হসপিটালের একটি দিন

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম
আমি @sajjadsohan from 🇧🇩.

২৩শে ভাদ্র,, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

৭ই সেপ্টেম্বর, বুধবার



মার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় ভাল আছি। রক্তের খোঁজ এবং হসপিটালে থাকার একটি অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করব আশা করি ভালো লাগবে।


Friends Photo Collage (1).png


হসপিটালের একটি দিন

কিছুদিন আগে আমার পরিবারের দুইজনের ডেঙ্গু জ্বর হয়ে যায়, রক্তের প্লাটিনা একদম কমে যায়। দু'জনকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একজন আমার আন্টি এবং অন্যজন কাজিন।

হাসপাতালে যাওয়া-আসা করার জন্য লোক রয়েছে তাই আমার তেমন একটা কষ্ট করতে হয়না, স্বাভাবিক দিনের মতো ঐদিন আমার একটি কম্পিউটার ক্লাস ছিল এবং রাত্রেবেলা ট্রন ফ্যান ক্লাবে একটি ক্লাস ছিল।

আমি আগে থেকে জানতাম রক্তের প্রয়োজন হতে পারে তাই ডোনার রেডি করা ছিল, কখন কবে লাগবে সেটি নিশ্চিত ছিল না। স্বাভাবিকভাবে সে দিনটি আমার জন্য খুব ইম্পরট্যান্ট ছিল আমার দুইটি জায়গায় ক্লাস। দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে আমি বেরিয়ে গেলাম আমার কম্পিউটার ক্লাসে যাওয়ার জন্য।


IMG_20220816_171844.jpg


আমি প্রায় মহাখালী পৌঁছে যাই এমন সময় আমার খালু ফোন করে বলল রক্ত এখন লাগবে। আমার তো ভীষণ রাগ হচ্ছে আমাকে আগে থেকে কিছু জানানো হয়নি, এত অল্প সময়ে সবাইকে ফোন করে নিয়ে আসা খুবই কঠিন ব্যাপার, এর উপর আমার এটি গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস রয়েছে যেটি এখন মিস করতে হবে।

আমি জানতাম ব্লাড দিতে আরো দুতিন ঘন্টা সময় লাগবে এরমধ্যে আমি ক্লাস করতে পারতাম, পরক্ষনেই মনে হলো একটু স্বার্থপরতা হয়ে যায়, আমি ক্লাসটা মিস করি বের হয়ে গেলাম কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে উদ্দেশ্যে।

একেকজন ডোনার কে ফোন করা শুরু করলাম কেউ বাসার ঘুমোচ্ছিল খাওয়া-দাওয়া করে বের হবে কেউবা অনেক দূরে আছে গাড়িতে করে আসছে। সবমিলিয়ে বেশ বিশৃংখল অবস্থা ঘটে যায় যেহেতু আগে থেকে টাইম বলা ছিল না।


IMG_20220816_212053.jpg


রোগীর ব্লাড স্যাম্পল কালেক্ট করলাম, এরমধ্যে আমার একে একে ছয়জন ডোনার চলে আসেন এটা আমার কাছে খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল, ডক্টর বলেছিল চারজন প্রয়োজন হবে তাই একটু বেশি নিয়ে আসা। এরপর শুরু হল টেস্ট করার ধাপ সে যেন এক বিশাল ঝামেলার কাজ।


IMG_20220816_213122.jpg

IMG_20220816_220822.jpg

IMG_20220816_220832.jpg


আমি বিকালে হসপিটালে গিয়েছিলাম সকল জামেলা শেষ করতে করতে প্রায় রাত আটটা বেজে যায়। দেখেছিলাম খালু একা মানুষ কিছু করতে পারছিল না সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তাই মূলত এতটা সময় লেগেছিল , এদিকে আমার ট্রন ফ্যান ক্লাব ক্লাসটিও মিস হয়ে গেছে।

আপনারা দেখতে পাচ্ছেন হসপিটালে সবকিছু প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, কোন লোকজন নেই এজন্য আরো বেশি কষ্ট করতে হয়েছে, ছোট ছোট কাজের জন্য বেশ এদিকে ওদিকে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে।


হঠাৎ করেই ডাক্তারদের কথা পাল্টে যায় তারা বলেছিল চারজনের রক্ত থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করা হবে, এখন বলছে যেকোনো একজনের থেকেই নেয়া হবে।

সবাইকে বোঝাতে পারব না এই ছোট্ট একটা কথা ডাক্তারদের কাছ থেকে পারমিশন নেওয়ার জন্য চার-পাঁচ ঘণ্টা সময় নষ্ট করা হয়েছে। সেই বিকালে এসেছি এখন প্রায় রাত দশটা। সবার বাসা থেকে ফোন করছে খুবই খারাপ একটা অবস্থা একে একে আমার সবগুলো ব্লাড ডোনারকে আমি বিদায় জানিয়ে দিলাম। এরমধ্যে সকলের জন্য চা-কফি বার্গার ইত্যাদি খাবার তো কিছুক্ষণ পরপর রয়েছে।


আমার ছয় ব্লাড ডোনার প্লাজমা দেয়ার জন্য ফিটনেস ছিলনা, খুবই খারাপ লাগলো এত ঘন্টা সময় নষ্ট হল। তারপর তাদের সেই ফিটনেস অনুযায়ী একজনকে ডাকা হল সেই রাত দশটার সময়। ফোন করার সাথে সাথেই তিনি চলে আসেন কিন্তু পরের দিন তার অফিস ছিল এজন্য সে বেশ ভয় পাচ্ছিল কারন এর আগে প্লাটিনা তিনি দেননি।

আমিও প্রায় অনেকগুলো ব্লাড ডোনেশনের কাজে সহায়তা করেছিলাম, কিন্তু প্লাটিনা এই প্রথম আমারও কেস।

ডাক্তারদের ঝামেলার কারণে দশটার সময় আশা আমার সেই ব্লাড ডোনার এর টেস্ট ইত্যাদি কাজ করতে করতে রাত একটা বেজে যায়।


IMG_20220816_224210.jpg

IMG_20220816_230557.jpg


তারপর আমরা ফরম পূরণ করলাম এবং আবার ডাক্তারদের পিছু পিছু ছুটে ছুটে শুরু করলাম, আসলে অনেক রাত হয়ে যাওয়ার কারণে আমরা কোন কাজ তাড়াতাড়ি করতে পারছিলাম না। হসপিটালের এই জায়গাটা আমার কাছে খুবই বিরক্ত লাগছিল, সেই বিকেল থেকে এখন রাত একটা বাজে এইখানেই দাঁড়িয়ে আছি এখানেই বসে আছি এখানেই সবকিছু।

নিজের বোন বলেই হয়তো এতটা কষ্ট করছি না হলে হয়তো এত রাত পর্যন্ত হসপিটালে থাকা হতো না।

অবাক করা বিষয় সন্ধ্যা হলেই বাসা থেকে আমাকে ফোন করা হয় এখন রাত একটা বাজে আমাকে বাসা থেকে ফোন করা হয়নি। বিষয়টা মাথায় রইল। কারণ সেবামূলক কাজ করতে গেলে এরকম দেরি হয় যার জন্য বাসায় আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়। আজ পরিবারের বলে আমাকে এখনো ফোন করা হচ্ছে না কিংবা বাসায় আসার জন্য বলা হচ্ছে না।


IMG_20220816_234716.jpg

IMG_20220816_235204.jpg


অবশেষে রাত 2 টার সময় আমরা বিল পরিশোধ করলাম এবং সিরিয়ালে আমরা একটি মেশিন পেলাম। এত রাতেও মানুষ সেখানে রক্ত দেওয়ার জন্য এসেছে। সিরিয়াল পেতে বেশ অনেক সময় লেগেছে যেহেতু প্লাটিনা দেওয়ার জন্য একজনকে 40 মিনিটের বেশি সময় শুয়ে থাকতে হয়।


IMG_20220817_003627.jpg

IMG_20220817_003858.jpg

IMG_20220817_003940.jpg


সচারাচর একটি সুই দিয়েই মানুষের শরীর থেকে রক্ত নেয়া হয়, বাট এর ফাংশন গুলো দেখে আমার বেশ অবাক লাগছে, একদিক থেকে রক্ত আসবে এক জায়গায় আলাদা হবে একদিকে স্যালাইন যাচ্ছে আরেকদিকে রক্ত আবার সে দেহের মধ্যে প্রবেশ করবে বেশ ঝামেলার একটি প্রসেস।

আপনি যদি খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন ব্লাড ডোনার এর বডি থেকে এতগুলো নল বের হয়েছে, আমার তো মনে হয় লোকটা বেশ ভয় পেয়েছিল। তবুও মানবতার খাতিরে তিনি এত বড় একটি উপকার করলেন আমাকে। এজন্য তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ রয়ে গেলাম।


IMG_20220817_004612.jpg

IMG_20220817_004614.jpg


এদিকে খুব ভালো হয়েছে ৪০ মিনিটের বেশি প্রয়োজন হয়নি, স্বাভাবিকভাবেই আমরা খুব তাড়াতাড়ি প্লাজমা সংগ্রহ করতে পেরেছি, এত টাকা এত শ্রম এত ত্যাগের পর আমরা মাত্র এতোটুকু জিনিস পেয়েছি।

বেশ হাতে নিয়ে দেখতে ইচ্ছে করল এত কষ্টের ফল 😂😂 , এই একটা প্লাজমার জন্য এখন প্রায় ১১ ঘণ্টা অতিবাহিত করলাম। রাত প্রায় তিনটা বাজে প্লাজমা হাতে নিয়ে হাটা শুরু করলাম হসপিটালের উদ্দেশ্যে রাস্তায় কোন রিক্সা বা গাড়ি নেই। টেস্ট লেব এবং হাসপাতালের মধ্যে প্রায় ২০ মিনিট ২৫ মিনিট হাঁটার রাস্তা।


IMG_20220817_005632.jpg

IMG_20220817_013739.jpg


এখন যেহেতু অনেক রাত হয়ে গেছে এবং বাকি সবাই চলে গেছে আমি আর খালু একসাথে হসপিটালে থাকার চিন্তা করলাম, যেহেতু মহিলা ওয়ার্ড তাই আমাদেরকে বাইরেই থাকতে হবে। একা ফেলে চলে যাওয়াটা ঠিক লাগছিল না এত জার্নি এবং শরীর খারাপ লাগা সত্ত্বেও হসপিটাল থেকে গেলাম।


IMG_20220816_233316.jpg


না ঘুমিয়ে আমার বহু রাত কেটেছে, কিন্তু আজ কেন যেন এত ঘুম পাচ্ছে শরীর কোনোভাবেই ঠিক থাকছে না। যেহেতু প্রায় ১২-১৩ ঘণ্টার একটি অপেক্ষা, এত দৌড়াদৌড়ি স্বাভাবিকভাবেই শরীর ঘেমে অবস্থা খারাপ, তার উপর গরম থাকতে হবে বাহিরে চেয়ারের উপর বসে। কোনরকম রাতটা পার করলাম। ক্যান্টিন বন্ধ কিছু করার নেই, ভাগ্যক্রমে দুটো রুটি ছিল দুজনে খেয়ে বসে থাকলাম। খালু বেশ ক্লান্ত ছিল ঘুমিয়ে গেল আমি ঝুমুতে ঝুমুতে পুরো রাত পার।


IMG_20220817_052936.jpg


ভোরের আলো ফুটতেই আমি উঠে বসলাম, আমার মনে হচ্ছে এখন গোসল করতে পারলে ভালো লাগতো, আমি খালুকে বিদায় জানালাম এবং মেন রোডে এসে দাঁড়ালাম। মাঝে মাঝে বাস আসছে আমি আমার গন্তব্যে যাওয়ার জন্য বাসে উঠলাম।

এরপর আমি আমার বাসায় পৌছে গেলাম এই ছিল আমার একদিনের হাসপাতালে দিন, মানুষ কিভাবে দিনের পর দিন হসপিটালে থাকে আমি তো একদিনেই কাহিল হয়ে গেছি।


পোষ্টের ধরনসেবামূলক কর্মকান্ড
ফটোগ্রাফার@sajjadsohan
লোকেশনhttps://w3w.co/ogre.sofa.shunted & সংরক্ষিত এলাকা
ডিভাইসXiaomi Redmi Note 10 Pro Max


image.png



আমি কে?

আমি সাজ্জাদ সোহান
আমি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এর একজন শিক্ষার্থী। আমি ঢাকাতে বসবাস করি। আমি ট্রাভেল করতে অনেক ভালোবাসি, এছাড়া অবসর সময়ে মুভি দেখি, ফটোগ্রাফি করি, গান করি। আমি একটু চাপা স্বভাবের তাই কম কথা বলি কিন্তু আমি একজন ভালো শ্রোতা। ভালোবাসি নতুন জিনিস শিখতে, মানুষকে ভালবাসি তাই মানুষের সহযোগিতায় এগিয়ে আসি।


@sajjadsohan (1).gif


image.png



logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png


image.png

𝕋𝕙𝕒𝕟𝕜 𝕪𝕠𝕦 𝕖𝕧𝕖𝕣𝕪𝕠𝕟𝕖

115.png

Sort:  

Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

This post was selected for
Curación Manual- Manual Curation

@tipu curate

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59404.52
ETH 2610.92
USDT 1.00
SBD 2.41