|| ডুয়ার্স সফর | পর্ব-০৩ | ১০% বেনিফিট @shy-fox এর জন্যে ||
আজকে আমি আমার ডুয়ার্স সফরের দ্বিতীয় দিনের কাহিনী আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব।
প্রত্যেকদিন পোস্ট সময়মতো করতে না পারার জন্য আমি আপনাদের সকলের কাছে এবং কমিউনিটির সকল মডারেটর এবং প্রফেসর দাদাদের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আসলে কলেজ বাড়ি পড়াশোনা সব কিছু সামাল দিয়ে চলতে একটু সমস্যা হচ্ছে । এই পোস্ট লেখাটি আমি গতকাল রাত্রেবেলা শুরু করেছিলাম, কিন্তু শরীর প্রচন্ড ক্লান্ত থাকার দরুন পোস্টটি লিখতে লিখতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আজকে সকাল বেলায় উঠে বাকি অংশটুকু কমপ্লিট করে পোস্ট করছি। হাতে সময় খুব অল্প কলেজ যাওয়ার জন্য তৈরি হতে হবে, তাই যতটা পারছি সংক্ষেপে আপনাদের সম্পূর্ণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
এর আগের পর্বে ঠিক যেখানে শেষ করে ছিলাম,আজকে সেখান থেকেই শুরু করছি ।এর আগে প্রথম পর্বে এবং দ্বিতীয় পর্বে যথাক্রমে আমার সফর শুরুর দিন এবং ঘোরাঘুরি হওয়ার প্রথম দিন সম্পর্কে আপনাদের জানিয়েছিলাম।
আজকে বলবো ঘোরাঘুরি করার দ্বিতীয় দিনের খুঁটিনাটি।
তো ভোর সাড়ে পাঁচটার সময় আমাদের কিচেনের দুজন স্টাফ প্রত্যেক রুমে গিয়ে সবাই কি ঘুম থেকে তুলে চা এবং বিস্কুট দিয়ে গেলেন। এবং বলে গেলেন আটটার সময় যেন ডাইনিং এ চলে যায়, সেখানে ব্রেকফাস্ট করে নটার মধ্যে আমাদের রওনা দিতে হবে। আমাদের দ্বিতীয় দিনের উদ্দেশ্য ছিল "লামাহাটা" এবং "তিনচুলে" নামক একটি জায়গা। তো সকালবেলা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেছে ভাই আমি চা বিস্কুট খেয়ে ফ্রেশ হয়ে আমাদের রিসোর্টের আশপাশটা একটুখানি ভালো করে ঘুরে দেখলাম। এরপর রুমে গিয়ে সময় মত ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে বেরোনোর জন্য রওনা দিয়ে দিলাম। আমাদের রিসোর্ট এর ওয়েদার খুব একটা ঠান্ডা ছিল না আবার খুব একটা গরমও ছিল না। এসি চালানোর মতো ওয়েদার ছিল।
আমরা যখন রওনা দিই তখন প্রায় সকাল ০৯ঃ১৫ বাজে। আগের দিনের মতন সেই দিনও আড়াই ঘণ্টা তিন ঘন্টায় যাওয়ার পর গাড়ি একটু দাঁড় করিয়ে ছোট ব্রেক নেওয়া হল। তারপর আবার এক দেড় ঘন্টা চলার পরে আমরা আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য লামাহাটাতে পৌঁছে গেলাম।
সেখানে গিয়ে অদ্ভুত সুন্দর এক দৃশ্য দেখতে। একটু পাহাড়ের ওপরে সারি সারি পাইন গাছ। দূর থেকে দেখতে অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল। আসল ঘোরার জায়গাটি ছিল সরকারের একটি ঘেরা অঞ্চল। সেখানে আমাদের ২৫ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ঢুকতে হলো। তারপর পাহাড়ের গা বেয়ে বেয়ে ধাপ করা ছিল সেখানে দিয়ে খানিকটা উপরে যেতে হল।
জায়গাটি আসলেই খুব সুন্দর ছিল। ঠান্ডা ঠান্ডা ওয়েদার। সেখানকার সব থেকে মজার বিষয় হল, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ওয়েদার বলতে যাচ্ছে। এই রোদ তো এই মেঘ। আবার চোখের পলকে বৃষ্টি নেমে আসছে। আমরা ওখানে সব মিলিয়ে দু'ঘণ্টা ছিলাম,তার মধ্যেই অন্তত ৬ থেকে ৭ বার ওয়েদারের বদল দেখতে পেলাম।
অঞ্চল টুকু থেকে ৭০০ মিটার ওপরে একটি ছোট লেক মতন ছিল, তো কেও কেও সেখানে যাচ্ছিল, কেউ আবার সেই জায়গাটাতে যাচ্ছিল না। তো আমরা ডিসাইড করতে পারছিলাম না, অতটা উপরে যাবো কিনা। দূরত্ব অনেকটা থাকায় যেতে চাইছিল না। তাও আমি আমাদের টিমের তিন চার জনকে কোন মতে রাজি করিয়েছিলাম ওপরে যাওয়ার জন্য। মিনিট ১০-১৫ উপরে উঠে কোন কিছু না দেখতে পেয়ে তারাও হাল ছেড়ে দেয়। কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা শুধু যখন করেছি শ্রেষ্ঠ করবো। কাউকে না পেয়ে একা একাই উপরে উঠতে শুরু করি। আমাকে দেখে আরো তিনজন সাহস পায়। উপরে ওঠার রাস্তাটা ছিল বড্ড কঠিন। কারণ একেতেই পাহাড়ি রাস্তা তার উপরে বৃষ্টি পড়ে পুরো কাদা হয়ে গেছিল। সেখানে পা পিছল কেটে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল অনেকটা। সেই ভয়ে কেউ দিতে চাইছিল না। কিন্তু আমার ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতা থাকায়, এখানে আমার উঠতে কোন সমস্যা হয়নি। এভাবে প্রায় আধঘন্টা ওঠার পরে অবশেষে সেই লেকের দেখা পেলাম।
কিন্তু আধ ঘন্টার মাঝখানে একবার দুবার ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি হয়ে গেছে, কিন্তু আমার কাছে সেই সময় ছাতা ছিল না। বাধ্য হয়ে আমাকে ভিজতে হয়েছে।
তারপর লেকের ধারে পাঁচ সাত মিনিট কাটিয়ে আমরা আবার নিচে নেমে এলাম। নিজেরে এসে দেখে সবাই আমাদের খোঁজাখুঁজি করছে। বেশ কয়েকবার ফোন করেছে কিন্তু ফোনের কোন নেটওয়ার্ক ছিল না। যাইহোক বৃষ্টিতে ভিজে বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছিল তখন। নিচে নেমে বাইরে এসে দেখলাম গাড়িতে করে মোমো বিক্রি করছে। ওই ঠান্ডার মধ্যে গরম গরম মোমো হাতছাড়া করার সাহস হলো না।
আমি সেখানে দাঁড়িয়ে মোমো খেয়েই তারপরে পরের গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দিলাম।
আমাদের পরের গন্তব্য ছিল তিনচুলে।সেটা আরও ৪৫ মিনিটের রাস্তা। সেখানে গিয়ে আমরা অসাধারণ কিছু ভিউ দেখতে পেলাম,সাথে চা-বাগান।
সেখানে পৌঁছতে পৌঁছাতে আমাদের লাঞ্চ করার সময় হয়ে যায়। এরকমভাবে ঘুরতে গেলে প্রত্যেক জায়গায় আমাদের কোথাও বাইরের খাবার খেতে হয় না। সাইট সিন ঘুরতে বেরোলেও আমাদের কিচেন স্টাফদের রান্না করা খাবার প্যাক করে নিয়ে বেরোনো হয়। তো সেখানে আমরা একটি হোটেলের সাথে কথা বলে তাদের চেয়ার টেবিলে বসে আমরা আমাদের খাওয়ার খেয়ে নিলাম।
তারপরে তিনচুলে অঞ্চলটা আশেপাশে ভালো করে ঘুরলাম কি বেশ কিছু ফটোগ্রাফি করলাম।
সেখানে আমরা মোটামুটি ঘন্টা দেড়ে কাটিয়ে সেখান থেকে আমাদের রিসর্টে ফেরার জন্য রওনা দিলাম। ফেরার পথে একটি সুন্দর চা বাগান সকলের চোখে পড়লো, তাই সবাই সেখানে নামলো চা বাগানটি ভালো করে সবাই ঘুরলো।
আমিও একটু চা বাগানটা ঘুরলাম, কিছু ফটো তুললাম । সুন্দর একটি চা বাগান ছিল। তারপর সেখান থেকে সরাসরি আমাদের হোটেলে ফিরে আসা হলো।
তো বন্ধুরা এই ছিল আমার আজকের গল্প। আশা করি আপনাদের সকলের ভালো লেগেছে।
Camera device | Location | Date |
---|---|---|
POCO M3 | লামহাটা,তিনচুলে ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল | 2nd June, 2022 |
অনেক সুন্দর ভাবে আপনার পোস্টটি উপস্থাপন করেছেন আপনি। আপনার পোস্টে উল্লেখিত গাছ গুলো আমি এর আগে দেখিনি, নাম ও এই প্রথম শুনলাম। মুহূর্তটি আপনি খুব সুন্দর ভাবে উপভোগ করেছেন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আপনার পোস্টটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ ভাই,মন্তব্যের জন্য।ভালো থাকবেন।
আপনার ভ্রমণ পর্বটি পড়ে বেশ উপভোগ করতে পারলাম । অনেকদিন পর পাইন গাছ দেখতে পেলাম । সারি সারি পাইন গাছ গুলো দূর থেকে আসলেই দাদা খুব সুন্দর দেখাচ্ছে । এ পাহাড়ি এলাকায় এটাই সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য এই বৃষ্টি এই মেঘ !
ঠিক বলেছেন ভাই,এরকম পাইন গাছ দূর থেকে দেখতে খুবই ভালো লাগে।এটি পাহাড়ের শোভা বাড়ায়।
শুভকামনা রইলো আপনার জন্যে।
খুবই ভালো লাগলো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অজানা অচেনা জায়গা সম্পর্কে খুব সুন্দর ভাবে লিখে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন এবং ফটোগ্রাফির মধ্য দিয়ে শেয়ার করেছেন আপনি। এখানে ভ্রমণ করতে গিয়ে খুব সুন্দর সুন্দর ফটোগ্রাফি করে দেখিয়েছেন যা ছিল খুব মনোমুগ্ধকর।
হ্যাঁ ভাই, এখানকার পরিবেশ-আবহাওয়া সত্যিই মনোমুগ্ধকর।অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্যে।