ব্যথিত খবর
শিক্ষিত মানুষজন যদি হুটহাট গুরুতর কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, তখন আসলে সেই সিদ্ধান্তকে একপ্রকার সঠিক সিদ্ধান্তই বলা যায়। রাশেদ ভাই, আমার তেমন পরিচিত কেউ নয়। তারপরেও যখন এই মাঝরাতে রাশেদ ভাইকে নিয়ে ভাবছি, তখন মনটা যেন বিষাদে ভরে গিয়েছে।
মূলত গতকাল তার সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে শিক্ষা অফিসে, সেই ঘটনার কিছু বিষয় আলোকপাত করছি। তবে মনে মনে ভাবছি, সঠিক মানুষের জন্য যেকোন কর্মেই সঠিকভাবে টিকে থাকা বেশ কষ্টসাধ্য।
গ্রামের মাধ্যমিক স্কুলে সেই সময়ে তার চাকরিটা হয়ে গিয়েছিল। যদিও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠান, তাই চাকরির শুরুতেই বেতন হতেও বেশ সময় লেগেছিল। তবে ভদ্রলোক হাল ছাড়েনি। একটা সময়ের পরে মোটামুটি সবকিছুই ঠিক হয়ে গিয়েছিল এবং পদোন্নতিও পেয়েছিল। বেতনটাও চলমান গতিতে প্রতিনিয়ত পাচ্ছিল।
বলা যায়, অতীতের দুঃখ কষ্টের কালো ছাপ তার যেন মুছেই গিয়েছিল। ব্যক্তি জীবনে ছিলেন দু সন্তানের জনক। সন্তানগুলোর যে খুব আহামরি বয়স, তা বলবো না। মোটামুটি ভাবি আর দুই সন্তানকে নিয়ে তার বেশ ভালই সময় কেটে যাচ্ছিল।
আসলে মাঝে মাঝে বিপদ হুটহাট করেই চলে আসে। কিছু কিছু ব্যাপার তো অনেক সময় কল্পনাই করা যায় না। মূলত তার পদোন্নতি পাওয়াটাই তার পেশাগত জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পদোন্নতি পাওয়াটা যতটা আনন্দের, তারথেকেও বেশি কষ্টের হচ্ছে, সেই পজিশনে অটল থেকে নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করা।
যেহেতু এলাকার মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন, তাই এলাকার লোকজনের প্রতিনিয়ত প্রত্যাশা তার উপর অনেকটাই বেশি ছিল। বিশেষ করে রাজনৈতিক লোকজন তার উপর আলাদাভাবে একটু মানসিক অত্যাচার করেছিল, বলতে পারেন এক প্রকার সুবিধা নেওয়ার জন্য।
স্কুলের নাইট গার্ড পদের জন্য লোক নেওয়া হবে, আসলে এই ব্যাপারে বেশি আগ্রহ থাকার কথা স্কুল কর্তৃপক্ষের। কারণ তারাই জানে কোন মানুষটা স্কুলের জন্য নিবেদিত প্রাণ হতে পারে। তবে এখানে ঘটনা উল্টো, বাস্তবে এইসব ঘটনায় মূলত বেশি আগ্রহ প্রকাশ করে থাকে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক লোকজন।
সব ক্ষেত্রেই বাণিজ্য চলমান আছে, যা অনেক সময় প্রকাশ্যে বা অনেক সময় দৃষ্টির অগোচরে। রাশেদ ভাই খুব ভালোভাবেই চাচ্ছিল নিয়োগটা স্বচ্ছ ভাবে হোক। তার আসলে প্রতিষ্ঠানের জন্য, দিনশেষে ভালো মানুষের দরকার। এদিকে রাশেদ ভাইয়ের কথায় কর্ণপাত করার মত, ঐ সমস্ত জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক লোকজনের সময় নেই। তারা আসলে পদটা নিয়ে বাণিজ্য করাতে ব্যস্ত।
যদিও পরিস্থিতির কারণে রাশেদ ভাই একটা সময়ে গিয়ে, এসব বিষয়ে মাথা ঘামানো ছেড়েই দিয়েছিল। সে ভেবেই নিয়েছিল, তারাই যদি এলাকার লোকজন হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের মঙ্গলের জন্য কাজ না করে, তাহলে তার একা লড়াই করাটা বেশ কষ্টসাধ্য।
তবে তারপরেও তার কাছে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যেহেতু কিছুটা সুপারিশের মাধ্যম ছিল, তাই সেই সুপারিশ কে কেন্দ্র করেই দুটো কথা, তার জায়গা থেকে সঠিক লোকের জন্য বলতে গিয়েছিল মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে। বিশেষ করে সেই সময় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক লোকেরা তার সঙ্গে যে আচরণটা করেছে, তারই ঊর্ধ্বতন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সামনে, যেটা অনেকটাই নিন্দনীয়। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও তাকে চড় থাপ্পড় মেরেছিল। এক্ষেত্রে অবশ্য মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অনেকটাই রোবটের ভূমিকা পালন করেছিল। বাণিজ্যের পয়সার গন্ধ যেহেতু সর্বত্র ছড়িয়ে গিয়েছে, সেখানে কে মার খেলো আর কে অভিমান করলো, এইসব দেখার খবর যেন কারোই নেই।
বড্ড কষ্ট পেয়েছে রাশেদ ভাই। সেও অনেকটা হতবাক হয়ে গিয়েছে সকলের কর্মকান্ড দেখে। বিশেষ করে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাকে কোনরকম সহযোগিতা তো করেই নি বরং বলেছিল এরপর থেকে সবকিছুতে একটু ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে। রাশেদ ভাইয়ের হৃদয়ে বড্ড রক্তক্ষরণ হয়েছে, সে স্বেচ্ছায় নিজের চাকরি ছাড়ার পদত্যাগ পত্র শিক্ষা অফিসে জমা দিয়ে চলে এসেছে।
সে বুঝতে পারছে, সব চলে গিয়েছে নষ্টের দলে। এখানে আর সুবিচার বা ভালো কিছু আশা করা যায় না।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
https://twitter.com/sharifShuvo11/status/1690301237386960896?t=k_PMnRWushfpF8x7WjKUug&s=19
ভাইয়া হাহাহা। কি আর বলব বলেন না শেষে আর পারলাম না। এদেশে আনাচে-কাম আছে অনেক রাশেদ রয়েছে। যারা আজকাল প্রতিবাদ করা ছেড়ে দিয়েছে। কার কাছে বলবে? সবাই যে একই নায়ের মাঝি। এই আমি তো এখন শুধু অফিসে যাই আর আসি। আমার এক সিনিয়র কলিগ বলেছিলেন শুধু দেখবা শুনবা কিন্তু মুখ খুলতে পারবা না । এটাই হল এ দেশের শিক্ষার অবস্থা। সরি ভাইয়া এমন একটি বিষয়ে হাসার জন্য। রাশেদ সাহেব সঠিক কাজটি করেছে। উনার যে শিক্ষাগত যোগ্যতা দু'চারটে টিউশনি করলেও পেটে ভাতে চলে যেতে পারবে। কিন্তু নিজের আত্ম সম্মানকে আর বিসর্জন দিতে হবে না।
আপনার সিনিয়র কলিগ যে কথাটা বলেছে, সেটা কিন্তু ঠিকই বলেছে আপু।
আসলেই ব্যাথিত খবর। আপনার রাশেদ ভাইয়ের জন্য সমবেদনা জানানো ছাড়া আনাদের করার কিছুই নেই। নিয়োগ বানিজ্য আমাদের সমাজে একটি ব্যাধি হয়ে দাড়িয়েছে। তারেই মাসুল গুনতে হয় রাশেদ ভাইদের মত সজ্জন মানুষদের। রাশেদ ভাইদের মত সৎ মানুষদের জায়গা দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে আমাদের সমাজে।উনি ঠিকই বুঝেছেন, সব চলে গিয়েছে নষ্টের দলে । দরকারি লেখাটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
পারিপার্শ্বিক অবস্থা আসলেই দিন দিন বেশ জটিলতা সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে আপু।
শিক্ষা নামটি শুনতেই যেন মনে হয় এখানে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে। কিন্তু এই শিক্ষা অফিসের ভেতরে যে কি রকম কার্যকলাপ গুলো হয় তা শুধু এখানে আসা শিক্ষকগণই উপলব্ধি করতে পারে। এই যেমন রাশেদ ভাই মনের কষ্টে শিক্ষা অফিসে এসেছিলেন কিছুটা ন্যায় পাওয়ার আশায়। অথচ এখানেও দুর্নীতিবাজরা টাকার গন্ধ শুকিয়ে সকলের মুখ বন্ধ করে রেখেছে। কি বলবো ভাইয়া, এই তো কিছুদিন আগে আমার অর্ধাঙ্গিনীও তার শ্রান্তি বিনোদনের টাকার জন্য খোঁজ খবর নিতে গেলে, শিক্ষা অফিসের কর্তব্যরত ভাইয়েরা ১০০০ টাকা মিষ্টি খাওয়ার জন্য চেয়ে বসে ছিলেন। আর তাই আমার অর্ধাঙ্গিনীও ১০০০ টাকা না দিয়ে বরং বলে এসেছে সময় হলে একা একাই শ্রান্তি বিনোদনের টাকা আমার একাউন্টে ঢুকে যাবে। হয়তো টাকাটা দিলে সে এক সপ্তাহের মধ্যেই টাকাটা পেয়ে যেত। কিন্তু আপস না করার কারণে অনেকটা লেট হয়ে যাবে। যাইহোক ভাইয়া, রাশেদ ভাইয়ের পদত্যাগের কথা শুনে খুবই খারাপ লাগলো।
আপনার অর্ধাঙ্গিনীর ব্যাপারটা জেনে বেশ ব্যথিত হলাম ভাই।
এককথায় বলতে গেলে এদেশে সৎ এবং যোগ্য লোকের ভাত নেই। মানুষজন এতোটা লোভী এবং স্বার্থান্বেষী হয়ে গিয়েছে, ভালো মন্দ বিচার করে না। যেদিকে লাভ সেদিকে দৌড় দেয়। হাজারো অসৎ মানুষের ভিড়ে,রাশেদ সাহেবের মতো সৎ মানুষগুলো সত্যিই এখন বেমানান। দিনদিন সব সেক্টরে দুর্নীতি বেড়েই চলেছে। গুণী মানুষের কদর দিনদিন কমতে শুরু করেছে। খুবই আফসোস এর সাথে বলতে হচ্ছে, এটাই আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ। যাইহোক পোস্টটি শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই।
আপনি যে কথা বলেছেন, এটাই চিরন্তন সত্য।