ধ্বংস হয়ে যাওয়া কৈশোর (তৃতীয় পর্ব)। ১০% সাইফক্স।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


পূর্ববর্তী পর্বের-লিংক

রবিন রাশেদকে দায়িত্ব দিল ছেলেগুলির গতিবিধির উপর নজর রাখার। শুধু গতিবিধি নয় ছেলেগুলি কোথায় যায় কী করে সে বিষয়ে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করার দায়িত্ব ও রাশেদকে দেয়া হলো। রাশেদ পরবর্তী কয়েক দিন ছেলেগুলির ব্যাপারে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করলো। এভাবে কয়েক দিন কেটে গেলো।

png_20220302_132811_0000.png

একদিন রবিন এবং তার দলের লোকজন কালভার্টের উপর বসে আড্ডা দিচ্ছিল। এর ভেতর রাশেদ এসে ওদের কে বলল সন্ধ্যার পরে ওরা দুজন এলাকা থেকে বাইরে যায়। তখন ওদেরকে আমরা ধরতে পারি। এই নিয়ে ওরা আলোচনা করছিলো। এর ভিতর মিলন নামের ওদের পরিচিত এক ছেলে সেখানে এসে হাজির হলো। এই মিলন রবিন এবং রাসেলের খুব কাছের এক ছোট ভাই। রবিন এবং রাসেল যা বলে মিলন সেই কাজই করে। মিলনকে ওদের পছন্দ করার কারণ হচ্ছে মিলন দুর্দান্ত সাহসী ছেলে। কাউকেই ভয় পায়না। রবিন এবং রাসেল মিলনকে কোন কাজ করতে বললে সে চোখ বন্ধ করে সে কাজটি করে করে ফেলে।

মিলন সেখানে আসার পর রবিন জিজ্ঞেস করল কি ব্যাপার মিলন? তুমি হঠাৎ করে এখানে? মিলন বলল একটা কাজে আপনাদের কাছে এসেছি। তখন রাসেল জিজ্ঞেস করল কী কাজ? তখন মিলন বলল তাকে এলাকার এক মাদক ব্যবসায়ী প্রস্তাব দিয়েছে যে সে এই এলাকায় ব্যবসা করতে চায়। কিন্তু তাকে যেন কেউ ডিস্টার্ব না করে এই ব্যাপারটা রবিন এবং রাসেল কে দেখতে হবে। বিনিময় প্রতিদিন তাদেরকে মোটা অংকের টাকা দেয়া হবে। তাছাড়া মিলন ভালো মতই জানে রবিন এবং রাসেল ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক এক নেতার ছত্রছায়ায় আছে। যার ফলে ওরা এই কাজের সাথে থাকলে সেখানে পুলিশ ঝামেলা করবে না।সে সেজন্যই মিলন এই প্রস্তাব নিয়ে ওদের কাছে এসেছে। তাছাড়া মিলন নিজেও এ ব্যবসার সাথে জড়িত।

মিলনের প্রস্তাব শুনে রবিন কে কিছুটা আগ্রহী মনে হল। রবিন তখন রাসেল কে জিজ্ঞেস করল কি বলিস? রাসেল সরাসরি মানা করে দিলো। রাসেল পরিষ্কার জানিয়ে দিল মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত হওয়ার কোন ইচ্ছা আমার নেই। এই ধরনের জঘন্য কাজে আমি কখনোই জড়াতে চাইনা।

গ্রুপের অন্য ছেলেরাও রাসেলের সাথে একমত। কারণ ওদের গ্রুপের সবাই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। যার ফলে সবার কাছে পরিবারের সম্মান অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মারামারি-কাটাকাটি যাই করুক কখনো এই ধরনের বাজে কাজে নিজেদের জড়ায়না ওরা।রাসেল এবং দলের অন্যদের বিরোধিতার কারণে রবিন কিছুটা রাজি থাকলেও শেষ পর্যন্ত মিলনকে না করে দিলো। সাথে মিলনকে এটাও বলে দিলো তুমিও মাদক ব্যবসা থেকে দূরে থাকো। কারণ কখনো মাদক সংক্রান্ত ঝামেলায় পড়লে আমরা তোমাকে সাহায্য করতে পারব না।

মিলন কিছুটা হতাশ হয়ে সেখান থেকে চলে গেলো। মিলন যাওয়ার পর রবিন সবাইকে বলছিল মাসে প্রায় লাখ টাকার উপরে পেতাম যদি রাজি থাকতি। রাসেল বলল এই ধরনের জঘন্য কাজ করে টাকা ইনকাম করার কোন ইচ্ছা নেই। তারপর ওরা আগের আলোচনায় ফিরে গেলো। ঠিক হল আগামীকাল সন্ধ্যার পরে একটি নির্জন জায়গা দেখে ওই ছেলেগুলোকে অ্যাটাক করা হবে। তখন একজন জিজ্ঞেস করলো ওদেরকে কি ধরনের মার দেয়া হবে? তখন রাসেল বলল ওদেরকে আমরা হকিস্টিক দিয়ে পিটাবো। কোপাকুপি বা গুলি করার ঝামেলায় যাওয়া যাবেনা। রাসেলের প্রস্তাবে সবাই একমত হলো। শুধু রবিন কিছুটা অরাজি ছিলো।

যাইহোক ঠিক হল আগামীকাল সন্ধ্যার দিকে ওরা সবাই একসাথে এলাকা থেকে বের হবে। তারপর রাশেদের পরিকল্পনা মতো একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ছেলেগুলোকে ধরা হবে। তারপর মোটামুটি একচোচ ধোলাই দিয়ে ছেড়ে দেয়া হবে। পরিকল্পনা মতো পরদিন বিকালে ওরা সবাই এক হল। তারপর সন্ধ্যার একটু পরে ওরা রওনা দিল। সাথে অস্ত্রপাতি তেমন কিছু নেয়নি কেউই। শুধু দুজনকে দুটো হকিস্টিক নিতে বলেছে রাসেল। তারপর ওরা রাশেদের ঠিক করে রাখা একটি জায়গায় গিয়ে ওরা ছেলেগুলির জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো।

বেশ কিছুক্ষণ পার হয়ে গেলো কিন্তু ছেলেগুলোর কোন দেখা নেই। অপেক্ষা করতে করতে ওরা একসময় অধৈর্য হয়ে গেলো। সবাই মিলে রাশেদকে গালাগাল করতে লাগলো। রাশেদকে জিজ্ঞেস করল তুই নিশ্চিত ওরা এদিক দিয়ে আসবে? রাশেদ বললো গত কয়েকদিন প্রতিদিনই এ রাস্তা দিয়ে ওরা এইসময় যাতায়াত করে।ওরা নিজেদের ভিতরে কথা বলতে বলতে দেখতে পেলো দূর থেকে দুই তিনটে ছেলে আসছে। রাস্তাটি অন্ধকার হওয়ায় ওরা ঠিক বুঝতে পারছিল না ছেলেগুলি কারা। ওরা চুপচাপ দুটি গাছের আড়ালে অপেক্ষা করতে লাগলো। যখন ছেলেগুলি একদম কাছাকাছি চলে এলো। তখন ওদের কথাবার্তা শুনেই বুঝতে পারল এই ছেলেগুলির জন্যই অপেক্ষা করছে ওরা। তখন ওরা গাছের আড়াল থেকে বের হয়ে ছেলেগুলিকে ঘিরে ধরলো। ছেলেগুলি হঠাৎ করে এই আক্রমণে দিশেহারা হয়ে গেলো। রবিন প্রথমে একটি ছেলেকে ঘুসি মারলো। রবিন মারার পর ওই ছেলেটি হঠাৎ করে সাহস সঞ্চয় করে সে রবিনকে হুমকি দিলো কাজটা ভালো করছিস না। এর ফল খুব খারাপ হবে। তখন রবিনের সাথে সবাই মিলে ছেলেগুলিকে মারতে লাগলো।

এর ভেতরে একটি ছেলে রবিন কে ঘুষি মেরে ফেলে দিলো। রবিন উঠে দাঁড়িয়ে প্রচন্ড রাগে মাজা থেকে চাকু বের করে ছেলেটাকে আঘাত করলো। ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই হতভম্ব হয়ে গিয়েছে। কথা ছিল শুধু লাঠি দিয়ে আঘাত করা হবে। এই ঘটনার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না। রবিন ছেলেটিকে চাকু মারার সাথে সাথে ছেলেটি চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। এই ঘটনায় ভয় পেয়ে ওরা সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে গেলো।(চলবে)

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

এভাবেই তাদের সাহস বৃদ্ধি পায়। ধীরে ধীরে এরা আরো বড় অপরাধ এর দিকে ধাবিত হয়। আর তৈরি হয় কিশোর গ্যাং এর। আমাদের ঢাকার এইদিকে কিশোর গ্যাং এর এই প্রচলন বেশি। প্রতি এলাকা ভিত্তিক কিশোর গ্যাং থাকে। আপনার বাকি লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম ভাই।

 2 years ago 

কিশোর গ্যাং কালচার এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আর এখন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এদেরকে বেশি ব্যবহার করে। কারণ এদের বয়স কম মাথায় বুদ্ধি ও কম। এদের দিয়ে সহজে যেকোনো কাজ করানো যায়।

 2 years ago 

এভাবেই কিশোর গ্যাং এর মধ্য থেকে ভবিষ্যতের বড় সন্ত্রাসী তৈরি হয়। আমার মনে হয় চাকু মার দিয়ে সবে শুরু। পরবর্তীতে আরো অনেক কিছুই হবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মারামারি-কাটাকাটি সম্পূর্ণ ঘৃণা করি। এ ধরনের পোস্টগুলো আমি কখনো খুলেও দেখিনা। যদিও বর্তমান সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছো। দেখা যাক এই ঘটনা তুমি কোথায় নিয়ে দার করাও।

 2 years ago 

দেখি শেষ পর্যন্ত ঘটনা কোন দিকে যায়।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 66937.04
ETH 3270.78
USDT 1.00
SBD 2.74