সমুদ্র দর্শনের উদ্দেশ্যে কুয়াকাটা ভ্রমণ (প্রথম পর্ব)। ১০% সাই-ফক্স।
বেশ কিছুদিন থেকেই দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে ইচ্ছা করছিলো পরিবারের সবাইকে নিয়ে। অবশ্য পরিবার বলতে আমরা আছি তিনজন। আমি, আমার স্ত্রী এবং আমাদের মেয়ে। পরিবারের বাকি সদস্যরা সবাই বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আমার মেয়ে অনেক দিন ধরে বলছিল তার সমুদ্র দেখার খুব শখ। স্ত্রীও ঘুরতে যেতে চাচ্ছিলো অনেকদিন থেকেই। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে সেটা আর হয়ে উঠছিল না। এবার সমস্ত বাধা বিপত্তি কাটিয়ে দুজনের যৌথ উদ্যোগে একটি টুর দিয়ে দিলাম।
আমরা আগে থেকে চিন্তা করছিলাম কোথায় যাওয়া যায়? কাছাকাছি কোথাও হলে ভালো হয়। সেই চিন্তা থেকেই আমরা ঠিক করলাম কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এ যাবো। কারণ এই জায়গাটা আমাদের এলাকা থেকে কিছুটা কাছে হবে। আর দ্বিতীয়ত আমার মেয়ের সমুদ্র দেখার খুব ইচ্ছা। সেই কারণেই মূলত কুয়াকাটা যাওয়ার পরিকল্পনা করলাম। শুধু পরিকল্পনা করলেই তো হবে না। সেটা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে কোথাও যেতে হলে সেখানকার সবকিছু সম্বন্ধে ভালো কিছু জেনে নেয়া উচিৎ। আর এখন সমস্ত তথ্য তো আমাদের হাতের মুঠোয়। আমি আর আমার স্ত্রী দুজন মিলে ইউটিউব থেকে বেশকিছু ট্রাভেল ব্লগ দেখে কুয়াকাটা সম্বন্ধে একটা ধারণা নিয়ে নিলাম। তারপর আমি আবার এক বন্ধু যে কিছুদিন আগে কুয়াকাটা থেকে ঘুরে এসেছে তার সাথে কিছু বিষয় নিয়ে পরামর্শ করলাম। তারপর মোটামুটি পরিকল্পনা ঠিক করলাম।
যেহেতু কমিউনিটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজের সাথে যুক্ত আছি। তাই এখান থেকে ছুটি নিয়ে নিজের কাজ কাউকে বুঝিয়ে দিয়ে তারপর যেতে হবে। তাই সিয়াম ভাইকে অনুরোধ করলাম কয়েকদিনের জন্য আমার কাজ দেখতে। তারপর দাদা এবং শুভ এর কাছ থেকে ছুটি নিয়ে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। অবশ্য আমার এবারের কুয়াকাটা ট্যুর এর পেছনে দাদার অবদান সবচেয়ে বেশি।
যাইহোক প্রথমে কুয়াকাটা যেতে হলে সেখানকার বাসের টিকেট কাটতে হবে। আমাদের এলাকা থেকে কুয়াকাটা যেতে হলে বাসই একমাত্র মাধ্যম। এবং সেই বাসগুলো রাতে ছাড়ে। আমি কুয়াকাটা যাওয়ার একদিন আগে টিকিট কেটে এনেছিলাম। যে দিন আমাদের রওনা হওয়ার কথা সে দিন বিকাল থেকে শুরু হলো বৃষ্টি। বৃষ্টি দেখে তো আমাদের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। কারণ ইতিমধ্যেই প্রায় বর্ষার সিজন চলে এসেছে। এখন আমরা সেখানে গিয়ে যদি বৃষ্টির ভিতর হোটেলে আটকা পড়ি তাহলে পুরো টুর টাই মাটি হয়ে যাবে। একবার চিন্তা করছিলাম টুর ক্যানসেল করবো কিনা। শেষ পর্যন্ত সাহস করে রওনা দিলাম। যখন বাসা থেকে বাস স্ট্যান্ড এর উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছি তখনো গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিলো।
আমাদের বাস ছিলো রাত দশটায়। আমরা সাড়ে নটার ভেতরে কাউন্টারে পৌঁছে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম বাস আসতে কিছুটা দেরি হবে। যার ফলে সেখানে আমাদেরকে দীর্ঘ এক ঘন্টা বসে থাকতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বাস আসলে আমরা আমাদের লাগেজ সমেত সেটাতে উঠে বসলাম। কুয়াকাটা পৌঁছাবে আমাদের ছয় থেকে সাত ঘন্টা লেগে যাবে। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আমরা খুব একটা খেয়ে বের হইনি। যার ফলে চিন্তা করেছিলাম হাইওয়েতে কোন ব্রেক দিলে। সেখানকার কোন রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু খেয়ে নিতে হবে। এই বাসে এর আগে কখনও জার্নি করিনি। যার ফলে মাথার ভিতরে একটা চিন্তা কাজ করছিলো রাতের বেলায় ড্রাইভার কিভাবে গাড়ি চালাবে। কারন ইদানীং প্রচুর এক্সিডেন্ট হচ্ছে চারদিকে। পরে খেয়াল করে দেখলাম ড্রাইভার বেশ সতর্কতার সাথে গাড়ি চালাচ্ছে।
আমরা প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর বরিশাল পৌছালাম। এখানে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ২০ মিনিটের ব্রেক দিলো।বাসের প্যাসেঞ্জার সবাই নেমে ফ্রেশ হয়ে হালকা খাওয়া-দাওয়া করলো। আমরাও সেখানে চিন্তা করছিলাম কি খাওয়া যায়। পরে সেখান থেকে খাওয়ার জন্য চিকেন বিরিয়ানি কিনেছিলাম। পরিকল্পনা করেছিলাম বাসে উঠে তারপর খাবো। কিন্তু বাসে ওঠার পর যখন চিকেন বিরিয়ানি খেতে গেলাম। তখন দেখলাম সেটার সাদ খুবই খারাপ। যার ফলে না খেয়ে বেশিরভাগটা ফেলে দিতে হয়েছে। যাই হোক শেষ পর্যন্ত রাত সাড়ে চারটার দিকে আমরা কুয়াকাটা পৌঁছলাম।
দীর্ঘ জার্নির এর ফলে শরীরটা বেশ ক্লান্ত লাগছিলো। আমরা কুয়াকাটা যাওয়ার আগে কোন হোটেল বুকিং করিনি। কারণ আগে থেকেই খোঁজ নিয়েছিলাম যে হোটেলগুলোতে পর্যাপ্ত রুম খালি আছে। আগে থেকেই হোটেল রুম বুকিং দিতে গেলে তারা বেশি ভাড়া চাইবে। এজন্য আগে থেকে রুম বুকিং করিনি। শুক্র-শনিবার বাদে অন্য যেকোনো দিন গেলে আপনারা খুব সহজেই হোটেলের রুম পেয়ে যাবেন। সেজন্য আমরা আগে থেকে বুকিং করিনি। কিন্তু সেখানে পৌঁছে একটি সমস্যায় পড়লাম।
আমরা যখন কুয়াকাটা পৌছালাম তখন বাজে রাত ৪ঃ৩০ টা। এতো রাতে অপরিচিত জায়গায় কোথায় হোটেল খুজতে যাবো? আমাদের বাসটি থেমেছে একটি হোটেলের সামনে। হোটেলটি বাইরে থেকে দেখতে বেশ সুন্দর ছিলো। সেখানকার স্টাফরা এসে আমাদেরকে বলল আপনারা আমাদের হোটেলে থাকতে পারেন। আপনারা রুমগুলি দেখেন যদি পছন্দ হয় তাহলে থাকবেন। পরে সেখানকার রুম দেখার পর আমাদের পছন্দ হয়ে গেলো। যার ফলে আমরা আর হোটেল না খুঁজে সেই হোটেলে উঠে গেলাম।
আজকের মতো এখানে শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে এই ভ্রমণ অভিজ্ঞতার দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
স্থান | কুয়াকাটা |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
ভাইয়া আপনি এমন এমন জায়গায় পোস্ট শেষ করেন,তারপর খালি জানতে ইচ্ছে করে পরে কি হলো হা হা।যাই হোক ছবিগুলো দেখে বেশ ভালো লাগলো।আমার কখন কুয়াকাটা যাওয়া হয় নি।ভালো লাগলো।ধন্যবাদ
সুযোগ পেলে কুয়াকাটা থেকে একবার ঘুরে আসুন। খুব ভালো লাগবে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পরে যখন বিচ চেয়ারগুলোতে বসে সমুদ্রের গর্জন শুনবেন। সে এক অসাধারণ অনুভূতি।
যাক ভাই অবশেষে কুয়াকাটা পৌঁছে গেলেন। খুব ভালো লাগলো কোন সমস্যা ছাড়াই পৌঁছে গেছেন অনেক অনেক শুকরিয়া আল্লাহর কাছে। আর আপনি বরিশাল নেমেছিলেন বরিশাল কিন্তু আমাদের বিভাগ আমাদের বাড়ি থেকে ২০-৩০ মিনিট লাগে। যদিও আমি বরিশালে নেই আমি এখন ঢাকায় আছি। ওখানে খুব ভালো সময় কাটান কুয়াকাটা এই দোয়া করি।
বরিশালে আমি অনেক আগে দু'বার গিয়েছিলাম। তবে এবার দেখলাম বেশ পরিবর্তন হয়েছে।
প্রথমেই আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই যে আপনি ভাবি ও আপনার মেয়েকে নিয়ে কুয়াকাটা দর্শনীয় গেছিলেন। পরিবারকে নিয়ে ঘুরতে গেলে এ বিষয়টি আমার বেশ ভালো লাগে। আপনি ভাবির ও আপনার মেয়ের ইচ্ছা পূরণ করেছেন। আমি নিজে কখনো সমুদ্র অঞ্চলে যায়নি কুয়াকাটা অবশ্য আমার অনেক ফ্রেন্ড গিয়েছে আমাকে অনেকবার যেতে বলেছিল কিন্তু আমি যায়নি। আপনি ঠিক বলেছেন আপনাদের ওই দিক থেকে কুয়াকাটা যাওয়া বেশ সহজ 6/7 ঘন্টার মধ্যেই আপনারা পৌঁছাইতে পারছেন। আরেকটি কথা আপনি ঠিকই বলেছেন হোটেল আগে বুকিং দেওয়ার ফলে অনেক ঝামেলার সৃষ্টি হয় ভালো রুম পাওয়া যায় না। যেহেতু পর্যাপ্ত রুম ছিল তাই গিয়েই রুম বুক দেওয়াটাই ভালো। যাইহোক আমি বেশ অল্প কিছুদিনের মধ্যেই একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল টুরে আপনাদের এলাকা তে যাচ্ছি। এটি হতে পারে বেনাপল বন্দর অথবা মংলা বন্দর। আপনার পরবর্তী ভ্রমণের কাহিনিগুলোর দিনে দিনে জানতে পারবো সেই অপেক্ষায় রইলাম।
তবে পরিবারের সাথে নিয়ে গেলে আগে থেকে হোটেল রুম বুক করলে কিছুটা ভালো হয়। যদি বন্ধু-বান্ধব মিলে যাওয়া যায়। তখন আর আগে থেকে হোটেল রুম না নিলেও চলে।
আমি এখনো কুয়াকাটা যায়নি,তবে যাবো ইনশাআল্লাহ। আপনার পোষ্ট পরে কিছুটা ধারনা হলো,পরের পর্ব গুলো পড়লে আশা করি অনেক ধারনা হবে। সুস্থ ভাবে ভ্রমন করেন সেই কামনা করি। ধন্যবাদ ভাইয়া।
পোস্টগুলি পড়তে থাকুন। শেষ পর্বে কুয়াকাটা ভ্রমণ এর সমস্ত খুঁটিনাটি শেয়ার করবো।
অভিজ্ঞতা তো শুনবোই। তবে অবশ্যই দ্বিতীয় পর্বে আরো বেশি করে ছবি চাই কিন্তু ভাইয়া।
এবার আসলে ছবি খুব একটা তোলা হয়নি। সমুদ্রের সৌন্দর্য মুগ্ধ দৃষ্টিতে উপভোগ করছিলাম। ছবি তুলতে গেলে আসলে সৌন্দর্য উপভোগ করা হয় না।
খুব ভালো লাগলো দাদা, বেশ এক্সাইটমেন্ট হচ্ছে, আপনার জন্য আমিও কুয়াকাটা সৈকতটা ঘুরে দেখতে পারবো। ভ্রমণ পোস্ট গুলো পড়তে বেশ মজা লাগে দাদা। ভালো থাকুন। পরবর্তী পোস্টের অপেক্ষায় থাকলাম।
দীর্ঘক্ষন জার্নি করলে শরীর এমনিতেই ক্লান্ত হয়ে যায়, ভাইয়া। ভাইয়া, সাবধানে থাকবেন এবং নিজের শরীরের দিকে খেয়াল রাখবেন। ভাইয়া, আপনার কুয়াকাটা ভ্রমণ শুভ এবং সফল হোক।