দুর্ধর্ষ গেরিলাদের দুঃসাহসিক অভিযান (দ্বিতীয় পর্ব)। ১০% সাইফক্স।
পূর্ববর্তী পর্বের লিংক
খুব ভালো একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছে সেখানে হামলা করার। কিন্তু সেই হামলা সফল করার জন্য এই দুই ট্রাক অস্ত্রের খুবই প্রয়োজন। সেজন্য আমজাদ খুব টেনশনে আছে। তার একটাই চিন্তা যেভাবেই হোক এই ট্রাক দুটিকে ঢাকা শহরে ঢুকাতে হবে। গত কয়েকদিন ধরেই আমজাদ এই চেকপোস্ট দুটো রেকি করছে। রেকি করে দলের সদস্যদের সাথে মিলে একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছে।
দুটো চেকপোস্ট আধা কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। তারা খেয়াল করে দেখেছে রেকি করার সময় যে কিছুক্ষণ পরপর পোস্ট দুটোর সাথে ওয়ারলেস এর মাধ্যমে কথা হয়। যার ফলে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুটি চেকপোষ্টে একইসাথে হামলা করা হবে এবং পাক আর্মি কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুটি চেকপোস্ট পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে হবে। তারপর অতি দ্রুততার সাথে ট্রাক দুটিকে ঢাকা শহরের ভেতরে নিয়ে যেতে হবে এই রাস্তা দিয়ে।
আমজাদের ১২ জনের একটি দল আছে। এই দলের কাছে অস্ত্র বলতে আছে চারটি চাইনিজ স্টেনগান, চারটি থ্রি নট থ্রি রাইফেল, ৩ টি এস এল আর আর একটি এ কে ফরটিসেভেন। আর আছে বেশ কিছুসংখ্যক গ্রেনেড।
আমজাদের মূল পরিকল্পনা তৈরি করা এই গ্রেনেড নিয়ে। তারা পরিকল্পনা করেছে দুটি চেকপোষ্টে দুটি দল কৌশলে হামলা করবে। প্রথম দল এর সাথে থাকবে কয়েকটি বাচ্চা আর ওদের গ্রুপের চারজন। এই বাচ্চাগুলোর কাছে থাকবে ছোট করে একটি ব্যাগ। যেহেতু চেকপোস্টের ভেতর থেকে এলএমজি তাক করে পাক আর্মির লোকজন রাস্তার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখে। তাই ওরা সাথে কোন অস্ত্র বহন করতে পারবে না। আক্রমণ করার জন্য একমাত্র ভরসা বাচ্চাদের ব্যাগে রাখা গ্রেনেডগুলো।
চেকপোস্টের আর্মিরা অবশ্যই পুরুষগুলোকে চেক করবে। কিন্তু বাচ্চাদের ওরা সাধারণত চেক করে না। ওদের যখন চেক করে ছেড়ে দেবে তখন যখন ওরা চেকপোস্ট অতিক্রম করবে তখন বাচ্চাদের ব্যাগ থেকে গ্রেনেডগুলো নিয়ে চেকপোস্টে গ্রেনেড চার্জ করা হবে। আর দ্বিতীয় চেকপোষ্টে হামলার পরিকল্পনায় ব্যবহার করা হবে একটি লাশ। ওরা পরিকল্পনা করেছে প্রথমে লাশকাটা ঘর থেকে একটি লাশ চুরি করা হবে। আমজাদ বলে দিয়েছে লাশটি যেন দুর্গন্ধযুক্ত হয়। মানে পচন শুরু হয়ে গেছে এমন একটি লাশ আনতে। কারণ দুর্গন্ধের জন্য এই ধরনের লাশ পাক আর্মিরা চেক করবে না।
সেই লাশ একটি খাটিয়ায় করে কয়েকজন বহন করে নিয়ে যাবে। সেখানে ওরা লাশের কাফনের ভেতরে গ্রেনেডগুলো রাখবে। ওদের সবাইকে চেক করার পর যখন ছেড়ে দেবে তখন ওরা লাশ নিয়ে চেকপোস্টের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় চেকপোস্টের ভিতর গ্রেনেড চার্জ করবে।
আর ওদের ব্যাকআপ হিসেবে দুটি চেকপোস্ট থেকেই বেশ কিছুটা দূরে থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে ওদের সহযোদ্ধারা তৈরি থাকবে। তারা এই থ্রি নট থ্রি রাইফেল কে স্নাইপার রাইফেল হিসেবে ব্যবহার করবে। যদি ওদের হামলা থেকে কোন পাক সেনা বেঁচে যায় তখন ব্যাকআপ যোদ্ধারা তাদেরকে টার্গেট করবে। এই পরিকল্পনাটা ওরা কয়দিন ধরে দাঁড় করিয়েছে।
ওরা পরিকল্পনা করে রেখেছে দুপুর তিনটার দিকে আক্রমন করা হবে। কারণ ওই সময়টাতে পাক আর্মির লোকজন খাওয়া-দাওয়া করে কিছুটা ঢিলেঢালা অবস্থায় থাকে। এই সময়টি আক্রমণের জন্য মোক্ষম সময়। এদিকে অস্ত্রবাহী ট্রাক দুটি কাছের একটি গ্রামের ভেতর এসে পৌঁছেছে। ওরা চেকপোস্ট দুটো ধ্বংস করতে পারলেই তখন এই ট্রাক দুটোতে সিগন্যাল পাঠাবে। তখন অস্ত্রবাহী ট্রাক দুটো পরিকল্পনা মতো শহরে ঢুকে যাবে পাকিস্তানি আর্মির কিছু বুঝে ওঠার আগেই।
এই মিশনের জন্য যে বাচ্চাদেরকে নেয়া হচ্ছে তাদেরকে ও ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। যদিও বাচ্চাগুলোকে এই মিশনে নেয়ার ব্যাপারে ওরা একটু দ্বিধাগ্রস্থ ছিলো। কারণ এরকম ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে বাচ্চাদেরকে ঠেলে দেয়া খুবই অমানবিক। কিন্তু ওরা চিন্তা করে দেখেছে এটা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। একমাত্র বাচ্চা আর লাশ পাক হানাদার বাহিনী চেক করে না। তাছাড়া বৃদ্ধ মানুষ, মহিলা সবাইকে তারা ব্যাপকভাবে তল্লাশি করে। এই জন্য এই চেকপোস্ট ধ্বংস করার জন্য এটাই সবচাইতে ভালো উপায়।
আমজাদের দলের লোকজনের উপর তার সম্পূর্ণ আস্থা। আছে ব্যাকআপ হিসেবে যাদেরকে রাখা হচ্ছে তারা সংখ্যায় চার জন। প্রথম চেকপোষ্টে আমজাদ সাথে আরও তিনজনকে নেবে হামলা করার জন্য। দ্বিতীয় চেকপোষ্টে লাশের খাটিয়ার সাথে থাকবে চারজন। দলের বাকি চারজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে দুটি চেকপোস্ট কে দূর থেকে নিশানা করার জন্য। থ্রি নট থ্রি রাইফেল অনেক দূর থেকেও নিশানা ভেদ করতে সক্ষম। এজন্য তাদেরকে বলা হয়েছে নিরাপদ কোন অবস্থানে থেকে চেকপোস্ট দুটিকে টার্গেট করতে। যদি তাদের অপারেশন কোনভাবে ব্যর্থ হয় তখন তারা চেষ্টা করবে চেকপোষ্টে অবস্থানরত আর্মিদের কে শেষ করতে। (চলবে)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
দুর্ধর্ষ একটি ঘটনা, গল্পটা পড়ছি আর নিজে নিজে কল্পনা করছি, কত পরিকল্পনায় করতে হয় একটি যুদ্ধ জেতার জন্য,এর পরবর্তী পর্ব এর জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
ভাইয়া, খুবই লোমহর্ষক কাহিনী তুলে ধরেছেন, দুধর্ষ গেরিলাদের দুঃসাহসিক অভিযান। যা পরতে পরতে নিজের অজান্তে এই গল্পের ভিতরে প্রবেশ করে গিয়েছিলাম। গেরিলা হামলার জন্য দুর্গন্ধ পচা যুক্ত লাশ ব্যবহার করার কথা শুনে নিজের গাটা যেন শিঁউরে উঠলো। অপরদিকে ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে গ্রেনেড পারাপারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল এই বিষয়টি আমার কাছে খুবই ভয়ানক মনে হচ্ছিল। যাইহোক ভাইয়া, গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো আর তাই পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
যুদ্ধের গল্প আমার বরাবরই ভালো লাগে ও মনে এক অনাকাঙ্ক্ষিত উত্তেজনা কাজ করে।তাই প্রথম পর্ব পড়ে দ্বিতীয় পর্ব পড়তে আসলাম। গ্রেনেডসহ অনেক অস্ত্রের নাম জানতে পারলাম।পর্বগুলি সুন্দর ছিল, পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।ধন্যবাদ ভাইয়া।