পর্যন্ত ধোকা দিয়ে গেল। এরকম স্বার্থপরতা আমি নিজেও খুব অপছন্দ করি।
মানুষ দিন দিন অসুস্থ মস্তিষ্কের হয়ে যাচ্ছে। কিছু করার নেই।
আমার এলাকা হলেও বাড়ি যেতে দিতাম না। কিন্তু এলাকা থেকে ১৫০কিমি দূরে ছিলাম।আর আমার দাদারা খুব শান্ত শিষ্ঠ। যদিও পরের দিন হাফ পেমেন্ট দিয়েছি।যাই হোক একটা ধোকা দিলেও বাকি গুলো খুব খেটেছে। এজন্যই মানবতার উপর থেকে বিশ্বাস একদম উঠে যায়নি। পরে ওদের ট্রিট দিয়েছিলাম সাপোর্টের জন্য।