সমুদ্র দর্শন এর উদ্দেশ্যে কুয়াকাটা ভ্রমণ (দ্বিতীয় পর্ব)। ১০% সাই-ফক্স।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


প্রথম পর্বের লিংক

হোটেলের রুম পেয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। কারণ এই রাতে আর আমাকে পরিবার নিয়ে হোটেল খুঁজতে বের হতে হবে না। লাগেজ নিয়ে রুমে ঢুকে ফ্রেস হয়ে নিলাম। দীর্ঘ যাত্রার ফলে বেশ ক্লান্ত ছিলাম। যার ফলে চিন্তা করছিলাম ভালো একটা ঘুম দিতে হবে। তারপর সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে সমুদ্রসৈকতে যাবো। কেবল বিছানায় শুতে গিয়েছি। এর ভিতর হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে গেলো।

IMG_20220601_123325.jpg

আশা করেছিলাম যে হোটেলের জেনারেটর চালু হয়ে যাবে। কিন্তু জানা গেল যে তাদের জেনারেটরে কিছু সমস্যা হয়েছে। প্রথমে মনে করেছিলাম হয়তো কিছুক্ষণের ভিতর বিদ্যুৎ চলে আসবে। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ হয়ে যায় আর বিদ্যুৎ আসে না। এর ভেতর প্রচন্ড ঘুম পেয়েছে কিন্তু ঘুমাতে পারছিনা গরমের কারনে। বাইরে তাকিয়ে দেখি ততক্ষণে বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে এবং আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। দৃশ্যটা দেখেই মন খারাপ হয়ে গেলো। আকাশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল এই অবস্থা মনে হয় আগামী দুতিন দিনে ঠিক হবে না। আবহাওয়া মনে হয় এমনই থাকবে।

IMG_20220601_182038.jpg

সেই যে বৃষ্টি শুরু হলো সকাল থেকে সেই বৃষ্টি চলেছিলো দুপুর অবধি। যাইহোক বেশ কিছুক্ষণ পর বিদ্যুৎ এলে আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠতে উঠতে বেলা প্রায় এগারোটা বেজে গেলো। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখি বাইরে তখনো বৃষ্টি হচ্ছে। তখন মাথায় একটা চিন্তায় কাজ করছিলো যে পুরো ট্যুরটা না ভেস্তে যায়। এদিকে অনেক আমাদের সকলেরই অনেক ক্ষুধা লেগেছে। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমি একটি তোয়ালে মাথায় দিয়ে বাইরে গেলাম নাস্তা আনতে। নাস্তা নিয়ে রুমে ফিরে এলাম। এই বৃষ্টির ভেতর আর ওদেরকে বাইরে নেইনি।

IMG_20220601_123414.jpg

নাস্তা করে আমরা রুমে বসে বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করতে লাগলাম। অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে একসময় আমি তোয়ালে মাথায় দিয়ে সৈকতের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আমি মনে করেছিলাম এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার ভেতরে সমুদ্রসৈকতে তেমন কোনো মানুষের দেখা পাবোনা। কিন্তু সেখানে পৌছে আমি হতবাক। প্রচুর মানুষ এই বৃষ্টির ভিতর সমুদ্রে গোসল করছে। এই দৃশ্য দেখে আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। আমিও এই বৃষ্টির ভিতর দীর্ঘক্ষণ সমুদ্রে পা ভিজিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।

IMG_20220606_141501.jpg

আরেকটি জিনিস আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। আমি অনেক বছর আগে একবার এই কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে এসেছিলাম। তখন এখানে শুধু ফাঁকা একটি সৈকত ছিলো। তা ছাড়া আর কিছুই ছিলো না। এখন এই সৈকতকে কেন্দ্র করে এই জায়গাটা একটি জমজমাট জায়গায় পরিণত হয়েছে। এখানে পর্যটকদের বসার জন্য সুন্দর ব্যবস্থা হয়েছে। সাথে আরো নানারকম আয়োজন সেখানে দেখতে পেলাম। এই বিষয়টি আমার কাছে ভালো লেগেছে। একটা সময় শুনেছি এই কুয়াকাটায় আসতে হলে সাত থেকে আটটি ফেরি পার হতে হতো। এখন আর কোনো ফেরি পার হতে হয় না। যার ফলে আসা যাওয়ার সময় অনেকটাই কমে গিয়েছে। এইজন্য এখন পর্যটকদের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে এখানে।

IMG_20220601_171126.jpg

এদিকে আমার স্ত্রী এবং কন্যা দুজনই হোটেলে মন খারাপ করে বসে আছে। কিন্তু কোন উপায় নেই। তাদেরকে এই বৃষ্টির ভিতর ভিজতে না দেয়ার কারন আমার মেয়ের ঠান্ডার খুব সমস্যা। বৃষ্টির পানি মাথায় লাগলে তার এই সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। এজন্যই বাড়তি সতর্কতা। বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে হোটেলে ফিরে এলাম। তারপর ওদেরকে বললাম চলো আমরা এর ভেতর সমুদ্র সৈকত থেকে ঘুরে আসি। ইতিমধ্যে অবশ্য বৃষ্টি অনেকটা কমে এসেছে। একটি তোয়ালে দিয়ে মেয়ের মাথা ঢেকে আমরা সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।

IMG_20220601_182108.jpg

সেখানে পৌছে আমার মেয়ের উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। এই দৃশ্যটা দেখার জন্য আমার এত দূর আসা। অন্য সকলের গোসল করা দেখে তারাও গোসলের ইচ্ছা প্রকাশ করলো। প্রথমে আমি নিষেধ করলেও পরে তাদের ইচ্ছায় আর বাধা দিতে পারিনি। সকলে মিলে সমুদ্রের জলে গা ভেজালাম। সমুদ্রে নামলে একটি সমস্যা হয় আমার। সেটি হচ্ছে সহজে সেখান থেকে উঠতে ইচ্ছা করে না।

IMG_20220601_174657.jpg

আমরা সেদিন গোসল করতে করতে বেলা প্রায় তিনটা বেজে গেলো। গোসল সেরে তারপর আমরা হোটেল রুমে ফিরে গেলাম। আমাদের হোটেল থেকে সৈকত এর দূরত্ব মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ। যার ফলে হোটেল থেকে সৈকতে যাওয়া আসা করতে আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি। অবশ্য সৈকতের আশেপাশেও দেখলাম অনেকগুলো হোটেল আছে। আগে থেকে জানলে হয়তো এই হোটেলগুলোতেই উঠতে পারতাম।

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে এই ভ্রমণের তৃতীয় পর্ব নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানকুয়াকাটা

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

২০২০ স্যারের কথা কনফারেন্সে বরিশাল গিয়েছিলাম খুব ইচ্ছা ছিল কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত দেখতে যাব
সে উদ্দেশ্যেই সকালবেলা বাস থেকে না নেমে সরাসরি পটুয়াখালী যাওয়ার নিয়ত করি। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে জানতে পারলাম ঘূর্ণিঝড়ের কথা তারপর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সরাসরি হোটেলে চলে যাই। তারপর দুপুর থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি তিনদিন ছিলাম ওখানে ভয় ও উৎকন্ঠা নিয়ে। আমি উত্তরবঙ্গের লোক এত কাছে থেকে কখনো ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায করিনি তাই আমার ভয় টা একটু বেশি। যাইহোক ভাইয়া অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত সমুদ্রে গোসল করতে পেরেছেন এটা জেনে খুব ভালো লাগলো। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যের বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবে না। সেটা আপনার ফটোগ্রাফি দেখেই বুঝতে পারছি। ফটোগ্রাফি গুলো শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

ওয়েদার ফোরকাস্ট চেক করে সময় করে একবার ঘুরে আসুন কুয়াকাটা থেকে। বেশ ভালো লাগবে।

 2 years ago 

এবার যেহেতু অভিজ্ঞতা হয়েই গেলো সেহেতু পরবর্তীতে পাশের হোটেল গুলোতে উঠতে পারবেন।কতোদিন ঘুরতে যাওয়া হয়না!

 2 years ago 

যে হোটেলটাতে উঠতে চেয়েছিলাম। যখন বিচে বসেছিলাম হঠাৎ করে পেছন দিকে তাকিয়ে দেখি বিচের খুব কাছেই হোটেলটি। তখন একটু আফসোস হয়েছিলো।

 2 years ago (edited)

ছবিগুলো বেশ সুন্দর ছিলো।আসলেই ট্যাুরে একটু আকটু ঝামেলা না হলে , মনে থাকে না।একটা সময় এগুলো মনে পরে বেশ হাসি পাবে।ভালো ছিলো।আপনার লেখাগুলি পড়ে আমার ও যেতে ইচ্ছে করছে।ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

সুযোগ পেলে ঘুরে আসুন কুয়াকাটা থেকে। কথা দিচ্ছি ভালো লাগবে।

 2 years ago 

অফ-সিজনে গেলে এই একটা সমস্যা। তখন হোটেলগুলোর সার্ভিস খুব একটা ভালো থাকে না। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে জেনে ভালো লাগলো। ট্যুরে গিয়ে এমন বৃষ্টি শুরু হলে আসলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। দেখা যাক আমিও যাব কোনদিন

 2 years ago 

অফ সিজনে যাওয়ার সুবিধাও আছে।

 2 years ago 

কুয়াকাটা ঘুরতে গিয়েছেন শুনে প্রথমে বেশ ভালো লেগেছে। তার সাথে একটু খারাপ লাগলো আপনাদের হোটেলের জেনারেটরে সমস্যা শুনে। এরপরে আবার ঘুরতে গিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। বৃষ্টির জন্য ঘুরতে গিয়ে আপু এবং আপনার মেয়ে বেরোতে পারল না এই বিষয়টা তো আরো বেশি খারাপ লাগার। আসলে ঘুরতে গিয়ে বের হয়ে মজা না করলে কি হয়। এমনিতে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত দেখতে অনেক সুন্দর। নিশ্চয়ই পরবর্তীতে আরো সুন্দর সুন্দর বিষয় গুলো শেয়ার করবেন।

 2 years ago 

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের যখন আমি প্রথমবার যাই তখন আমার কাছে মোটেই ভাল লাগেনি। তবে এবার দেখলাম অনেক পরিবর্তন এসেছে।

 2 years ago 

মাঝে মাঝে ভ্রর্মন করা আসলে ভাই খুবই ভালো। আর এসব সমুদ্রসৈকতে গেলে তো আরো বেশি ভালো লাগে। তবে আপনি গিয়ে আপনার মন মত ঘুরতে পারছেন না এটা শুনে খুবই খারাপ লাগলো বৃষ্টির জন্য আপনার খুবই সমস্যা হচ্ছে। তবে দোয়া রইল যেন আর যে কদিন আছেন বৃষ্টি যেন না থাকে খুব ইচ্ছা মত কেন ঘুরতে ফিরতে পারেন। আর সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছেন খুব ভালো লাগলো।

 2 years ago 

প্রথম দিনের পরে আর বৃষ্টি হয়নি।

 2 years ago 

ভাইয়া আপনি সমুদ্রের সাথে কাটানো সময় গুলো অনেক সুন্দর ভাবে আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। সমুদ্র এমন একটি জায়গা যেখানে গেলে আর ফিরে আসতে মন চায় না। আপনি যে সময়গুলো কাটিয়েছেন সেখানে বৃষ্টি হওয়াতে হয়তো আপনার স্ত্রী এবং মেয়ের মন খারাপ হয়ে গেছে। মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। যাই হোক অনেক সুন্দর সময় কাটানোর জন্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন। আমার কাছে এমনটাই মনে হয়। সহজে সেখান থেকে ফিরতে মন চায় না।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 57343.17
ETH 2341.96
USDT 1.00
SBD 2.35