অনন্তপুর
কিছুদিন আগে ঘুরতে গিয়েছিলাম অনন্তপুরে। অনেকটা নিজের আগ্রহ থেকেই। সবথেকে বড় ব্যাপার ওখানে ঘুরতে যাওয়ার পিছনে কিছু কারণ ছিল। আর সেই কারণটা যদি একটু পরীক্ষামূলক হয়, তাহলে ব্যাপারটা কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়।
ঐদিন সম্ভবত আমি বলেছিলাম যে, আমি কল্লোলের বাড়িতে গিয়েছিলাম আসলে ওদের বাড়িও ছিল অনন্তপুর এলাকায়। তার থেকেও বড় যে ব্যাপার, সেটা হচ্ছে ওদের বাড়ি থেকে খুব কাছেই যে বাড়িটা, সেটাই হচ্ছে ডাক্তার বিশুর বাড়ি ।
আজকে চেষ্টা করব সেই বাড়ি সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়ার জন্য। আর এই তথ্য গুলো আমার নিজের ব্যক্তিগত জায়গা থেকেই সংগ্রহ করা। মূলত অনন্তপুর যাওয়ার পেছনের ঘটনা ছিল, এই বাড়ির কিছু খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য ।
একটা সময় সবকিছুর শুধু চিহ্ন থেকে যায়। তবে যদি একটু অতীত ঘেঁটে দেখা যায়, তাহলে অনেক তথ্যই পাওয়া যায়। ডাক্তার বিশু ছিল এই এলাকার নাম করা ডাক্তার। সেই সময় সম্ভবত বারো জন ডাক্তার ইরানে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল তাদের ভিতরে এই অঞ্চলের ডাক্তার বিশুও ছিল। যেহেতু এটা জমিদার বাড়ি ছিল আর সেই বাড়ির সন্তান ছিলেন ডাক্তার বিশু। এখনো তো তাও সর্বসাকুলে দেড়শো বিঘার মত জমি আছে। কিন্তু এত জমি থেকে কি হবে, মানুষটাই তো আর নেই ।
আসলে মানুষটা খুব অল্প বয়সেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যায়। মনে আছে কি আপনাদের, ডাক্তার শাহানা বানু নিয়ে লিখেছিলাম। আসলে ডাক্তার শাহানা বানুর প্রিয়তম ছিল ডাক্তার বিশু । বেশ ভালোভাবেই যাচ্ছিল তাদের সংসার জীবন। যদিও তারা কর্মের তাগিদে পরর্বতীতে এই মফস্বল শহরে বাড়িঘর করেছিল।
তবে তার পরেও যেহেতু ডাক্তার বিশু পরিবারের একাই পুত্র সন্তান ছিলেন,তাই তার দায়িত্ব ছিলো প্রচুর বেশি। নিজের কর্ম ও পরিবার কে সময় দিয়েও বাকি সময় সে এই গ্রামের নিরীহ মানুষ গুলোর জন্য ভাবতেন। বলতে গেলে তার মা ও সে সবকিছু একাই দেখভাল করতো। তবে ডাক্তার বিশু গত হওয়ার পরে সব কিছুর দায়িত্ব সামলাতে হতো তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে।
যেহেতু ডাক্তার শাহানা বানুর ছোট ছেলে আমার বাল্য বন্ধু, তাই তাদের সঙ্গে আমার টুকটাক কথা হয়। এখন মফস্বল শহরের বাড়িটাতেও তারা আর থাকে না। তারা এখন পুরো পরিবার নিয়ে ঢাকায় অবস্থানরত। কিন্তু তাদের গ্রামের বাড়িতে তার দাদি থাকতো। সেদিন যখন আমার বন্ধুর সঙ্গে কথা হচ্ছিল, হুট করেই শুনতে পেলাম দাদী আর পৃথিবীতে নেই। ব্যাপারটা বেশ ব্যথিত করেছে আমাকে।
মানে এখন তাদের গ্রামের বাড়ি আর মফস্বল শহরের বাড়ি দুটোই ফাঁকা। এই পরিবারের সবাই যেহেতু ডাক্তার, আসলে আমার যে বন্ধুর কথা বলছি সেও ডাক্তার। যাইহোক দিন শেষে তাদের সবই আছে কিন্তু তাদের প্রপার্টিগুলো দেখার মতো কোন বিশ্বস্ত জনবল নেই। যখন শুনলাম দাদী মারা গিয়েছে, তখন ব্যাপারটা খুবই আমাকে কষ্ট দিয়েছে। হয়তো তারপরেই আমি অনন্তপুর যাওয়ার সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম।
দাদী ভালোই স্নেহ করতো আমাকে । এর জন্য একটু আলাদা টান ছিল। এর আগের বার যখন গিয়েছিলাম, তখন ওর দাদি বেঁচে ছিল। তারপর আমিও তো নিজেও পারিপার্শ্বিক ব্যস্ততায় জড়িয়ে গিয়েছিলাম আর তাছাড়া আমার নিজেরও সংসার হয়েছে, পরিবার আছে। তাই আরকি পরবর্তীতে সেভাবে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। তবে সেদিন যখন ঘটনাটা শুনেছি তখন বুকের ভেতরটা অনেকটাই ছটফট করছিল। ইচ্ছা করেই অবশেষে চলে গেলাম সেই অনন্তপুর ।
বাস্তবিকভাবে অনন্তপুরে গিয়ে যা দেখেছি তা দেখে খুব ব্যথিত হয়েছি। সেই যে বিশু আঙ্কেলের সময় থেকে একদম দাদী বেঁচে থাকা পর্যন্ত, তারা এখানকার লোকজনদের কে খুবই যত্ন করতো এবং তাদেরকে থাকার জায়গাও দিয়েছে। কিন্তু দিনশেষে এখন তাদের বাড়িঘর একদম পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে, সেগুলো দেখভালের দায়িত্ব এখন কেউ যেন করছে না। আসলে মানুষ চলে গেলে, হয়তো তার প্রতি মায়া দিন দিন কমে যায়, এটাই হয়তো জগতের নিয়ম ।
ঘুরে ঘুরে দেখলাম তাদের পুরো প্রপার্টিটা। পুকুর, জমি, বাগান আর পুরো বাড়িটা। সবকিছুই ঠিক আগের মতোই আছে, তবে অনেকটা জায়গায় যত্নের অভাবে জঙ্গল তৈরি হয়ে গিয়েছে। হয়তো এইভাবে চলতে থাকলে বাড়িটাও নষ্ট হয়ে যাবে। বিশু আঙ্কেল মারা যাওয়ার পর থেকে শুধু মাত্র দাদী থাকতো এই বাড়িতে আর আমার বন্ধুরা থাকতো শহরের বাড়িতে। তবে দাদী থাকাকালীন সময়েও অনেক কিছু ঠিকঠাক ছিল এবং অনেক কিছুই যত্নে থাকতো। তবে এখন সবকিছুই যেন অগোছালো, কিছুই যেন আর আগের মতো নেই ।
স্বল্প ভ্রমণে যেটা বুঝলাম, প্রপার্টিগুলো এখন এখানকার লোকজন দেখাশোনা করছে। হয়তো বাৎসরিক তারা একটা নগদ অর্থ প্রদান করছে আমার বন্ধুদের, তবে সেটা খুবই সীমিত। আসলে নিজেরা দেখভাল না করলে যা হয় আর কি। তবে আমি এখান থেকে একটা চিন্তা বের করেছি,যদি এই প্রপার্টিটা ভালোভাবে দেখভাল করা যায় এবং সংরক্ষণ করা যায়, তাহলে এখান থেকে অনেক ভালোভাবে আর্থিক মনুফা লাভ করা যাবে ।
তবে আমার এই অভিজ্ঞতা ও চিন্তা , আমি আমার বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করেছি। তবে তাদের হাতে সময় নেই এবং তাদের কাছে বিশ্বস্ত জনবল নেই। জানিনা এই প্রপার্টিটার পরবর্তী অবস্থা কি হবে, হয়তো অনেকগুলো স্মৃতি জড়িয়ে আছে হয়তো একটা সময় স্মৃতি গুলোও শেষ হয়ে যাবে। তবে এবারের অনন্তপুরের ভ্রমণটা আমাকে ব্যাক্তিগত ভাবেই অনেক কিছুই শিক্ষা দিয়ে গিয়েছে এবং যা মনে থাকবে বহুদিন পর্যন্ত ।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
VOTE @bangla.witness as witness
![witness_vote.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmW8HnxaSZVKBJJ9fRD93ELcrH8wXJ4AMNPhrke3iAj5dX/witness_vote.png)
OR
সত্যি ভাইয়া মানুষ চলে যায় সেইসাথে মানুষের প্রতি মায়াও কমে যায়। যখন আপনার বন্ধুর দাদিমা বেঁচে ছিলেন তখন হয়তো তিনি শক্ত হাতে তার সংসার আগলে রেখেছিলেন। সেই সাথে সবকিছুই দেখাশোনা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তিনি যেহেতু এই পৃথিবীতে নেই তাই উনার সাজানো সংসার সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। যেহেতু আপনার বন্ধুর মা এবং আপনার বন্ধুর পরিবার সবাই শহরে থাকে তাই তো গ্রামের প্রপার্টি দেখাশোনা করার সময় তাদের নেই। যদিও এর আগে কোন একদিন আপনার বন্ধুর মা ডাক্তার শাহানা বানু এবং আপনার বন্ধুর সম্পর্কে কিছু কথা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছিলেন। তবে আজকে উনার বাবার কথা জেনে খারাপ লাগলো। বুঝতেই পারছি উনি অল্প বয়সে এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন।
আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আপু এই জন্য যে, আপনি প্রথম পর্বটি পড়ে ছিলেন এবং এই পর্বটিও পড়েছেন এই জন্য। একজন লেখক হিসাবে স্বার্থকতা মনেহয় এখানেই। শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
আপনার বন্ধুর দাদিমা আর পৃথিবীতে নেই, লেখাটা পড়ে আমার দাদুর কথা মনে পরে গেল।প্রিয় মানুষদেরকে আসলে ভোলা যায় না। যেকোনো ভাবে হয়ত তারা আমাদের মনে এসে উঁকি দিয়েই যায়।হয়ত নানা ব্যস্ততায় কিছুটা ভুলে থাকা।কিন্তু তাদের প্রতি যে মায়া তা কিন্তু কমে না। 😔কোন এক নির্জন দুপুরে,হয়ত ঘুম না আসা মধ্য রাতে বা হতে পারে কোন ঘটনায় প্রিয় মানুষগুলো আমাদের মনে উঁকি দিয়ে যায়। মায়া না থাকলে মনে আসতো না। যাই হোক, আপনার বন্ধুর বাবা খুব অল্প বয়সে মারা গেছেন তা জানতে পারলাম।অনেক ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য। অনেক শুভকামনা রইল ভাইয়া আপনার জন্য।
হুটহাট করে প্রিয় মানুষ গুলোর কথা মনে পড়লে বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়া নিতান্তই স্বাভাবিক আপু।
সত্যি আমরা কেউ চিরদিন পৃথিবীতে থাকবে না। কথায় আছে ভাইয়া চোখের আড়াল হলে মনের আড়াল হয।আপনার বন্ধুর দাদি বেঁচে থেকে তাদের সংসার দেখাশোনা করতো।কিন্তু এখন তো আপনার বন্ধুর মা ও বন্ধু কেউ বাড়িতে থাকে না।তাহলে তার দাদির সাজানো সংসার না থাকা স্বাভাবিক।আপনার বন্ধুর বাবা অল্প সময়ের মারা গেছে জেনে অনেক খারাপ লাগল। । মারা গেলেই যে আমরা ভুল যায় সেটা কিন্তু আসলে ঠিক নয়। কোন এক সময়ে তাদের মায়া আমাদের মাঝে এসে উকি মারে।আপনার বন্ধুর প্রপাটি দেখাশোনা করে সীমিত কিছু দেয় সেখানকার লোকজন,আসলে নিজেরা না থাকলে যা হয় আরকি।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
হয়তো এটাই প্রকৃতির নিয়ম। ধন্যবাদ আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য।
একটা কথা বলে যে মানুষ চলে যায় চিরদিনের জন্য ৷ কিন্তু তার সৃতি গুলো রয়ে যায় আজীবন কিছু মানুষের মনে ৷ যেমন আপনার মনে গেথে আছে সেই বিশু ডাক্তার ৷
সত্যি বলতে এতো অর্থ সম্পদ সব পরে আছে ৷ সেই বাড়ি ঘড় পুকুর সব আজ অচেনা ৷ সময় বড়ই নিমর্ম ৷
যা হোক তাদের সমস্ত পরিবার এখন শহরে ৷আর সেই গ্রামের বাড়ি পরে আছে ৷ আর এভাবেই হয়তো থেকে যাবে ৷
কোন প্রপার্টিতে দেখার মত লোক না থাকলে তা দেখভাল করা যে কতটা চাপের বিষয় সেটা আমরা হারে হারে টের পেয়েছিলাম।এত বড় প্রপার্টি একটা নগদ কিছু টাকায় কাউকে দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করানোটা মোটেই সহজ কাজ নয়। আমার মাসির একটা প্রপার্টি আমাদের এখানেই ছিল।মাসি আসতে পারতো না। নগদ কিছু পরিমাণ টাকা তিনি দিয়ে দিতেন।কিন্তু তাতে করে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা কোনভাবেই সম্ভব হতো না। আর তারপর তো ব্যক্তিগত সমস্যা, ঝামেলা এগুলো লেগেই থাকত।এইসব কারণে বাবা পরে জানালো মাসিকে জায়গাটার যেন অন্য কোন ব্যবস্থা করে।কারণ এখানে পলিটিক্যাল চাপেরও ব্যাপার ছিল। অবশেষে মাসি জায়গাটা বিক্রি করে দেয়।আপনার এই পোস্টটা থেকে আমাদের এই অভিজ্ঞতাটা মনে পড়ে গেল।