হাসির পাত্র
কেউ যদি সহজ-সরল সাবলীল ভাবে কোন কথা কখনো বলেই ফেলে, সেটাকে আসলে নিতান্তই স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করাই তো শ্রেয়, আমার কাছে তো ব্যাপারটা তেমনটাই মনে হয়। আসলে আমার যুক্তিতে তো আর দুনিয়া চলে না, দুনিয়া চলে দুনিয়ার নিয়মে। তাই হয়তো অনেক সময় অনেক জায়গায় হাসির পাত্র হয়ে যাই।
এক্ষেত্রে অবশ্য খুব একটা আমার খারাপ লাগে না। আমাকে কেন্দ্র করে কেউ যদি টুকটাক বিনোদন পায়, তাহলে আর কি করার। কিছুই করার নেই বরং তখন চুপচাপ দেখার চেষ্টা করি আশেপাশে কি চলছে।
সকলে সব বিষয়ে দক্ষ হয় না, এটা ভীষণ স্বাভাবিক। তার মানে এই না যে, তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতে হবে। প্রত্যেকটা মানুষেরই দুর্বলতা আছে, হয়তো সেটা কখনো প্রকাশ পায় নতুবা আড়ালেই থেকে যায়। আর যদি কারোটা প্রকাশ পেয়েই যায়, তবে তাকে নিয়ে অহেতুক হাসি-ঠাট্টা করার থেকে বরং তার সঙ্গে সহযোগিতা পূর্ণ আচরণ করাই তো প্রকৃত মানুষের কাজ।
যে মানুষ ভুল করবে, সে অবশ্যই নিজেকে সংশোধন করার চেষ্টা করবে। প্রতিনিয়ত নিজেকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত রাখবে। তবে এই শেখার পথে, কে কিরকম আচরণ করলো বা করেছে এই জিনিসটা বড্ড মনে থেকে যায়। আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমি প্রায়ই অনেক জায়গায় হাসির পাত্রের শিকার হয়েছি বা এখনো মাঝে মাঝেই হই, তবে ব্যাপারগুলো সহজে ভুলে গেলেও, সেগুলোর পোড়া ঝাঁঝালো গন্ধ থেকেই যায়।
কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে না। সবারই কোনো না কোনো জায়গায় ঘাটতি আছে। তাই কাউকে নিয়ে হাসি তামাশা করার আগে, নিজের দিকটাও একটু ভাবা উচিত। আমার হয়তো ব্যাপারগুলো সহ্য হয়ে গিয়েছে বা সহ্য করে নিতে বাধ্য হয়ে গিয়েছি। তবে আপনারা ছোট ছোট বিষয় গুলো নিয়ে, হাসি-ঠাট্টা করে যে মানসিকতার পরিচয় দেন তা কিন্তু বাহবা পাওয়ার মত।
কেউ হয়তো কম বোঝে, কেউ হয়তো খুব সহজেই দ্রুত বুঝে যায় বা কারো হয়তো একটু সময় বেশি লাগে। তার মানে এই না যে, সে ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না। তার মানে এই না যে, তাকে নিয়ে প্রচুর হাসাহাসি করতে হবে।
আচ্ছা আপনি একদম বুকে হাত রেখে বলতে পারবেন, যে আপনার জায়গায় আপনি কতটুকু সঠিক, কতটুকু স্থির, কতটুকু সাবলীল এবং কতটুকু আন্তরিক মানসিকতা পোষণ করেন। আচ্ছা এমনটাই যদি হয়, তাহলে অন্যের দিকে আঙ্গুল তুলে হাসি-ঠাট্টা করার থেকে, তাহলে কেন আন্তরিক হতে পারেন না?
যারা সহজেই অকপটে নিজের দুর্বলতা স্বীকার করে নেয় এবং নতুন করে শেখার আগ্রহ প্রকাশ করে, তাদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য না করে বরং তাদের পাশে এসে কাঁধে হাত রেখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন। সত্যিই তখন অনেক কিছু সহজ হয়ে যায়। আর যখন ছোট ব্যাপারগুলোকে নিয়ে সহজেই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে ফেলেন, তখন ভেবে দেখেছেন কি, অপরপক্ষ থেকে যাকে নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছেন, সেটা তার কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
অনেক ভারী কথা বলে ফেললাম , তাই না। আমরা আসলে সময়-অসময়ে অনেক কিছুই বলে ফেলি অনেকের উদ্দেশ্যে কিন্তু একটাবারও ভাবি না যে,সে আসলে কথাগুলো কতটুকু সহ্য করতে পারবে।
কারো আচারণে কেউ যদি মজা পেয়েই থাকেন, সেটা নিজের ভিতরেই রাখুন নাহ্ বরং যাকে কেন্দ্র করে মজা পাচ্ছেন, তার সঙ্গে আন্তরিক হন বা তার খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা করুন বা তার ভিতরে কি চলছে, সেটা জানার চেষ্টা করুন। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলার চেষ্টা করছি, যে ভিকটিম তার অবস্থা যদি কখনো জানার চেষ্টা করেন, আমার মনে হয় না, তখন আর আপনার মুখ দিয়ে হাসি বের হবে। তখন হয়তো আপনার চিন্তা ভাবনার কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে।
ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
খুবই অর্থবহ কথা বলেছেন ভাইয়া। আপনার কথাগুলোর সাথে আমি একদম সহমত পোষণ করছি। যাকে কেন্দ্র করে মজা পাওয়া যায়, তার মনের অবস্থা জানতে পারলে আমরা হয়তো কখনোই সেই বিষয় নিয়ে মজা করতে পারতাম না। এইতো সেদিন আমার মেয়েকে নিয়ে স্কুলে গিয়েছিলাম, তখন বারান্দায় পড়ে থাকা পানিতে একজন স্কুল ছাত্রী হঠাৎ করেই পিছলে পড়ে যায়। যার কারনে সেখানে থাকা সমস্ত ছাত্রী খুব জোরে জোরে হেসে উঠেছিল। কিন্তু ছাত্রীটি এতটাই জোরে পড়েছে যে, পড়ে গিয়ে তার হাতের হার ফেটে গিয়েছে। এখন সে হাত প্লাস্টার করে গলায় ঝুলিয়ে রাখে। অথচ যখন সেদিন ছাত্রীটি পড়ে গিয়ে এতটাই ব্যথা পেয়েছিল, তখন কিন্তু বাকি ছাত্রীরা তার কথা বিন্দুমাত্র চিন্তা না করেই অট্টহাসি হেসেছিল। এরকম মর্মান্তিক ঘটনাতেও আমরা অনেকেই আছি মজা পেয়ে থাকি। সত্যিই ভাই আমাদের সকলেরই উচিত ভিকটিমের ভেতরে লুকানো যন্ত্রণাকে উপলব্ধি করা। তাহলে হয়তো মুখ দিয়ে আর হাসি বের হবে না।
মানুষ হওয়া জরুরি। আপনার ঘটনাটা শুনে খুব ব্যথিত হলাম।
জ্বী ভাই যথার্ত বলেছেন, জীবনটাই হলো একটা শিক্ষালয়। প্রতিনিয়ত- নানাভাবে নানা অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে আমরা শিখছি। অনেক সুন্দর কথা বলেছেন, অনেক কিছু শেখার আছে এখানে, আমিও কিছু শেখার চেষ্টা করছি। ধন্যবাদ আপনাকে বিষয়টি উপস্থাপন করার জন্য।