শিউলি || @shy-fox 10% beneficiary

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

স্যার কাটমু কি আর তো ভালো লাগছে না । সারাদিন ঠিকমতো ঘুম হয়নি অনেক ক্লান্ত লাগছে । যদি কাজ না করেন ,আমারে ছাইড়া দেন বাড়ি যামু আর যদি কাটতে বলেন , তাহলে এখনই কেটে ফেলছি ।

20220306_163330-01-01.jpeg

বলছি অটোপসি রুমের তসর ভাইয়ের কথা । তখনো বড্ড বিচ্ছিরি গন্ধ বেরোচ্ছিল তার মুখ থেকে । সারাদিন বাংলা মদ খায় তো, তাই এই অবস্থা । ফোর্থ ইয়ারে পড়াশোনা করার সময় বেশ কয়েকবার অটোপসি রুমে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল । আমার আসলে মূলত তেমন সার্জারি বা ফরেনসিক কার্যকলাপ নিয়ে খুব একটা আগ্রহ ছিল না । তবে যেহেতু প্রফেশনাল রিলেটেড পড়াশোনা, তাই মাঝে মাঝে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম।

সুব্রত স্যার আমাদের কলেজের ফরেনসিক বিভাগের নামকরা অধ্যাপক । মহাশয় বড্ড চিন্তুক স্বভাবের মানুষ । সে কোন কেস হাতে নিলে সেটাকে চেষ্টা করে সর্বোচ্চটুকু দিয়ে সমাধান করার জন্য। দুপুর নাগাদ এই একটা ডেড বডি হসপিটালের মর্গে চলে এসেছে । মর্গ থেকে ডাক মানেই তসর ভাই আর সুব্রত স্যারের যেন আলাদা একটা চাপ বেড়ে যাওয়া ।

20220306_162904-01.jpeg

কোনরকম ঘুম থেকে দুপুর নাগাদ তসর ভাই উঠেছে । তাতেই যেন মোবাইলটা ঘনঘন বেজে উঠছে , তসর ভাই মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে মর্গ থেকে তাকে ফোন দিয়েছে । ফোনের ওপাশ থেকে কে যেন বলছে, কি রে তসর, মর্গে আয় তোর জন্য কাজ আসছে । তসর ভাই আসলে হুকুমের গোলাম। কিচ্ছু করার নেই, পেটের দায়ে তাকে কাজ করতেই হবে ।

আমরা তখনও হলরুমে সুব্রত স্যারের ক্লাস করছিলাম । মোটাসোটা শ্যামলা বর্নের একটা মানুষ লুঙ্গি অর্ধেক পরিমাণ টেনে বেঁধে, খুব জোরে জোরে হেঁটে ক্লাসের সামনে চলে এসেছে এবং হাঁপাচ্ছে । চেঁচিয়ে স্যারকে ডেকে বলল, ও স্যার মর্গ থেকে ডাক এসেছে । নতুন কেস রেডি, আপনারে তো আমার সঙ্গে যাইতে হইবো । আমরা তো কিছুটা রীতিমত অবাক হয়ে গিয়েছে , তসর ভাইয়ের কার্যকলাপ দেখে । স্যার আমাদেরকে তসর ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয় করে দিল এবং বলল ভদ্রলোকের নাম তসর । সে আমাদের মর্গের প্রধান কাজের দায়িত্বে থাকে।

20220306_162908-01.jpeg

স্যার তার মোবাইল ফোনটা বের করে বাড়িতে বলে দিল, তার ফিরতে দেরী হবে এবং সামনের বেঞ্চে বসা তুহিন কে ডেকে বলল , ক্যান্টিন থেকে খাবার নিয়ে আসো এবং তসর কে বলল তুমি গিয়ে সবকিছু রেডি করে নাও । আমি খাবার খেয়ে আসছি । বুঝে গেলাম যে, আজকে নতুন কেসের জন্য বেশ ভালই বেগ পেতে হবে স্যার কে ।

ইচ্ছা করেই তুহিনের সঙ্গে আমিও ক্যান্টিনে চলে গিয়েছিলাম এবং তুহিনকে বললাম , তুই ক্লাসে যা । আমি স্যারের খাবারটা নিয়ে যাচ্ছি, স্যারের রুমে । স্যারের রুমের সামনে গিয়ে বললাম, স্যার এই যে আপনার খাবার । স্যার আমাকে দেখেই বলল তুমি যে, তুহিন কোথায় । স্যার কে বললাম, স্যার তুহিন একটু অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছে । তাই আমি খাবারটা নিয়ে আসলাম।

ও আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে আমি দুপুরের খাবারটা খেয়ে নেই । আচ্ছা তুমি খাবার খেয়েছো তো, যদি খাবার খেতে চাও আমার সঙ্গে বসতে পারো । আমি স্যারকে বললাম, স্যার আমার দুপুরের খাবার খাওয়া হয়ে গিয়েছে । আচ্ছা তুমি আমার সঙ্গে কিছুটা সময় থাকতে পারবে মর্গে , আমি সম্মতি সূচক মাথা নাড়লাম । অতঃপর স্যার বলল তাহলে বাইরে আমার জন্য অপেক্ষা করো, আমি খেয়ে আসছি ।

20220306_162913-01.jpeg

মিনিট পনেরো পরে স্যার রুম থেকে বের হলো এবং আমাকে বললো চলো তাহলে আমরা মর্গের দিকে যাই । মর্গের কাছাকাছি এসে স্যার, পুলিশের লোক কে দেখে বলল , এই তোমাদের অফিসার কোথায় । তাকে আমার কাছে আসতে বলো এবং সঙ্গে কেস ফাইলটা নিয়ে আসতে বলো, আমি একটু দেখতে চাই ফাইলটা । ঐ যে বললাম স্যার খুব চিন্তুক স্বভাবের মানুষ । প্রতিটা কাজের আগে সে খুব ভালোভাবে কেস ফাইলটা দেখে এবং জানার চেষ্টা করে,আসলে পুলিশ কি লিখেছে প্রাথমিক ভাবে ঘটনা সম্পর্কে ।

একটু পরেই মাঝবয়সী এক পুলিশের কর্মকর্তা একটা ফাইল হাতে নিয়ে স্যারের কাছে চলে আসলো । স্যার তাকে এক কথায় বলে দিলো, আমি অতিরিক্ত কথা বলা পছন্দ করিনা । সঙ্গে থাকবেন, চুপচাপ কেস দেখবেন । আমার যা করণীয় তাই করে দিব এবং সেই রিপোর্ট নিয়ে চলে যাবেন । এটা যদি আপনার ভাল লাগে, তাহলে আমি কাজ করে দেব নতুবা আমি আপনাদের মনগড়া কাজ করতে বাধ্য নই ।

20220306_162924-01.jpeg

মিনিট দশেক পরে আবছা আলোতে হালকা অন্ধকারাচ্ছন্ন একটা ঘরের ভিতরে, তসর ভাই স্যার, পুলিশের লোক এবং আমি ঢুকে পড়লাম । দেখলাম সাদা কাপড় দিয়ে মোড়ানো একটি ডেড বডি পড়ে আছে । ফোর্থ ইয়ারে পড়ি তো, তাই একটু আলাদা সাহস বুকের মধ্যে প্রতিনিয়ত তখন কাজ করতো । নতুন নতুন বিষয় দেখতে বেশ ভালই লাগতো ।

স্যার কেস ফাইলটা ভালোভাবে ঘেঁটেঘুঁটে দেখে আমাকে বলল , দেখতো গলার নিচে ডান পাশে কোন আঘাতের চিহ্ন আছে কিনা । আমি তসর ভাইকে বললাম , লাশের মুখের উপর থেকে কাপড়টা সরিয়ে ফেলুন । আমি স্যারের কথা মোতাবেক লাশের কাছে যেতেই , লাশের মুখটা দেখতেই অনেকটা মানসিক ভাবে ধাক্কা খেয়ে গেলাম । মুখটা অনেক পরিচিত, বহুবার দেখেছি এই মুখটা । আমি মানসিকভাবে অনেকটাই আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছি । একে আমি চিনি, এ আমার বাড়ির পিছনের শিউলি । স্যারকে বললাম, স্যার আপাতত সময় আমি এখানে থাকতে পারছিনা, লাশ আমার পূর্ব পরিচিত ।।

Banner.png

ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

Sort:  
 2 years ago 
কাহিনী কেবল শুরু হবে এর মধ্যে শেষ হয়ে গেলো। শিউলী মেয়েটা আপনার পূর্ব পরিচিত এইটুকু জানা হলো। তবে কাহিনি টা মিসির আলীর অমীমাংসীত রহস্যের মতো হলো। তবে আমার মনে হচ্ছে এটার পার্ট-২ থাকলে ভালো হতো।
যাইহোক, আমার এই কাটাকাটির বিষয় গুলো অনেক ভয় লাগে। তিন- চার মাস হাসপাতালে থেকে কাছে থেকে অনেক রোগী দেখছি তাই এখন ভয় লাগে। ভাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। ❣️❣️❣️
 2 years ago 

দেখি চেষ্টা করব পরবর্তী পর্ব নিয়ে আসা যায় কিনা । ধন্যবাদ অনুপ্রাণিত করার জন্য।

 2 years ago 

আপনার লেখাগুলো পড়লে আমার স‍্যার হুমায়ুন আহমেদের কথা মনে পড়ে। উনার মতোই আপনার লেখার ধরন গল্প টা শেষ হয়েও যেন শেষ হয় না😞। আজকের টা পড়ে আমি বাকরুদ্ধ। জানি না আপনার জায়গাই আমি থাকলে কী করতাম। এবং আমি শুনেছি যারা মৃতদেহ কাটাকাটি করে তারা নাকী মদ‍্যপান করে থাকে। অসাধারণ লিখেছেন ভাই। পড়তে গিয়ে আমি যেন সম্পূর্ণ টা অনুভব করতে পারছিলাম।।

 2 years ago 

পাঠকের সন্তুষ্টি , লেখকের আত্মতৃপ্তি ভাই ।

 2 years ago 

💖💖🙂

 2 years ago 

ছোট কথা ছোট ব্যথা
অল্প অল্প গল্প কথা
লাগছিল বেশ।
শুরু না হতেই কেমনে যেন
হয়ে গেল শেষ।

 2 years ago 

ফিকশন যে এমনি হয়ে থাকে আপু । কিচ্ছু করার নেই ।

 2 years ago 

ভাইয়া যখন আপনার পোস্টগুলো পড়ি তখন খুবই আগ্রহ নিয়ে ও মনোযোগ দিয়ে পড়ি। কারণ আপনার লেখাগুলো যদি মনোযোগ দিয়ে না পড়ি তাহলে অনেক কিছুই মিস হয়ে যেতে পারে। আমি আপনার লেখা প্রতিটি লাইন অনেক ভালভাবে পড়ি এবং বোঝার চেষ্টা করি। কারণ আপনার লেখা পড়তে আমার ভালো লাগে। আসলে শিউলি নামের সেই মেয়েটি হয়তো এই পৃথিবীতে নেই। তবে তার মৃত্যুর জন্য হয়তো এই পৃথিবীর কিছু মানুষ দায়ী। এভাবেই শিউলির মত হাজার হাজার মানুষ পৃথিবী থেকে চলে যায়। হয়তো তাদের মৃত্যুর রহস্য অজানাই রয়ে যায়। কখন যে আপনার লেখাগুলো পড়তে পড়তে শেষ লাইনে চলে আসলাম তা বুঝতেই পারলাম না। খুবই সুন্দর ছিল ভাইয়া আপনার লেখা। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 2 years ago 

কিছু অতীত তো ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকেই । দেখি সামনে অতীত প্রকাশ করা যায় কিনা ।

 2 years ago 

ভাই আপনার পুরো গল্পটা পড়লাম। আসলে প্রথমে একটু অন্যরকম লেগেছিল। কিন্তু শেষে আপনি যেই ভাবে আমাদের অবাক করে দিবেন তা জানা ছিল না। আসলে আপনার লেখার ধরনের প্রশংসা করতে হয়। অনেক ভাল লেখেন ভাই আপনি। আর ভাই এরকম সুন্দর একটি বাস্তবধর্মী গল্প আমাদের মাঝে উপহার দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। শুভকামনা রইল ভাই আপনার জন্য।

 2 years ago 

ধন্যবাদ আপনার স্বচ্ছ ও সাবলীল মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

ফরেনসিক মেডিসিন সম্পর্কে আমার জানার আগ্রহ অনেক।মেডিকেলে স্টুডেন্ট হিসেবে আপনি যেহেতু লাশ কাটাকাটি অনেক করেছেন তাই এ বিষয়ে আপনি বেশ ভাল জানেন। যদি সম্ভব হয় আপনার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার অনুরোধ রইলো। শিউলির কি হলো, কেনই বা তার লাশ ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে আনতে হল জানতে ইচ্ছে করছে।

 2 years ago 

ব্যাপারগুলো অনেকটাই লজিকাল । দেখি রহস্য উন্মোচন করা যায় কিনা ।

 2 years ago 

ভাইয়া আজকে আপনার ভিন্ন ধরনের একটি লেখা পড়লাম। সত্যি ভাইয়া আপনার প্রতিভা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। আপনি সবসময় ভিন্ন ধরনের চিন্তাধারা সকলের মাঝে উপস্থাপন করেন। আসলে মর্গে হাজার হাজার শিউলিরা এভাবে পড়ে থাকে। হয়তো এই শিউলী আপনার পূর্ব পরিচিত। কিন্তু এরকম অনেক শিউলি আছে যাদের মৃত্যুর পর সেই ফরেনসিক টেস্ট করতে হয়। একটি ভিন্ন ধরনের লেখা উপস্থাপন করেছেন এ জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভাইয়া। ভাইয়া শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।

 2 years ago 

ধন্যবাদ আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য ভাই ।

 2 years ago (edited)

আসলে ভাইয়া ডেড বডির কথা শুনে তো শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেল। আমি আবার এগুলো একেবারেই দেখতে পারিনা, যেদিন দেখব সেইদিন আমার চোখের ঘুম হারিয়ে যাবে। তবে আপনি আপনার চতুর্থ বর্ষে থাকাকালীন যে ঘটনাটি বর্ণনা করলেন সত্যি ভাইয়ার স্মরণীয় একটি ঘটনা যে কেউ এসব ঘটনা মনে করার চেষ্টা করবে। ধন্যবাদ ভাইয়া গা শিউরে ওঠা ঘটনা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। তবে ভাইয়াকে শিউলিকে বা তার পূর্বের ঘটনা গুলো যদি শেয়ার করতেন তাহলে আরেকটু ভালোভাবে বিষয়টা বুঝতে পারতাম।

 2 years ago 

দেখি চেষ্টা করবো রহস্য উন্মোচন করার জন্য। ধন্যবাদ আপু ।

 2 years ago (edited)

মেয়েটি যদি আপনার পূর্ব পরিচিত না হতো তাহলে হয়তো আপনি মানসিকভাবে এমন ধাক্কাটা খেতেন না।

আমি অবশ্য এসব দেখে তেমন একটা ভয় পাই না কারণ আমি এর আগে একটা লাশ নিজে গাছের সাথে ঝুলতে দেখেছি এবং লাশটা এ নামিয়েছি।
বিশেষ করে সাহসটা হয়েছে মাঝেমধ্যে আমাদের এলাকায় কোন মানুষ মারা গেলে আমি গোসল করানোর সময় থাকি এজন্য।
শিউলির জন্য দোয়া রইল সৃষ্টিকর্তা যেন তার জীবনের সমস্ত অপরাধ মাফ করে দেন।।

 2 years ago 

যেখানেই পরিচিত মুখ থাকে সেখানেই তো ধাক্কা লাগে ভাই ।ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

দারুণ লাগলো পড়ে।যখন থেকে পড়া শুরু করেছি তখন একবার ও মনে হয়নি আর পড়বো না বা পড়তে ইচ্ছে হচ্ছেনা এমন।পড়তে পড়তে কখন লেখার লাস্ট লাইনে চলে এসেছি বুঝতে পারিনি!ভাইয়া এ ধরণের লেখা কিন্তু আরো চাই।

 2 years ago 

চেষ্টা করবো আপু । ধন্যবাদ আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 56477.82
ETH 2390.38
USDT 1.00
SBD 2.33