ফিরে এসো মাস্টার
বয়সে বড় মানুষের সঙ্গে কি কখনো বন্ধুত্ব হয়। আমি তো মনেকরি, বন্ধুত্ব হওয়ার জন্য বয়স কোন বিষয় না। তাছাড়াও বয়স তো একটা সংখ্যা মাত্র। আমার বন্ধু তালিকায় অবশ্য সমবয়সী মানুষের থেকে বয়সে বড় মানুষগুলোর সঙ্গে আমার একটু ঘনিষ্ঠতা বেশি।
ব্যাপারটা এমন যে, আমার মূলত সব ধরনের মানুষের সঙ্গেই মিশতে ভালো লাগে। আর তাছাড়া যারা বয়সে একটু বড় হয়, তারা অনেকটাই বাস্তবিক জীবনে ভীষণ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হয়। সত্যিই তাদের কাছ থেকে অনেক কিছুই শেখার আছে।
সন্ধ্যাবেলা করে যখন চার রাস্তার মোড়ের ঐ চায়ের দোকানে যাই, সেই প্রথম থেকেই প্রতিনিয়ত শাজাহান মাস্টারের সঙ্গে আমার দেখা হচ্ছিল। যেহেতু প্রতিনিয়ত সেখানে চা খেতে যেতাম, তাই তার সঙ্গে প্রায়ই গল্প হতো। যার কারণে আমাদের সম্পর্কটা একটা সময়ের পরে বেশ ভালোর দিকেই এগিয়ে গিয়েছিল। তাছাড়াও ভদ্রলোক আমার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিল বেশ ।
আমাদের গল্পের অবশ্য তেমন কোন বিশেষ বিষয় থাকতো না। দেখা যেত, আমাদের আশেপাশের যা ঘটছে বা পারিপার্শ্বিক অবস্থায় আমরা যা দেখছি,সেসব নিয়েই টুকটাক কথা হতো। যেহেতু প্রতিনিয়ত একই সময়ে দেখা-গল্প আর চা খাওয়া হতো। তাই ধীরে ধীরে আমাদের সম্পর্কটাতেও অনেকটা পরিবর্তন চলে এসেছিল। আমরা যে কতদিন একসঙ্গে রিক্সায় করে ঘুরেছি এবং শহরের অদূরে গিয়েছি, তার কোন হিসেব নেই। বেশ ভালোভাবেই মনে আছে, মাঝে মাঝে সময় মত দেখা না হলে, আমাদের মুঠোফোনেই কথা হয়ে যেত।
শাহজাহান মাস্টারের হাতে সময় বেশ ছিল। তার হাতে তেমন কোন কাজ ছিল না বললেই চলে। এমনিতেই শিক্ষকতা পেশা থেকে সে অবসর গ্রহণ করেছিল, যার কারণে তার সময় ছিল অফুরন্ত। তবে এই অফুরন্ত সময় তার কোন ভাবেই যেন কাটছিল না। যদিও বাসাতেই অনেকটা সময় অল্পস্বল্প এদিক সেদিক বিচরণ করে সময় কাটাতো। তবে বেশিরভাগ সময় কাটতো তার ঐ চায়ের দোকানেই।
ভদ্রলোকের সঙ্গে শেষ যেদিন আমার দেখা হয়েছিল, সেদিনও বেশ হাসিখুশি ভাবেই কথা হচ্ছিল। তবে কে জানে, তার সঙ্গে এই দেখাই আমার আপাতত শেষ দেখা হবে।
সম্প্রতি পেনশনের টাকা পেয়েছে সে এবং সব থেকে মূল যে ব্যাপারটা হচ্ছে, তার এই টাকাটা পাওয়াই যেন তার জন্য অনেকটা কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। টাকার নেশার কাছে অবশ্য বন্ধু-বান্ধব, ভাই, ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজন কেউ যেন নিরাপদ নয়। কারণ টাকার একটা আলাদা ক্ষমতা আছে এবং টাকা যখন যার হাতে, সেই ক্ষমতাও তখন যেন ঠিক তার হাতে।
মাইনুল ভাইয়ের চায়ের দোকানে, সেদিন যখন গিয়েছিলাম, তখন শুনতে পারলাম যে মাস্টার সাহেবকে, কে বা কারা যেন চাকু দিয়ে,তার নিজ বাসাতেই জখম করেছে এবং সে এখন ভর্তি আছে মেডিকেলের আইসিইউতে। ডান পাশের তলপেটের নিচে বেশ বাজে ভাবে চাকু মেরেছে দুর্বৃত্তরা , রক্তক্ষরণ হয়েছে প্রচুর।
শুনলাম যেদিন যখন টাকা পেয়েছে, সেদিন সন্ধ্যেবেলাতেই তার বাসাতেই নাকি এই ঘটনা। ব্যাপারটা যেহেতু থানা পর্যন্ত গড়িয়েছে, অনেকটা তদন্ত অবস্থায় আছে, তাই এ বিষয়ে আমার মন্তব্য না করাই শ্রেয়। তবে আমার কৌতূহল কাজ করছে অনেকটা।
আমার কৌতূহল যেটাই হোক, তবে তার সঙ্গে যারা এমনটা করেছে, তাদের আগে বিচার হোক। মাস্টার সাহেব যেন আমাদের মাঝে দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে পারে, এমনটাই প্রত্যাশা করছি। কারণ বেশ কয়েকটা দিন হল তার সঙ্গে দেখা নেই, কথা নেই, মনটা বেশ ভালোই পস্তাচ্ছে তার জন্য।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1654793564512202754?t=pK7X6T4KPvT7uWsRcYamyA&s=19
যেকোনো বয়সের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে পারে।এক্ষেত্রে মনের মিল থাকাটাই মূল বিষয়।মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী।তবে এইভাবে জখম আসলেই মেনে নেওয়ার নয়,অমানবিকতার পরিচয় এটি।প্রে করি যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন আপনার মাস্টারমশাই।
ধন্যবাদ আপু, আমার অনুভূতি বুঝতে পারার জন্য।
শুরুতেই স্যারের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি। খবরটা শুনে খুব খারাপ লাগলো। আমারও মন বলছে অর্থের লোভে পরেই এসব কিছু হয়েছে। আর আমিও বিশ্বাস করি , বয়স দিয়ে কখনো বন্ধুত্ব হয় না। এটা পুরোটাই মনের খেল। যার সাথে যার মনের মিল হয়ে যায় , বন্ধুত্বের শুরু টা সেখান থেকেই শুরু হয়ে যায়। আমার তো বেশির ভাগ আমার থেকে বড় বয়সী মানুষের সাথেই ভালো বন্ধুত্ব।
আসলে ঐ ভদ্রলোকের কথা যখন চিন্তা করছি, তখন বেশ খারাপই লাগছে। তবে এটা সত্য যে, বয়সে বড় মানুষের সঙ্গেই আমার বেশি ঘনিষ্ঠতা হয়।
ভাইয়া পেনশনের টাকা মানে পুরো জীবনের সারা বছরের হাড় ফাটানো পরিশ্রমের টাকা। এই টাকাকে কেন্দ্র করে শাজাহান মাস্টারকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেছে এটা জেনে আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি। ভাইয়া আমি প্রত্যাশা করি শাহজাহান মাস্টারের সাথে এরকম খারাপ ব্যবহারকারীদেরকে যেন আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয়। একই সাথে আমি শাহজাহান মাস্টারের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।
আমার অনুভূতি বুঝতে পারার জন্য ধন্যবাদ ভাই। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
আপনার সাথে আমি একদম সহমত জীবনে বাঁচতে গেলে সব ধরনের মানুষের সাথে ওঠাবসা করা খুবই জরুরী এবং বয়সের চেয়ে একটু বয়স বেশি মানুষ যারা থাকে তাদের সাথে ওঠাবসা করলে নিজের অভিজ্ঞতাও একটু বাড়ে।
এবং মানুষের সাথে ওঠাবসা করতে গেলে বয়সটা কোন বিষয় নয় মনের সাথে যদি মন মিলে থাকে তাহলে বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখা কোন সমস্যা নয়।