হায়েনা
ঠিক বিকেল বেলার দিকে বাসার গলির সামনে, বউ-বাচ্চাকে সঙ্গে নিয়ে মহাসড়কের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। এই গলি দিয়ে মূলত প্রতিনিয়ত শত শত মানুষজন যাতায়াত করেন,হোক সেটা ছাত্র-ছাত্রী, স্থানীয় বাসিন্দা নতুবা নানা পেশার নানা বয়সের লোকজন।
অনেকের সঙ্গেই দেখা হয়, কথা হয়। মোটামুটি চেষ্টা করি নিজের জায়গা থেকে সকলের সঙ্গেই কমবেশি আন্তরিক, নমনীয়, ভদ্র ও সহনশীল হয়ে থাকার জন্য।
গলির সামনে যখন দাঁড়িয়ে আছি,তখন মুহূর্তেই সম্ভবত মাধ্যমিক পড়ুয়া একটা মেয়ে গলি দিয়ে হেঁটে এসে মহাসড়ক অতিক্রম করছিল। তখনও আমি আর আমার স্ত্রী স্বচক্ষে দেখছিলাম, মেয়েটা মহাসড়ক অতিক্রম করার পূর্বে বিন্দুমাত্র এদিক-সেদিক না তাকিয়ে, সোজা সড়ক অতিক্রম করার চেষ্টা করছিল।
দূর থেকে ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা ক্রমাগত হর্ন বাজাচ্ছিল। এমনিতেই মহাসড়কে প্রতিনিয়ত যানবাহনের ছোটাছুটি। তাতেও যেন কোন ভ্রুক্ষেপ ছিল না, সেই মেয়েটির। অবশেষে অটো রিক্সা চালক যখন তার গতি নিয়ন্ত্রণ করতে সজোরে ব্রেক কষে রিক্সা থামানোর চেষ্টা করেছিল, ততক্ষণে মেয়েটির সঙ্গে রিক্সার ধাক্কা লেগেছে।
রাস্তার অপরপ্রান্ত থেকে দাঁড়িয়ে, আমি এই দৃশ্য দেখছিলাম। মুহূর্তেই মেয়েটি রাস্তার উপর লুটিয়ে পড়ে গেল। তবে ভাগ্য ভালো, তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। সামনের যে বড় বিল্ডিংটা দেখছেন, তার নিচ থেকে হঠাৎই লোকজন এসে মেয়েটিকে দ্রুত সড়ক থেকে তুলে সেই বিল্ডিং এর ভিতরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল। বুঝতে পারলাম হয়তো এটাই সেই মেয়েটার বাড়ি। আর যারা মেয়েটিকে নিয়ে গিয়েছে, তারা তার বাবার মার্কেটের শোরুমের লোকজন ।
এক্ষেত্রে আমি কোন অবস্থাতেই অটো রিক্সা চালক ভদ্রলোকের বিন্দুমাত্র দোষ দেখছি না বরং সে স্বেচ্ছায় ঘটনাটি ঘটার পরেও, ঐ জায়গাতেই রিক্সা দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। তবে তার এই সততাকে, কোনভাবেই হায়েনারা ভালোভাবে মেনে নেয় নি। বুঝে ওঠার আগেই ১০-১৫ জন লোক ঐ বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে এসে রিক্সাওয়ালা ভদ্রলোককে আক্রমণ করতে মরিয়া হয়ে পড়েছিল।
সত্যি সেই মুহূর্তে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারিনি। ছুটে গিয়েছিলাম সেই হায়েনা গুলোর মাঝে এবং বলছিলাম, এখানে কারো কোন দোষ নেই। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত একটা দুর্ঘটনা। আমি নিজে ব্যাপারটা দাঁড়িয়ে থেকে দেখেছি এবং বলতে পারেন, এই ঘটনার জলজ্যান্ত সাক্ষী আমি নিজেই। তবে দুঃখের বিষয় ঐ হায়েনার দল, তখন আমাকে দালাল উপাধি দিয়েছিল এবং আমার দিকেও তেড়ে এসেছিল।
হায়েনা গুলো চেষ্টা করছিল, রিক্সাওয়ালা ভদ্রলোককে আমার সামনে থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য । কেউ স্যুট-বুট পড়া কেউবা সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত, কারো বা শরীরে বয়সের ছাপ, চুল-দাড়ি রং করা। এদেরকে হয়তো আপনি দেখলেই ভদ্রলোক বলতে পারেন বা বলতে পারেন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত। তবে এদের মানসিকতা দেখে আর যাইহোক কোন অবস্থাতেই আমার মানুষ মনে হয়নি।
যেভাবে ওরা হায়েনার মতো ছুটে এসেছিল, আজ যদি রিক্সাওয়ালা ভদ্রলোককে ওরা নিজেদের আয়ত্তে পেয়েই যেত, তাহলে রিক্সাওয়ালার কপালে যে কি জুটতো তা আর নতুন করে বলতে চাই না।
এবার ঘটনা আমার দিকে মোড় নিয়েছে, হায়েনার দল আমাকে যেন ছিঁড়ে খেতে পারলে বাঁচে। আচ্ছা একটাবার ভাবুন তো, ধরুন অটো রিক্সার জায়গায়, যদি কোন ট্রাক বা বাস হতো। তাহলে ঘটনাটা কেমন হতো। ট্রাক বা বাস কি সেখানে রিক্সাওয়ালার মত ভদ্রতার খাতিরে চুপচাপ নিজের গাড়ি থামিয়ে রাখতো। এই প্রশ্ন আপনাদের কাছেই রেখে গেলাম।
আর যারা আমাকে বলছিলেন, মুরুব্বিদের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয় শেখোনি। সেই সকল তথাকথিত লোকজন বা মুরুব্বিদের একটা কথাই বলতে চাই, নিজের সন্তানকে দয়াকরে মহাসড়কে কিভাবে রাস্তা অতিক্রম করতে হয়, সেই শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করুন। অন্যথায় যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
VOTE @bangla.witness as witness
![witness_vote.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmW8HnxaSZVKBJJ9fRD93ELcrH8wXJ4AMNPhrke3iAj5dX/witness_vote.png)
OR
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1689210683865636864?t=6JL4bDabVEvY97ADHmaIEA&s=19
কিছুদিন আগে এমন একটি ঘটনা আমার চোখে পড়েছিল। ছোট বাচ্চারা দৌড়াদৌড়ি করার সময়,একটা বাচ্চা দৌড় দিয়ে হঠাৎ করে অটোর সাথে ধাক্কা খায়। তখন সেই বাচ্চার বাবা মা সহ সবাই মারতে যায় অটোওয়ালাকে। তখন আমি মনে মনে ভাবলাম, সেজন্যই বাস বা অন্যান্য গাড়িওয়ালারা এক্সিডেন্ট করে পালিয়ে যায়। আসলে সততার এখন দাম ই পাওয়া যায় না। যাইহোক আপনি ছিলেন বিধায় অটোওয়ালা বেঁচে গিয়েছে। যদিও বাঁচাতে গিয়ে আপনাকে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। তবে আপনি বরাবরই পরোপকারী। এই ব্যাপারটা সত্যিই খুব ভালো লাগে ভাই। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।
আমাকে তো তারা শুধু কথা বলেই শান্ত হননি বরং দালাল উপাধি দিয়েছিল।
এই ধরনের ঘটনায় কখনো সম্মুখীন হই নি। তবে মানুষের পোশাক দেখে আজকাল বোঝার উপায় নেই সে কেমন মানুষ। আপনি যদি ঘটনাটি নিজের চোখে না দেখতেন হয়তো বা বেচারী রিকশাওয়ালার উপরে অনেক অত্যাচার ও যন্ত্রণা সহ্য করতে হতো। ভাগ্যিস আপনি ছিলেন তাই অটোওয়ালা বেচে গেছে। যাইহোক আপনার সততা দেখে অনেক ভালো লাগলো। ধন্যবাদ ভাই সুন্দর একটি পোষ্ট আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য।
এমন ঘটনা আজকাল ঘটেই যাচ্ছে, সচেতন থাকুন।
সত্যি ভাইয়া খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমাদের দেশটা তো এভাবেই চলছে।দোষীরা ঘুরে বেড়ায় প্রকাশ্যে।আর নির্দোষীরা আটকা পরে যায়।সবটা দোষ ওই মেয়েটির।এটা ঠিকই বলেছেন ট্রাক বা বাস হলে কি করতো? তারা তো ধরা ছোঁয়ার বাইরেই চলে যেতো। আপনার অনুভূতি গুলো পড়ে খুব খারাপ লাগলো। তারা আপনাকেও ছাড়েনি।
আসলে ঐ ছোট মেয়েটার আমি সেভাবে দোষ দেখছি না, দোষ যদি দিতেই হয়, তাহলে হয়তো সেটা তার বাবা মাকে দেব।
আসলে এখানে অনাকাঙ্ক্ষিত একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। মেয়েটি অবশ্যই অসচেতন ভাবে চলাফেরা করছিল। আর তার বাড়ির লোকজন সেই অটো রিক্সাওয়ালাকেই দোষারোপ করছিল। অটো রিক্সা না হয়ে যদি অন্য কোন যানবাহন হতো তাহলে মেয়েটির ভীষণ ক্ষতি হয়ে যেত। অন্যের উপর দোষারোপ করা বন্ধ করে নিজের পরিবারের মানুষগুলোকে সচেতন করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
এটাই আপু আমিও বলতে চেয়েছি যে, আগে নিজের সন্তানকে শিক্ষা দিন। তারপর না হয় অন্যের দোষ খুঁজে দেখবেন।
কি আর বলবো ভাইয়া এখন তো এসব ঘটনা অহরহ ঘটেই যাচ্ছে। কেউ আর নিজের দোষ দেখে না। পরের দোষগুলো খুঁজতেই যেন আমরা সবাই উম্মাদ। তো যেহেতু রিক্সাওয়ালা তাই সে তার মায়ার জন্যই দাঁড়িয়েছিলো। কোন ট্রাক বা বাস হলে তো আর দাঁড়ানোর প্রশ্নই উঠে না। আমার তো মনে হয় এরা সো কলড ভদ্রলোক। যাদের কোন হিতাহিত জ্ঞান নেই। তা যাই হোক এমন মানুষদের সাথে নয় একটু বেয়াদবিই হলো তাতে আর কি হলো।
আমিও আসলে তেমনটাই ভেবেছি, এদের সঙ্গে একটু না হয় কথা কাটাকাটিই হয়েছে।
ভাইয়া যদি ওই রিক্সার জায়গায় কোন বাস বা ট্রাক হত তাহলে চোখের পলকেই মেয়েটিকে পিষে রেখে চলে যেত। আর সেই বাস কিংবা ট্রাক রাস্তায় দাঁড়িয়ে মেয়েটির দিকে ভুল করেও তাকাতো না। অথচ রিকশাচালক মানবতার খাতিরে সেখানে দাঁড়িয়ে মেয়েটির কিছু হয়েছে নাকি তা দেখছিল। আর এটাই যেন রিকশাচালকের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যার কারনে ওই বিল্ডিং থেকে বের হয়ে আসা সুট বুট পড়া শিক্ষিত লোক গুলো হায়নার মতো কাজ করেছিল। এদেরকে শিক্ষিত লোক বললে ভুল হবে ভাইয়া। এরা হচ্ছে মুখোশধারী ভদ্র লোক। যারা কিনা সততা ও মানবতার মূল্যই দিতে জানে না। ভাগ্যিস আপনি সেখানে গিয়ে রিকশাচালকটিকে সেভ করে নিয়েছিলেন। আর আপনার এই মহানুভবতার দিকগুলো আমাকে খুবই আকর্ষণ করে। তবে আপনার সাথে অশালীন ব্যবহার করার কারণে আমার কাছে খুবই খারাপ লেগেছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া, সুন্দর একটি পোস্ট উপহার দেয়ার জন্য।
আমাকে তো ছিঁড়ে ফেলে শেষ করতে পারলে, ওরা যেন শান্তি পেত, ওদের অবস্থা এমনটাই হয়ে গিয়েছিল ভাই।
আসলে বর্তমান সময়ে কিছু লোক আছে কোনো কিছু বাচ বিচার ছাড়াই একজনকে অপরাধী সাজিয়ে দেয়।আপনি যেহেতু পুরো ঘটনাটি দেখেছেন,তাই চালকের দোষ দেখতে পাচ্ছেন না। আসলে আমরা আধুনিক যুগের ছেলেমেয়েরা একটু বেশিই অন্যমনস্ক থাকি রাস্তা পার হওয়ার ক্ষেত্রে। বিশেষ করে এটা হতে পারে মাথায় অন্য চিন্তা বা হতে মোবাইল এর কারণে ।তারপরেও রিক্সা চালক ব্রেক আগে থেকেই নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন এজন্য মেয়েটির তেমন ক্ষতি হয়নি।এসকল লোকদের হায়েনা উপাধি দিয়ে ভুল করেননি তাহলে ভাইয়া।ধন্যবাদ সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
আসলে আধুনিক যুগের ছেলে মেয়েদের কথা আমি বলতে চাই না, বলতে চাই আসলে তাদের নৈতিক শিক্ষার যে ঘাটতি আছে সেটা সম্পর্কে, এটা আসলে পরিবার থেকেই প্রাপ্ত হওয়া উচিত, যে কিভাবে মহাসড়কে চলাচল করতে হয়।