অশুভ ছায়া (চতুর্থ পর্ব)।
পূর্ববর্তী পর্বেরলিংক
এই ধরনের অনুভূতি তার এর আগে কোনদিন হয়নি। তারপরেও সে তার মনটাকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলো। জানালটা আটকে সে আবার খাটে এসে শুয়ে পড়ল। তবে এবার আর হারিকেনের আলো না কমিয়ে বরং সে বাড়িয়ে দিয়েছে। যাতে পুরো ঘরটা আলোকিত হয়ে থাকে। শুয়ে পড়ার কিছুক্ষণের ভেতর সে আবার ঘুমিয়ে পড়ল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার তার মনে হল দরজার বাইরে কেউ নুপুর পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। সাব্বির ভয় না পেয়ে হারিকেন নিয়ে দরজা খুলে বাইরে দেখতে লাগলো কেউ আছে কিনা। কিন্তু এবারও সে কাউকে দেখতে পেল না।
ক্রমে তার ভেতর অজানা একটা ভয় বাড়তে থাকলো। সে যতই তার মনকে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করুক। কিন্তু তার অবচেতন মন তাকে ভয় পেতে বাধ্য করছিল। এবার সে দরজা আটকে না ঘুমিয়ে বাকি রাতটা বসে বসে কাটিয়ে দিল। যখন ভোরের আলো বাইরে ফুটতে শুরু করলো। তখন তার মনে স্বস্তি ফিরে এলো। কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল সেটা সে বুঝতেও পারেনি। তার ঘুম ভাংলো বেলা অনেকটা বারার পরে। রিপনের দরজার কড়া নাড়ার শব্দে সাব্বির গিয়ে দরজাটা খুলে দিল। রিপন সাব্বিরকে দেখে জিজ্ঞেস করল স্যার রাতে ঘুম ভালো হয়েছে তো? তার উত্তরে সাব্বির তেমন কিছু বলল না। তারপর সাব্বির রিপনকে জিজ্ঞেস করল এলাকার লোকেরা কি জানে যে আজকে থেকে এখানে ডাক্তার থাকবে? তখন রিপন বলল জি স্যার এলাকাতে মাইকিং করানো হয়েছে আপনার আসার আগেই। একটু পরেই রোগীরা আসা শুরু করবে। তার আগে আপনি নাস্তা করে তৈরি হয়েনিন। সাব্বির দ্রুত হাতমুখ ধুয়ে রিপনের আনা খাবার দিয়ে নাস্তা সেরে নিল ।
প্রথম দিন হওয়ায় খুব একটা রোগী হলো না। তবে যারা এসেছিল তারা সবাই সাব্বিরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। এখানে আসার জন্য স্থানীয় লোকজনের ভালোবাসায় আবিরের মনে এক অন্যরকম ভালো লাগা তৈরি হলো। বেলা বারোটা বাজার আগেই সাব্বিরের রোগী দেখা শেষ হয়ে গেলো। তখন সাব্বির রিপনকে বলল এখন চলো। আমাকে আগে আশেপাশের কোন ভালো বাজারে নিয়ে যাবে। আমার বেশ কিছু কেনাকাটা করতে হবে। তারপর তারা দুজনে মিলে উপজেলা সদরের দিকে রওনা দিলো। কারণ রিপন সাব্বিরকে জানিয়েছে গ্রামের বাজারে তেমন কিছু পাওয়া যায় না। রান্নার তৈজসপত্র কিনতে হলে তাকে উপজেলা সদরে যেতে হবে।
উপজেলা সদরে তাদের পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর হয়ে গেল। যার ফলে সেখানে পৌঁছে সাব্বির রিপনকে নিয়ে একটি হোটেল থেকে প্রথমে খাওয়া-দাওয়া করে নিল। তারপর সে তার রান্নার জন্য যে সমস্ত তৈজসপত্র প্রয়োজন সেগুলি কিনতে লাগলো। সেগুলি কেনাকাটা হওয়ার পর সাব্বির একটি শক্তিশালী টর্চলাইট কিনলো। এত বড় টর্চ লাইট কেনা দেখে রিপন সাব্বিরকে জিজ্ঞেস করল স্যার এত বড় টর্চ দিয়ে কি করবেন? সাব্বির বলল তোমাদের ইউনিয়ন হেলথ কমপ্লেক্সে তো কোন আলোর ব্যবস্থা নেই। আমরা শহরের মানুষ আলো ছাড়া থাকতে অস্বস্তি বোধ করি। এ জন্য টর্চ কিনলাম। সাথে সাব্বির বেশকিছু মোমবাতিও কিনে নিল।
ফেরার পথে রিপন কয়েকবার সাব্বিরকে জিজ্ঞেস করল স্যার রাতে আপনার কোন সমস্যা হয়নি তো? সাব্বির বলে না তেমন কোন সমস্যা হয়নি। গ্রামে পৌঁছতে পৌঁছতে তাদের প্রায় বিকেল হয়ে গেল। তাই সাব্বির চিন্তা করলো গ্রামের একটি চায়ের দোকান থেকে চা খেয়ে তারপর তার কর্মস্থলে ফিরবে। তাই সাব্বির ভ্যানওয়ালা কে বলল একটি চায়ের দোকান দেখে থামাতে। কিছুক্ষণের ভেতরেই তারা একটি চায়ের দোকান দেখতে পেল। তারপর সেখানে তারা ভ্যান থেকে নেমে চায়ের দোকানে বসে চায়ের অর্ডার করলো। এর ভিতর দোকানে বসে থাকা কয়েকজন মানুষ রিপনকে জিজ্ঞেস করল তোমার সাথে উনি কে? রিপন পরিচয় করিয়ে দিল এই বলে যে উনি আমাদের নতুন ডাক্তার সাহেব।
তখন একজন লোক সাব্বিরকে জিজ্ঞেস করল আপনি কোথায় থাকছেন? সাব্বির বলল ইউনিয়ন হেলথ কমপ্লেক্সে আছি। লোকটি তখন অবাক হয়ে সাব্বিরের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর বললো বলেন কি আপনি সেই ভয়ংকর বাড়িতে থাকেন? এই কথা শুনে সাব্বির রিপনের দিকে তাকালো। এদিকে রিপন সেই লোকটাকে বলছিলো কি উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলো? তারপর রিপন তাড়াহুড়া করে সাব্বিরকে বলল স্যার এখান থেকে চলুন। সাব্বির বুঝতে পারল কোন একটা সমস্যা আছে। ইউনিয়ন হেলথ কমপ্লেক্সে ফেরার পর জিনিসপত্র ভ্যান থেকে নামিয়ে রিপন সবকিছু সাব্বিরের রুমে রেখে এলো। রিপন যখন সাব্বিরের কাছ থেকে বিদায় নিতে যাবে। তখন সাব্বির রিপনকে জিজ্ঞেস করল তুমি আমাকে সত্যি করে বলতো এই বাড়িতে কোন সমস্যা আছে কিনা?
তখন রিপন মুখ কাচুমাচু করে বলল স্যার কেউ যদি জানতে পারে যে এই কথা আমি আপনাকে বলেছি। তাহলে আমার খুব সমস্যা হবে। তখন সাব্বির তাকে আশ্বস্ত করলো তুমি আমাকে সব কথা খুলে বলতে পারো। তোমার কোন সমস্যা হবে না।তখন রিপন বলল আমি আমার দাদার কাছ থেকে শুনেছি। তিনি বলেছেন এই বাড়িতে এক সময় এক ছোটখাটো জমিদার থাকতো। তখন এই পুরো এলাকাটা জঙ্গলাকীর্ণ ছিলো। জমিদার বেশ অত্যাচারী ধরনের লোক ছিল। একদিন সকালে মানুষ গিয়ে দেখে জমিদারের পুরো পরিবার ঘরের ভেতর মরে পড়ে আছে। তবে তাদের কারো শরীরের সাথে মাথা ছিল না। এক একজনের মাথা এক এক দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল। দেখে মনে হচ্ছিল কেউ প্রচন্ড আক্রোসে ধড় থেকে মাথা টেনে ছিড়ে ফেলেছে। তারপর থেকে এই বাড়িতে আর কেউ থাকতো না।
লোকজন ভয়ে এই বাড়ির আশেপাশে আসা বন্ধ করে দেয়। আশেপাশে দুই চার ঘর প্রতিবেশী যারা ছিল তারাও এখান থেকে সরে গিয়ে অন্য কোথাও বাড়ি করে। তখন থেকে এই এলাকাটা নিষিদ্ধ এলাকায় পরিণত হয়েছে। রিপন বলতে লাগলো খেয়াল করে দেখবেন গ্রামের মানুষজন দিনের বেলাতেও এদিকে খুব একটা আসে না। সাব্বির তখন রিপনকে জিজ্ঞেস করল এ কথা তুমি আমাকে কালকে বলনি কেন? তখন রিপন বলল স্যার চেয়ারম্যান সাহেবের নিষেধ আছে এই সমস্ত কথা আপনাকে বলতে। কারণ এই কথা শুনলে আর কোন ডাক্তার এখানে আসবে না। আগেও যে দু একজন এসেছিল তাদের ভেতর একজন প্রথম দিনেই চলে গিয়েছিলেন। আর একজন অল্প কয়েকদিন থাকার পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিল। তারপর তার পরিবারের লোকজন এসে তাকে এখান থেকে নিয়ে গিয়েছিল। এজন্য চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে কড়া করে নিষেধ করে দিয়েছে যাতে এই সমস্ত বিষয়ে আপনার কাছে না বলি। (চলবে)
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
![logo.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmZEaz6VZmitMY1N8dSXHuT2tfgXFnDKjY8iV7jNGuNwEE/logo.png)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
![Heroism_3rd.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmRejDSNMUFmRz2tgu4LdFxkyoZYmsyGkCsepm3DPAocEx/Heroism_3rd.png)
![standard_Discord_Zip.gif](https://steemitimages.com/0x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTvJLqN77QCV9hFuEriEWmR4ZPVrcQmYeXC9CjixQi6Xq/standard_Discord_Zip.gif)
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
![witness_vote.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmW8HnxaSZVKBJJ9fRD93ELcrH8wXJ4AMNPhrke3iAj5dX/witness_vote.png)
OR