শেষ || @shy-fox 10% beneficiary
আইসিইউ এমন একটা জায়গা, সেখানে যারা গিয়েছে বা যারা অবস্থান করেছে, তারা বোঝে যে সেখানে কি চলে । আমার জীবনেও বেশ কয়েকবার আইসিইউ এর ঘটনাগুলো খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল । যেহেতু মেডিকেল প্রফেশনের সঙ্গে জড়িত, তাই এগুলো আমার কাছে অনেকটা দুধ ভাতের মতো ।
টানা পনের দিন অবস্থান করেছিল সাজু সাহেব দেশের নামকরা হাসপাতালের আইসিইউ তে । জহুরা যেন তার গোছানো টাকাগুলো বন্যার জলের মত ছড়িয়ে দিচ্ছিল । টাকা খরচ করেও যদি প্রিয় মানুষটা বেঁচে থাকে তাহলে তো টাকা খরচ করতে তো সমস্যা নেই । পনের দিনে হাতে গুনে নয় লাখ টাকার মতো চলে গিয়েছে। তবুও জহুরা বারবার ইসিজি মনিটরের হার্টবিটের রেখা গুলোর উঠানামা গুলো দেখছিল ।
জহুরার পায়ে যখন আমি সেলাই দিচ্ছিলাম, তখন ভদ্রমহিলা বারবার কান্না করছিল আর বলছিল ভাই আস্তে করার চেষ্টা করুন। আমি বলছি, ভাবী আমিতো চেষ্টা করছি । আপনি ধৈর্য্য ধরুন । আপনার অনেকটা অংশ কেটে গিয়েছে ।গুনে গুনে সাতটা সেলাই দিয়েছিলাম । যাইহোক অতঃপর ব্যান্ডেজ করে কিছু ঔষুধপত্র লিখে দিয়ে তাকে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম। এমনিতেই তখন মাঝরাত, ঘুমে কাতর আমার দুই চোখ । কোনরকম বাসায় ফিরে গভীর নিদ্রায় চলে গেলাম ।
খুব ভোরবেলা যখন ঘুম ভাঙ্গলো, তখন পাশের বাসা থেকে শুনতে পাচ্ছিলাম জহুরার কান্নার আওয়াজ । ভাবছিলাম হয়তো পায়ের ব্যথা কমেনি । এজন্য হয়তো কান্না করছে কিন্তু পরবর্তীতে যা শুনলাম , তাতে আমার চোখের ঘুম অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছে । মাঝরাতে যখন সাজু সাহেব গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে তাড়াহুড়ো করে ফিরে আসছিল , হুট করে মোটরবাইকটা রাস্তার পাশের গাছের সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছিল এবং অনেকটা সজোরে সাজু সাহেবের মাথায় আঘাত লেগেছিল ।
হীরা আমাকে বারবার বলছিল । মোনায়েমের বাবা এক্সিডেন্ট করেছে গত রাতে । ভাবি কান্নাকাটি করছে, সাজু সাহেব এখন ঢাকার একটা হাসপাতালের আইসিইউ তে ভর্তি আছে । লোকাল হাসপাতালে তাকে ভর্তি নেয়নি, মাথায় নাকি প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে ।
ভাবলাম যেহেতু দ্রুত আইসিইউ তে নেওয়ার সুযোগ হয়েছে । হয়তো এ যাত্রায় সাজু সাহেব বেঁচে যেতেও পারে । ভাবিকে বাসায় গিয়ে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলাম । ভাবি ব্যাগ গোছাচ্ছে, ঢাকায় যাবে সঙ্গে মোনায়েম ও তার আত্মীয়-স্বজন । আসলে একটা জিনিস খেয়াল করে দেখবেন, যখন বিপদ আসে তখন সব দিক থেকে যেন আসতেই থাকে ।
আসলে এমন পরিবেশে খুব একটা কথা বলার মত অবস্থায় কেউ নেই । তাও বলেই ফেললাম, ভাবী ঢাকায় পৌঁছে, আমাকে ভাইয়ের সিটি স্ক্যান রিপোর্ট ও অন্যান্য রিপোর্ট গুলো একটু মেসেঞ্জারে দেওয়ার চেষ্টা করিয়েন । মোনায়েম আমার দিকে বারবার দেখছিল । আমি বললাম , সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে আঙ্কেল ধৈর্য্য ধরো ।
দুদিন পরে মেসেঞ্জারে যে রিপোর্টগুলোর ছবি দেখতে পেলাম , তাতে দেখলাম মস্তিষ্কে বেশ ভালোই রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং অনেকটা অংশে রক্ত জমাট বেঁধে আছে । তবে সেগুলো খুব একটা বেশি জটিল মনে হলো না । তবে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি খারাপ হয়েছে । কারণ তার শরীরে সুগারের মাত্রা অতিরিক্ত ছিল । এমনিতে এই দম্পতি খুবই দেরিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে । তার মধ্যে চল্লিশ বছর বয়সেই উচ্চ রক্ত ও সুগারের পরিমাণটা অনেক বেশি মূলত এটাই একটু ভয়ের কারণ ছিল ।
যাইহোক হয় সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল । মাঝে মাঝেই আমি খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম । ঐদিকে জহুরার পায়ের ক্ষত শুকিয়ে গিয়েছে। বললাম, যে হাসপাতালে আছেন ওখান থেকেই সেলাই গুলো কেটে নিয়েন ।
দেখতে দেখতে প্রায় দুই সপ্তাহ হয়ে গেল । রোগীর শারীরিক অবস্থার তেমন কোন উন্নতি নেই । ডাক্তার যেভাবে চিকিৎসা দিয়েছে ঠিক সেইভাবেই চলছে সবকিছু । কিন্তু এইভাবে আইসিইউ তে আর কতদিন । এই প্রশ্নের উত্তর আসলে কারো কাছেই নেই ।
আমার আসলে কর্ম ব্যস্ততার কারণে অনেক কিছুই এলোমেলো হয়ে যায় । বিকেলের দিকে রোগী দেখছিলাম চেম্বারে। হুট করে দেখলাম ভাবির নাম্বার থেকে কল এসেছে । ফোন ধরতেই মোনায়েম কেঁদে বলল, আঙ্কেল আমার বাবা মারা গিয়েছে ।
আমি আসলে প্রথম পর্বে আবছা ঘটনাটা লিখেছিলাম । অনেকেই সাজু সাহেবের জন্য সুস্থ্যতার প্রার্থনা করেছিল । আমি আসলে ভাই, লেখক মানুষ । আমি লিখতে পারি, তবে মানুষকে বাঁচাতে পারি না । বাকিটা ঈশ্বরের হাতে । ভালো থাকুক সাজু সাহেব, ঈশ্বরের আপন গৃহে ।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
বিশ্বাস করেন ভাই আপনার পুরো লেখা পড়ে আমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। সত্যি বলতে আগের পার্টে সাজু সাহেবের ঘটনা পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করছিলাম তিনি যেনো সুস্থ হয়ে যান। সে আর পৃথিবীতে নেই জেনে খুব খারাপ লাগছে। এতো সুন্দর সাজানো গুছানো পরিবার কেমনে শেষ হয়ে গেলো। 😔
সত্যি বলতে আইসিউতে নেওয়া মানেই ৯০% মৃত্যুর মতোই৷ শুধু হার্টবিট চলতে থাকে আর পরিবারের টাকাও জলের মতো চলে যেতে থাকে। এতো টাকা খরচ করেও সাজু সাহেবেকে বাঁচানো গেলো না। সাজু সাহেবের জন্য দোয়া রইলো তিনি যেনো ওপারে ভালো থাকে। 🤲
আসলেই ঘটনাটা অনেক ব্যথিত ছিল আর আমার চোখের সামনে হয়েছে, যেটা আমাকে অনেকটাই ব্যথিত করেছে ।
ভাইয়া আপনার লেখার টাইটেল দেখে আমি বুঝতে পেরেছি সাজু সাহেবের ব্যাপারে হয়তো কোনো কিছু লিখবেন। আমার ধারণাটা একদম সত্যি হয়ে গিয়েছে। ভাইয়া, আমি ওইদিন যখন সাজু সাহেব কে নিয়ে লেখা পোস্টটি পড়েছিলাম তখন উনার জন্য মনে মনে অনেক দোয়া করেছি ওনাকে যেন সুস্থ করে দেয় আল্লাহ। হয়তো ভাইয়া, উনার হায়াত এই কিছুদিনের ছিল এ কারণে হাজার চেষ্টা করে হাজার টাকা খরচ করেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। ভাইয়া তার পরিবারের মানুষগুলোর জন্য খুব কষ্ট লাগছে।
ভাইয়া,আপনি একদম ঠিক কথা লিখেছেন বিপদ আসলে সব দিক দিয়ে আসে। যাইহোক ভাইয়া, সাজু সাহেবের রুহের মাগফেরাত কামনা করি।ধন্যবাদ ভাইয়া।।
জীবনে এমনি আপু । কখন কি হয়ে যাবে বলা মুশকিল ।আমারও অবশ্য তাদের জন্য ভীষণ খারাপ লাগছে ।
ভাইয়া আগের পর্বের গল্পটি পড়ে ভেবেছিলাম সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। তাকে যে এভাবে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে এটা ভাবতেও পারিনি ভাইয়া।
মুনায়েমের এই কথাটি শুনে খুবই খারাপ লাগলো ভাইয়া। যাই হোক দোয়া করি ভাইয়া সৃষ্টিকর্তা যেন সাজু সাহেবকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করে।
সৃষ্টিকর্তা তোমার আশীর্বাদ কবুল করুক । আসলেই ব্যাপারটা অনেকটাই কষ্টদায়ক ছিল ।
বাইক এক্সিডেন্ট সকল এক্সিডেন্টকে হার মানায় কারণ এক্সিডেন্ট হলেই সরাসরি শরীরের উপর দিয়ে যায়,এই জন্যই এই বাইক এক্সিডেন্ট খুবই খারাপ।
এটা এখন মনে হচ্ছে একদম চিরন্তন সত্য,কথায় আছে না যে গরীব সে আরো গরীব হচ্ছে তেমন ভাবে বিপদটাও, কারো উপর একবার আসলে আর সে যায় না।
সর্বশেষ এটাই বলব আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুক
ঐ যে বললাম পৃথিবী কোন দিকে ঘুরছে বলা মুশকিল । সময় যখন খারাপ যায়, তখন সবদিক থেকেই যেন এলোমেলো হয়ে আসে সবকিছু ।
ভাই, সাজু সাহেবের ঘটনা পড়ে আমার খালাতো ভাইয়ের ঘটনাটি হুবহু মিলে গেল। আমার খালাতো ভাই গ্রামের রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফেরার সময় বড় একটি গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পাওয়ায় মর্মান্তিক অবস্থার কারণে রৌমারী থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ঢাকায় যখন নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তার একদিন পরেই সে নাকি মারা গিয়েছিল। কিন্তু আইসিইউ থেকে বলা হয়েছিল সে জীবিত আছে এবং প্রচুর পরিমাণে টাকা লাগবে। আমার খালু তাদের আশ্বস্ত করেছিল যত টাকাই লাগুক না কেনো তার ছেলে যেন সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু প্রচুর টাকা খরচ করে আমার খালাতো ভাই কে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। তিনদিন আইসিইউতে থেকে অনেক টাকা খরচ করে অবশেষে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে গ্রামের বাড়ি নিয়ে আসা হয়। সাজু সাহেবের ঘটনা আর আমার খালাতো ভাইয়ের ঘটনা প্রায় একই রকম। এরকম ঘটনা পড়লে সত্যিই মনে হয় ছোট শিশুদের মতো হাউমাউ করে কান্না করি। কেন জানি এই কথাগুলো যখন লিখছি তখন নিজেকে কন্ট্রোল করা খুবই কঠিন হয়ে গেছে। তবুও বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে, বাস্তবতাকে মেনে নিতে হয়। তাই এখন দুহাত তুলে সাজু সাহেব ও আমার খালাতো ভাইয়ের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আল্লাহ যেন তাদের বেহেস্ত নসিব করেন এই কামনা করি।
আপনার খালাতো ভাইয়ের ঘটনাটা শুনে খুবই ব্যথিত হলাম ।আসলে এমন ঘটনাই ঘটছে প্রতিনিয়তও আশেপাশে ।
শেষ পর্যন্ত আত্মরক্ষা হলো না ভাইয়া, বাইক এক্সিডেন্ট মারাত্মক খারাপ জিনিস খুব ইচ্ছে ছিলো বাইক কিনবো তবে আর না, ভাইয়া আপনার আজকের লেখা গুলো পরে খুব খারাপ লেগেছে, শেষ পর্যায়ে চোখের পানি সামলাতে পারিনি, আসলেই ভাইয়া এটা বাস্তব যে বিপদ যখন আসে সব দিক দিয়েই আসে।
আমিন
আমি পারিপার্শ্বিক অবস্থা লিখেছি ভাই । তবে পারিপার্শ্বিক অবস্থা এমনই ঘটছে । একটু চোখ কান খুললেই দেখা যায়। তাই বুঝেশুনে পদক্ষেপ নিন ।
ভাই আপনি ঠিক বলেছেন, "যখন বিপদ আসে সব দিক থেকে বিপদে আসতে থাকে। ভাইয়া আপনি আমাদের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ একটি পোষ্ট তুলে ধরেছেন এ জন্য আপনাকে প্রথমে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ভাই আপনার পোস্টটি পড়ে কিছুটা হল জ্ঞান অর্জন করতে পারলাম। অনেক বিষয়ে ধারণা পাইলাম। সব মিলিয়ে আপনার পোস্ট টি অনেক সুন্দর হয়েছে। আপনার জন্য অনেক ভালোবাসা ও প্রাণঢালা শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য ভাই ।
আগের পর্বে সাজু সাহেবের ঘটনা টা পড়ে ছিলাম। ভেবেছিলাম উনি হয়তো মারাত্মক ভাবে আহত হলেও বেঁচে আছেন কিন্তু আজকের কাহিনী টা পড়ে সত্যিই মন খারাপ হয়ে গেল। আপনি ঠিক বলেছেন বিপদ যখন আসে তখন চারদিক থেকে আসে। আমাদের দেশে আইসিইউ মানে হচ্ছে একটা টাকা কামানোর মেশিন। যে রোগী একবার ঢুকলো বেঁচে ফিরলেও আর্থিকভাবে সে অনেকটাই পঙ্গু হয়ে যায়। যাই হোক যিনি জীবন দিয়েছেন তিনি আবার তা ফিরিয়ে নেন। তার সবকিছুই পরিকল্পিত। আমাদের কাজ শুধু শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসটা ধরে রাখা। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
কি আর বলবো ভাই, এইসব নিয়ে বলতে গেলে অনেক কথাই বলতে হয় । তবে বলবো সব জায়গার পরিবেশ খুবই নাজুক ও ক্ষতিগ্রস্ত । এখানে অসুস্থ ও মৃত মানুষকে নিয়েও ব্যবসা হয় ।
আহারে সত্যিই মন খারাপ হয়ে গেলো আমার একেবারে।ভেবেছিলাম হয়তো সুস্থ হয়ে যাবে।
আইসিইউ তে যাওয়া রোগী খুবই কম দেখেছি যে বাচেঁ বলতে গেলে কম সুস্থ হয় । আসলে ওখানে জীবন-মৃত্যুর খেলা চলে, বাকিটা ইতিহাস ।
ভাইয়া আপনার লেখা পড়ে হৃদয় কেঁদে উঠলো। এরকম হাজার হাজার পরিবার আছে যারা নিজের শেষ সম্বলটুকু দিয়েও নিজের প্রিয় মানুষটিকে বাঁচাতে পারে না। আর যার মাথার উপর বাবা নেই তার জীবন অন্ধকারে ডুবে যায়। জানিনা সেই পরিবারের ভবিষ্যৎ কেমন হবে।তবে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনায় করি সেই মানুষগুলো যেন তাদের প্রিয় মানুষটিকে হারানোর শোক কাটিয়ে উঠতে পারে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।
যে চলে যায় , সে তো চলেই যায় । আর যারা বেঁচে থাকে তারাই বুঝে টিকে থাকার যন্ত্রণা কতখানি । আসলেই ব্যাপারটা অনেকটাই কষ্টদায়ক ছিল ।