অনিশ্চিত জীবন
আজ বাচ্চাদের নতুন বই দেবে স্কুলে। যেহেতু নতুন বছর তাই বেশ ভালই নতুনত্ব কাজ করছে সকলের মাঝে। রবিউল সাহেব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন। তাই মোটামুটি তার ভালোই ব্যস্ততা যাচ্ছে নতুন বছরের শুরুতেই। যদিও তারা পুরনো বইগুলো ইতিমধ্যেই জমা নিয়েছে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে। যেহেতু বাচ্চারা আজ থেকে নতুন ক্লাসে উঠবে, তাই তাদেরকে নতুন বই দিতে হবে ।
নতুনত্বের উৎসব যেমন ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝেও কাজ করছে ঠিক তেমন উৎসব বিরাজ করছে শিক্ষকদের মাঝেও । তারা কয়েকদিন থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে, নতুন বছরের প্রথম তারিখেই বই বিতরণ করবে। তাছাড়াও এখন তো সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ,সবাই চেষ্টা করবে সেই বই বিতরণের মুহুর্তের ছবিগুলো তুলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার জন্য ।
রবিউল সাহেব বড্ড শান্ত স্বভাবের মানুষ। আজ অবধি সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গে সে কোনভাবেই যুক্ত হতে পারেনি। সে এখনো তেমন খুব একটা এইসব বোঝেনা। তারপরেও যদি সে ছবি তোলার ব্যাপারটা শুনেছে তার কলিগদের কাছ থেকে, তাই একটু ভিন্ন আগ্রহ তার ভিতরেও কাজ করতে ছিল। সেদিন তো সে তার বউকে বলেই দিয়েছি, তার কাপড়-চোপড় গুলো যেন ভালোভাবে পরিষ্কার করে রাখা হয়, নতুন কাপড় পড়ে যাবে সে বই বিতরণ অনুষ্ঠানে।
রবিউল সাহেবের জীবনটা বেশ অদ্ভুত, এখনো অনেকটা আগের মতই থেকে গিয়েছে। ছোট্ট একটা মেয়ে আর তার বউ, এই নিয়েই তার সংসার। এখনো সে গ্রামের বাড়িতেই তার মায়ের সঙ্গে থাকে। সেখান থেকেই রোজ শহরে যাতায়াত করে ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সাতে করে। এমনিতেই ছোট্ট সরকারি চাকরি আর তাতেই বেশ ভালোই দিন চলে যাচ্ছে ভদ্রলোকের। ভাগ্যিস সে শহরে থাকে না, নইলে তো ঊর্ধ্বগতির বাজারে এই চাকরির মাইনেতে তাকে বড্ড হিমশিম খেতে হতো।
তাই গ্রাম থেকেই রোজ যাতায়াত করে। যেহেতু যোগাযোগ ব্যবস্থাও এখন আগের থেকে অনেকটাই ভালো হয়েছে, তাই মোটামুটি ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগে শহরে আসতে। যেহেতু মহাসড়কের পাশেই তার স্কুল, তাই খুব একটা যাতায়াত করতে অসুবিধা হয় না ।
বেশ ভালই চলছে রবিউল সাহেবের জীবন। সকাল দশটা টু বিকেল চারটা, এভাবেই কর্মজীবনে স্কুলের বাচ্চাদের সঙ্গে তার সারাদিনের সময়টা কেটে যায়। তারপর আবার সংসার ।
৯৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছিল রবিউল সাহেব। এ শহরে তার বেশ ভালই বন্ধু-বান্ধব আছে। যেহেতু এই তল্লাটেই সে বড় হয়েছে, তার সঙ্গেও টুকটাক দেখা-সাক্ষাৎ আমারও বহুবার হয়েছিল। মাঝে মাঝে বেশ ভালোই কথা হতো, হয়তো সেটা জীবন-জীবিকা আর পারিপার্শ্বিক অবস্থা নিয়ে।
এমনিতেই সে বয়সে বড়, তাই তাকে ভাই হিসেবে ভালোই সম্মান করতাম। বাড়িতে তার বউ আর বাচ্চা মেয়েটাকে রেখে সকালবেলা সেদিন যখন স্কুলে বই বিতরণের অনুষ্ঠানের জন্য সে খুব দ্রুত ব্যাটারী চালিত অটো রিক্সা যোগে স্কুলে আসছিল পথিমধ্যেই অবৈধ বালু বোঝাই ট্রাক তখন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সজোরে পিছন থেকে ধাক্কা দিয়েছিল ।
তারপর যা হয় আরকি। রবিউল সাহেবের জীবন প্রদীপটা রাস্তার উপরেই শেষ। তার আর ছবি তোলা হলো না। তার ছবি অন্যভাবে এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাসছে সকলের সামনে আর সকলেই শোক প্রকাশ করছে। কি দোষ ছিল রবিউল সাহেবের। সে তো একটু দ্রুত বেরিয়েছিল। নাকি দোষ অন্য কোথাও লুকিয়ে আছে।
তার ছবি ঠিকই ফেসবুকে তার বন্ধু ও কলিগদের প্রোফাইলে শেয়ার হল। তবে সেটা আর বই বিতরণ কে কেন্দ্র করে না । তার রক্তে রঞ্জিত দেহটার ছবি। যা কিনা শুধুই ব্যথিত করছে সবাইকে। ঘুম থেকে সকালবেলা উঠেই, খবরটা দেখছি আর ভাবছি, মানুষের জীবনটা কত অনিশ্চিত, তা শুধুমাত্র রাস্তায় বের হলেই বোঝা যায়।
রবিউল সাহেবের সঙ্গে আর কখনোই দেখা হবে না, এটা ভাবতেই যেন চোখের কোণে জল চলে এসেছে। তবে চিন্তা হচ্ছে রবিউল সাহেবের স্ত্রী আর সন্তান কিভাবে এই শোক কেটে উঠবে সেটা ভেবে। ধৈর্য্য ধারণ করার মত শক্তি তাদের তৈরি হোক। ওপারে ভালো থাকুক রবিউল সাহেব আর এপারে যারা ড্রাম ট্রাকগুলো দিয়ে অবৈধভাবে বালু বোঝাই করে নিয়ে প্রতিনিয়ত ব্যবসা করে যাচ্ছে, সেই সকল ভূমি দস্যুরা আরও দীর্ঘজীবী হোক ।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
সত্যি রবিউল সাহেবের জন্য ভীষণ খারাপ লাগলো। ঠিকই বলেছেন মানুষের জীবন এখন একদমই অনিশ্চিত । আর যেটা রাস্তায় বেরোলেই বোঝা যায়। রবিউল সাহেবের মত এরকম হাজার মানুষ রয়েছে যারা এরকম পরিস্থিতির শিকার। আর এরকম অনেক মানুষ রয়েছে যারা অবৈধভাবে ট্রাকে করে বালু, সিমেন্ট এই সব কিছু নিয়ে যায়। হয়তোবা তাদের কিছুই হবে না । এখন মানুষের জীবন কখন, কোথায়, কিভাবে যাবে সেটা বলা মুশকিল।
একান্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে গেলাম ভাইয়া। প্রথমদিকে যেন খুব ভালোভাবে পড়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম বালু বোঝাই কারী ট্রাক এর জন্য আজকে একটি সুন্দর জীবন চলে গেল তখন খুব খারাপ লাগছে। সেই বাচ্চা মেয়েটা কিভাবে থাকবে তার বাবাকে ছেড়ে। সত্যিই জীবন কত অনিশ্চিত। বয়স বা সময় কখনোই কাউকে ধরে রাখতে পারেনা।
বর্তমানে হয়তো বা রবিউল সাহেবের মত লোক দেখাই যাবে না। কিন্তু কিছু কিছু রবিউল সাহেবের মত লোক এখনও রয়েছে। তার জীবনের শেষ পরিণতি শুনে খুবই খারাপ লাগলো। প্রথম থেকে রবিউল সাহেবের জীবনের কথাগুলো পড়তে ভীষণ ভালো লাগছে। কিন্তু বালু বোঝাই করা ট্রাক্টটা তার জীবনটা শেষ করে দিল। শুধুমাত্র তার মেয়ের কথাটা মনে পড়ছে। কিভাবে বাবা ছাড়া থাকবে। কি হবে তার পরিবারের।
২০২২ রিপোর্ট অনুযায়ী,৫৬২৯ টি এর উপরে রোড এক্সিডেন্ট হয়েছে! মারা গেছে প্রায় ৮০০০) জন! আহত তো আছেই! বাংলাদেশের যে অবস্থা, রাস্তাঘাট, অদক্ষ গাড়ি চালক এমন দূর্ঘটনা প্রতিনিয়ত হচ্ছে! নিমিষেই নিভে যাচ্ছে রবিউল ইসলামের মতো অনেকের জীবন!
রবিউল সাহেবের হয়তো কোন দোষ নেই। শুধু দোষ তার ভাগ্যের। আসলে এভাবেই হয়তো জীবন প্রদীপগুলো নিভে যায়। কিছু অসৎ মানুষের জন্য কিংবা অসচেতন মানুষের জন্যই হয়তো তাদেরকে জীবন দিতে হয়। তার আর বই বিতরণে যাওয়া হলো না। কিংবা ছবি তোলাও হলোনা। খুবই কষ্ট লাগলো ভাইয়া। এই মর্মান্তিক কাহিনী গুলো শুনলে হৃদয় কেঁপে ওঠে।