গন্তব্য যখন পাসপোর্ট অফিস || @shy-fox 10% beneficiary
যে জায়গাটাতে থাকি, সেখান থেকে পাসপোর্ট অফিসের দূরত্ব কম করে হলেও ত্রিশ কিলোমিটারের বেশি । এমনিতেই আমাকে বেশ মানসিক চাপ ও কাজে চাপের ভিতরে থাকতে হয় । তারপরেও হাতে একদম সময় পাই না বললেই চলে । সর্বোপরি একটা রোবটিক জীবন আমার । এই কথাটা কেন বললাম , আমার সঙ্গে যারা কমবেশি পরিচিত আছে । তারা আমার ব্যাপারটা খুব ভালভাবেই জানে। তাই নতুন করে এই ব্যাপারটা নিয়ে আর কথা বলতে চাই না ।
কয়েক মাস আগেও গিয়েছিলাম একবার পাসপোর্ট অফিসে । সেবার আমার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে ছিলাম । আসলে সরকারি অফিস-আদালত তো, ঐ যে একবার বলেছিলাম তাদের কিছু নিজস্ব নিয়মকানুন আছে। বলতে পারেন, সেই নিয়মকানুনগুলো তারা নিজেরাই বানিয়ে ফেলেছে । সেই নিয়ম কানুনের বাইরে একটু এদিক-সেদিক চলতে গেলে অনেক বাধা-বিপত্তির অবস্থায় পড়তে হয় ।
আমার হাতে এত সময় কই বলেন । আমার হাতে তো ঝুট-ঝামেলা পোহানোর মত সময় নেই । তবে কারো কাছে আবার অফুরন্ত সময় । যাইহোক অনেক বুঝে শুনে , যার হাতে প্রচুর সময় আছে সেই মানুষটাকে আমি খুঁজে বের করে ছিলাম । বলতে পারেন, সে দালাল । সে আমাকে একদম নিমিষেই পানির মত করে, সব কাজ ক্লিয়ার করে দিয়েছে মাত্র দুই দিনে । তবে পয়সা গুনতে হয়েছে ভাই, দ্বিগুণের মত ।
আমি লেখা বেঁচে খাই, কেউ আবার সময় বেঁচে খায় । কি অদ্ভুত, তাইনা । যদিও আমি ইচ্ছা করলেই অনেকগুলো কথা এই সম্পর্কে বলতে পারি । তবে আপাতত আমার মুখটা বন্ধ আছে । কারণ বেশ তিক্ত একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে । তাই আর ইচ্ছা করেই পুরনো কথাগুলো, মনে করতে চাই না । তবে এতোটুকু কথাই বলতে চাই, পয়সার কাছে নিয়মকানুন সব বেমানান হয়ে যায় । এটাই চরম সত্য কথা ।
গতরাতে এই ভদ্রলোক আমাকে ফোন দিয়েছে এবং বলেছে, বাবাজি সকাল দশটার ভিতরে রেডি থেকো । তোমাকে নিয়ে আজ পাসপোর্ট অফিসে যাবো, তোমার ছবি তুলতে এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে । তোমার অ্যাপ্লিকেশন তারা গ্রহণ করেছে । এখন শুধু ছবি তুললে আর ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিলেই মোটামুটি কাজ শেষ । তারপরে বিশ থেকে বাইশ দিন পরেই পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যাবা ।
কত দ্রুত কাজটা হয়ে গেল, ভাবতেই আমার কেমন জানি অবাক লাগছে। যে কাজটা আমি বিগত দুই তিন মাসে করতে পারলাম না । সেটা তিনি মাত্র দুদিনের ভিতরেই করে ফেলল । ভাবতে ভাবতেই কোনরকমে রাতটা পার করে দিলাম ।
বেলা সাড়ে নয়টার ভিতরে ঘুম থেকে উঠেছি । যদিও আমার এত সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস নেই , মানে একদম নেই । তবে আজ অনেক কষ্ট করে ঘুম থেকে উঠে যখন বাহিরে গেলাম, তখন রাস্তার অবস্থা দেখে মোটামুটি অবাক লেগেছে । এত সকালে রাস্তায় এত যানবাহন, ব্যাপারটা দেখে বেশ ভালই লাগলো । ওপাশ থেকে যখন ভদ্রলোককে দেখলাম, তখন যেন একটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছিল । অবশেষে দুজন মিলে বাসে চড়ে, রওনা দিয়ে দিলাম পাসপোর্ট অফিসের উদ্দেশ্যে ।
ঘণ্টা খানিকের ভিতরেই গাড়ি থামলো পাসপোর্ট অফিসের সামনে । গাড়ি থেকে নেমে যখন পাসপোর্ট অফিসের ভিতরে গেলাম, তখন মোটামুটি বেশ ভিড় দেখতে পেলাম । আমাকে ভদ্রলোক বলল , বাবা তুমি কোনো চিন্তা নিও না । দেখবে মুহুর্তেই কাজ হয়ে যাবে । যদিও আমি প্রথমে তার কথাগুলোকে খুব একটা গুরুত্ব দেইনি । তবে পরে যখন মিনিট দশেকের ভিতর কাজগুলো হয়ে গেল । তখন আসলে তার কথা গুলোতে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়েছি । এত লোকের মাঝে, সে আমার কাজটা এত দ্রুত করে ফেলল, যেটা আমাকে একটু বেশ অবাক করেছে ।
ভদ্রলোক বেশ পান খায় । অবশেষে কাজ সেরে যখন গাড়িতে উঠলাম , পান চিবুতে চিবুতে সে আমাকে বলছে বুঝলে বাবা, দুনিয়াতে একটু বুদ্ধিশুদ্ধি না করে চললে হয়না । আমি শুধু মাথা নেড়ে গেলাম তার কথা গুলো শুনে ।
আসলে তাকে দোষ দেওয়ার মতো কোনো দোষ আমার হাতে নেই । সে জাস্ট সময়ের সঠিক ব্যবহার করেছে । কারণ সে তো মাত্র মধ্যস্থতাকারী । আর যাকে তারা ব্যবহার করছে বা তাকে যারা এই রাস্তায় নামিয়েছে , দোষ দিলে হয়তো আমি তাদেরকে দিতে পারি ।
যাইহোক অবশেষে গাড়ি থেকে নামার পরে, তাকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করলাম । বড় রুই মাছের পেটি খাবে সে । সাদা ভাতের সঙ্গে, রুই মাছের পেটি দিয়ে ভাত খাইতে খাইতে অবশেষে সে আমাকে বলল, যেদিন তোমার ফোনে পাসপোর্ট অফিস থেকে বার্তা আসবে , সেদিন তুমি গিয়ে পাসপোর্টটা সংগ্রহ করে নেবে । তোমার কোন কাজ নেই । এখন বাড়িতে বসে থাকো আর কিছুদিনের জন্য অপেক্ষা করো ।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
কথাটা অপ্রিয় হলেও সত্য। কারণ এদেশে টাকা ছড়া কাজ করাতে গেলে সেই কাজ ঝুলে থাকে মাসের পর মাস৷ তবে স্পিড মানি দিলেই কাজের স্পিড হয়ে যায় দ্বিগুনের চেয়েও বেশি।
আপনি দালালের মাধ্যমে কাজ হাছিল করেছেন এটা প্রোবলেম না। তবে আপনি একটি সাইনবোর্ডের ছবি তুলেছেন। এই রকম লেখা পড়লে একটু ভয়ও কাজ করে। দালালরা অনেক সময় অনেক কাহিনী করে। যাইহোক, আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো। আশা করি খুব দ্রুত পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। 💞💞
আমি নিজেও যখন আমার পাসপোর্ট করার জন্য পাসপোর্ট অফিসে গিয়েছিলাম তখন দেখেছি সেখানে কত মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে দিনের পর দিন যদিও আমার বেলায় তেমনটি হয়নি।আপনার এই বাস্তবভিত্তিক পোস্ট গুলো আমাকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করে অনেক বেশি উজ্জীবিত করে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ প্রতিনিয়ত আপনি আপনার বাস্তবতাকে সামনে আমাদের সাথে এভাবে শেয়ার করার জন্য♥♥
ভাইয়া আপনি একদম ঠিক কথাই বলেছেন পয়সার কাছে নিয়মকানুন কোন ব্যাপার না। আসলে বর্তমান সময়ের প্রতিটি ক্ষেত্রেই পয়সা ছাড়া কিছু হয়না। সবাই উপরে উপরে নিয়মকানুন দেখায় কিন্তু পয়সা দিলে সবকিছু ঠিক-ঠাক। যে কাজটি করতে আপনার অনেক দিন সময় লেগেছে সেই কাজটি দালাল সাহেব খুব শীঘ্রই করে দিয়েছে। আসলে সবকিছুর মূলে রয়েছে পয়সা। আমাদের বাস্তবতার কাছে টাকার মূল্য অনেক বেশি। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই টাকা ছাড়া কিছু হয়না। হয়তো হয় সেটা অনেক সময় লাগে। তবে যাই হোক আপনি আপনার এই অভিজ্ঞতা আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো। 💗💗
তাই হচ্ছে ভাই । পয়সাই সত্য, তাহার উপর আর কিছু নাই । এইটা আমি প্রমাণিত।
ভাই আসলে কিছু বলার নেই। অনিয়ম টাকেই নিয়ম বানিয়ে ফেলেছি আমরা। দুই তিন মাসের কাজ 10 মিনিটে হয়ে গেলে মানুষ কেন ঝামেলায় যেতে চাইবে। দুর্নীতির জালে প্রতিদিন আমরা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাচ্ছি
দুর্নীতি যখন জীবিকা , তাহলে তো সাধারণ মানুষের অবস্থা বেশ নাজেহাল।
এমন এক সময় ছিল পাসপোর্ট অফিসের সামনে দালালদের দৌরাত্ম্য অফিসের বারান্দায় উঠা যেত না। পাসপোর্ট অফিসের বাইরে যেন দালালদের আরেকটি অফিস। আজ থেকে পনের বছর আগে ২০০৭ সালের কথা বলছি। আমি পাসপোর্ট অফিসে গিয়েছিলাম পাসপোর্ট করার জন্য প্রথমে ভেবেছিলাম দালালকে কোন পয়সা দেবো না নিজেই করার চেষ্টা করব। কিন্তু বেশ কয়েকদিন ঘোরার পর আমি অফিসের বারান্দাতেই উঠতে পারিনি এতটাই ভিড়। পরবর্তীতে উপায় না পেয়ে একজন মধ্যস্থতাকারীর শরনাপন্ন হলাম। তারপরও পাসপোর্টের কাজ শেষ করতে আমার দেড় মাস সময় লেগেছিল। যাই হোক আপনার অনেক ভোগান্তির পরেও খুব অল্প সময় আপনি কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছেন জেনে খুব ভালো লাগলো। আসলে আমাদের সমাজ ব্যবস্থাটাই এরকম মধ্যস্থতাকারী ছাড়া কোন কাজ সহজে করা যায় না। আপনার মূল্যবান কিছু কথা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
এসব থেকে পরিত্রাণের উপায় কি তাহলে আদৌ আমাদের নেই কি , নাকি এই ভাবেই চলবে । কি যে বাবা বুঝে উঠতে পারছি না ।
এই বিষয়ে আমি আপনার সঙ্গে একমত। আসলে যার যেটা অফুরন্ত সে তো সেটাই বেঁচে খাবে। সরকারি অফিসে দালাল ছাড়া সঠিক পথে কাজ আদায় করা অনেক কঠিন। টাকা বেশি লাগলেও তারা মোটামুটি কথা মতো কাজ করে দেয় যেটা আপনার ক্ষেএেও হয়েছে। যাইহোক ছবি তুলতে গিয়ে যে বেশি বিড়ম্বনার স্বীকার হন নাই এটা দেখে ভালো লাগলো। আপনার জন্য শুভকামনা।।
যেমন অবস্থা তেমন ব্যবস্থা আরকি । তবে অনেক গুলো পয়সা খরচ করতে হয়েছে ভাই । যা খুব কষ্টকর।
ভাইয়া কথায় আছে, টাকার নৌকা পাহাড় দিয়ে চলে। আমি যখন পাসপোর্ট অফিসে প্রথম গেলাম তখন আমার মোটামুটি একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। বড় ভাইয়ের পাসপোর্ট করেছিলাম আমার এক সহকর্মীকে দিয়ে। ওখানে গিয়ে দেখি পাসপোট যারা বানাবে তাদের চাইতে বেশি হচ্ছে দালাল। তবে আপনার কথা ঠিক ওদের কে দোষ দিয়ে লাভ নেই, যারা ওদেরকে দিয়ে করাচ্ছে আসল দোশী তারাই। যাই হোক অবশেষে স্বস্তি ফিরে পেলেন জেনে খুবই ভালো লাগলো। আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনার প্রতি রইল অন্তরের অন্তস্থল থেকে আন্তরিক অভিনন্দন।
এমনটাই তো হচ্ছে ভাই । ওনারা ভিতরে বসে এসির বাতাস খায় আর বাহিরে যা করার দালাল করে । কি একটা অবস্থা ।
কোথায় আছে টাকা থাকলে বাঘের চোখ পাওয়া যায়। আসলে এই পৃথিবীতে টাকা ছাড়া কিছুই সহজে অর্জন করা যায় না। যে কাজটি আমরা সাধারন মানুষরা করতে অনেকটা সময় ব্যয় করি সেই কাজ দালাল চক্রের হাতে গেলে তারা খুব দ্রুতই করে দেয়। আসলে টাকার কাছে সবাই বিক্রি হয়ে যায়। শুধু যে দালাল চক্র এই টাকা হাতিয়ে নেয় তা কিন্তু নয় এর সাথে কতৃপক্ষ জড়িত থাকে। সেজন্যই সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে তারা বাধ্য করে দালালের সহায়তা নিতে। আপনার লেখা পড়ে অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া। যাই হোক অবশেষে আপনার কাজ সফল হয়েছে এটা জেনে ভালো লাগলো।
ঐ যে বললাম এদের কোন দোষ নেই ,দোষ হচ্ছে যা এদের এই রাস্তায় নামিয়েছে তাদের । ধন্যবাদ আপু আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য।
সরকারের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দুর্নীতির জন্য গড়ে তোলা নিয়ম কানুনের কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে আছে।যার ফলে কোন কাজ সাধারণ মানুষ দ্রুত এবং অর্থ ছাড়া করতে পারে না। সবক্ষেত্রেই সুদ ঘুষ। এই যেমন আপনাকেও প্রায় দ্বিগুণ টাকা দিয়ে পাসপোর্ট বানিয়ে নিতে হলো।
হাহাহা একদিন আপনিও বিসিএস দিয়ে প্রজাতন্ত্রের চাকর হবেন । এসির বাতাস খাবেন আর বলবেন, এই ঝুট ঝামেলা কই থেকে আসে ।
মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন অফিস-আদালতে হয়ে যায় গন্তব্য স্থল। তবে গন্তব্য স্থল গুলোতে মানুষ বিশেষ কোনো আসা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে থাকে কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে কিছু কিছু গন্তব্য স্থলে থাকা মানুষগুলোর আচরণ মোটেই গ্রহণযোগ্য হয় না।
এমনটাই তো দেখছি প্রতিনিয়ত। এর যে শেষ কোথায় তাই তো বুঝে উঠতে পারছি না ।