ঘূর্ণায়মান জীবন || @shy-fox 10% beneficiary
এইতো বছর দশেক আগে হুট করে যখন ফার্মগেটের ঐ গোলচপ্তরে দাঁড়িয়ে কোচিং সেন্টার গুলোর দিকে তাকিয়ে ছিল শফিক তখন বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল । এমনিতেই এই শহরটা বড্ড জাদুর শহর । ছোট্ট একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে সে । মাস শেষে মাইনে পাওয়ার পরে নিজের পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করে খুব একটা বেশি পয়সা তার হাতে থাকতো না ।
এইদিকে তো আবার নিজের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করতেই অনেকটা পয়সা খরচা হয়ে যেত তার । ছোট্ট চাকরির মাইনে দিয়ে তার হয়তো একার পেটটা বেশ ভালোই চলে তবে পরিবার ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার কথা যখন সে চিন্তা করে , তখন বড্ড গুলিয়ে যায় সে ।
একবার তো ভেবেই বসলো বয়স যেহেতু শেষের দিকে আর একবার চেষ্টা করে দেখবে বিসিএস এর জন্য । যদিও কোম্পানিতে সারাদিন চাকরি করে তারপর আবার বিসিএস এর জন্য কোচিং করে পড়াশোনা করাটা বেশ কষ্টসাধ্য । তবে ইচ্ছার কোন কমতি ছিল না । আর এতটুকু নিজের প্রতি মানসিক আত্মবিশ্বাস ছিল যে , সে যদি একটা বারের জন্য কোচিং করার মত সুযোগ পেয়ে পড়াশোনা করে তাইলে নির্দ্বিধায় তার বিসিএস না হলেও কোনো না কোনো একটা ভালো সরকারি চাকরি হয়ে যাবে ।
প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে সে যে পয়সা পেতো , তার তো বেশিরভাগটা পরিবারকে সহযোগিতা করতেই চলে যেত । তারপর তো আবার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাটা নিজেকেই করতে হতো । এতো কিছুর পরেও সে কিছু পয়সা সঞ্চয় করেছিল । সে যেহেতু বিসিএস এর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে তাই সে কোম্পানির চাকরিটা ছেড়ে দিবে ।
আসলে হাতে কিছু পয়সা জোগাড় করে নিয়েই সে মূলত কোচিং এ ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো ঝুঁকি নিয়েই ফেলতে চাচ্ছে । তাই অতিরিক্ত একটু পয়সা জোগাড়ের চেষ্টা করছে সে ।অবশেষে কোম্পানির চাকরিটা ইস্তফা দিয়ে কোন এক বিকেলে কবিরকে নিয়ে দেখা করলো সেই কোচিং সেন্টার গুলোর সামনে । খুলে বলল তার অব্যক্ত কথাগুলো । কারণ এই শহরে শফিকের একমাত্র বন্ধু হচ্ছে কবির ।
ব্যস্ত রাস্তায় কত মানুষজন ঘোরাঘুরি করছে এই শহরে । কতই না চিন্তা ভাবনা একেক জনের । শফিকও তার মধ্যে একজন । কোন রকম যখন পাবলিক বাসে চড়ে ফার্মগেটের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে । ক্লান্ত শরীরে বেশ ঝিমিয়ে গিয়েছে বাসের সিটেই । হুট করেই হেলপার জোরে জোরে চিল্লাচ্ছে, ওস্তাদ ডানে প্লাস্টিক সাইট দেন ।
কালো রঙের পাজেরো জিপের গ্লাসটা একটু খুলে প্রকৃতির হাওয়া খাচ্ছিল কবির । হেলপারের কথা শুনে একদম তাজ্জব বনে গিয়েছে সে । অর্ধ কোটি টাকার গাড়ি হেলপারের কাছে নিতান্তই প্লাস্টিক , সে যেন এটা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না । কবির জিপের জানালা বন্ধ করে দিয়ে রাগে গজগজ করছে আর তার ড্রাইভারকে বলছে এই ব্যাটা এসিটা জোরে দে আর দ্রুত গাড়ি চালা ।
কবির আসলে হুট করেই আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গিয়েছে । আসলে পূর্বপুরুষের ব্যবসাকে একটু মডিফাই করে বেশ পয়সাওয়ালা বনে গিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে সে । তবে শফিক, সে আসলে বহু কিছুই করতে চায় জীবনে । তার মাথায় আসলে ঐ বিসিএস আর সরকারী চাকুরির নেশাই প্রতিনিয়ত ঘুরপাক করে ।
কোনমতো শফিক বাস নেমেই চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে এক কাপ দুধ চা আর একটা সিগারেট জ্বালিয়ে নিয়েছে । জ্বলন্ত সিগারেটে টান দিচ্ছে আর মাঝে মাঝে চায়ের কাপে একটু চুমুক দিচ্ছে আর কোচিং সেন্টার গুলোর দিকে বার বার দেখছে । যাইহোক অতঃপর শুরুই করে দিল কোচিং করা । আধ-ঘাট বেঁধে নেমে পড়ল চাকুরির পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য।
একবার তো চার হাজার টাকা ধার চেয়েই বসলো বন্ধু কবিরের কাছে । শেষ মাসে কোচিং করার সময় বড্ড টাকাটার দরকার পড়েছিল । বলেই ফেলল বন্ধু টাকাটা একটু দিস , আমার এবারের প্রস্তুতি বেশ ভালোই । চাকরিটা হয়ে গেলেই তোকে আস্তে আস্তে শোধ করে দিব । পয়সার কাছে আসলে বন্ধুত্বগুলো যেন বড্ড বেমানান । কবির হয়তো শফিকের পয়সার তাগিদটা সেই সময় খুব একটা বুঝে উঠতে পারে নি । একটা সময় শফিক তো বেশ নিরাশ হয়ে গিয়েছিল।
আজ বছর দশেক পরে , যে কবির কথায় কথায় টাকার বান্ডিল বের করতো এখানে সেখানে । সে নিজেই আজ বহু টাকার ঋণী । তার সেই আগের প্রতিপত্তি আজ আর নেই । ঋণে একদম জর্জরিত হয়ে গিয়েছে । মানুষের ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে ঘোরে ।
আসলে জীবন কখন কার কোন দিকে মোড় নেবে এটা বলা মুশকিল । ইচ্ছা করেই সাদা গাড়িটার জানালা নামিয়ে কবির কে ডাক দিল শফিক । বেশ মনে রেখেছে আজও কবিরের সেই মুখটা । গাড়িতে উঠে পড় কবির । আমি তোর বন্ধু শফিক । কবিরও খুব সহজেই শফিককে চিনতে পেরেছে । দ্রুত গাড়িতে উঠে পড়ল । তারপর , গাড়ি কিনেছিস নাকি শফিক। শফিক দ্রুত ড্রাইভারকে বলল , এগিয়ে চলো ।
ক্রমশ
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
আসলে ভাই আজকে আপনার গল্পটি পড়ে অনেক ভালো লাগলো আবার খারাপ লেগেছে। কারণ এই গল্পটি একদম বাস্তব আমাদের সমাজে এরকম ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে। টাকার অহংকার বন্ধু, বন্ধুকে চিনতে পারেনা। কিন্তু কিছু বন্ধু আছে যাদের হাজার টাকা হলেও তারা বন্ধুত্বের সম্পর্ক ভুলে ভুলে যায় না। কবির এর ক্ষেত্রে ঠিক তাই হয়েছে। সেটা টাকার অহংকারে শফিককে ভুলে গেছে। মাত্র কিছু টাকা চেয়েছিল বিসিএস পরীক্ষা দেবে। তাই সে দিতে পারেনি। আসে টাকার অহংকার কোথায় গেল। সে এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু শফিক ঠিকই তাকে মনে রেখেছে। গল্পটি সত্যিই আমাদের শিক্ষানীয় ছিল।
গল্পটি সুন্দর এবং যথার্থ বাস্তবসম্মত। আজকে অবহেলা করে চলে যাবে তো, কালকে এসে সালাম করবে। রফিক সেই সালাম পাওয়ার যোগ্য ব্যক্তি। সময় যেখান থেকে পথচলা শুরু করায় আবার সেখানেই ফিরিয়ে নিয়ে আসে কারণ পৃথিবীটা গোলাকার ফিরে আসতেই হবে।
আপনাকে ধন্যবাদ ভাই।
এটাই হল জীবনের দুষ্টচক্র।আজ আমি উপরে তো কাল অন্যকেউ।একদম বাস্তব সম্মত গল্প।পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
আজ আকাশে তো কাল পাতালে । বড়ই রঙ্গমঞ্চ এই জীবন।
দারুন লাগলো ভাইয়া গল্পটা আসলেই সময় যে কখন কাকে কোথায় নিয়ে যায় তার কোন ঠিক নেই। শফিক বিসিএস দেওয়ার জন্য একেবারে স্থির ছিল যে সে বিসিএস দিবেই সেই জন্যই সে আজ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। আর কবির টাকার অহংকার করেছিল বলেই আজ তার এই দশা। আসলে বিধাতা কাকে কখন যে কোথায় নিয়ে যায় তা বলা মুশকিল। আর মানুষ যদি তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সংকল্প করে থাকে তাহলে সেটা একদিন নিশ্চিত হবেই এটাই এই গল্প থেকে বুঝতে পারলাম। ভালো লাগলো পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
লিখবো দেখি সময় করে উঠি আপু , আসলে বেশ ব্যস্ততা পূর্ণ সময় যাচ্ছে আসলে ।
সত্যি ভাই একেবারেই সঠিক বলেছেন মানুষের জীবন কখন ঘুরে যাবে এটা বলা কঠিন। আজ আপনার কাছে অনেক টাকা আছে কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আপনি নিঃস্ব হয়ে যেতে পারেন। যেমনটা কবিবের ক্ষেএে দেখা গেল। এবং শফিকের মতো অসংখ্য ছেলে আছে আমাদের এই দেশে যারা একটা সরকারি চাকরি বা বিসিএস এর পেছনে দৌড়াচ্ছে।।
জীবনে কখন কে কিভাবে এগিয়ে যাবে এইটা বলা মুশকিল ও কষ্টকর । তবে লেগে থাকলে একটা সময় সফলতা আসবেই ।
আসলেই ভাইয়া মানুষের জীবন কখন পাল্টে যায় সেটা বোঝা মুশকিল। যেমনি আজকের শফিকের জীবন এবং কবিরের জীবন সম্পর্কে যা বুঝলাম আর। কোভিদ অনেক কষ্ট করে নিজের চাকরি ছেড়ে আবার ো বিসিএস পাওয়ার জন্য কষ্ট করে পড়ালেখা করেছে। আর সেই বন্ধু শফিক মাত্র কয়েক হাজার টাকা সাহায্য করতে পারল না যার কিনা অঢেল টাকা পয়সা। শেষমেষ শফিক একদম খারাপ অবস্থায় পৌঁছে গিয়েছে। আর কোভিদ অবস্থা পরিবর্তন হওয়া শর্তেও বন্ধুকে ভুলেনি। ভালো লাগলো আপনার লেখাগুলো পড়ে।
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গুলোতে আসলে শফিকের মতো বন্ধু বেশ প্রয়োজন।
একটি সফলতার গল্প পড়ে খুবই ভালো লাগলো ভাইয়া। আসলে একজন মানুষের যদি স্থির মনোবল থাকে এবং ইচ্ছাশক্তি থাকে তাহলে অবশ্যই সে সফলতার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে। শফিকের মনে প্রবল আগ্রহ ছিল বলেই আজ সে একজন সফল মানুষ। আর যে মানুষটি পূর্বপুরুষদের ব্যবসা নিজের হাতে পেয়েছিল সে হয়তো সেটা ধরে রাখতে পারেনি। ভাগ্য কখন কার জীবন পরিবর্তন করবে কেউ বলতে পারেনা। সবই ভাগ্যের খেলা। তবে আমরা নিজেরাই আমাদের ভাগ্যের স্রষ্টা।
কথা বেশ ভালোই লেগেছে আপু । এটাই চিরন্তন সত্য।
জি দাদা
কোথায় বলে জীবন কখন কাকে কিভাবে কোন দিকে নিয়ে যাবে ৷ তা কেউ জানে না ৷ শুধু বিশ্বাস আর চেষ্টা এবং কি শেষ পযন্ত থাকতে হবে ৷ যেটা আপনার গল্পের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে ৷
জীবনে ভালো কিছু করতে হলে কষ্টের স্বাদ পেতে হবে ৷
ধন্যবাদ দাদা ভালো থাকবেন!!!!
জীবন কখন কোন বাঁকে মোড় নেয় তা আমরা কেও ই জানিনা।কিন্তু চলতি পথে মানুষগুলোকে চেনা হয় ঠিকই।
একদম যুক্তিযুক্ত কথা বলেছেন ম্যাডাম ।
বাস্তবতা কখন কিভাবে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেবে কিছুই বোঝা যায় না।যেমনটা শফিকের ক্ষেত্রে হয়েছে।যদি কবির সেদিন শফিককে টাকা দিয়ে সাহায্য করতো তাহলে হয়তো আজ পালিয়ে পালিয়ে থাকতে হতো না।কিন্তু অতিরিক্ত অহংকার তার জীবনকে শেষ করলো।শফিক পরিশ্রমের সফলতা পেল,ভালো লাগলো গল্পটি।ধন্যবাদ ভাইয়া।