দেশের রাজধানী নিয়ে এলোমেলো কিছু ভাবনা।

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


প্রায় এক মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে আমি ঢাকা এসেছি। আসার কয়েক দিন পর থেকেই সেই যে ব্যস্ততা শুরু হয়েছে তা শেষ হওয়ার কোন লক্ষণ দেখছি না। জানিনা আর কতদিন এই ব্যস্ততার মধ্যে কাটাতে হবে। প্রতিদিন সকালে উঠে বাইরে যেতে হয় আর বিকাল বেলায় বাসায় ফিরি। প্রচন্ড গরমের ভেতর মারাত্মক ক্লান্ত লাগে যখন বাসায় ফিরি। অন্যান্য দিনের মতো আজও বাসায় ফিরতে ফিরতে বিকাল হয়ে গিয়েছিলো।

Polish_20221001_194254982.jpg

বাসায় ফিরে খাওয়া দাওয়া করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। এর ভেতরে আমার ভাগ্নে বলল চলো মামা ছাদ থেকে ঘুরে আসি। আমিও চিন্তা করলাম অনেকদিন হলো ছাদে যাওয়া হয় না। এই বাসার ছাদটা বেশ সুন্দর। তাই আমিও ভাগ্নের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলাম। তারপর মামা ভাগ্নে দুজনে ছাদে গেলাম। কিন্তু ছাদে যতক্ষণ পৌঁছলাম ইতিমধ্যেই প্রায় সন্ধ্যা হয় হয় অবস্থা। আফসোস হচ্ছিল আর কিছুক্ষণ আগে আসলে ভালো হতো। এই ছাদ থেকে বেশ অনেকটা দূর পর্যন্ত দেখা যায়। যদিও দেখার মত তেমন কোনো দৃশ্য সেখানে নেই। চারপাশে শুধু কংক্রিটের জঙ্গল। একটার গায়ে লেগে থাকা আর একটা বিল্ডিং।

এর ভেতরে যেটুকু ফাঁকা জায়গা ছিলো সেখানেও প্রতিদিন নিত্য নতুন বিল্ডিং গড়ে উঠছে। ছাদে দাঁড়িয়ে যখন চারপাশটা দেখছিলাম তখন কেমন যেন হাঁসফাঁস লাগছিল চারপাশটা দেখে। মনে হচ্ছিল এই শহরের মানুষের দুদন্ড অবসর কাটানোর জায়গা কোথায়? একটি ইঞ্চি জায়গাও ফাঁকা নেই। অথচ এই শহরে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ বসবাস করে। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য নেই কোন নির্মল পরিবেশ যুক্ত পার্ক। দুই একটা পুরাতন পার্ক যাও আছে সেগুলোর অবস্থাও বেশ সংগীন। শহরে প্রতিনিয়তই ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল আরো বিভিন্ন রকমের মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে। কিন্তু শহরের মানুষের নিঃশ্বাস নেয়ার কোনো ব্যবস্থা তারা রাখছে না।

একটা সময় ঢাকা শহরে প্রচুর গাছপালা ছিল। কিন্তু আশির দশকের পর থেকে সেই যে গাছপালার পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। সেটা এখন প্রায় এসে শূন্যের কোঠায় দাঁড়িয়েছে। এই জন্য এই শহরটা বারো মাসে গরম হয়ে থাকে। শহরের জলাশয় গুলো ভূমি দস্যুরা সব দখল করে নিয়েছে। যার ফলে শহরের ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার রিচার্জ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে এই শহরের পানির লেয়ার দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। অনেক বিশেষজ্ঞ এটা নিয়েও খুব চিন্তিত। একটা সময় ঢাকা শহর জুড়ে অনেক খাল বিল ছিলো। কিন্তু এখন সেগুলো বিলুপ্তপ্রায়। যাও দু-চারটে টিকে আছে। সেগুলিকেও ভূমিদস্যদের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হচ্ছে।

অথচ এখন সেই খাল গুলো থাকলে ঢাকা শহরের মানুষের যাতায়াতের জন্য কত সুবিধা হতো। সবাইকে আর দীর্ঘ সময় ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকতে হতো না। যেমন হাতিরঝিলের ওয়াটার বাসগুলোর মাধ্যমে মানুষজন খুব সহজেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারছে। পুরো ঢাকা শহর জুড়ে যদি এই অবস্থা গড়ে তোলা যেত তাহলে ঢাকা শহরের রাস্তার উপর চাপ অনেকটা কমে যেতো। ছাদে দাঁড়িয়ে চারপাশ দেখছিলাম আর এসব ভাবছিলাম। দেশের রাজধানীর এমন করুণ দশা দেখে খুবই হতাশ লাগে।

যদিও আমি জানি আমার এই চিন্তা ভাবনার কারণে কোন পরিবর্তন আসবে না। কিন্তু তারপরেও মনে একটি ক্ষীণ বিশ্বাস কাজ করে। হয়তো আমার মত আরো অনেকেই এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। হয়তো একসময় এই চিন্তা ভাবনা থেকেই পরিবর্তনের শুরুটা হবে। তবে দেশের যে সমস্ত কর্তা ব্যক্তিদের মাথায় এই চিন্তা ভাবনা আসলে মানুষের অবস্থার উন্নতি হতো। তারা কি আদৌ এগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন?

সম্ভবত না। কারণ যদি তারা এই ব্যাপারগুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতো। তাহলে সমাধানের জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতো। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই সমস্যাগুলো সমাধানের ব্যাপারে তেমন জোরালো পদক্ষেপ দেখতে পায়নি। মাঝে মাঝেই শুধু প্রচারের জন্য কিছু ভালো ভালো কথা বলা হয় এই সমস্যাগুলো নিয়ে। কিন্তু সমস্যাগুলো সমাধানে যে আন্তরিকতার অভাব রয়েছে সেগুলো তাদের কাজ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়।


logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  

@tipu curate

;) Holisss...

--
This is a manual curation from the @tipU Curation Project.

 2 years ago 

ভাইয়া আপনি এটা একেবারে ঠিক বলেছেন মাঝে মাঝে প্রচারণার জন্যই কিছু কিছু ভাল কথা এবং উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু কাজের বেলায় ঘোড়ার ডিম। ফাঁকা থাকবে কোথায় ভাইয়া সামান্য একটু জায়গা খালি থাকলে মানুষ এখানে এক রুম হলেও উঠিয়ে বসে থাকে। শহরের বাচ্চারা এজন্যই নেট দুনিয়ার প্রতি বেশি আসক্ত থাকে। কারণ তাদের হেঁটে চলা বাইরে খেলাধুলার করার কোন জায়গা থাকে না।

একদম ঠিক বলেছেন। ঢাকা শহরের বাচ্চাদেরকে দেখলে খুবই খারাপ লাগে। সবাই ঘর কুনো হয়ে গিয়েছে। কারণ তাদের বাইরে হাঁটা চলার বা খেলাধুলার কোন জায়গা নেই।

 2 years ago 

আসলে ভাইয়া দিন দিন জনসংখ্যা যতই বাড়ছে ততই এসব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে মানুষ। আশির দশকের পর থেকে ঢাকার এমন দুর্দশা শুরু হয়েছে। সেজন্যই আমার কাছে গ্রাম ভালো লাগে শহরে এত বড় বড় দালানের মাঝে যেন দম বন্ধ হয়ে আসে। এত ফ্লাইওভার এত ওভারভি ব্রিজ তবুও যেন স্বস্তি মেলেনা। যতদিন যাচ্ছে ততই মানুষ সংকটাপন্ন হচ্ছে।

আমারও এত কোলাহলপূর্ণ জায়গা ভালো লাগেনা। এর থেকে নিরিবিলি গ্রামীন পরিবেশ আমার অনেক পছন্দ।

 2 years ago 

আপনাদের ছাদে ওঠার পারমিশন আছে।আমাদের তাও নেই।পেটের দায়ে ঢাকা থাকা।আপনার চিন্তা গুলো অনেক সুন্দর ও ন্যায় সঙ্গত।তবে বাস মালিক সিন্ডিকেট কখনোই এটা চালু করতে দেবে না।তবে আমি চাই দেশে পরিবর্তন আসুক।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর আইডিয়া গুলো শেয়ার করার জন্য।

এই সিন্ডিকেট হচ্ছে জনদুর্ভোগের অন্যতম কারণ। পুরো দেশটা বিভিন্ন সিন্ডিকেটের কাছে বন্দী।

 2 years ago 

আসলে ভয় ঢাকা শহর অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে ঢাকা শহরের দিনদিন মানুষ যেন বাড়তেই আছে। আর মানুষ বেশি বসবাস করার কারণে শহরটা যেন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। তার পরেও মানুষ কর্মের তাগিদে ঢাকা শহরে আসছে। ঢাকা শহরে পরিবেশে অবস্থা উন্নত করার পরিকল্পনা থাকলেও তা হচ্ছে না। মানুষের বসবাস বেশি যার কারণে নোংরা হয়ে যাচ্ছে ঢাকা শহরের পরিবেশ।

যতই উন্নত করার পরিকল্পনা করুক কোন লাভ হবে না। ঢাকা শহরকে বাঁচাতে হলে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হতে হবে। তা ছাড়া কোন সুযোগ নেই।

 2 years ago 

আসলে ভাই ঢাকা শহরে দিন দিন যেন মানুষ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। গাছপালা কেটে শুধু বিল্ডিং আর বিল্ডিং কোথাও একটুও ফাঁকা জায়গা নেই। আর এই ঢাকা শহর আগের চাইতে এখন অনেক ব্যস্ত এবং নোংরা শহর হয়ে গেছে। আপনার পোস্টটি পড়ে ভালো লাগলো।

ঢাকা শহরের এখন অন্তিম সময় চলছে। এখনই যদি কোন কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়া হয়। তাহলে অচিরেই এই শহর মানুষ বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে যাবে।

 2 years ago 

জনসংখ্যা বাড়লে শহর পাল্টাবেই। স্বাভাবিক এটা।

কিন্তু সেই স্বাভাবিকতা মোটেই বেশিদিন থাকবে না। ক্রমাগত জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে সেটা একসময় অস্বাভাবিকতা তৈরি করবেই।

 2 years ago 

সম্পূর্ণ রকমের অপরিকল্পিত একটা নগরী হচ্ছে ঢাকা। মনে হয় শুধু একটু খাওয়া আর একটু ঘুমোতে পারলেই মানুষের জীবন চলে যায় এই শহরে। কিন্তু এসবের বাইরেও তৃপ্তিবোধ বলে যে একটা ব্যাপার আছে সেটা বোধ করার মত সময় কই এই শহরের মানুষের! আপনার সাথে আমিও একমত ভাই। আমি আর আপনি বা আমরা চেয়েও কোন লাভ নেই যদি না সরকারের সদিচ্ছা থাকে এই সমস্যা সমাধানের। আমি এখনো বিশ্বাস করি প্রশাসন এবং সরকার একসাথে কাজ করলে ঢাকা শহরের অনেক সমস্যাই সমাধান করা সম্ভব।

একদম ঠিক বলেছেন। কিন্তু কর্তা ব্যক্তিরা এই শহরের ভালো চাইবেন কেন? খোঁজ নিয়ে দেখুন দেশের সমস্ত বিত্তবান এবং রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সন্তানেরা দেশের বাইরে থাকেন। যার ফলে তাদের এদেশ নিয়ে চিন্তা না করলেও চলে। যদিও দেশ নিয়ে চিন্তা করার দায়িত্বটা আমরা তাদের কাছেই দিয়ে রেখেছি।

 2 years ago 

সত্যি ভাই, আপনি ঢাকা শহরের বাস্তব চিত্র নিয়ে আলোকপাত করেছেন। ঢাকা শহরে বিল্ডিং এর উপরে বিল্ডিং উঠতেই আছে। বিভিন্ন কলকারখানা অসংখ্য যান চলাচল ঢাকা শহরের পরিবেশ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। সাধারণ মানুষের খোলা আকাশের নিচে মুক্ত বাতাস নেয়ার মত কোথাও কোনো পরিবেশ নেই। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

ঢাকা শহরের মানুষের জীবনটা আসলে আর মানুষের মত নেই। প্রাণহীন রোবটের মত হয়ে গিয়েছে। পুরো শহরটা ধূসর রং ধারণ করেছে। সবুজের লেশমাত্র নেই শহরে।

Coin Marketplace

STEEM 0.22
TRX 0.27
JST 0.041
BTC 104893.66
ETH 3859.77
SBD 3.29