মাস্টারমশাই

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

শহিদুল মাস্টার কে আমি কিভাবে চিনি, এটা না হয় পরে বলবো । তবে তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছি । বলতে গেলে সেই ছোটবেলা থেকেই ।আজ হয়তো তার জীবন নিয়ে লেখার চেষ্টা করছি । কতটুকু লিখতে পারব , তা বলতে পারছি না । তবে যতটুকু দেখেছি এবং বুঝেছি , সেই অনুযায়ী কিছু কথা লেখার চেষ্টা করব ।

20221111_142533.jpg

কর্মজীবনে তিনি হাইস্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন । তিনি এই গ্রাম থেকেই দীর্ঘ ১২ কিলোমিটার পথ প্রতিদিন সাইকেল যোগে যাতায়াত করতেন । ছোটবেলা থেকেই বেশ কষ্ট করে বড় হয়েছেন । যদিও সে তার বাবার বড় সন্তান ছিল, যার কারণেই মোটামুটি বেশ দায়িত্ব তাকে ছোটবেলা থেকেই নিতে হয়েছিল । পড়াশোনার জন্য তো একটা সময় তাকে অন্যের বাড়িতে লজিন থেকে পড়াশোনা করতে হয়েছিল, সেই সুদূর পাবনাতে গিয়ে।

20221111_121503.jpg

কঠোর মনোবল তাকে, তার পড়াশুনা ও পরবর্তীতে কর্মজীবনে সাফল্য এনে দিতে বেশ সহযোগিতা করেছিল । হয়তো ছোটবেলায় যদি বাড়ি থেকে বেরিয়ে না গিয়ে, যদি লজিন না থাকতো, তাহলে হয়তো তার জন্য জীবনটা অন্যরকম হয়ে যেত ।

বিশেষ করে এই দেশের উত্থান , সে খুব কাছ থেকেই দেখেছে বলা যায় । সেই মুক্তিযোদ্ধা কালীন সময় এবং তার পরবর্তী সময়ের চিত্রগুলো যেন তার এখনো চোখে ভাসে । বলতে গেলে অনেকটাই বাস্তবিক মানুষ সে ।

যেহেতু ছোটবেলা থেকেই আমি তাকে দেখেছি, তাই অনেক অভিজ্ঞতা আমার নিজেরও আছে । এই যে বাড়িটা, সে নিজের হাতে বানিয়েছে । সে অবশ্য ব্যক্তি জীবনে ছয় সন্তানের জনক । আজ তার বয়স কত হবে, সম্ভবত ৯৫ । এখন তার কর্মজীবন নেই, তার সন্তানরাও তার কাছে থাকে না । এই যে এত বড় একটা বাগান বাড়ি, আজ যেন পুরোটাই ফাঁকা ।

যে মানুষটাকে দেখে , এক সময় ভয়ে সবাই বাড়িতে থরথর করে কাঁপতো , সেই মানুষটা আজ নিজেই অন্য মানুষের শরণাপন্ন হয়ে একা একা এই বাড়িটাতেই থাকে । যে মানুষগুলো তাকে দেখে কাঁপাকাঁপি করতো, সেই মানুষগুলো আজ কেউ তার পাশে নেই । তারাও হয়তো কর্মের জন্য, যে যার মত করে দূরে আছে । হয়তো বাস্তবতা এমনি । তারাও হয়তো চেয়েছিল মাস্টারমশাই কে সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য, তবে মাস্টারমশাই এক কথায় সেটা মানতে নারাজ । সেই এই বয়সে এসেও, এখনো তার কথাতে বেশ পরিপক্ক ।

20221111_163141.jpg

আমার জীবন যদি চলেও যায়, তাহলে যেন এই বাড়িতেই চলে যায়, আমি এখানেই শেষ পর্যন্ত থাকতে চাই । যার প্রয়োজন হবে, সে যেন আমার কাছে আসে । আর যদি কোন সমস্যা থাকে, তাহলে কাছে আসার দরকার নেই । তবে সকলের প্রতি আমার ভালোবাসা, আগের মতোই আছে । বেশ শক্তপোক্ত কথা বলে এখনো মাস্টারমশাই।

20221111_121048.jpg

মাস্টারমশাইয়ের প্রিয়তমা স্ত্রী গত হয়ে যাওয়ার পর থেকে, সে আরো মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে গিয়েছে । এখন তার শরীরটা আর আগের মতো সায় দেয় না । তবে তার মনোবল এখনো পরিপক্ক । সে এখনো সেই বাগানবাড়ি নিয়েই আছেই । সময় সুযোগ পেলেই বাগানের ভিতরে বসে থেকে আশেপাশের মানুষজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলে । গ্রামের এক ভদ্রলোক আছে , সেই মূলত তার দেখাশোনা করে।

আমি নিজেও মাস্টারমশাইকে বেশ কয়েকবার বলেছিলাম, যদি আপনার কোন সমস্যা না হয়, তাহলে আপনি আমার সঙ্গে থাকতে পারেন । তবে তার একদম পরিস্কার উত্তর , তোমার যদি কোন সমস্যা না থাকে, তাহলে তুমি আমার এখানে এসে থাকতে পারো । আসলে ব্যাপারটা বেশ জটিলতা সম্পন্ন, এমন একটি গ্রামে মাস্টারমশাই থাকে, যেখানে আসলে এখনো বিদ্যুত আর ইন্টারনেট নেই । হয়তো কর্মের কারণে , সেখানে গিয়ে থাকা আমার জন্য অনেকটাই কষ্ট সাধ্য।

20221111_121449.jpg

কর্ম আসলেই অদ্ভুত ব্যাপার , হয়তো আত্মীয়-স্বজন সবকিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলে । কিচ্ছু করার নেই আমার । তবে সময় সুযোগ পেলেই , মাস্টারমশাইকে দেখতে আসি । মাস্টারমশাই আর অন্য কেউ না, সে আমার দাদুভাই । আমার শিক্ষা জীবনের প্রথম হাতে-খড়ি তার কাছ থেকেই শেখা ।

তবে তার জন্য, দীর্ঘ সময়েও কোন কিছুই করতে পারিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে । আসলে তিনি নিজের থেকেই কারো কোন সহযোগিতাই গ্রহণ করেন নি এবং এই স্বভাবটা তার এখনো নেই । বরং তার কাছ থেকেই যেটা পেয়েছি , সেটাই তো অপরিশোধ যোগ্য । হয়তো বয়সের কারণে তার শরীরের গঠন ও অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে । তবে মানসিকভাবে, সে একদম এখনো সচল ও কঠোর আছে । দীর্ঘদিন পরে তার সঙ্গে, আজ যখন পাশাপাশি বসে কিছুটা সময় কথা বললাম, তখন যেন আলাদা একটা প্রশান্তি পাচ্ছিলাম।

ভালো থাকুক আমার দাদুভাই ও আমার বাল্যকালের মাস্টারমশাই, তার জন্য ভালোবাসা নিরন্তর ।

Banner-6.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  
 2 years ago 

মাস্টারের স্হান হচ্ছে বাবা মার পরেই। আপনার মাস্টারমশাই এর গুরুত্ব আপনার কাছে আরো অনেক কারণ সে আপনাকে হাতে খড়ি শিখিয়েছে ও আপনার দাদুভাই।আসলে ভাইয়া মানুষের জীবন এমনি এক সময় তাকে ভয় পাবে আর অন্য সময় সে অসহায়।আর কর্মের জন্য মানুষ আপনজন থেকে দূরে থাকে। আপনার মাস্টারমশাই হয়তো বা শেষ জীবনে তার স্হান থেকে সরবে না। সত্যি বলতে ভাইয়া বয়স হয়ে গেলে কেউ আর দূরে যেতে চায় না।আপনার মাস্টারমশাইয়ের জন্য অনেক দোয়া রইল সে যেন সুস্থ থাকে, ভালো থাকে।ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

হুম সে মানসিক ভাবে এখনো বেশ পরিপক্ব এবং সে চায় তার শেষ জীবনটা তার বাড়িতেই কাটুক।

 2 years ago 

আপনার মাস্টারমশাই দাদুর কাছ থেকে আপনার হাতেখড়ি হয়েছিল,যাক আপনার জীবনের প্রথম শিক্ষককে দেখতে পেলাম ভাইয়া।তিনি অনেক জেদি মনে হলো একা গ্রামে থাকবে তাও কারো কাছে যাবেনা,নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে ও না।গ্রামের বৃদ্ধ লোকগুলো এরকমই আসলে তারা ভিটে আকড়ে ধরে থাকতে চায়।আসলেই পরিবারের বড় ছেলেদের দায়িত্ব টা বেশি ।১২ কি.মি.দূর থেকে তিনি যাতায়াত করতেন।বেশ কষ্ট করেছেন জীবনে।ছাত্র জীবনে পাবনা মানুষের বাড়ি লজিং থেকেছেন।আগে মানুষ এরকমই থাকতো পড়াশুনার জন্য শুনেছি।আপনি আপনার মাস্টার মশাইয়ের সঙ্গে বেশ ভালো সময় কাটিয়েছেন গল্প করে ।ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর ব্লগটি শেয়ার করার জন্য ভাইয়া।

 2 years ago 

আসলে তার এই বাড়ি কেন্দ্রিক বহু স্মৃতি জড়িয়ে আছে, তাই সে অন্যত্র যেতে নারাজ। ধন্যবাদ আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য।

 2 years ago 

আমার নানুর ছাপ খুজে পেলাম একটু করে।নানুও প্রতিদিন সকালে সাইকেল চালিয়ে ১৬/১৭ কিলোমিটার যেতো তার স্কুলের উদ্দেশ্য নিয়ে।
নানু গত হয়েছেন প্রায় বছর ৪ হয়ে গেছে।
দাদুভাইয়াকে দেখে খুব ভালো লাগলো।আল্লাহ তাকে সুস্থ রাখুক।তার মনোবল এবং মাটির প্রতি ভালোবাসার কথা জেনে আসলেই ভালো লাগলো।

 2 years ago 

জীবন গুলো এই রকমই রে ভাই।

 2 years ago 

ভাইয়া পোস্টটি পড়লাম কিন্তু চোখ আটকে গেল আকাশ আর সুপারি গাছের দিকে। অসাধারন লাগলো ছবি দুটি। ভাইয়া মা-বাবার পর মাস্টারমশাইয়ের স্থান।মাস্টারমশাইয়ের কাছে আপনার হাতেখড়ি,আপনার কাছে তার অবদান অনেক।মাস্টারমশাইয়ের মনের জোর অনেক, তাইতো তিনি এমন এক গ্রাম যেখানে এখনো বিদ্যুত নেই, সেখানে আছে। আপনার মাস্টারমশাইয়ের জন্য অনেক দোয়া করি, সুস্হ থাকুক, ভাল থাকুক।অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে।

 2 years ago 

ভাই আপনার কথাগুলো পড়ছিলাম আর আমার দাদু ভাইয়ের কথা মনে পড়ছিল।ঠিক তার কথাও এমন স্পষ্ট ছিলো একদম একরোখা নিজের কথা থেকে একচুল সরতেও রাজি না।তবে মানুষটাকে হারিয়েছি অনেক আগেই।আর জীবনটা আসলেই খুব বৈচিত্র্যময়,সময়ের সাথে সবকিছু নিজে থেকেই পরিবর্তন হয়ে যায়।যাইহোক আপনার দাদু বেচে থাক তার নৈতিকতায় এবং আদর্শে।কারণ একজন শিক্ষক কখনোই তার আদর্শ থেকে সরে আসে না,আর এজন্যই শিক্ষকরাই পুরো মানব জাতির আদর্শ।আর আপনার দাদুর জন্য আমার সালাম রইলো।🙏

 2 years ago 

তোমার দাদুর চলে যাওয়ার ব্যাপারটা শুনে বেশ মর্মাহত হলাম। সৃষ্টিকর্তা তাকে ভালো রাখুক।

 2 years ago 

প্রতিটা জায়গায় এমন একটা কড়া মানুষ থাকেই। আসলে আপনার মাস্টারমশাই ব্যক্তিত্বটা অসাধারণ। বুঝলাম উনি যৌবনকালে পড়াশোনার জন্য অনেক কষ্ট করেছিল। আপনার দাদুভাই আপনাকে হাতে খড়ি শিখিয়েছে জেনে ভালো লাগলো। আমার দাদু হয়তো আমার জন্মের আগেই মারা গেছেন। যাহোক আপনার মাস্টারমশায়ের জীবনীতে পড়ে ভালো লাগলো আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

ভাইয়া আমি প্রথমেই ধারণা করেছিলাম সেই মাস্টারমশাই আর কেউ নয় আপনার দাদু। গতকাল আপনার পোষ্টের মাঝে আপনি আপনার দাদুর ছবি শেয়ার করেছিলেন। আসলে মানুষের জীবন বড়ই বিচিত্র। প্রিয় মানুষগুলো থেকেও দূরে চলে যায়। হয়তো কর্মের তাগিদে কিংবা ব্যক্তিগত কারণে। পুরো বাড়ি জুড়ে সে আজ একা। হয়তো কোন এক সময় সেই বাড়ি কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। এমন একজন মানুষের সম্পর্কে আজকে আপনি লিখেছেন যেই মানুষটির হাত ধরে আপনার শিক্ষা জীবনের প্রথম হাতে-খড়ি হয়েছে। ভাইয়া আপনার লেখাগুলো পড়ে অনেক ভালো লাগলো।

 2 years ago 

বয়স এমন একটা জিনিস ৷ আসলে বয়স যেমনি হোক মনের বল শক্তি কিন্তু সেই ১৬ কি ২০ থেকে যায় ৷ আপনার দাদুু মাষ্টার মশাই জীবনের গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো ৷ আসলে এটা ঠিক যে জীবনে কর্ম জীবনের যে যার মতো দুরে যেতে হয় ৷ আর যে মানুষটি সবাইকে মানুষের মতো মানুষ করে তাকেই ছেড়ে যেতে হয় ৷ আর সে মানুষটি তার বাকি জীবন তার নিজ গৃহে থাকতে চায় ৷ এক দিক থেকে দাদু মশাইয়ের কথাও খারাপ না ৷

 2 years ago 

আমি শুরু থেকেই বুঝতে পারছিলাম দাদা যে আপনি আপনার দাদুভাইয়ের কথা বলছেন। পড়তে পড়তে বুকের ভেতরটা কেমন যেনো মোচর মারছিলো। জানেন দাদা এই মানুষগুলো সব একই রকম হয়। আমার ঠাকুমাকেও হাজার বলে আমাদের সাথে এনে রাখতে পারি নি। সেই ভিটে মাটিতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। এত খারাপ লাগে ভাবলে। এখনও ভাবি যে আমরা কি সত্যিই কিছু করতে পারতাম! আরো কি কিছু করা বাকি ছিলো? হতে পারতো কিছু!

 2 years ago 

আমার শুরু থেকে কেন যেন মনে হচ্ছিল যে ইনি আপনার দাদুভাই। শেষে দেখলাম যে আসলেই তাই। আল্লাহর রহমতে এত বছর বয়সেও সে নিজে চলাফেরা করতে পারছে তাই তো অনেক। আসলে দীর্ঘ বছর এক জায়গায় থাকতে থাকতে সেই জায়গার প্রতি মানুষের একটি মায়া তৈরি হয়ে যায়। চাইলে সেই মায়া ত্যাগ করার সম্ভব নয়। তা না হলে কষ্ট করে এখানে না থেকে তিনি আপনাদের সঙ্গে বা তার অন্য সন্তানদের সঙ্গে ঠিকই থাকতেন । দোয়া রইল আপনার দাদু ভাইয়ের জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.033
BTC 63875.92
ETH 2747.99
USDT 1.00
SBD 2.65