সততার পুরস্কার (প্রথম পর্ব)। ১০% সাইফক্স।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


এসআই জাফর ক্লান্ত হয়ে বাসায় প্রবেশ করলো। সেই ভোর বেলায় সে ডিউটিতে গিয়েছ আর এখন বাজে রাত দশটা। দীর্ঘসময় ডিউটি করতে করতে সে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। বাসায় প্রবেশ করেই সে সোফায় গা এলিয়ে দিলো।

Polish_20220323_170244280.jpg

তার স্ত্রী বললঃ কি ব্যাপার তোমাকে এত দুর্বল দেখাচ্ছে কেন?
জাফর বললোঃ আজ অনেক পরিশ্রম হয়েছে।

তার স্ত্রী জবাব দিলোঃ এ আর নতুন কি? জামা কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি তোমার খাবার দিচ্ছি।

জাফর তার পরও বেশ কিছুক্ষণ সেভাবেই সোফার উপর শুয়ে রইল। তারপর উঠে ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে গিয়ে বসলো। খাবার টেবিলে বসে সে বুঝতে পারল তাকে একাই খেতে হবে। ছেলেমেয়েরা সব খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। স্ত্রী ও তাদের সঙ্গে খেয়ে নিয়েছে। প্রথম প্রথম জাফরের একা খেতে খুব খারাপ লাগতো। কিন্তু এখন অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। জাফর ধীরেসুস্থে খেতে লাগলো।

খাওয়ার ভেতরে তার স্ত্রী জানালো ঘরে বাজার প্রায় শেষ। আবার বাচ্চাদের প্রাইভেট টিউটরের টাকাও দিতে হবে। কালকে যেন টাকার ব্যবস্থা করে সে। জাফর মৃদু স্বরে বলল আচ্ছা।

জাফর আজ ১০ বছর যাবত পুলিশের এসআই হিসেবে চাকরি করছে। কিন্তু সে আর দশজন পুলিশ অফিসারের মত দুর্নীতিবাজ নয়। যার ফলে যখন তার কলিগেরা সবাই আলিশান জীবনযাপন করছে। তখন জাফরের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। পুলিশের যে অল্প বেতন সেই টাকা দিয়ে ভালো জীবন যাপন কোনভাবে সম্ভব নয়।

জাফরের কলিগেরা যে টাকা শুধু বাসা ভাড়ার পেছনে খরচ করে। সেই টাকায় জাফরকে পুরো সংসার চালাতে হয়। তার সাথে যারা চাকরি করে তারা সবাই শহরের নামী দামী জায়গায় বাড়ি ভাড়া নিয়েছে। আর জাফর খরচ বাঁচানোর জন্য শহর থেকে বেশ খানিকটা দুরে অল্প টাকায় বাড়ি ভাড়া করেছে।

অবশ্য এই সততার জন্য তার কপালে যে পুরস্কার জুটেছে তেমনটা নয়। তার স্ত্রী তাকে প্রতিনিয়ত নানা ভাবে কথা শুনায়। সংসারের অভাব অনটনের জন্য আকার-ইঙ্গিতে তাকে দুর্নীতি করতে বলে। তার কলিগ যারা আছে তারাও তাকে নানা রকম কথা শোনায়। থানায় তার কোন দাম নেই। তার কথা সেপাইরা ও শোনে না। তার পরেও জাফর কখনো কারো কাছ থেকে ঘুষ খায়নি।

কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে ঘুষ না খেলেও শুধু পুলিশের পোশাক গায়ে থাকার কারণে তাকে মাঝে মাঝে ঘুষখোর কথাটা শুনতে হয়। অবশ্য এটা সে মোটেই গায়ে পড়া মাখে না। কারণ সে জানে জনগণ শুধু শুধু পুলিশকে ঘুষ খোর বলে না। সে নিজে পুলিশ বাহিনীতে থেকে তাদের সীমাহীন দুর্নীতি আর নির্যাতন প্রত্যক্ষ করছে। মাঝে মাঝে চারপাশের পরিস্থিতি দেখে তার মনে হয় চাকরিটা ছেড়ে দিই।

তার এই সততার জন্য এখানে চাকরি করাও তার জন্য কঠিন হয়ে গিয়েছে। কারণ তার চারপাশের প্রত্যেকটা লোক দুর্নীতিতে জড়িত। তার সততার কারণে তাকে তার ডিপার্টমেন্টের কেউই পছন্দ করেনা। আর এই কারনেই যেখানে একজন এসআই কোথাও পোস্টিং হলে তিন-চার বছরের আগে সেখান থেকে অন্য কোথাও ট্রানস্ফার হয়না। তার ক্ষেত্রে প্রায় এক-দেড় বছর পর পরই নতুন জায়গায় যেতে হয়। কিন্তু যেখানেই যাক পরিস্থিতি তার জন্য একই রকম থাকে। তাকে কখনো কেউ কোনো মামলার তদন্তের ভার দেয় না। তাকে সবসময় পাঠানো হয় কম গুরুত্বপূর্ণ পরিশ্রমের কাজের জায়গায়। যদিও এটা নিয়ে তার মনে কোনো ক্ষোভ নেই।(চলবে)

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

আপনার গল্পটি খুবই দারুন লাগলো আমার। আপনি এত সুন্দর একটি চরিত্র তুলে ধরেছেন জাফর সাহেবের গল্পের মধ্য দিয়ে। তারপর সাহেবের মত এমন লোক দেশে থাকলে হয়তো বা সে দেশ উন্নত হতে বেশিদিন সময় লাগবে না। আমার মনে হয় জাফর সাহেবের মত পুলিশ প্রতিটি দেশেই হওয়া উচিত। তবে জাফর সাহেব এই সংগ্রাম একা করে হয়তোবা বেশি দিন টিকতে পারবে না। আমরা চাই সকলেই যেন জাফর সাহেবের মত করে তাদের দায়িত্ব পালন করে তাহলে দেশ ও জাতি সততা শীর্ষে অবস্থান করতে পারবে। ধন্যবাদ আপনার সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

ভাইয়া, আপনার গল্প পড়তে পড়তে গল্পের মাঝে হারিয়ে গেছি। গল্পটা পড়ছিলাম আর উপলব্ধি করছিলাম মানুষের ভেতরে কত ধরনের অশান্তি বসবাস করে তা বাইরে থেকে কখনোই বোঝা যায় না। একজন পুলিশের এসআই হয়েও তার সংসারে অভাব-অনটন লেগেই আছে। সৎ পথে চলতে গেলে সৎ টাকায় জীবন যাপন করলে মানুষের বোধহয় এরকমই অসচ্ছল অবস্থা বহন করতে হয়। তবে ভাইয়া একটা কথা না বললেই নয়, দশজন ঘুষখোরের মাঝে একজন সৎ ব্যক্তি থাকলেও তাকেও ঘুষখোরের অপবাদ শুনতে হয় এই ব্যাপারটি খুবই দুঃখজনক। যাইহোক ভাইয়া, আপনার সততার পুরস্কার গল্পটি আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে,আর তাই পরবর্তী গল্পের অপেক্ষায় রইলাম। ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন এই প্রত্যাশা করছি।

 2 years ago 

জাফর সাহেবের মতো পুলিশ দেশে সত্যি দুই একজন আছে কিনা সন্দেহ। থেকে থাকলে তারা পীর দরবেশের চাইতে কোন অংশে কম নয় বলেই আমি মনে করি। এযুগে পুলিশের চাকরি করে দুর্নীতি মুক্ত থাকা অনেকটা পানিতে নেমে গা না ভেজানোর মতই। অপেক্ষায় রইলাম পরবর্তী পর্বের। দেখি জাফর সাহেবের পরিণাম কি হয়।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 57527.13
ETH 2375.07
USDT 1.00
SBD 2.42