বৈষম্য ও স্বজন প্রীতি নিয়ে বাস্তবমুখী স্বরচিত কবিতা "বৈষম্যের রাজ্য"||~~
স্বরচিত কবিতা
সকলকে শুভেচ্ছা। আশা করি সকলেই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আর আপনারা সবাই সব সময় ভালো থাকবেন,এটাই প্রত্যাশা করি।
কবিতা কখনো কখনো বিশেষ ঘটনার দর্পণ হয়ে রয়ে যায় আজীবনের জন্য। কবিতাটির সামনে আসলেই সেই ঘটনার প্রতিচ্ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে জ্বলজ্বল করে। আর সে কারণেই কবিতা লিখতে ভীষণ ভালোবাসি সঠিক প্রেক্ষাপটটি তুলে ধরার জন্য। আজও ঠিক তেমনি একটি কবিতা নিয়ে হাজির হলাম আপনাদের মাঝে। আমরা দেশ কিংবা দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যে যেখানেই বসবাস করি না কেন- বিশেষ শ্রেণীর একদল আছেন যারা সব সময় বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকে কিংবা স্বজন প্রীতির গোলক ধাঁধার শিকার হয়ে থাকেন। আর তাই ----
এই গদ্য কবিতার মূলভাব বিশদভাবে তুলে ধরলে বোঝা যায়, সমাজের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যারা ক্ষমতার শীর্ষে রয়েছেন—যেমন রাজা, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বা প্রশাসকরা—তারা নিজেদের অবস্থানকে ব্যবহার করে বৈষম্য এবং স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অন্যায়কে প্রচলিত করেন। এই অন্যায় ব্যবস্থায় সত্যিকার যোগ্য ব্যক্তিদের বদলে তাদের পরিচিত, প্রিয় বন্ধু কিংবা আত্মীয়দেরকে সুযোগ ও সম্মান দেয়া হয়। ফলে যোগ্যতা, নিষ্ঠা, এবং সততা মূল্যহীন হয়ে পড়ে।
ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের বঞ্চিত করে আত্মীয়-স্বজন ও বিশেষ জনদের অগ্রাধিকার দেন, এবং এই প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠান বা সমাজের সামগ্রিক উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয়। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যারা পিছিয়ে পড়েন, তারা ন্যায়ের আশায় দিন গুণতে থাকেন, কিন্তু সেই ন্যায়ের আলো তাদের জীবনে আর কখনো দেখা দেয় না। অন্যদিকে, যারা যোগ্য নয়, তারা পদোন্নতি বা সুযোগ পেয়ে অন্যদের থেকে সুবিধা ভোগ করে।
এই স্বজনপ্রীতির কারণে প্রতিষ্ঠানের মূল ভিত্তি দুর্বল হয়ে যায়, কারণ যারা প্রকৃতপক্ষে কাজের উপযুক্ত, তারা কোনমতেই নিজেদের স্থান করে নিতে পারেন না। এটি একটি বৈষম্যের রাজ্য, যেখানে শাসকেরা কেবল নিজেদের লাভ আর আত্মীয়দের স্বার্থের কথা চিন্তা করে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের পরিশ্রম এবং মেধা এক প্রকার অবহেলায় হারিয়ে যায়। ন্যায়বিচারের দাবি করা মানুষগুলো শেষমেশ অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, কিন্তু তাদের জন্য সঠিক কোনো সমাধান বা পথ আর খোলা থাকে না।
সার্বিকভাবে, এই গদ্য কবিতা ক্ষমতার অপব্যবহার, বৈষম্য এবং স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে সমাজের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, তা প্রকাশ করে। এটি ন্যায়ের প্রতি মানুষের আকাঙ্ক্ষা এবং সমাজের বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি তীব্র প্রতিবাদ।
সেখানে বৈষম্যের বীজ যেন স্বয়ং বিস্তার করে।
সুযোগ পেলেই, যেন চোখ বুজে নিজের বৃত্তের চারপাশে সবাইকে জড়ানো হয়, যেন
অন্যদের দৃষ্টির সামনে দিয়ে নিজেদের স্বজনদের নিয়ে আসে। যারা যোগ্য নয়, তাদের হাতে তুলে দেয়া হয় নেতৃত্বের চাবি, আর যোগ্যরা থেকে যায় নীরবে।
ঊর্ধ্বতনদের সামনে মাথা নত করে
যারা দাঁড়ায় , তাদের চোখে ভেসে ওঠে
ক্ষমতার আলোর ঝিলিক।
ঐ আলোতে দেখা যায় না সততার ছবি,
না শুনা যায় নিষ্ঠার গান।
তারা কেবল নিজেদের সুবিধার দিকে
হাত বাড়ায়, বৈষম্যের মাপকাঠিতে
তাদের সামনে আসে নিজের মানুষ,
সম্পর্কের বন্ধন। অথচ যাদের শ্রমে
প্রতিষ্ঠানের গাঢ় বন্ধন গড়ে উঠেছে,
তারা পড়ে থাকে নীরবতার শিকলে বাঁধা।
এমন রাজ্য কেমন করে গড়ে ওঠে?
যেখানে অন্যায়ের বৃত্ত বড় হয় আর
ন্যায়ের পথ হয় সংকীর্ণ।
আমরা সবাই এর ভেতরেই বাঁচি,
রাজার রাজ্যে কেউ চাকর, কেউ ফকির—
কেউ আবার সারা জীবনের জমিনে
স্বপ্ন বুনেও ফসলের স্বাদ পায় না।
একটুখানি ন্যায়ের আলো যদি জ্বলে উঠতো!
যদি কোথাও স্বজন প্রীতির কার্পেট খুলে,
সত্যের মসৃণ পথ দেখা যেত!
কিন্তু সে তো দূরের স্বপ্ন।
আজ যখন নিজের স্বার্থের বেড়াজালে
আটকে থাকে শাসকের চোখ,
সেখানে ন্যায়ের ভিক্ষুক হয়ে দাঁড়ায়
আমাদের বিচলিত আত্মা।
বন্ধুরা আমার আজকের কবিতটি, নিশ্চয়ই আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। আর আপনাদের ভালোলাগাই আমার সার্থকতা ও পরম পাওয়া। সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। পরবর্তীতে আবারো সুন্দর সুন্দর কবিতা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব, আমি সেলিনা সাথী...
আমি সেলিনা সাথী। ছন্দের রাজ্যে, ছন্দরাণী কাব্যময়ী-কাব্যকন্যা বর্তমান প্রজন্মের নান্দনিক ও দুই বাংলার জনপ্রিয় কবি সেলিনা সাথী। একধারে লেখক, কবি, বাচিক শিল্পী, সংগঠক, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার, মোটিভেটর ও সফল নারী উদ্যোক্তা তার পুরো নাম সেলিনা আক্তার সাথী। আর কাব্যিক নাম সেলিনা সাথী। আমি নীলফামারী সদর উপজেলায় ১৮ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। আমার বাবা পিতা মরহুম শহিদুল ইসলাম ও মাতা রওশনারা বেগম। ছড়া কবিতা, ছোট গল্প, গান, প্রবন্ধ, ব্লগ ও উপন্যাস ইত্যাদি আমার লেখার মূল উপজীব্য। আমার লেখনীর সমৃদ্ধ একক এবং যৌথ কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৫ টি। আমার প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই অশ্রু ভেজা রাত, উপন্যাস মিষ্টি প্রেম, যৌথ কাব্যগ্রন্থ একুশের বুকে প্রেম। জীবন যখন যেমন। সম্পাদিত বই 'ত্রিধারার মাঝি' 'নারীকণ্ঠ' 'কাব্যকলি'সহ আরো বেশ কয়েকটি বই পাঠকহমলে বেশ সমাদৃত। আমি তৃণমূল নারী নেতৃত্ব সংঘ বাংলাদেশ-এর নির্বাচিত সভাপতি। সাথী পাঠাগার, নারী সংসদ, সাথী প্রকাশন ও নীলফামারী সাহিত্য ও সংস্কৃতি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়াও আমি জেলা শাখার সভাপতি উত্তোরন পাবনা ও বাংলাদেশ বেসরকারি গ্রন্থাগার পরিষদ নীলফামারী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছি। তিনি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৪ সালে নীলফামারী জেলা ও রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠ জয়িতা অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। এছাড়াও সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদান রাখায় আমি বহু সম্মামনা পদক অর্জন করেছি। যেমন সাহিত্যে খান মইনুদ্দিন পদক ২০১২। কবি আব্দুল হাকিম পদক ২০১৩। শিশু প্রতিভা বিকাশ কেন্দ্র কর্তৃক সম্ভাবনা স্মারক ২০১৩। সিনসা কাব্য সম্ভাবনা ২০১৩। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদযাপন উপলক্ষে সম্মামনা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সম্মাননা স্মারক ২০১৩। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ১১৫ তম জন্ম জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ২০১৪। দৈনিক মানববার্তার সম্মামনার স্মারক ২০২৩। চাতক পুরস্কার চাতক অনন্যা নারী সম্মাননা ২০২৩ ওপার বাংলা মুর্শিদাবাদ থেকে মনোনীত হয়েছি।
বিষয়: ক্রিয়েটিভ রাইটিং
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাই এই কমিউনিটির সকল সদস্য কে, ধন্যবাদ.......
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপু আপনি দেখছি আজকে একটি বাস্তব মুখী কবিতা লিখে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। এটা আপনি বলেছেন যে, বর্তমান সময়ে যারা একটু খানি ক্ষমতায় রয়েছে তারা ইচ্ছে করে বিভিন্ন ধরনের নিয়ম ভঙ্গ করেছেন।এতে করে আমরা সাধারণ মানুষ অনেক টা নিচে চলে যাচ্ছি। আপনার লেখা প্রতিটি কবিতার লাইন আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লেগেছে।
ওই যে বৈষম্য আর স্বজন প্রীতি প্রায় সব জায়গায় দেখতে পাই। আর সেই অনুভূতি থেকেই এই কবিতাটি লেখা।
স্বজনপ্রীতি এবং বৈষম্য যেন আমাদের কাছে একেবারে সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক তো এটাকে বৈধ মনে করত। কিন্তু এটা বঞ্চিত করতে পারে হাজার হাজার যোগ্য মানুষকে। বৈষম্য নিয়ে কবিতা টা চমৎকার লিখেছেন আপু। একেবারে বাস্তবতা টা তুলে ধরেছেন আপনি। ধন্যবাদ আপনাকে।।
আমরা নিজেরাও প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার। আর সেই অনুভূতি থেকেই এই কবিতার সৃষ্টি বৈষম্য এবং স্বজন প্রীতি কাউকে অনেক উপরে তুলে আবার কাউকে অনেক নিচে ফেলে দেয়।
বৈষম্য ও স্বজনপ্রীতিহীন প্লাটফর্ম আমাদের মতো সুবিধাবঞ্চিতদের অনেক অনেক প্রত্যাশা।
আপনার বাস্তবমুখী কবিতাটি অসাধারণ হয়েছে আপু।বরাবরই আপনি দারুণ কবিতা লেখেন,আজো তার ব্যতিক্রম নয়।যাইহোক এখন মানুষ যোগ্যতাকে মূল্যায়ন না করে স্বজনপ্রীতির দিকে ঝুঁকে।যোগ্য মানুষেরা বঞ্চিত হতে থাকে, বেশ ভালো লাগলো কবিতাটি পড়ে।ধন্যবাদ আপু।
ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি বৈষম্য এবং স্বজন প্রীতির এই লীলা খেলা। আশ্চর্য আজ এত বড় হয়ে গেলাম কিন্তু-- আজও বৈষম্য এবং স্বজন প্রীতিহীন কোন প্লাটফর্ম খুঁজে পেলাম না।
আসলেই তাই আপু,বর্তমানে বরং এর মাত্রা বেড়েছে।
একদম। হয় প্রিয়জন না হয় স্বজন