ছুটির দিনের ঘোরাফেরা (প্রথম পর্ব)।
গত বেশ কিছুদিন ধরে প্রচন্ড ব্যস্ততায় সময় কাটছে। তবে এত ব্যস্ততার ভিতরে শুক্রবার ছুটির দিনটাতে চেষ্টা করি একটু ঘোরাফেরা করে ফ্রেশ হওয়ার জন্য। কারণ সারা সপ্তাহ ব্যস্ত থাকার পর কিছু মনের খোরাক প্রয়োজন হয়। আর আপনারা যারা আমার পোস্ট পড়েন তারা জানেন ঘোরাফেরা করতে আমি বরাবরই ভালবাসি। ঢাকায় আসার পর থেকে আপুর বাসাতেই আছি। ওরাও আমার মতই ঘোরাফেরা করতে খুবই পছন্দ করে। আপুও সারা সপ্তাহ ব্যস্ত থাকার পর শুক্রবার দিনটা একটু অন্যভাবে কাটাতে পছন্দ করে।
তাই আমরা আগে থেকেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম শুক্রবার দিনটাতে আমরা ঘুরতে বের হবো। প্রথমে পরিকল্পনা ছিল ৩০০ ফিটের কাছাকাছি একটি জায়গা আছে যেটাকে পদ্মবিল বলা হয় সেখানে যাবো। জায়গাটি নাকি খুবই সুন্দর। তবে সেখানে যেতে হবে একেবারে সকালে। যদিও আমি কিছুদিন আগেই ফরিদপুরে একটি পদ্মবিল থেকে ঘুরে এসেছি। সেখানে ঘুরে আমার কাছে বেশ ভালই লেগেছিল। তাই ঢাকার কাছের পদ্মবিল দেখার একটি ইচ্ছা মনের ভেতর কাজ করছিলো।
তবে এত সকালে ঘুরতে বের হওয়ার খুব একটা ইচ্ছা আমার ছিল না। কিন্তু কিছুই করার নেই কারণ একদম সকালের দিকে পদ্ম ফুল গুলো ফুটে থাকে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সেগুলো নাকি গুটিয়ে যায়। যদিও এই ব্যাপারে আমার আগে থেকে তেমন কোন অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু পদ্মবিলে গিয়ে সেটা শুনতে পেয়েছি। যাই হোক একদম ভোর বেলায় সকলে ঘুম থেকে উঠে হালকা নাস্তা করে তৈরি হয়েছিলাম। এর ভেতর ড্রাইভার যথা সময়ে চলে আসলে আমরা সকলে রওনা দিলাম। জায়গাটি বনশ্রী থেকে প্রায় ২৫-৩০ কিলোমিটার দূরে।
শুক্রবার সকাল হওয়ায় রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাঁকাই ছিল। আমাদের গাড়ির যখন ৩০০ ফিটের রাস্তায় উঠল তখন আমরা সেখানকার রাস্তা দেখে কিছুটা অবাক হলাম। যদিও কিছুদিন আগে রাতের বেলায় ৩০০ ফিটের দিকে এসেছিলাম। কিন্তু রাত হওয়ায় তেমন কিছু একটা বুঝতে পারিনি। দিনের বেলাতে ৩০০ ফিটের দিকের রাস্তাঘাট দেখে মনে হল এটা উন্নত বিশ্বের কোন দেশের রাস্তাঘাট। যদিও সেখানকার রাস্তাঘাটের কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। এখনো চলমান। সকালবেলায় ফাঁকা রাস্তা ধরে আমাদের গাড়ি ছুটে চলছিল। তবে আমাদের কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছানোর রাস্তাটা ভালোভাবে জানা ছিল না। তাই গুগল ম্যাপ দেখে আগাতে লাগলাম। একটা সময় আমরা বুঝতে পারলাম পদ্মবিলের কাছাকাছি এসে পৌঁছেছি।
তারপর স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে শুনে শুনে আগাতে লাগলাম পদ্মবিলের দিকে। ইতিমধ্যে আমরা হাইওয়ে ছেড়ে গ্রামের রাস্তায় ঢুকে পড়েছি। সেখানে রাস্তাঘাটে ঢুকে শুরু হল এক নতুন বিপত্তি। সেখানকার রাস্তাঘাট একেবারেই চাপা। যার ফলে বিপরীত দিক থেকে কোন গাড়ি বা অন্য কোন যানবাহন এলে আমাদেরকে আগাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। সে যাই হোক এভাবে আস্তে আস্তে মানুষের কাছে শুনে শুনে আমরা পদ্মবিলের কাছাকাছি পৌঁছালাম। তারপর সেখানে পার্কিং এরিয়ায় গাড়ি রেখে আমরা হেঁটে পদ্ম বিলের দিকে আগাতে লাগলাম।
না হেটে অবশ্য উপায়ও ছিল না। কারণ সেই সরু রাস্তায় গাড়ি ঢুকলে অন্যান্য যানবাহন আর চলাচল করতে পারবে না। তাই আমরা হেটেই পদ্মবিলের দিকে এগিয়ে গেলাম। যদিও পার্কিং এরিয়া থেকে পদ্ম বিলের দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়। পদ্মবিলের কাছে পৌঁছে আমরা প্রথমে একটি টিকেট কাউন্টার থেকে টিকেট কাটলাম। তারপর কাউন্টারের পাশ দিয়ে একটি কাঠের তৈরি সেতুর উপর দিয়ে বিলের দিকে আগাতে লাগলাম। এগোতে এগোতে খেয়াল করে দেখলাম হাতের ডানে বেশ বড় এরিয়া নিয়ে পদ্মবিলের অবস্থান। সেখানে অসংখ্য পদ্মফুল ফুটে রয়েছে। যদিও এটিকে বিল বলা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে পানির গভীরতা দেখলাম খুবই কম। অবশ্য এবছর কোথাও তেমন পানির দেখা নেই। কারণ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এ সমস্ত অঞ্চলে পানি প্রবেশ করেনি।
তবে বিলে পানি না থাকলেও যেই প্রকল্পের ভেতরে পদ্মবিলের অবস্থান তাদের আয়োজন আমার কাছে বেশ ভালই লাগলো। কিছুদূর আগানোর পরেই আমরা দেখতে পেলাম একটি ছোট্ট রেস্তোরাঁ। যেখানে অনেকে সকালের নাস্তা করছে। আরো কিছুদূর আগানোর পর দেখতে পেলাম একটি পিকনিক স্পট। যেখানে অনেক মানুষ এসেছে সময় কাটানোর জন্য। তবে খেয়াল করে দেখলাম সবাই এসেছে গ্রুপ সহকারে। কেউ এসেছে পরিবার পরিজন নিয়ে আবার কেউ এসেছে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে। (চলবে)
আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে এই ভ্রমণের দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | পদ্মবিল, ঢাকা |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
পদ্ম বিলের নাম শুনিনি তো,৩০০ ফিট আমাদের বাসা থেকে মোটামুটি কাছাকাছি। যাই আপনার কাছে জানতে পারলাম।ছবি এবং আপনার পোস্ট পড়ে মনে হচ্ছে, বেশ সুন্দর হবে।তবে এটা ঠিক ৩০০ ফিটের ঐ দিকে রাস্তা গুলো বেশ সুন্দর। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।ধন্যবাদ
ভাইয়া আপনার ছুটির দিনে ঘুরে বেড়ানোর কথাগুলো পড়ে বুঝতে পারলাম আপনি ছুটির দিনে অনেক সুন্দর জায়গায় ঘুরেছেন এবং আনন্দ উপভোগ করেছেন। সরু রাস্তা দিয়ে পদ্ম বিলে হেঁটে যাওয়ার মুহূর্তটুকু নিশ্চয়ই খুবই আনন্দের ছিল। পদ্ম ফুল গুলো দেখতে অসাধারণ সুন্দর লাগছে। এমন সুন্দর এবং মনোরম পরিবেশে ঘুরে বেড়ানোর মুহূর্তটুকু'র মজাই আলাদা। অনেক সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ঢাকার মধ্যে এতো সুন্দর জায়গা আছে আর সেই জায়গার নাম জানা ছিল না।খুব দ্রুত ঘুরে আসবো ইনশাআল্লাহ। জায়গাটা অনেক খোলামেলা এবং নিরিবিলি মনে হচ্ছে।300 ফিটের রাস্তা দিয়ে গেলে মনে হয়না এটা ঢাকা শহর। মনে হয় বাহিরে রাস্তা। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে সুন্দর একটি জায়গা পরিচয় করে দেওয়ার জন্য।
ঢাকার পাশেই এত সুন্দর একটি পদ্মবিল আছে আগে তো জানতাম না। এলাকাটির অনেক সুন্দর। এবার আমি আসলে একসাথে ঘুরতে যাব কিন্তু ভাই।
ঘুরা ঘুরি করতে কেনা ভালোবাসে ৷ আমিও ভ্রমন প্রেমিক একজন মানুষ ৷ ঘুরা ঘুরি করতে আমার অনেক ভালো লাগে ৷ আপনার শুক্রবার ছুটির দিনটি সকাল বেলায় ঢাকার বিভিন্ন জনপ্রিয় জায়গা ঘুরেছেন এটা দেখে সত্যিই অনেক ভালো লাগলো ৷ পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য দেখার জন্য সকাল বেলা ঘুরতে বের হয়েছেন ব্যপারটা সত্যিই দারুণ ৷
আপনার অভিজ্ঞতা পড়ে ভালো লাগলো। বেশ মনোরম ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি জায়গা। পদ্মের ধর্ম ওটাই দাদা আলো বাড়লেই গুটিয়ে যায়।
গুগল ম্যাপ এর ব্যবহারের কারণে আজকাল সব জায়গাতে যাওয়া অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে ।কোথাও ঘুরতে গেলে আর কোন প্রকার অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় না। আপনার পদ্ম বিলে ঘুরতে যাওয়ার ঘটনাটি বেশ সুন্দর ছিল, দাদা। আপনার আজকের ব্লগ টি দেখে আমার কৈশোরে কাটানো গ্রামের অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল। আমরা নৌকা নিয়ে দল বেঁধে আমাদের গ্রাম থেকে অনেক কিলোমিটার দূরে চলে যেতাম পদ্মবিলে। সেই পদ্মবিল ছিল দুই থেকে তিন কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে। বর্ষার সময় সাধারণত আমরা যেতাম বর্ষার অথৈ জলে ফুটে থাকা পদ্ম গুলো দেখতে অসাধারণ লাগতো। যদিও আমাদের কৈশোরে টিকিট কেটে পদ্মফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হয়নি ।
ভাইয়া আপনি ঘুরতে খুব পছন্দ করেন সেটা আপনার আগের পোস্ট গুলো দেখে আমি জেনেছি। ৩০০ ফিট রোড এর ওইদিকে অনেক বার ঘুরতে গিয়েছি কিন্তু ওই জায়গাটায় কখনো যাওয়া হয়নি। আসলে এ বছর বৃষ্টিপাত একটু কম হওয়ার কারণে জলাশয়গুলোতে ওইভাবে পানি হয়নি।যাই হোক কোনো একদিন সময় করে পদ্মবিল গিয়ে ঘুরে আসব।
আমাদের বাংলাদেশেও অপরূপ দৃশ্যের নীলাভূমি। পদ্মবিনের অপরূপ দৃশ্য দেখলাম। দেখে একেবারে অভিভূত হচ্ছি। অসাধারণ ফটোগ্রাফি হয়েছে আপনার। আগামী পর্ব দেখার অপেক্ষায় রইলাম। আপনার জন্য শুভকামনা রইল।