|| অদ্ভুত এক রেসিপি |১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্যে ||

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

নমস্কার বন্ধুরা, আশা করি সকলে ভালো আছেন। ভগবানের আশীর্বাদে আমিও ভাল আছি। পুরোপুরি সুস্থ এখনো হইনি, তবে আগের থেকে কিছুটা ভালো আছি।
আজকে আমি যে বিষয়ে লিখতে চলেছি, তাহলে একটি রেসিপি।


রেসিপির নামটা আমি ঠিক জানিনা, কারণ এই রেসিপির পেছনে অদ্ভুত এক গল্প রয়েছে। তাই নামটা আমি আপনাদের থেকেই জেনে নিতে চাই আপনারা যে যার মতন একটি নাম দিয়ে দেবেন দয়া করে😂,আপনাদের দেওয়া নাম থেকেই সেরা নামটি বেছে নেওয়া হবে।
এবার গল্পটা বলি।

GridArt_20220705_125309117.jpg

ব্যাপারটা হয়েছে এরকম, খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে আমার বেশ কিছু সমস্যা আছে, যেমন শাকসবজি আমি খুব একটা পছন্দ করি না। খুব বেসিক কয়েকটা শাকসবজি খাই সাধারণত, আলুটা সবথেকে বেশি খাই, ওটা আমার খুবই পছন্দের ।আলুর যে কোন রেসিপি আমার খুব ভালো লাগে।
আর বাকি শাকসবজির মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটা জিনিস খাই, তাও সমস্ত আইটেম নয়।আর মাছের মধ্যে রুই-কাতলা মাছটা সব সময় খাই ।ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ,বোয়াল মাছটা খুব পছন্দের। বাকি মাছগুলো খুব একটা পছন্দ করি না, তার অন্যতম কারণ হচ্ছে কাঁটা বেছে খাওয়া😶।মাংসের মধ্যে চিকেন-মটন দুটোই পছন্দ করি ।তো এখন সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে নিরামিষ খাবার আমি খুব একটা ভালো খেতে পারি না, একটু মাছ বা মাংস না হলে একদম চলে না আমার। কিছু না পেলে অন্তত একটা ডিম ভাজা হলেও এনাফ।
এখন মজার বিষয় হচ্ছে সপ্তাহে একটা দিন, প্রত্যেক শনিবার আমাদের বাড়িতে নিরামিষ হয়। আর সেই দিন টা আমার খাওয়া দাওয়া করতে বেশ কষ্টকরই হয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে আগের দিন অর্থাৎ শুক্রবার দু-এক পিস মাছ এক্সট্রা রান্না করে রাখা হয়, যাতে আমি পরের দিন খেতে পারি। তবে এমন অনেক দিন থাকে যেদিনকে বিভিন্ন কারণে সেটি সম্ভব হয় না আর শনিবারে আমার জন্য আমিষ কোন পদ থাকে না। আর সেই দিনই হয় আমার পক্ষে কষ্ট করে কাটানো একটি দিন।


ঠিক এরকমই একটি দিন ছিল গত শনিবার।আগেরদিনের কোন নিরামিষ পদ ছিল না সেদিন। সকালবেলা বাইরে দোকান থেকে পরোটা কিনে খেয়েছিলাম, দুপুর বেলা খেতে বসে কোনমতে নিরামিষ পদ দিয়ে ভাত খেয়েছিলাম। কিন্তু মেইন সমস্যা হয় রাত্রেবেলা।খেতে বসার আগে মনে পড়ে যে মাছ-মাংস-ডিম কোন পদ নেই, তো আমি খাব কি দিয়ে! এসবই ভাবছিলাম, কিছু রান্না করা যায় নাকি, আবার রাতও বেশ হয়ে গেছিল,কিছু যে অর্ডার করে খাব সেই সময়টাও ছিলনা। তো যেকোনো কারণেই হোক হঠাৎ করে আমার খুব রাগ হতে শুরু করল, একা একাই মাথা গরম হয়ে গেল। কেন যে হল সেটা সঠিক কারণ বুঝতে পারছিলাম না। এদিকে খিদেও পেয়েছে কিছু তো খেতে হবে এইসব ভাবছিলাম।
ভাবতে ভাবতেই ফ্রিজে দেখলাম কয়েকটি ডিম রয়েছে, তো প্রথমে ভাবলাম যে ডিম ভুজিয়া করে নিই, ওই দিয়েই হয়ে যাবে।
তারপর ডিম ভুজিয়ার জন্য রান্না করতে করতে অদ্ভুত সব চিন্তাভাবনা মাথায় এলো, কি রান্না করতে শুরু করে যে কি রান্না করে ফেললাম,নিজেই অবাক হয়ে গেলাম। সেই নিয়েই আজকের পোস্ট। তো চলুন শুরু করা যাক।

●~উপকরণ~●
সামগ্রীপরিমাণ
পেঁয়াজ(মাঝারি সাইজ)২ টি
কাঁচালঙ্কা(মাঝারি সাইজ)২ টি
সাদাতেল১০০ গ্রাম
সাদা লবনএক চা-চামচ
গরম মশলাপরিমাণ মতো
চিনিএক চিমটি
ডিম২ টি
ভাতপরিমাণ মতো

GridArt_20220703_113851047.jpg

●~প্রস্তুতি প্রণালী~●

সবার আগে একটু ভাত রান্না করে নিতে হবে।আপনি চাইলে এটা আগে থেকে করে রাখতে পারেন অথবা রান্না করার সময়ও ভাত বসিয়ে দিতে পারেন।তবে যেহেতু এই রান্না প্রণালী খুবই অল্প সময়ের,তাই ভাতটা প্রথমে করে রাখাই শ্রেয়।
এখানে মনে রাখার বিষয় হচ্ছে,ভাত করার সময় আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যাতে ভাত টা একদম গলে না যায়।একটু যাতে শক্ত শক্ত থাকে।আপনার যখন মনে হবে ভাত প্রায় হয়ে এসেছে,তখনি অর্থাৎ ভাত হওয়ার ১০-১২ মিনিট আগেই ভাত টা নামিয়ে নেবেন।

★প্রথম ধাপ

সর্ব প্রথম আমাদের পেঁয়াজ গুলো কুচি করে কেটে নিতে হবে।
সাথে লঙ্কা গুলিও একই ভাবে কেটে নিতে হবে বা আপনার চাইলে লঙ্কা গুলিকে মাঝখান দিয়েও ফেঁড়ে নিতে পারেন ছবিতে আমি যেভাবে করেছি।

GridArt_20220705_122608940.jpg

★দ্বিতীয় ধাপ

এরপর কড়াই গ্যাসে বসিয়ে তাতে কিছু পরিমাণ সাদা তেল দিতে হবে।
এরপর মাঝারি আঁচে ৩-৪ মিনিট সময় দিতে হবে তেল টি গরম হওয়ার জন্য।

PXL_20220414_224721292.jpg

★তৃতীয় ধাপ

তেল গরম হওয়ার পর গ্যাসের আঁচ একদম কমিয়ে কুচি করা পেঁয়াজ গুলি গরম তেলে দিয়ে দিতে হবে।
২-৩ মিনিট ভালোভাবে সেগুলিকে নাড়তে হবে।

PXL_20220414_225122230.jpg



এরপর একই সাথে লঙ্কা গুলিকেও ওই গরম তেলেই ভেজে নিতে হবে ।

PXL_20220414_225228945.jpg

★চতুর্থ ধাপ

এরপর পেঁয়াজ,লঙ্কা গুলিকে কড়াই থেকে তুলে অন্য পাত্রে রেখে,কড়াই তে আবার সামান্য তেল দিতে হবে ডিম ভাজার জন্যে।
তারপর ডিম দুটিকে একটি বাটির মধ্যে ফাটিয়ে ভালোভাবে ঘেঁটে নিতে হবে,এবং এতে স্বাদ মতো লবন দিয়ে দিতে হবে।

PXL_20220414_225614636.jpg

★পঞ্চম ধাপ

কড়াই এর তেল গরম হয়ে গেলে সেই ডিমের সম্পূর্ণ মিশ্রণটি কে কড়াইতে ঢেলে দিতে হবে,এবং খুন্তি বা হাতা দিয়ে নাড়তে হবে,ডিম ভুঝিয়া করার মতন করে।
২ মিনিট একই ভাবে করার পর কড়াইতে সামান্য পরিমাণ গরম মশলা দিয়ে দিতে হবে এবং তুলে রাখা পেঁয়াজ-লঙ্কা টা আবার কড়াইতে দিয়ে ডিমের সাথে ভালোভাবে নেড়ে নিতে হবে।

PXL_20220414_225906300.jpg

★ষষ্ঠ ধাপ

এবার যে ভাতটুকু আগেই করে রাখা হয়েছিলো,সেটা কড়াই তে ঢেলে দিতে হবে গ্যাসের আঁচ কমিয়ে।২-৩ মিনিট ভাত আর ডিম টাকে ভালোভাবে নেড়ে নিতে হবে।

PXL_20220414_230058089.jpg

★সপ্তম ধাপ

তারপর খুব সামান্য পরিমানে চিনি তাতে দিয়ে দিতে হবে।এরপর আরও ১ মিনিট ভালো করে নাড়তে হবে।
তা হয়ে গেলে গ্যাস বন্ধ করে দিতে হবে।

PXL_20220414_230346970.jpg

ব্যাস হয়ে গেলো সব কিছু।
এবার পুরোটা আপনি একটি প্লেটে নিয়ে নিলেই আপনার পেট পুজোটা সেরে ফেলতে পারবেন।

PXL_20220414_230702987.jpg

আপনি চাইলে একটু টমেটো সস বা চিলি সস নিতে পারেন,তাতে স্বাদ টা আরেকটু বাড়বে।

PXL_20220414_231730376.jpg

প্রথমেই বলেছিলাম এই পদটার কি নাম আমি নিজেই জানিনা,আপনারাই একটা ভালো নাম আমাকে সাজেস্ট করুন।আর আপনারা যারা রান্নার বিষয়ে বেশ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, তাঁরা আমাকে এই পদটা আরও ভালো ভাবে করার জন্যে কোনও পদ্ধতি থাকলে তাও জানাতে পারেন।

সবাই এটা বাড়িতে ট্রাই করবেন, তারপর আমাকে জানাবেন কেমন হয়েছে।
আজ এখানেই শেষ করছি।

Camera Device-POCO M3

@samratsaha

Sort:  
 2 years ago 

আপনার এই রেসিপি এক কথায় দুর্দান্ত। প্রথমে আপনার টাইটেল দেখে বুঝতে পারিনি। পরে পোস্ট দেখে খুবই ভালো লাগলো কারণ আমিও মাঝেমধ্যে এরকম ভাত ও ডিম দিয়ে তৈরি করি। অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

আসলে আমার রান্নাবাড়ি তে একদমই অভিজ্ঞতা নেই, আপন মনে হলো,তাই রান্নাটা করে ফেললাম।
তবে স্বাদ টা সত্যিই অসাধারণ ছিল।

 2 years ago 

আমরা শীতকালে সকালবেলায় মাঝেমধ্যে এভাবে ভাত দিয়ে ডিম ভাজি করে খেতাম। কিন্তু এই রেসিপিটি নাম আমিও জানিনা। তবে এগুলোকে আমরা ভাত ভাজা বলে থাকি। এই ভাত ভাজা রেসিপিটি খেতে আমার কাছে খুবই ভালো লাগে।

 2 years ago 

তার মানে যা বুঝছি আমি বাদে কম বেশি সকলেই এটি খেয়েছে।আপনার কথা অনুযায়ী এটাকে ভাতভাজা বলা যেতেই পারে।কমেন্ট করার জন্যে ধন্যবাদ আপনাকে ।

 2 years ago 

আসলেই নিরামিষ খাবার দেখলে আসলে তেমন রুচি ধরে না। এ খাওয়ার জন্য তো আপনি নিরামিষ খাবার না খাওয়া লাগে সেই জন্য ভালো একটি উপায় বের করেছেন। আসলে এভাবে ডিম দিয়ে ভাত ভাজি করলে খেতে আমার কাছেও ভাল লাগে। আর নামটা আমি সত্যি জানিনা কিন্তু এরকম ভাবে আমরাও মাঝে মাঝে খাই ভালোই লাগে।

 2 years ago 

ঠিকই বলেছেন ভাই,আসলে রান্নার পদ যদি একটু ভালো না হয়,তাহলে আমাদের মতো নিরামিষভোজীদের খাওয়া একটু কষ্টকরই বটে।তাই অসময়ে এরকম একটি পদ যেন অমৃত হয়ে যায়।

 2 years ago 

আপনি দেখছি আমার মত আলুখর আলুর যে কোন জিনিস আমার কাছেও খেতে অনেক ভালো লাগে ।আমিতো সব তরকারিতেই আলু ব্যবহার করি। সপ্তাহে একদিন আপনাদের বাড়িতে নিরামিষ রান্না হয় সে দিনে কি আমিষ খাওয়া যায় যে আপনি আলাদা করে মাছ খান ঐদিন যে আমিশ খাওয়া যায় সেটা তো আমার জানা ছিল না ।এই খাবারটা মনে হয় আপনি আগে কখনো খাননি আমরা তো এই খাবারটা আগে অনেক খেয়েছি ইদানিং খাওয়া হয় না। এটাকে আমরা ভাজা ভাত বলে থাকি। ডিম ও পেঁয়াজ মরিচ দিয়ে এভাবে করে ভাত ভেজে খেলে ভালোই লাগে। আমরা অবশ্য চিনি দেই না ঝাল ঝাল করে খাবারটা খেতে খুবই মজা লাগে।

 2 years ago 

ওই যে বললাম আলু আমার সবথেকে প্রিয় সবজি।
আর আসলে বিষয় টা হচ্ছে আমার নিরামিষ খেতে সমস্যা হয় বলে আমি একটু-আধটু মাছ/মাংস খাই।নিরামিষের দিন খাওয়া যাবে না এটা বাজে কথা,পুরোটাই আপনার ওপর নির্ভরশীল।
আর হ্যাঁ, এই খাবারটি সত্যিই আমার কাছে একদম নতুন।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 60935.93
ETH 2645.60
USDT 1.00
SBD 2.56