"জীবন থেকে নেয়া" "উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প"~~~(১ম পর্ব)
সকলকে শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি অনেক ভালো আছি। আর আপনারা সকলেই সবসময় সুস্থ থাকবেন। ভালো থাকবেন। এটাই আমার প্রত্যাশা।
বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব কিভাবে শূন্য থেকে উদ্যোক্তা হয়ে উঠলাম।আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে যে গল্পটি সেটিও ভীষণভাবে নাড়া দেয় আমাকে।আসলে এরকম হাজারো উদ্যোক্তা আছে যাদের জীবনের গল্প অনেক মানুষের অনুপ্রেরণা হতে পারে।আমার দাম্পত্য জীবনের বিশেষ কিছু অংশ আপনাদের সাথে অনেক আগেই শেয়ার করেছি।যারা আমার জীবনের সেই গল্প পড়েছেন তারা আজকে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন।আসলে প্রতিটা মানুষের জীবনেই থাকে নানা রকমের সব গল্প।আর আমি আজ জীবন থেকে নেয়া জীবনের কিছু অংশ আবার তুলে ধরছি আপনাদের জন্য।@rexsumon ভাই অনেক আগে আমার উদ্যোক্তা হওয়ার গল্পটি শুনতে চেয়েছিলেন।জানিনা কেন আজ হঠাৎ মনে পড়ে গেল।আর সেই ভাবনা থেকেই আজ এই গল্পটি শুরু করছি আপনাদের জন্য।
আমার অতি আদরের সোনা "সিয়াম" বাবা যখন ক্লাস থ্রিতে পড়ে। সেই তখন থেকেই আমার জীবনে আরেকটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়।।সিয়ামকে অনেক ছোটবেলায় কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলাম।।ওর স্কুলের নাম ছিল এডুকেশনাল কেয়ার কিন্টারগার্ডেন।আমাদের বাসা থেকে বেশি দূরে যেতে হয় না। ওকে আমি স্কুলে নিয়ে যেতাম আবার নিয়ে আসতাম। কিন্তু পারিবারিক কাজের চাপে,, একসময় সিয়ামকে সকুলে নিয়ে যাওয়া আসা, আমার জন্য অনেক দুরূহ ব্যাপার হয়ে গেল।সিয়ামের দাদী নানা রকম টর্চার করা শুরু করলো।বাধ্য হয়ে স্কুলের ভ্যান ঠিক করলাম।খুব মজার বিষয় হলো যে,, স্কুলের বেতন এবং ভ্যান ভাড়া প্রায় তিন মাসের বাকি হয়ে গেল।এগুলো যেহেতু প্রাইভেট স্কুল তাই স্কুল থেকে চাপ দেয়া শুরু করলো বেতনের টাকার জন্য।একদিন খুব ভয় ভয় করে,, সিয়ামের আব্বুকে বললাম। ছেলের স্কুলের তিন মাসের বেতন বাকি। ভ্যান ভাড়া তিন মাসের বাকি এগুলো দিতে হবে। সে খুব উত্তেজিত স্বরে আমাকে জবাব দিলো। ওরা লেখাপড়া বন্ধ করে দাও। আমার পক্ষে ওর লেখাপড়া করানো অসম্ভব ব্যাপার।ওর লেখাপড়ার খরচ আমি চালাতে পারবো না।বিশ্বাস করুন ন্যানো সেকেন্ড এর মধ্যে আমার দুচোখ ভরে অশ্রু ঝরতে লাগলো।এবং মুহূর্তের মধ্যেই বুকের মধ্যে অজানা একটি সাহস এসে আমার শক্তি সঞ্চার করল।কোনো কিছু না ভেবেই বলে দিলাম,, আমার শরীরের যতদিন পর্যন্ত এক ফোটাও রক্তবিন্দু থাকবে। সচল থাকার জন্য।ততদিন পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাব। আমার বাচ্চাদের সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য। আজ থেকে তোমার একটি টাকাও আমার সন্তানের লেখাপড়ার কাজে লাগাবো না ইনশাআল্লাহ। তবুও আমি বেঁচে থাকতে ওদের লেখাপড়া বন্ধ করতে পারবোনা।সেদিন আমার মনের ভেতরে যে ঝড় বইছিল। তা কোন অনুভূতি দিয়ে আপনাদেরকে বুঝানো যাবে না। আমার জীবনে সিয়ামের বাবা এবং সিয়ামের দাদিকে সর্বোচ্চ ভয় করতাম।তারা সামনে আসলেই ভয়ে আমার শরীর কাঁপতে থাকতো।কোনদিন কখনোই তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে কোন কথা বলতে পারতাম না।
যাইহোক সাহস করে তো অনেক বড় কথা বলে ফেললাম। অথচ তখন আমি কোন কিছুই করিনা। সেদিন থেকে মাথায় নতুন চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগল কিভাবে টাকা আয় করা যায়।সিয়ামের দাদি আমাকে বাড়ির বাইরে যেতে দিত না কোন কারণ ছাড়া।কি করব কি করব নানারকম চিন্তায়,একা একাই অস্থির হয়ে উঠছিলাম। আর তখন আমি নিজেও অনেক ছোট ছিলাম। যাইহোক পাশের বাড়ির এক ভাবির সাথে পরামর্শ করলাম।ভাবি আমার কিছু একটা করা দরকার।কিন্তু কি করব ভেবে পাচ্ছি না।তখন আমরা সবাই মাটির চুলায় রান্না করতাম।চুলা জ্বালানোর জন্য সহজ একটি পদ্ধতি ছিল পাট খড়ি।পাট খড়ি ছাড়া চুলা জ্বালাতে গেলে প্রায় অসম্ভব ধোঁয়া হতো।তখন ভাবি একটা বুদ্ধি দিল আমাকে। যে তুমি কিছু পাট খড়ি কিনে রাখলে,, সেগুলো বাসা থেকে আশেপাশের মানুষজন নিয়ে গেল ও কিছু টাকা জমাতে পারবে।আর বাড়ির বাইরেও যেতে হলোনা। ভেবে দেখ।ভাবির কথাটা আমার কাছে মন্দ লাগলো না। কারণ তখন পাট খড়ির ব্যাপক চাহিদা ছিল। কিন্তু পাট খড়ি কিনে রাখার জন্য টাকা পাব কোথায়। কারন আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আমি কোনদিন কখনো আমার কোন প্রয়োজন কিংবা চাহিদার কথা আমার মা বাবা ভাই কাউকেই বলি নাই।এমনকি বিয়ের পরে সিয়ামের বাবাসহ, কারো কাছে কোনদিন কিছু চাইনি। তাই একটু বিপদে পড়ে গেলাম।হঠাৎ মনে হল আমার একটি আংটি যদি বিক্রি করে দেই। তাহলে কেমন হয়। আংটিটা বিয়েতে আমার বাবা দিয়েছিল। যেই ভাবা,, সেই কাজ।
একদিন বাবার বাড়ি যাওয়ার কথা বলে, একটি জুয়েলার্সের দোকানে গেলাম সেই ভাবিকে নিয়ে।আংটিটা বিক্রি করলাম মাত্র পাঁচশত টাকা দিয়ে।আমাদের বাড়িটা রাস্তার ধারে।কিছু কিছু লোক ভ্যানগাড়িতে নিয়ে পাট খড়ি বিক্রি করতে আসে।তাদের কাছ থেকেই পাঁচশত টাকার পাট খড়ি কিনে নিলাম।পাট খড়ি গুলো বড় বড় বোঝা ছিল।এরপর সে গুলোকে ছোটো ছোটো বোঝা বানালাম।অর্থাৎ 10 টাকা দিয়ে একটি বড় বোঝা কিনতাম পাইকারি দরে।আর সেই বোঝা থেকে 13 অথবা চৌদ্দটি বোঝা বানাতাম ছোট ছোট।অর্থাৎ 10 টাকা থেকে 3 অথবা 4 টাকা লাভ বের করতাম।আর ওই যে ভাবি ছিল ভাবি আমাদের পাড়ার প্রতিটা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বলে এসেছিল। আমাদের বাসায় পাট খড়ি পাওয়া যাবে।শুরু হলো জীবনের নতুন একটি অধ্যায়। নতুনভাবে পথচলা। নতুন কিছু করার। নতুন কিছু সম্ভাবনায়,, বাচ্চাদের লেখাপড়া করানো জন্য, আয়মুখী সংগ্রাম শুরু হলো আমার জীবনে।
বন্ধুরা আজ এ পর্যন্তই। বাকিটা জানতে পরের পর্বে চোখ রাখুন।
আমি সেলিনা সাথী। আমার প্রফেশন, প্রেজেন্টার, ট্রেইনার ও মোটিভেটর। আমি একজন সমাজ কর্মি ও সংগঠক। এছারা ও তৃনমূল নারী নেতৃত্ব সংঘের নির্বাচিত সভাপতি বাংলাদেশ। আমি "নারীসংসদ"
এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি "সাথী পাঠাগার"। আমার লেখা মোট ১০ টি একক ও যৌথ কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। একুশে বই মেলায় প্রতি বছর একটি করে কাব্য গ্রন্থ প্রকাশের চেস্টা করি। আমার লেখা কাব্যগ্রন্থের মধ্যে "মিস্টি প্রেম" (উপন্যাস), "অশ্রু ভেজা রাত" (কবিতা), "জীবন যখন যেমন" (কবিতা), "একুশের বুকে প্রেম" (কবিতা), "নারীকন্ঠ" (ম্যাগাজিন) অন্যতম।
পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি এই প্রবাদ বাক্যটি আপনার সাথে চরমভাবে মিলে গেল। আসলে মানুষকে শূন্য থেকে শিখরে উঠতে হয় ।প্রতিটি ধাপ যখন মানুষ পরিশ্রম করে ধৈর্যের সাথে এগিয়ে যায় তখনই সফলতা আসে জীবনে। মাত্র পাঁচ শত টাকার পাট খড়ি কিনে তা দিয়ে তিন চার টাকা লাভ করে একসময় আপনি উদ্যোক্তা হওয়া শুরু করেন। আসলেই ইচ্ছা এবং অনবল থাকলেই হাজার হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসায় নামতে হয় না ।খুবই অল্প সংখ্যক টাকা দিয়েই সফলতা করা যায়।
ঠিকই বলেছেন আপু,, যারা কষ্ট করে বিজয় লাভ করতে পারে। বিজয়ের সুখ তার কাছে অমৃতের মত।
আমার জীবনে এত এত কষ্ট করেছি যা আপনারা জানলে অবাক হয়ে যাবেন।তবে প্রাপ্তিও আছে অনেক।♥♥
আপনার উদ্যোক্তা হওয়ার পরবর্তি পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
নিশ্চয়ই আপু আমার উদ্যোক্তা হওয়ার পরের পর্বটি আগামী সপ্তাহে নিয়ে আসবো। আল্লাহ যদি আমাকে বাঁচিয়ে রাখে। মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।♥♥
সত্যি আসলে মা যে শুধু প্রসব নয় এর পরেও সন্তানের জন্য কষ্ট করতে পারে৷ তার জলন্ত উদাহরন তুলে ধরেছেন ৷
আসলে বিজয়ের পিছনে অনেক ঘটনা থেকে যায় ৷
যা হোক আজকে সিয়াম ভাই আপনার কষ্টের সফলতা মর্যাদা রাখতে পেরেছে ৷
খুব ভালো লাগলো বাস্তব জীবনের কাহিনী তুলে ধরার জন্য ৷
তবে আজ থেকে আপনাকে আমি আন্টি বলে ডাকবো ৷ যদি আপনার কোনো আপত্তি না থাকে৷ যেহেতু আপনি সিয়াম ভাইয়ের মা ৷
দারুন বলেছেন আপনি। আসলে প্রত্যেকটা বিজয়ের পিছনের গল্পগুলো অনেক কঠিন থেকে কঠিনতর হয়।। আসলে আমরা তো এগুলো খুব সহজভাবে দেখি, তাই উপলব্ধি করতে পারিনা। যার সাথে ঘটে শুধুমাত্র সেই বোঝে।আসলে কাকে কিভাবে সম্বোধন করব এটা একটি সৌজন্যতা মাত্র আমার কাছে।♥♥
সত্যি বলেছেন আপু জীবন বড় কঠিন। প্রতিটি মানুষের হয়তো এভাবেই যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয়। আপনি যদি আপনার শাশুড়ি ও স্বামীকে ধরে পড়ে থাকতেন। তাহলে হয়তো আপনার জীবন যেখানেই পড়ে থাকত।আর এসকল কঠিন সময়ে ধৈর্য ধরে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেই জীবনের সাফলতা আসে।
আমার মনে আছে একবার আমি আমার হাত থেকে কলম ছুড়ে ফেলে ছিলাম। আর মনে মনে ভেবেছিলাম আর কোন দিন কখনোই কবিতা লিখবো না
এটা করেছিলাম আমার শাশুড়ির উপর রাগ করে। কিন্তু কদিন পরেই মনে মনে ভাবলাম, আমি যদি না লেখি তাহলে আমার শাশুরির কি যায় আসে। কিন্তু আমার তো অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। সেটা ভেবে আবার লেখা শুরু করলাম। আসলে সিদ্ধান্তগুলো এভাবেই নিতে হয়।♥♥
পড়ে মুগ্ধ হলাম দিদি। এটাই হয়তো জীবনমুখী একটা গল্প। এই কথাগুলো শুনলে, পড়লে মনে হয় জীবনটা সত্যিই বড় সুন্দর। একে বাঁচা প্রয়োজন। প্রতিকূল পরিস্থিতির কাছে বশ্যতা স্বীকার না করে এভাবেও তো বাঁচা যায়।মনটা এত খারাপ লাগছিলো, কি করব মাথায় আসছিলো না। আপনার এই লেখাটাই আমায় একদম বুস্ট আপ করে দিলো। ধন্যবাদ। অনেক ধন্যবাদ।
আমার জীবন থেকে নেয়া গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। আসলে জীবনের চরম মুহুর্ত গুলোতে নিজেকেই চরম সিদ্ধান্ত নিতে হয়।তবে সেদিনের সেই সিদ্ধান্তটি আমাকে আজকের আমি তৈরি করেছে।ধন্যবাদ দিদি পাশে থাকার জন্য।♥♥