আবদার || @shy-fox 10% beneficiary
নির্বাচন অফিস থেকে কাজ শেষ করে বাহিরে বের হয়ে যখন মোটামুটি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি, তখন হুট করে হিরা বললো তার কিছু কেনাকাটা আছে । সে অনেকটাই জোর করে আমাকে কেনাকাটার ব্যাপারটা বলেছে । আমি তাকে বলেই ফেললাম , আমি তো সেইরকম পয়সা নিয়ে বের হইনি। তোমার যদি বেশি ভারী কিছু কেনাকাটা করার থাকে তাহলে কিন্তু আমি এই মুহূর্তে কিনে দিতে পারব না । সে আমাকে বলল, চিন্তা নেওয়ার কোন কারণ নেই ,আমি তেমন ভারী কিছু কিনবো না ।
যেহেতু শুরুতেই মোটামুটি সে একটা শান্তনা মূলক আশ্বাস দিয়েছে তাই তেমন কিছু আর মাথায় নিলাম না । সে রিক্সা চালক কে বলল, ভাইজান আমাদেরকে বাজারের দিকে নিয়ে যান । বেশ খানিক দূর যেতেই যে জায়গাটাতে ছোট ছোট গাছ বিক্রি করে, সেখানে গিয়ে রিক্সা থামতে বলল । অতঃপর ব্যাপারটা আমি পুরোপুরি ক্লিয়ার হতে পেরেছি ।
সে আসলে আমাকে কয়েকদিন থেকে বলছিল বেলকুনিতে তার বাগান করার খুব ইচ্ছে । পাশের বাড়ির ভাবি তাদের বেলকুনিতে বাগান করেছে, তাই মোটামুটি সে আমাকে আবদার করছিল তাকে যেন ফুলের গাছ কিনে দেই। তবে আমি সময় করে উঠতে পারছিলাম না । যাইহোক সে আজকে নিজের থেকেই আমার সময় বের করে নিয়েছে । আমিও ব্যাপারটাকে খুব স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করলাম । আসলে ভালো কাজের সঙ্গে থাকাটা যোগ্যতার বিষয় । যেহেতু বাগান করতে চাচ্ছে তাই মোটামুটি কাজটাকে আমি আরো সহজ করার জন্য বললাম, হীরা তোমার যে কয়টা গাছের চারা কিনতে মন চায় কিনে নাও ।
বেছে বেছে সে অনেকগুলো গাছের চারা কিনে ফেলল । রিক্সাওয়ালা ভাই মোটামুটি কিছুটা আমাদের কর্মকান্ড দেখে একটু বিচলিত হয়ে গিয়েছিল । কারণ তাকে অনেকটা সময় আমরা দাঁড় করিয়ে রেখেছি । তবে অদ্ভুত কিছু কান্ড হয়েছে সেই সময়টায় । যেমন হীরা যখন গাছের চারা দেখছিল, আমি তখন চেষ্টা করছিলাম ফুলের ও গাছের চারার ছবি তোলার জন্য ।
সেই মুহূর্তে বাবুকে নিয়ে একটু ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিলাম । অবশেষে রিক্সাওয়ালা ভাইকে বললাম, ভাইজান কিছু মনে না করলে বাবুকে যদি সাময়িক সময়ের জন্য আপনি একটু কোলে নিতেন, তাহলে আমরা আমাদের কাজ গুলো সহজেই করে ফেলতে পারতাম । ভদ্রলোক আমার আকুতি ফেলতে পারল না । বাবুকে কিছু সময়ের জন্য কোলে নিয়ে রাখল এবং আমিও ঝটপট কিছু ছবিও তুলে নিলাম । হীরা আরও কিছু ফলের ও ফুলের চারা সেই সময়ে দেখতে শুরু করলো ।
মিনিট দশেকের মধ্যেই আমাদের কেনাকাটা শেষ করে মোটামুটি রিক্সায় উঠে পড়লাম। তবে মেইন বিপত্তি লেগে গেল রিক্সায় উঠার পরে। যখন চিন্তা হলো, বাসায় গিয়ে গাছ গুলো রোপন করব কিভাবে । কারণ যেখানে থাকি, সেখানে অতিরিক্ত মাটি সংগ্রহ করার মত তেমন কোন অবস্থা নেই । অবশেষে রিক্সাওয়ালা ভাইজানকে আবারো মিনতি করলাম, ভাইজান আমাদেরকে একটু মাটি সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করে দিবেন ।
আমি জানিনা রিক্সাওয়ালা ভদ্রলোক, মনে মনে কি ভাবছে । কারণ এমন যাত্রী সে এর আগে পেয়েছে কিনা তাও তার জানা নেই । সে স্বাভাবিক ভাবেই বললো ঠিক আছে, আমি চেষ্টা করছি দেখি আপনাদের জন্য কি করা যায় । অবশেষে কলেজ এরিয়ার পাশের ফাঁকা জায়গা হতে দুই ব্যাগ মাটির ব্যবস্থা করে দিয়েছে ।
খুব ছোট ছোট কাজের মধ্যে কিছু আলাদা আনন্দ থাকে । যেমন এই কংক্রিটের শহরে যখন ঐ বেলকুনির মাঝে বাগান করার জন্য আমরা গাছের চারা সংগ্রহ ও রোপন করার জন্য, সেই যে সকাল থেকে সময় ব্যয় করলাম, এইটা অনেকটাই ভাল অনুভূতির সঞ্চারণ করল । যাক অবশেষে বাসার উদ্দেশ্যে ফেরত চলে আসলাম । মোটামুটি সব মিলে অতিরিক্ত পঁচিশ মিনিট সময় চলে গিয়েছে।
রিক্সাওয়ালা ভাইকে বললাম, ভাইজান ভাড়া কত দিতে হবে । সে বলল আশি টাকা । আমি আর কথা না বাড়িয়ে মানিব্যাগটা বের করে একটা একশো টাকার নোট তার হাতে গুঁজে দিয়ে বললাম, এই পঁচিশ মিনিট আপনাকে অনেক বিরক্ত করেছি। আমাদের আবদার পূরণ করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। বাকি টাকাটা ফেরত দিতে হবে না । ওটা দিয়ে মিষ্টি খেয়ে নিয়েন ।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আমি মনে করি, শায়ান বাবুকে কুলে নিয়ে রিক্সাওয়ালা ভাই খুশিই হয়েছে। আর তখনি সে বুঝতে পারছে তার ভাড়া নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। কারণ সচারাচর রিক্সাওয়ালাকে কেউ বাচ্চা কুলে নিতে বলে না। আপনি যে কোনো মানুষকেই ছোট করে দেখেন না, সেইটা দেখেই বুঝতে পারছে। তার মুখের হাসি দেখেই সেইটা বুঝা যাচ্ছে।
তবে আমার অনেক ভালো লেগেছে ফুল গাছ কেনার ঘটনাটা। মন থেকে একটা সত্যি কথা বলি আপনার কাহিনিগুলো পড়ে আমার মনে হয় এগুলো দিয়ে শটফ্লিম বানানো সম্ভব। ভালো লাগে আপনার স্টোরি পড়তে বোর ফিল হয় না কখনোই। 💞
পাঠকের সন্তুষ্টি লেখকের আত্মতৃপ্তি । ধন্যবাদ আমাকে অনুপ্রেরণা যোগানোর জন্য।
আজকে আপনার পোস্ট পড়ে আমার খুবই ভাল লাগল। ভাবিকে সাথে নিয়ে যখন নির্বাচন অফিস থেকে বেরিয়ে আসেন। তখন ভাবি বলল সে কিছু কেনাকাটা করবে। আপনি হয়তো ভেবেছিলেন ভাবি ভারি কিছু কিনবে কিন্তু ভাবীর মনে ছিল অন্য কিছু।সে ফুলের গাছ কিনবে। যাইহোক রিকশা থামিয়ে যখন ফুলের গাছের কিনতে আসলেন তখন আপনার কাছে বিষয়টা ক্লিয়ার হল। ভাবি অন্য কিছু কিনতে চায় না, সে ফুলের গাছ কিনতে চায়। আসলে বাসাবাড়িতে বেলকিনিতে ফুলের সুন্দর দৃশ্য গুলো খুবই ভালো লাগে। আমিও বেলকিনিতে ফুলের গাছ লাগিয়েছি। এটা খুবই ভালো লাগে। সকালবেলা ফুলের গাছের যত্ন করতে খুবই ভালো লাগে। তাই আপনি যখন রিকশা থামিয়ে ফটোগ্রাফি করতেছিলেন বাবুকে তখন রিক্সাওয়ালা কলে নিয়েছে। দৃশ্যটি আমার খুবই ভালো লেগেছে। একটু বিরক্ত হয়নি,আমার অনেক ভালো লেগেছে, শেষ পর্যন্ত ৮০ টাকার কাছে ১০০ টাকা ভাড়া দিয়েছেন। সে অনেক খুশি হয়েছে। বিষয়টা অনেক ভালো লাগলো। আপনার জন্য রইল শুভকামনা।
আমি কৃতজ্ঞতাবোধ প্রকাশ করছি ভাই । ভাল ছিল আপনার মন্তব্যটি ।
প্রিয় ভাইয়া♥
সত্যি ভাইয়া আমি আপনাকে যতই দেখছি যতই শুনি ততই অবাক হচ্ছি অভিভূত হচ্ছি আপনার দৈনন্দিন থেকে অনেক কিছু শিক্ষা নেওয়ার আছে।এভাবেই আমরা যদি প্রতিটা মানুষকে সম্মান করি শ্রদ্ধা করি সম্মান এর সাথে চলাফেরা করি সেই সাথে ভালবাসাও যদি অটুট থাকে তাহলে নিম্নআয়ের এই মানুষগুলো মনে কিছুটা স্বস্তি পায় আনন্দময় নিজেকে মানুষ হিসেবে মনে করে আপনাকে স্যালুট ভাইয়া♥♥
আমার বেলকুনিতে গাছ লাগাতে ভালো লাগে।আমিও ঔ দিন কনটেস্টের জন্য যখন ছবি তোলতে গিয়েছিলাম, তখন বেশ কিছু গাছ কিনে এনেছি।এমন কি কিছু ইনডোর প্ল্যান ও কিনেছি।ভালো ছিলো।ধন্যবাদ আপনাকে।
খুব ভালো লাগলো শুনে যে আপনি গাছ কিনেছেন এবং আবার পুনরায় ধন্যবাদ আমাদের সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য।
ভালোবাসার মানুষের কাছে আবদার করবে নাতো আর কার কাছে করবে, শুনেছি এরকম ছোট ছোট আবদারে নাকি ভালোবাসা অনেক মজবুত হয় 😍। আর হ্যাঁ এই ধরনের ছোট ছোট কাজ গুলোর মধ্যেই নিজের ভালোলাগা আত্মতৃপ্তি লুকায়িত। এইযে ধরুন আপনি যখন রিকশাওয়ালাকে 100 টাকা দিলেন ঠিক ওই মুহূর্তে আপনি যতটা নিজেকে মহানুভবতা অনুভব করছেন ঠিক ওই মুহূর্তে উনিও অনেক কৃতজ্ঞতা বোধ অনুভব করছেন।আসলে এখানেই শান্তি , ভালো থাকুন আপনারা সুখে থাকুন শান্তিতে থাকুন সবসময় এই কামনাই করি।
একদম ঠিক কথা বলেছেন ভাই । কিছু কিছু ছোট বিষয়ের মাঝে অন্যরকম একটা অনন্দ পাওয়া যায় ।
ভাই আপনার এই ছোটো ছোটো ঘটনা পড়তে কিন্তু বেশ ভালই লাগে। জীবন চলার পথে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা এমন সাধারণ সব ঘটনা বেশ ইন্টারেস্টিং করে উপস্থাপন করেন আপনি। আর রিক্সাওয়ালা ভাইয়ের চেহারা দেখেই মনে হচ্ছে তিনি একজন ভদ্রলোক। সব মানুষের সাথেই মানুষের যদি এমন ব্যবহার হতো তাহলে কতই না ভালো হতো।
একদম ঠিক বলেছেন ভাই , আমরা চাইলেই কিন্তু সবার সঙ্গেই আন্তরিক হতে পারি ।
আপনার আজকের লেখনীটি পড়ে আমার খুব ভালো লাগলো ভাইয়া। আমি আপনার লেখনীটি পড়তেছিলাম আর মনে হচ্ছিলো আমি নিজের চোখের সামনে দৃশ্য গুলো দেখতে পাচ্ছি।
এই কথাটি আমার অনেক ভালো লেগেছে ভাইয়া। আসলে ছোট ছোট কাজের মধ্যে আনন্দ খুঁজে না পেলে বড় বড় কাজের মধ্যে আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায় না।
কৃতজ্ঞতাবোধ প্রকাশ করছি ভাই ।
আসলে সত্যি কথা বলতে প্রিয় মানুষের কাছে থেকে পাওয়া আবদার গুলো মাঝে মাঝে নিজের ভালো লাগার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে ভাবীর এই বিষয়টা আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। বাগান করা আমার অনেক পছন্দ। গ্রামে থাকা অবস্থায় এরকম ছোটবেলায় বাগান করতাম। খুব ইচ্ছা ছিল আসলে বাগান করার। তবে এই ইটপাথরের যুগে বাগান করার ইচ্ছাটাই যেন চলে গেছে। তবে ভালো লাগলো আপনি ভাবির আবদার মিটিয়েছেন। দুইজন মিলে খুব সুন্দর একটি সময় কাটিয়েছেন। এরকম সুন্দর কিছু মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাই। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
চেষ্টা করেছি আরকি ভাই । ধন্যবাদ মতামত প্রকাশ করার জন্য।
প্রিয়জনের ছোট ছোট আবদার গুলো পূরণ করার মাঝে আলাদা রকমের প্রশান্তি কাজ করে। আসলে ছোট ছোট আবদার গুলো পূরণ হলে প্রিয়জন যেমন খুশি হয় তেমনি নিজের অনেক ভালো লাগে। হিরা মনি আপু একটা লক্ষ্মী মেয়ে সেটা আমরা সবাই জানি। আর আপু একজন ভালো মনের মানুষ এটা বোঝা যায়। বাগান করার শখ তার কিছুদিন আগে হয়েছে সেটা আমরা সকলেই জানি। পাশের বাসার শখের বাগান দেখে আপুর শখ হয়েছে বাগান করার এটা আমরা আপুর পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তবে অবশেষে আপনি আপুর শখ পূরণ করলেন এবং অনেকগুলো গাছ কিনে দিলেন এটা দেখে ভালো লেগেছে আমার। সেই সাথে ধন্যবাদ জানাতে চাই সেই রিকশাচালক চাচাকে যিনি আপনাদেরকে অনেক কিছুতে সাহায্য করেছেন। আপনি তাকে মিষ্টি খাওয়ার জন্য টাকা দিয়েছেন এটা জেনে আমার কাছে ভালো লাগলো। সত্যি ভাইয়া আপনি সব সময় সব দিক বিবেচনা করেন। এভাবেই একজন ভালো মানুষ হয়ে সবসময় মানুষের পাশে থাকুন এবং প্রিয় মানুষগুলোর সেই ছোট ছোট মধুর আবদার গুলো পূর্ণ করুন এই কামনা করছি ভাইয়া।
একদম সঠিক ধরেছেন আপু কিছু ছোট ছোট বিষয়ের মাঝে আলাদা আত্মতৃপ্তি খুঁজে পাওয়া যায় ।
প্রিয়জনের আবদার গুলো অনেক ছোট কিন্তু সেখানে আনন্দের বিশালতা টা অনেক বেশি। পাশের বাসার ভাবির ব্যালকনিতে বাগান দেখে ভাবি একটা পোস্ট করেছিলো এবং উনি ফুলগুলো দেখে খুবই আনন্দিত হয়েছিল। এবং বাবি বাগান করার সিদ্ধান্ত নেয়, পরবর্তীতে আপনাকে নিয়ে ফুলের চারা কেনা এবং রিক্সাওয়ালাকে নিয়ে বাবুকে নিয়ে ফটোগ্রাফি করা এবং বিস্তারিত দেখলাম লোকটা ভাল ছিল। যদিও রিকশাচালক আপনাদেরকে অনেক সময় দিয়েছে এবং আপনাদেরকে মাটির ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আর আপনি অবশেষে সান্তনা পুরস্কার দিয়ে দিলেন, এটাই হচ্ছে মনুষ্যত্ব। আর আমাদের সাথে আপনার ব্যালকনিতে বাগান করা এবং ফুলের গাছ কেনা নিয়ে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করেছেন। আপনার প্রতি এবং হীরা ভাবীর প্রতি রইল ভালোবাসা অবিরাম।
পাঠকের সন্তুষ্টি লেখকের আত্মতৃপ্তি । ধন্যবাদ মতামত প্রকাশ করার জন্য।