স্বপ্নপূরণে ছুটে চলা (দ্বিতীয় পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


পূর্ববর্তী পর্বের লিংক

কারণ ঢাকা ভার্সিটিতে বিবিএ তে চান্স পেতে হলে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হতে হয়। সাধারণ ছাত্রদের পক্ষে সেখানে চান্স পাওয়া মোটামুটি অসম্ভব। তখন সোহেল তাকে জিজ্ঞেস করল পড়ালেখার পাশাপাশি মোটরসাইকেল চালাতে কোন সমস্যা হয় না? ছেলেটি তাকে জানালো সমস্যা কিছুটা হয়। তবে তার আর কোন উপায় নেই। কারণ তার বাবা অত্যন্ত দরিদ্র। তার পক্ষে তাকে ঢাকা পড়তে পাঠানো কোনভাবেই সম্ভব ছিল না।

Polish_20220901_193203791.jpg

কথা বলতে বলতে মোটরসাইকেল আবার চলতে শুরু করলো। কিছুক্ষণের ভেতরেই সোহেল তার বাড়ির সামনে চলে এলো। তবে ছেলেটির কথা শুনে সোহেলের মনে কিছুটা কৌতুহল জেগেছে। তাই সে ছেলেটিকে বলল যদি আপনি কিছু মনে না করেন। আপনার কাছে যদি সময় থাকে তাহলে চলুন আমরা চা খেতে খেতে কিছুক্ষণ কথা বলি। ছেলেটি বলল না স্যার আমার কোন সমস্যা নেই। সোহেল ছেলেটিকে নিয়ে পাশের একটি রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো। ছেলেটির মুখ দেখে সোহেলের মনে হয়েছে ছেলেটা অনেকক্ষণ ধরে কিছু খায় না। মুখটা খুব শুকনো লাগছে। তাই সোহেল ছেলেটার জন্য কিছু খাবার অর্ডার করলো।

ছেলেটার সোহেলে এই ব্যবহারে অবাক হয়ে গেলো। সে বারবার বলতে লাগলো স্যার এগুলির কোন দরকার নেই। আমি এখন খাব না। সোহেল বলল কোন সমস্যা নেই। আপনি খেতে থাকুন আর আমি আপনার গল্প শুনি। তখন ছেলেটি বলতে শুরু করলো। আজ প্রায় দু বছর হলো ঢাকায় এসেছি। আমার বাড়ি বরিশালের প্রত্যন্ত একটি গ্রামে। সেই গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া আর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। আমি ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় বেশ ভালো ছিলাম। তবে যেহেতু আমাদের এলাকাতে হাই স্কুল ছিল না। তাই ক্লাস ফাইভ পাশ করার পর বাবা সিদ্ধান্ত নিল আমাকে আর পড়াবে না। কারণ হাই স্কুল আমাদের এলাকা থেকে অনেক দূরে।

তবে আমার স্কুলের দুজন শিক্ষকের জুড়াজুড়িতে বাবা শেষ পর্যন্ত আমাকে হাই স্কুলে ভর্তি করল। তবে এতে আমার সেই দুই শিক্ষক আমার আমার পড়ালেখার ব্যাপারে বেশ সাহায্য করতো। এভাবে দেখতে দেখতে আমি ভালো রেজাল্ট করে এসএসসি পাস করলাম। যাইহোক এতদিন তো তাও পাশের এলাকায় হাই স্কুলে পড়ছিলাম। কিন্তু এখন কলেজ আরো কিছুটা দূরে। বাবা আবারো বেঁকে বসলেন। বলল যথেষ্ট লেখাপড়া হয়েছে। এখন আমার কাজে সাহায্য করো। কলেজে ভর্তি হয়ে দরকার নেই।

এবারও আমার সেই দুই শিক্ষক এগিয়ে এলেন। আমার বাবাকে আশ্বস্ত করলেন আমার লেখাপড়ার ব্যাপারে তারা সর্বোচ্চ সাহায্য করার চেষ্টা করবেন। যদিও তারা নিজেরাও অর্থনৈতিকভাবে খুব একটা সচ্ছল নয়। কিন্তু আমার প্রতি তাদের একটা গভীর আস্থা ছিল। তাদের ধারণা ছিল আমি জীবনে ভালো কিছু করতে পারবো। যখনই আমার সেই দুই শিক্ষকের সাহায্যের কথা মনে পড়ে। আমি আরো বেশি পরিশ্রম করতে অনুপ্রেরণা পাই।

যাই হোক এইচএসসিতে ও আমার রেজাল্ট অনেক ভালো হলো। তখন আমার সেই শিক্ষকগণ আমাকে পরামর্শ দিল ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিতে। কিন্তু ঢাকায় আমার পরিচিত কেউ নেই। তাই আমি স্যারকে বললাম স্যার ঢাকায় তো আমার পরিচিত কেউ নেই। আমি সেখানে গিয়ে কোথায় থাকবো? আমার এক শিক্ষক তার বোনের বাড়ির ঠিকানা দিয়ে আমাকে বললেন তুমি এই ঠিকানায় চলে যাবে। পরীক্ষার সময় তুমি সেখানে থাকতে পারবে। আমি আমার বোনকে ফোন করে বলে দেবো। অন্য শিক্ষক জামালের কাছে যাতায়াত খরচ বাবদ কিছু টাকা দিলো। কারণ জামালের বাবার পক্ষে তাকে ঢাকা পাঠানো সম্ভব না। (চলবে)

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

গল্পের জামালের সাথে নিজেকে রিলেট করতে পারছি ভাই।এত টা না হলেও এরকম প্রতিকূলতা ফেস করেছি।পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

 2 years ago 

আমাদের সমাজে আসলেই এইরকম কিছু শিক্ষক এখনো আছে যারা সবসময় এইরকম ছাএদের পাশে থাকে। বেশ কৌতূহল হচ্ছে কিন্তু আমার ভাই। পরের পর্বের জন্য
অপেক্ষায় থাকলাম ভাই।।

 2 years ago 

প্রথম পর্ব পড়ে আসলাম, না হলে দ্বিতীয় পর্ব মাথার উপর দিয়ে যাবে।যাইহোক দরিদ্র মানুষকে জীবনে অনেক সংগ্রাম করতে হয় তার উদাহরণ ওই ছেলেটি।পড়ালেখা করার পাশাপাশি বাইক চালানোর মতো ঝুঁকি নিতে হচ্ছে।শিক্ষক দুইজন খুবই ভালো কাজ করেছেন ।গল্পটি পড়ে ভালো লাগলো, পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া।ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

সত্যিই রাইড়ার অনেক মেধাবী একজন ছাত্র। সে গ্রামের প্রত্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় লেখাপড়া শেষ করার পর তার এসএসসি এবং এইচএসসি পাশ করার বিষয়টি জেনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। পাশাপাশি তার দুজন শিক্ষক তাকে খুবই উৎসাহ দিয়েছে এবং সাহায্য করেছে। এবার দেখা যাক রেস্টুরেন্টে রাইডারের কথাগুলো শুনে সোহেল সাহেব কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59295.75
ETH 2607.30
USDT 1.00
SBD 2.41