ম্যানেজ || @shy-fox 10% beneficiary
দোতলার সিঁড়ি দিয়ে যখন নামছিলাম, ঝাঁঝালো একটা গন্ধ নাকে আসলো । বুঝতে পারছি আজ শিক্ষা অফিসারের বাসায় পোলাও রান্না হচ্ছে , হয়তো সঙ্গে খাসির মাংসের ভুনা নতুবা মুরগির মাংসের কষা । এই গুলো রান্নার আলাদা একটা সুগন্ধী বের হয় । তবে মাঝে মাঝে ভাবি, মানুষ মনে হয় এই খাবারগুলোতে ইচ্ছে করেই একটু অতিরিক্ত মসলা দিয়ে থাকে রান্না করার সময়, যেন গন্ধটা আশে পাশে ছড়িয়ে যায় ।
দিনের বেলা খুব একটা বেশি প্রয়োজন না হলে আমি নীচে নামি না । তবে আজ কিছু বিশেষ কারণে নিচে নামছিলাম । হুট করে দোতালায় হাকিম ভাইয়ের সঙ্গে দেখা । আমি বললাম,কি খবর কই যান । হাকিম ভাই বলল, আর বইলেন না ভাই । শিক্ষা অফিসারের বউটা হুট করে ফোন দিয়ে বলছে, তার নাকি টক দই লাগবে । তাই তাকে টক দই কিনে নিয়ে এসে দিলাম ।
ও আচ্ছা, আজ মনেহয় ভালই মেহমানদারী হবে শিক্ষা অফিসারের বাসায় । তো হাকিম ভাই দাওয়াত পেলেন নাকি । হাকিম ভাইয়ের ঠোঁটের কোণের মুচকি হাসি , হয়তো অন্য কথা বলছে ।যাইহোক আমি মনেহয় প্রশ্নটা একটু বেশি করে ফেলেছি হাকিম ভাইকে । হাকিম ভাই আমতা আমতা করতে করতে দ্রুত নিচে নেমে গেল, বুঝলাম তার কপালে দাওয়াত জোটেনি ।
এই বিশাল ভবনে ২০ এর অধিকের মতো পরিবার থাকে । হাকিম ভাই আসলে সবার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে । তবে দিনশেষে কয়টা পরিবার হাকিম ভাইয়ের পেটের খাবারের সুনিশ্চিত করে, এটা আমার সঠিক বোধগম্য হয়ে ওঠে না । যে টাকা মাইনে পায়, সেই টাকা দিয়ে হাকিম ভাই নিচতলার গ্যারেজের পাশের ছোট্ট ঘরে কোনো রকমে বউ-বাচ্চা নিয়ে থাকে।
মাসিক এত্তগুলো পয়সা কামাই করেও , এই দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির বাজারে প্রতিনিয়ত আমাকে হিমশিম খেতে হচ্ছে । না জানি হাকিম ভাইয়ের দিনকাল কেমন যাচ্ছে, এইটা মনে হয় শুধুমাত্র ঈশ্বর জানে । আমি শুধু ইদানিং এলোমেলো চিন্তা করি । এমনিতেই মাথা ব্যথা করে । সবকিছু ম্যানেজ করতে করতে, আমি একদম অস্থির হয়ে যাচ্ছি ।
যাইহোক বাহিরে চলে গেলাম , মূলত এই দুপুর বেলায় বাসার বাহিরে যাওয়ার একটাই কারণ সেটা হচ্ছে, মোবাইলে টাকা ছিল না আর তাছাড়া দুধ চা খেতে ইচ্ছা করছিল খুব । তাই মূলত বাসার সামনের টং এর দোকান থেকে চা খেয়ে, মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড করে নিয়ে আসলাম ।
বাসায় ঢুকতেই হাকিম ভাইয়ের রুমে একটা টোকা দিলাম, বললাম সন্ধ্যায় আপনাকে কল দিতে পারি । আপনাকে আমার প্রয়োজন হতে পারে । আপনি আমার ফ্ল্যাটে আসবেন । বেচারা হাকিম, শুধুমাত্র সম্মতি সূচক মাথা নাড়লো । শুক্রবার তো তাই চেম্বারে যাওয়ার তাড়া নেই । তাই মোটামুটি দুপুরের পরে খেয়ে একটু ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম । কখন যে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গিয়েছে, তা আর বুঝতে পারিনি ।
বাসার ভিতরে মাংসের তরকারির ঝাঁঝালো গন্ধে কেমন যেন নিজের ভিতরে একটা প্রতিক্রিয়া হচ্ছিল । হুট করে মনে পড়ে গেল দুপুর বেলার সেই ঘটনাটি । হাকিম ভাইকে কল দিয়ে বললাম, আমার ফ্ল্যাটে আসুন দরকার আছে আপনার ।
মিনিট দশেক পরে বাসার বেলটা বেজে উঠলো । আমি বুঝলাম হাকিম ভাই এসেছে । দরজা খুলতেই সেই মায়াবী চাহনি । আমি বললাম ড্রইংরুমে বসুন , আমি আসছি । অতঃপর যখন ড্রয়িং রুমে ঢুকলাম । হাকিম ভাই বলল, ভাই আমাকে আসতে বললেন যে । আমি বললাম , আপনার দরকার আছে । তাই আপনাকে ডেকেছি । সে যে একটু নার্ভাস, এটা তার চেহারাই বলে দিচ্ছে । প্রথমত সে একটু ভয় পেয়েছে, আমি তাকে আশ্বস্ত করে বলছি । ডিউটি ঠিকঠাক চলছে তো । সে আমাকে বলল, জি ভাই সবকিছু ঠিক চলছে ।
আমি হীরাকে চেঁচিয়ে বললাম, কিগো চিকেন কষা হতে আর কত দেরী । টেবিলে জলদি খেতে দাও, আমি আর হাকিম ভাই এক সঙ্গে খাবো । বড্ড ক্ষুধা পেয়েছে , বুঝলে হাকিম ভাই ।
হাকিম ভাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমি বললাম, যখন মনচাবে তখন এসে ছোট ভাইয়ের বাসায় খেয়ে যাবেন । আমার দরজা আপনার জন্য সর্বদাই উন্মুক্ত ।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
হাকিম ভাইয়ের সাথে আপনার আচরণই প্রমাণ করে দিচ্ছে আপনি কত বড় মনের মানুষ। মানুষকে তার তার পদবী অনুযায়ী মূল্যায়ন না করে মানুষ হিসেবেই মূল্যায়ন করতে হবে। আসলে হাকিম ভাইয়ের মতো মানুষদের যদি ১০ টাকার উপকার করেন দেখবেন সে আপনার ১০০ টাকার গুন গাচ্ছে। এ সব মানুষ অল্পতেই অনেক খুশি হয়ে হয়ে যায়।
আজকের গল্পটা আমার কাছে সেরা ছিলো। প্রতিটা মানুষের উচিত তাদের কাজের লোকদের সাথে ভালো আচরণ করা। আপনার পোস্ট দেখে অনেক কিছু শিক্ষা নেওয়ার আছে। ভালো লাগলো। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ প্রিয় ভাই। ❣️❣️
প্রথমেই আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ভাইয়া।সুন্দর করে ম্যানেজ করে আমাদের সামনে ম্যানেজ তুলে ধরেছেন।হাকিম ভাই এর সাথে আপনার যে আচরণ।তা আমাদের অনেক শিক্ষা দেয়।আসলে আমাদের সমাজের কিছু উঁচু তলার লোক থাকে যারা ছোটদের কথা ভাববার সময় থাকেনা।হাকিম ভাই কে ডেকে বাসায় খাওয়ানোর বিষয়টি আমার কাছে আপনার প্রতি শ্রদ্ধা আরও অনেক গুনে বেড়ে গেছে।একাজগুলো আমিও করি ভাইয়া।আমরা সবাই যদি এরকম মানবিক হতে পারতাম তাহলে আমাদের সমাজটা বদলে যেতসত্যিই আপনাকে অনেক অনেক অনেক সেলুট এবং শুভকামনা।এভাবেই আপনার মানবিকতা ধারাকে অব্যাহত রাখেন এটাই প্রত্যাশা♥♥
ভাইয়া আসলে আপনার লেখাগুলো যতই পড়ি ততই আপনার প্রতি মুগ্ধ হয়ে যাই। সত্যি ভাইয়া আপনার মত করে যদি সবাই ভাবতো তাহলে হয়তো হাকিম ভাই এর মত মানুষ গুলো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতো। আসলে তাদেরকে খাওয়ানোর মাঝে যে আনন্দ রয়েছে এবং তাদের মুখে সেই পরিতৃপ্তির হাসি দেখার মাঝে যে আনন্দ রয়েছে তা অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। আমার কাছে পুরো বিষয়টি খুবই ভালো লেগেছে ভাইয়া। এজন্যই আপনাকে আমি এতটা ভালবাসি। অনেক অনেক ধন্যবাদ এবং শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
পাঠকের সন্তুষ্টি রক্ষার চেষ্টায় ব্রত লেখক প্রতিনিয়ত।
বাহ,আপনার লেখা পড়ে খুবই ভালো লাগলো।বিশেষ করে শেষ কয়েকটি লাইন পড়তে পড়তে ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলাম।"মানুষকে সেবা করা পরম ধর্ম" ,আমাদের ধর্মগ্রন্থ এ লেখা আছে।খুব ভালো কাজ করেছেন আপনি।ধন্যবাদ ভাইয়া।
মানবিক হওয়ার চেষ্টা চলছে আপু মন থেকে । আশীর্বাদ করবেন।
একদম ভাইয়া👍.খুবই ভালো কাজ এটি👌.
মানুষ মরে যায় ঠিকই, কিন্তু মানুষের স্মৃতিগুলো থেকে যায়। মানুষের কাজ কীর্তিগুলো মানুষের হৃদয়ে গেঁথে থাকে। একজন মানুষের হৃদয় কতটা কোমল এবং নরম হলে এরকম কাজটা করতে পারে। সত্যিই ভাইয়া আপনি একজন সাদা মনের মানুষ, প্রাউড অফ ইউ, আপনাকে স্যালুট জানাই। আপনি যে মানুষটাকে ডেকে এনে সম্মানের সহিত আপনার নিজের সাথে খাইয়েছেন, তার অন্তর জানে আর আল্লাহ জানে, উনি আপনাকে কতটুকু দোয়া করেছিলো। আসলে গরিব মানুষ বেশি কিছু আশা করে না, অল্পতেই তারা মহাখুশি। আর আপনার শুক্রবার দিনের এত সুন্দর একটি মুহূর্ত আমাদের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য আপনার প্রতি রইল অন্তরের অন্তস্থল থেকে ভালোবাসা অবিরাম ভাইয়া।
ধন্যবাদ ভাই। আপনার মতামত আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে ।
ভাইয়া আজকে আপনার পোস্টটি পড়ে আমার খুবই ভালো লাগলো। সত্যিই আপনার চিন্তাধারা অন্য সবার চাইতে আলাদা। শিক্ষা অফিসারের বাসায় খুবই সুস্বাদু রান্না হয়েছে এবং হাকিম ভাই নিজে টক দই কিনে দিয়েছে কিন্তু হাকিম ভাইয়ের কপালে দুমুঠো ভাত জুটলো না কিন্তু আপনি হাকিম ভাইকে খুবই সুন্দরভাবে একটি খাবারের আয়োজন করে বাসাই আসতে বললেন,সে বুঝতেই পারলো না। হুট করে সে সারপ্রাইজ হয়ে গেল। আসলেই এটা খুবই খুশির বিষয় হাকিম ভাইয়ের জন্য। সে ভাবতেই পারিনি যে আপনি তাকে খারারের ব্যবস্থা করবেন।সত্যিই আমার খুবই ভালো লাগলো। এরকম হুট করে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা খুবই ভালো লেগেছে। হাকিম ভাইয়ের মুখে হয়তো তখন আনন্দের হাসিটা ফুটে উঠেছিল। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আপনার সুস্থতা কামনা করছি।
পাঠকের সন্তুষ্টি ,লেখকের আত্মতৃপ্তি । ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
সমাজে নিম্ন আয়ের মানুষেরই অনেক হাসি খুশি জীবন যাপন করে। যার যত হয় তারা ততো ব্যয় হয়ে থাকে।
আপনার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা হাজার গুণ বেড়ে গেল। একটা মানুষ কতটা ভালো ও দায়িত্বশীল হয় তা আপনাকে না দেখলে বুঝতাম না। আপনাকে আমার মনের অন্তস্থলের সকল ভালোবাসা জানাই।
মানবিক হয়ে উঠুক পৃথিবীর মানুষজন এই কামনাই করি ।ধন্যবাদ ভাই।
লাস্ট লাইনগুলো পড়ে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।জাস্ট অসাধারণ!!
সত্যিই মন ভালো হয়ে গেলো পড়ে।
পাঠকের সন্তুষ্টি ,লেখকের আত্মতৃপ্তি ।
বাহ খুব চমৎকার ছিল যখন পড়েছিলাম আর অনুভব করছিলাম, যেই মানুষগুলো সবসময় আমাদের জন্য তাদের জীবন বিলিয়ে দেয় সেই মানুষগুলোকে আমরা কতটুকু সম্মান করতে পারি। সেই মানুষটা কতই না খুশি হয়েছে আপনার পাশে বসে খেতে পেরে। চমৎকার একটি ভালোলাগা অনুভব করছি মনের মধ্যে আপনার পোস্টটি যখন পড়েছিলাম।
আসলেই অনুভূতিটা ভিন্ন রকমের ছিল । ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
অনেক বেশি ভালো মানুষ না হলে এসব করা সম্ভব না ভাইয়া ।কি বলব আপনার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেল। আমাদের সমাজে হাকিম ভাইদের মত মানুষ অনেক আছে কিন্তু আপনাদের মত মানুষ খুব কম। যারা অন্যের চোখের ভাষা বুঝে পেটের খবর বোঝে। আমার এটা খুব খারাপ লাগে আমরা এতগুলো মানুষের আয়োজন করতে পারি কিন্তু যে মানুষটি আমাদের বাড়ির নিরাপত্তা প্রদান করে তার জন্য একটা প্লেট বরাদ্দ করতে পারিনা।
যাইহোক আপনার প্রতি সেলুট রইল।
ধন্যবাদ আপু । আমি কৃতজ্ঞতাবোধ প্রকাশ করছি ।