জলে ডুবে কণিকার মৃত্যু ❤️

in আমার বাংলা ব্লগ13 days ago (edited)

হ্যালো,

হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই আশা করছি ভালো আছেন আমিও ভালো আছি।
আজ আমি আপনাদের সাথে ভাগ করে নেব কণিকা নামের একটি হাস্যজ্বল মেয়ের মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ছোট একটা বাচ্চা কে রেখে অকাল করুন মৃত্যু পুকুরে ডুবে সেই করুন কাহিনি।

InShot_20240607_115329039.jpg

তো চলুন দেখা যাক ঘটনাটি কি।

আমার শ্বশুর বাড়ির পাশেই মাঝি পাড়ার সবাই আমাদের বাড়িতে কাজ করে।থালাবাসন মাজা,ঘর মোছা,উঠান ঝাড়ু দেয়া সব কিছু করতেন। বাবা,মা হারা একটি মেয়ে নাম কণিকা।কণিকা থাকেন মামার বাড়িতে ছোটবেলায় মা না কি সাংসারিক অশান্তির কারণে আত্মহত্যা করেছে। কণিকা ছোটবেলা থেকে মামা বাড়িতে থাকতো।অভাবের সংসার কণিকার মামাদের। অন্যের পুকুরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে তবে ভালোবাসার কোন কমতি নেই।এতোটাই অন্ধভালোবাসার কারণে ঐ মাঝি পরিবারের মেয়েদের জীবন অভিশপ্ত। ভাবছেন ভালোবাসার কারনে অভিশপ্ত এমন কেমন কথা আগগে হ্যাঁ এতো ভালোবাসার ফলে আজ অবদি কোন মেয়েদের সংসার টেকেনি।বিয়ের পর এক,দু বছর সংসার করতে পারে সবাই একটি বাচ্চা কিংবা দুটি বাচ্চা হলে যদি সংসারে কোন কারণে অশান্তি নেমে আসে তাহলে সংসার ছেরে বাপ,দাদার বাড়িতে চলে আসে আর বাপ,দাদাও ভালোবেসে তাদেরকে রেখে দেয়। অভাব অনটনে না খেয়ে না দেয়ে দিনপাত হয় তবুও তারা সংসার করে না।আমার মনে হয় মাঝি পরিবারটির পরিবারে কোন কারনে অভিশাপের ফলে এমনটি হয়েছে কোন মেয়ে সংসার করতে পারে না, কেউ বা স্বামীর সংসারে আত্নহত্যাও করে।
সেরকম কনিকার মা আত্মহত্যা করেছিলেন। কনিকাকে ছোট্ট বেলায় মামা বাড়িতে নিয়ে এসেছে মামারা।মামা ভালোবাসলেও অভাবের সংসারে মামিরা দেখতে পারতেন না আর সেজন্যই হয়তো বা এগারো বছর বয়সেই কণিকাকে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়।
খেলার বয়সে ও স্কুলে যাওয়ার বয়সে কণিকা শ্বশুর বাড়িতে চলে যায়।কিছু দিন থাকার পর কণিকার সংসারে অশান্তি শুরু হয়।অভাবের সংসার ছিলো তারপর কম বয়স এরকম চলার কিছু দিনের মধ্যেই বাচ্চা কনিকা মা হতে চলে।খুব কম বয়সেই কণিকা বাচ্চার মা হয় এবং অভাবের সংসারে কনিকা মানসিক ও শারীরিক ভাবে খুব নির্যাতনের স্বিকার হয়।
কণিকা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। স্বামীর বাড়িতে আর রাখতে চায় না কনিকাকে।কণিকার মামারা গিয়ে বাচ্চা সহ কণিকাকে নিয়ে আসে এবং সাধ্যমত কণিকার চিকিৎসা করেন। কণিকা কিছুটা ভালো থাকে মাঝে মাঝে আবার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে এভাবে কেটে যায় বেশ কয়েক বছর।
কণিকার মেয়ের বয়স ৫ বছর হয়।দেখতাম কণিকা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললেও মেয়ের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। মেয়েকে এক মিনিটও চোখের আড়াল করতো না। মাঝে মাঝে আমাদের বাড়িতে এসে মেয়েকে খাওয়াতো। মেয়েকে নিয়ে পুকুরে স্নান করা তো নিজেও স্নান করতো। কণিকা আবার ছিল মৃগী রোগ।মাঝে মাঝেই নাকি এই রোগটির কারণে কণিকা জ্ঞান হারাতো।এজন্য কণিকাকে চোখে চোখেই রাখতে কনিকার মামারা। আবার কনিকার দুজন মাসি ও বাবার বাড়িতেই থাকতেন স্বামী
পরিত্যক্ত হয়ে তেনারা কনিকার খোঁজখবর রাখতেন।
একদিন কণিকাকে খুঁজে না পেয়ে সব বাড়ি বাড়ি মামা ও মাসিরা খুঁজতে বেরিয়েছে।কোথাও খুঁজে না পেয়ে কেউ একজন বলেছে কণিকাকে শ্মশানে দিকে যেতে দেখেছে।মামা মাসিরা শ্মশানে গিয়ে দেখে কণিকা বসে আছে এবং বিড়বিড় করে কিছু বলছে।মামা মাসিরা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন কণিকা বলছে আমি একটু পরেই আসবো তো এখানে একটু পরেই আসবো। জায়গায় দাহ করা হয় সেই জায়গা জল দিয়ে মুছে রাখছে। কণিকা মানুষের ভারসাম্যহীন ছিল তাই তারা কিছু মনে না করে কনিকাকে সেখান থেকে বাড়িতে নিয়ে আসে।
এবার কণিকা বাড়িতে আসার কিছু সময় পর মেয়েকে নিয়ে পুকুরে আসে স্নান করার জন্য। স্নান করে মেয়েকেও স্নান করায়।
আমাদের বাড়ির সামনে বিশাল বড় একটি পুকুর আছে। এই পুকুরে সবাই স্নান করতো কাপড় কাচতো।যেহেতু আয়রন জল তাই পুকুরেই সবাই কাপড় কাচতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন। ছেলেমেয়েরাও স্নান করতো পুকুরে সাঁতার কাটতো কেউবা সাঁতার শিখতো।
কণিকা মেয়েকে স্নান করিয়ে দিয়ে পুরা শরীর সুন্দর করে মুছে দিয়ে পুকুরের পাড়ে মেয়েকে দাঁড় করে রেখে নিজে স্নান করার জন্য পুকুরে নেমেছে। ডুব দিয়েছে পুকুরে আর উঠছে না অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে কিন্তু কণিকা ডুব দিয়ে আর উঠছিল না। এবার কনিকার অতটুকু মেয়ে বুঝতে পারে না কেন উঠছে না। সে এক দৌড়ে বাড়িতে চলে যায় এবং বাড়িতে গিয়ে সবাইকে বলে মা পুকুরে ডুব দিয়েছে অনেকক্ষণ আর ওঠে না কেন।
সবাই চিৎকার করতে করতে পুকুর পাড়ে আসে আমাদের বাড়ি থেকে চিৎকার শুনে আমরাও সবাই বাইরে চলে আসি। কয়েকজন পুকুরে নেমে পড়ে কনিকাকে জল থেকে উপরে তোলে ততক্ষণে কণিকার প্রাণ পাখি চলে গেছে। কনিকার মামাও মাসিরা পাগলের মতো কান্না করতে থাকে।আসলে কনিকার মেয়ে পুকুর পাড়ে খেলায় মেতে গিয়েছিল আর ওর মা তখনি ডুবে গেছে। খেয়াল করেনি যখন খেয়াল করেছে মা নেই ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। সবাই আন্দাজ করছে কনিকা পুকুরে ডুব দেওয়ার সাথে সাথেই মৃগী রোগের কারণে জলের তলায় ডুবে গিয়েছে এবং অনেকটা সময় পার হওয়ার কারণে মারা গেছে। সাথে সাথেই বুঝতে পারলে হয়ত কণিকা অকালে প্রাণ হারাতো না।
কনিকার মেয়ের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। উপস্থিত কেউ নিজের চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি ওই মুহূর্তে।
এভাবেই কনিকার অভিশপ্ত জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটলো। কণিকার মেয়ে ও আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। কে জানে কণিকার মেয়ের ভাগ্যে কি আছে। কনিকার মেয়ের ভাগ্যেও এরকম কিছু ঘটবে যা ঐ মাঝি পরিবারের সব মেয়েদের ভাগ্যে জুটেছে।
তার কাছে প্রার্থনা করি মাঝি পরিবারের আর কোন মেয়ের জীবনে যেন এরকম অভিশাপ নেমে না আসে।
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি আবারো দেখা হবে অন্য কোন পোস্টের মাধ্যমে সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।

টাটা

পোস্টবিবরণ
পোস্ট তৈরি@shapladatta
শ্রেণীজেনারেল রাইটিং
ডিভাইসOppoA95
লোকেশনবাংলাদেশ

photo_2021-06-30_13-14-56.jpg

IMG_20230826_182241.jpg

আমি হৈমন্তী দত্ত। আমার স্টিমিট আইডিরঃshapladatta. জাতীয়তাঃ বাংলাদেশী। শখঃবাগান করাও নিরবে গান শোনা,শপিং করা। ভালো লাগে নীল দিগন্তে কিংবা জোস্না স্নাত খোলা আকাশের নিচে বসে থাকতে।কেউ কটূক্তি করলে হাসি মুখে উড়িয়ে দেই গায়ে মাখি না।পিছু লোকে কিছু বলে এই কথাটি বিশ্বাস করি ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।বিপদকে ও অসুস্থতার সাথে মোকাবেলা করার সাহস রাখি সহজে ভেঙ্গে পরি না। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি পর হিংসা আপন ক্ষয়। ধন্যবাদ ।

A5tMjLhTTnj4UJ3Q17DFR9PmiB5HnomwsPZ1BrfGqKbjddgXFQSs49C4STfzSVsuC3FFbePnB7C4GwVRpxUB36KEVxnuiA7vu67jQLLSEq12SJV1etMVkHVQBGVm1AfT2S916muAvY3e7MD1QYJxHDFjsxQDqXN3pTeN2wYBz7e62LRaU5P1fzAajXC55fSNAVZp1Z3Jsjpc4.gif



IMG_20240530_225943.jpg

Sort:  
 13 days ago 

অভিশপ্ত মাঝি পাড়ার মেয়েদের কথা শুনে সত্যিই অনেক খারাপ লাগছে আপু। আসলে তাদের সংসার কেন যে টিকে না এটাই বুঝতে পারছি না। আর না হলে কেউ কেউ আবার আত্মহত্যা করে ফেলে এটা শুনে সত্যিই খারাপ লাগছে। বিশেষ করে কনিকার এই জীবনের দুর্গতির কথা শুনে আরো বেশি খারাপ লাগছে। অল্প বয়সে মা হয়েছে আর শেষে কিনা জীবনটাই চলে গেল।

 13 days ago 

হ্যাঁ আপু ঠিক বলেছেন কেন তাদের সংসার টেকে না এবং আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় তা কেউ জানে না।ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।

 13 days ago 

অনেক দরিদ্র পরিবার আছে যারা মেয়েদের ভালোভাবেই গ্রহণ করে। এমনকি শ্বশুরবাড়ি থেকে ফেরার পরেও বেশ আদর যত্নে রাখে। হয়তো তাদের জীবনে অভাব আছে কিন্তু ভালোবাসার কোন কমতি নেই। তবে কণিকার জীবনের কথা শুনে খুবই কষ্ট পেলাম আপু। এরকম মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।

 12 days ago 

একদমই ঠিক বলেছেন ভাইয়া দরিদ্র হলেও অনেক পরিবারে ভালোবাসার কমতি থাকে না। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 13 days ago 

যাদের এই মিরগি রোগ আছে শুনেছি তারা বেশিরভাগ পানিতে ডুবেই মারা যায়।খুব খারাপ লাগলো ঘটনাটি পড়ে। আরও খারাপ লেগেছে তার পরিবারের কথা গুলো জেনে।ধন্যবাদ আপু একটি বাস্তব ঘটনা শেয়ার করার জন্য।

 12 days ago 

হ্যাঁ আমিও শুনেছি মৃগীরোগের রোগিদের নাকি জলেও আগুনে মৃত্যু হয় বেশি। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 11 days ago 

আপনি এখানে কণিকা নামে যে মেয়ের জীবনের গল্পটা বললেন, তার জীবনটা তো দেখছি ছোটবেলা থেকেই কষ্টে কেটেছে দিদি। শ্বশুরবাড়িতে শান্তি পেল না, তারপরে আবার অকালে জলে ডুবে প্রাণ হারাতে হলো মেয়েটাকে। আমি এটা শুনেছি দিদি, যাদের মৃগী রোগ থাকে, তাদের অনেকেই নাকি জলে ডুবে মারা যায়। যাইহোক, এখন কণিকার মেয়েটার কি হবে ভবিষ্যৎ, সেটা নিয়ে ভাবার বিষয়। অনেক খারাপ লাগলো দিদি, আপনার এই গল্পটা পড়ে।

 8 days ago 

আমিও শুনেছি দাদা মৃগী রোগিদের মৃত্যু বেশিভাগ জলে ও আগুনে হয়।

 8 days ago 

জলের ব্যাপারটা আমার জানা ছিল কিন্তু আগুনের ব্যাপারটা আমার জানা ছিল না দিদি।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.12
JST 0.027
BTC 64928.52
ETH 3525.30
USDT 1.00
SBD 2.36