জানোয়ার || @shy-fox 10% beneficiary
রহমানের মেয়ে নূরীর দেখতে দেখতে বয়স ১২ পূরণ হলো । মেয়ে মানুষ তো তাই শারীরিক গঠনে অনেকটাই পরিবর্তন চলে এসেছে । রহমানের বউ আবার ভীষণ সংসারী মানুষ । মেয়েকে চোখের আড়াল করতেই চায়না । বাড়ির পাশের প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিল। এভাবেই চলছিল, মেয়ে এবার ফাইভে পড়ে । এই তো বছর দুয়েক আগেও করোনাকালীন সময়ে পড়াশোনার যা-তা অবস্থা হয়ে গিয়েছে । কেমনে কেমনে যে সেই সময়টাতে মেয়ে এত বড় হয়ে গেল, রহমান মিয়া বুঝে উঠতে পারেনা । সময় গুলো বড্ড দ্রুত চলে যায় ।
শফিক রহমানের থেকে বয়সে পাঁচ বছরের ছোট । এখনো বিয়ে করেনি । সংসারের ভিতরেই থাকে । সংসারে তো তেমন মানুষ নেই, রহমানের বাপ গত হয়েছে বেশ ভালোই সময় আগে । তারপর থেকে সংসারে রহমানের মা, রহমানের বউ, রহমানের মেয়ে আর শফিক থাকে । যায় দিন ভালো, তবে আসছে দিন কখনো ভালো হতে পারে আবার নাও হতে পারে ।
কালাম ভাই এলাকার নামকরা মাস্টার । ছোট্ট এলাকা তো তার ভিতরে গ্রামীণ পরিবেশ, তাই সহজেই সবার নজরে আসতে পেরেছে । রহমানের, কালামের কাছে পড়ার সৌভাগ্য হয়নি । আসলে রহমান তেমন একটা পড়াশোনাই করেনি । বাবা গত হওয়ার পর থেকে সংসারের হাল ধরতে গিয়ে মোটামুটি তার জীবনটা কাহিল । তবে শফিকের কিন্তু কালামের কাছে কিছু সময় যাতায়াত করার সুযোগ হয়ে উঠেছিল । অনার্সে পড়ার সময় তো, বেশ কয়েকবার গিয়েছিল কি করবে না করবে এসব বিষয় নিয়ে ।
সাদা পাঞ্জাবি পড়ে যখন হাটের রাস্তায় সেই হিরো সাইকেল নিয়ে কালাম ভাই যায়, তখন আশেপাশের লোক গুলো চেয়ে থাকে কালাম ভাইয়ের দিকে । নামকরা মাস্টার তার ভিতরে বড্ড সুনাম , বয়স তো হয়ে গিয়েছে ষাট ছুঁইছুঁই । চায়ের দোকানগুলোতে যখন কালাম মাস্টার বসে, তখন আশেপাশের লোক গুলো ঘিরে ধরে থাকে তাকে । কতোই না কথা সবার , ভাই আমার ছাওয়ালটাকে একটু আপনার কাছে পাঠাবো পড়াতে নিয়েন। এইসব গল্প তো আছেই, তাছাড়াও এমনিতেই তো খোশগল্প করেই সবাই কম বেশি । মোটামুটি পান চিবুতে চিবুতে মাঝে মাঝে যখন পেপার পড়ার ফাঁকে পানের পিচকি ফেলে, তখন মুখ থেকে যেন আলাদা একটা ঘ্রাণ বের হয় ।
শফিক চেষ্টা করছে কিছু একটা করার। কি করবে আসলে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না । ইসলামী ইতিহাসের উপর মোটামুটি অনার্স কমপ্লিট করেছে । এই তল্লাটে তেমন আর শিক্ষিত মানুষ নেই বললেই চলে । ছোট গ্রাম তার ভিতরে কালাম মাস্টার তো আগে থেকেই আছে । তাই মোটামুটি শফিক চিন্তা করতে পারছে না, কি করবে সে । কালাম ভাইয়ের সঙ্গে বেশ কয়েকবার সে গল্প করার চেষ্টা করলো । কালাম ভাই তো সোজাসুজি বলেই দিলো, শফিক তুই বরং মুদি দোকান দে । এগুলো করে আর কি করবি, চাকরি-বাকরি তো আর হচ্ছে না ।
মাস দুয়েক গড়িয়ে গেল । শফিক চেষ্টা করছে সংসারের বোঝা হয়ে না থেকে, কিছু একটা করার জন্য । পাশের এলাকায় ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলছে , কন্টাকটার কে বলে মোটামুটি খুব স্বল্প বেতনের একটা কাজ ধরে নিল সাময়িক সময়ের জন্য । বাড়ি থেকেই রোজ যাতায়াত করে, খুব একটা অসুবিধা হয় না । আসলে কয়জন শ্রমিক প্রতিদিন ব্রিজ নির্মাণের জন্য কাজ করছে, সেই খোঁজ খবর আর সবাই কাজ ঠিকঠাক করছে কিনা সেটা একটু দেখভাল করে । মানে কন্টাকটারের একটু সহযোগী হিসেবে কাজ করছে ।
নূরীকে আগে থেকেই শফিক পড়াতো। যেহেতু শফিকের এখন নতুন কাজ,তাই নূরীকে পড়ানোর সময় পায়না । অবশেষে কালাম মাস্টারের কাছে নূরীকে কে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হলো । সবকিছু ঠিকঠাক মতোই চলছিলো, রহমানের বাড়ি থেকে কালাম মাষ্টারের বাড়ী খুব একটা দূরে নয়, মিনিট দুয়েকের পথ । যেহেতু স্কুল খুলেছে, তাই মোটামুটি স্কুল শেষে নূরী এখন প্রতিনিয়ত কালাম মাস্টারের কাছে পড়তে যায় । নূরীর সঙ্গে আরও অনেকেই পড়ে ।
রহমানের বউ বিকাল থেকেই চেষ্টা করছে, রহমানকে ফোন দেওয়ার জন্য । রহমানের ফোন বন্ধ, যদিও এটা নতুন কিছু না । কারণ মাঝে মাঝে কাজে যাওয়ার কারণে সেখানে গিয়ে ব্যস্ততায় থাকতে হয়, যার কারণে ফোন বন্ধ করে রাখে । বাধ্য হয়ে শফিককে ফোন দিল এবং ডুকরে কেঁদে উঠে বলল , আমি হাসপাতালে আছি। তোর ভাতিজির অবস্থা খুব একটা ভাল না । তোর ভাইয়ের ফোন বন্ধ, তুই তোর ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা কর আর সদর হাসপাতালে জলদি আয় । নূরীর পায়জামা রক্ত দিয়ে মেখে শেষ ও শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছে ।
শফিক কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না । শফিক বুঝতে পেরেছে যে ঘটনাটি কি ঘটেছে । কোন রকম পড়িমরি করে সাইকেল চালিয়ে হাটের রাস্তা ধরে যেতেই , মাঝপথেই কালাম মাস্টারের সঙ্গে দেখা । কালাম মাস্টার আগের মতোই পান চিবুচ্ছে আর চায়ের দোকানে বসে গল্প করছে। হুট করে কালাম মাস্টারকে দেখাতে, মাথায় যেন রক্ত উঠে গিয়েছে শফিকের । সাইকেল থেকে পড়িমড়ি করে নেমে , দৌড়ে এসে হাট ভর্তি লোকজনের মাঝে কালাম মাস্টারের গলার টুটি চেপে ধরে জোরে জোরে দুটো ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিল । এতেও যেন মন ভরছে না শফিকের । লোকজনের ধরাধরিতে কোন রকম শফিককে সেখান থেকে সরানো গেল, তবে শফিক যেন কোনোভাবেই নিজেকে সামলাতে পারছে না । চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বলে গেল , আগে হাসপাতাল থেকে আসি তারপর তোকে দেখে নেব রে কুত্তার বাচ্চা ।।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
যখন আপনার লেখাগুলো পড়ছিলাম তখনই এরকম কিছু আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। আসলে কালাম মাস্টারের মত অনেক ভদ্র বেশি শয়তান রয়েছে যারা আমাদেরই আশেপাশে ঘুরে বেড়ায়। ভদ্রতার মুখোশের আড়ালে কুৎসিত চেহারা লুকিয়ে রাখে তারা। এত নিলজ্জ মানসিকতার মানুষ যে আমাদের সমাজে রয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। আমি ধিক্কার জানাই এই সমাজের সেসব নিকৃষ্ট মানুষদেরকে যারা নিজের মানবিকতাকে হারিয়ে ফেলেছে। এভাবেই হাজারো কিশোরী হারাচ্ছে তাদের সম্মান। আমি আপনার লেখাগুলো যখন পড়ছিলাম তখন কেন জানি হঠাৎ করেই মনের মাঝে অজানা আতঙ্ক ভর করেছিল। সেটাই সত্যি হলো। খুবই সুন্দর ভাবে আপনি আমাদের বাস্তব সমাজের চিত্র তুলে ধরেছেন। আসলে সমাজের এই জানোয়ার গুলো আমাদের আশেপাশেই ভদ্রবেশে ঘুরে বেড়ায়। এটা আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক। অনেক সুন্দর একটি বিষয়ের উপর পোস্ট লিখে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন এ জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এইটা ঘটছে আজকাল।
আসলে আমাদের সমাজে কালাম মাস্টারের মত অসংখ্য মানুষরূপী অমানুষ গুলো আমাদের সাথে বসবাস করে।যাদেরকে বলা হয় কোট পরা ভদ্রলোক।এই সমস্ত ভদ্রলোক থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।আপনার বাস্তবভিত্তিক লেখাগুলো আমাকে প্রেরণা যোগায়।বড় বেশি ভালো লাগে আপনার নিয়মিত বাস্তব লেখাগুলো।চোখের সামনে যা ঘটছে তাই তুলে ধরছেন চমৎকারভাবে আপনার লেখনীতে।এরকম বাস্তবভিত্তিক লেখা নিয়মিতই আপনার কাছে প্রত্যাশা করছি ভালো থাকবেন সপরিবারে।
♥♥
আমি একটা জিনিস বুঝি না কালাম মাস্টারের মতো লোক শিক্ষকতার পেশায় থাকে কেমনে। তবে এটা সত্যি প্রতিটি স্কুলেই কালাম মাস্টারের মতো কিছু লোক থাকে। তবে ভিররের রুপতো আর দেখা যায় না তাই তারা বুক ফুলিয়েই সমাজে বাস করে।
একটা বিষয় খুব খারাপ লাগে, কালাম মাস্টারের কাজটা যদি কোনো অশিক্ষিত রাস্তার ছেলে করতো তাও কিছুটা মানায়। তবে মানুষ গড়ার কারিগর যদি অমানুষের মতো কাজ করে তাহলে মেনে নেওয়া যায় না। আমি মনে করি এই সব মানুষ রূপি জানুয়ারকে প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারা দরকার। বাস্তবিক প্রেক্ষাপট গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই।
এটা কি বাস্তব ঘটনা নাকি কাল্পনিক?
সত্যি কি কাজটা মাস্টারই করেছিল এই ব্যাপারটি কিছুটা ধোঁয়াশে রয়ে গেলো।
অপেক্ষায় থাকবো এর পরবর্তী পর্বের জন্য।
হুম কালাম মাস্টার করেছে ।
আসলে এ টাইটেল টা দেখে বুঝতে পারলাম না। এর ভিতরে কাহিনি আছে।আমি কিছুদিন আগে জানয়ার নামে একটি ওয়েবসিরিজ দেখলাম। এটা সত্য ঘটনা গাজীপুরে ঘটেছিল তার নির্মিত একটি ওয়েব সিরিজ এরকম ধরনের কিছুটা। আসলে মানুষের অপরের মুখ দেখে বোঝা যায় না তার চরিত্রটা কেমন। সবথেকে ভালো হতো যদি আয়নায় মানুষের চরিত্র দেখা যেত।আসলে বর্তমান সময়ে শিক্ষিত হয়েও চাকরি নাই বললেই চলে। বেকারত্ব দিন দিন বেড়েই চলছে।আসলেই এরকম ঘটনা এখন অনেক ঘটছে এ কিছুদিন আগে আমাদের এলাকায় এমন ঘটছে।আসলে মানুষের ভিতরে মনুষ্যত্ব টা হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ বয়স বাড়ার সাথে সাথে নিজের ভালোর দিকে যায় তা না মানুষ আসলেই পশুর চেয়ে হিংস্র কিন্তু সবাই এক না।পরবর্তী অংশের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। এখনকার সময়ে নিজের স্বামীর কাছে স্ত্রীর সেভ না কি আর বলবো😰💔
বাস্তবে ঘটছে এমনটা প্রতিনিয়ত।
সমাজে কিছু ভদ্র লোকের মুখোশের আড়ালে কিছু শয়তান 😈 রয়েছে। তা আবার ও আপনার পোস্টটি পড়ে বুঝতে পারলাম। আপনার কাছে অনুরোধ রইল এর পরের ঘটনা কি হলো অবশ্যই পোস্ট করবেন। ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সবসময় এই কামনাই করি।
একদম ঠিক বলেছেন ভাই ।
ভাই আজকে আপনার পোষ্টটি পড়ে আমার খুবই খারাপ লাগলো। এরকম ঘটনা আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে। আমার সবচাইতে বেশি খারাপ লাগলো। একজন মাস্টার যে মানুষ গড়ার কারিগর। মানুষ তার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে। সেই মাস্টারের কাছে যদি ছাত্রীরা নিরাপদে না হয়। তাহলে আমরা সমাজের ছাত্রছাত্রীরা কোথায় যাব। মাস্টারের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে কিন্তু মাস্টাররা যদি এ রকম চরিত্রের হয়। তাহলে ছাত্ররা আর কতই ভালো হবে। আসলে আমার খুবই খারাপ লাগলো একটা ছোট মেয়ে তার কাছে পড়তে গেছে এরকম ঘটনা সত্যি বেদনাদায়ক। মানুষের ভালোবাসা এবং মানুষত্ব বোধ না থাকলে যেটা হয়। আমাদের সমাজে শিক্ষক যারা শিক্ষিত কিন্তু তাদের মানুষত্ব বোধ নেই। যদি শিক্ষা থাকতো তাহলে একজন শিক্ষক হয়ে এত বড় অন্যায় কাজ করতে পারত না। আমার খুবই খারাপ লাগলো। এই সব শিক্ষকের প্রতি আমরা সচেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
শিশুরা কোথাও নিরাপদ নয় ।
এরা হলো শিক্ষক নামের শয়তান ।তারা জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্টতম ব্যক্তি। তারা সমাজে ভদ্রতার অভিনয় দেখিয়ে ভিতরে বিভিন্ন কুসংস্কার অপকর্ম চালিয়ে যায় ।যেটা টিভিতে প্রায়ই এরকম ঘটনা ঘটতে দেখা যায় । তাদের জন্য অনেক কিশোরীর জীবন ধ্বংসের পথে চলে যায় ।গল্পটি প্রথম থেকেই বুঝতে পেরেছিলাম এরকম একটা ঘটনার সাথে পরিচিত হতে যাচ্ছি। এসব নিকৃষ্ট মানুষের দীক্ষার জানাই।
সমাজ তো ডুবে গেছে অনেক আগেই ।
আমাদের সমাজের কালো অধ্যায় গুলোর মধ্যে এই অধ্যায়টি হলো সবচেয়ে ভয়ংকর একটি অধ্যায়। লেখা পড়ে ভালো লাগলো।
লেখকের লেখা সার্থক। ধন্যবাদ আপু ।
ভাইয়া গল্পটার মত এখন বাস্তব জীবনে প্রায় ঘটে।কালাম মাস্টার এর মত জঘন্য খারাপ মানুষ আমাদের সমাজে অনেক আছে।যাই হোক পরবর্তী অংশের অপেক্ষায় রইলাম।
আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি ।