শূন্য থেকে শিখড়ে (প্রথম পর্ব)।
ফরিদ মিয়া তপ্ত দুপুরে রাস্তার দিকে ফাঁকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। সে নিজের অতীতের কথা চিন্তা করছিল। কি চমৎকার ছিল তার শৈশব কৈশোর। গ্রামের অবস্থা পণ্য পরিবারের ছেলে ছিল সে। মাঠে তাদের প্রচুর জমি ছিল। সেই জমি থেকে অনেক ফসল পেতো তারা। গ্রামের ভেতর তাদের পরিবার বেশ সচ্ছল ছিল। সচ্ছল পরিবারের সন্তান হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই ফরিদ মিয়া আদর যত্নে বড় হয়েছে। বেশি আদর পাওয়ার কারণে পড়ালেখাটা খুব বেশি দূর আগায়নি তার।
ছোটবেলায় সে যখন যা চাইত তার বাবা তাকে সেটাই কিনে দিতো। খাওয়া দাওয়া কাপড় চোপড় কোন কিছুর অভাব ছিল না তাদের। এভাবে তাদের দিনকাল ভালোই চলছিল। হঠাৎ করে ফরিদ মিয়ার বাবার কি যেনো হল। দিনে দিনে সে বদলে যেতে থাকলো। যে মানুষটা আগে সারাদিন ধরে তাদের মাঠের ফসল দেখাশোনা করত সে হঠাৎ করে সমস্ত কাজকর্ম বন্ধ করে দিলো। কাজকর্ম বন্ধ করে রাত দিন জুয়ার আসরে পড়ে থাকতে লাগলো। দেখতে দেখতে কিছুদিনের ভেতর ফরিদ মিয়ার বাবা সব জমি বিক্রি করে ফেললো।
সচ্ছল পরিবার থেকে তারা অভাবী পরিবারের কাতারে চলে এলো। ফরিদ মিয়ার মা তার বাবাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছে। এই সর্বনাশা পথ থেকে ফেরানোর অনেক চেষ্টা করেছে সে। কিন্তু কোন কিছুতেই কাজ হয়নি। কিছুতেই ফরিদের বাবার হুঁশ ফেরেনি। যখন হুশ ফিরল তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ততদিনে জমি জমা সব বিক্রি করা হয়ে গিয়েছে। থাকার ভেতর রয়ে গিয়েছে শুধু তাদের বসত ভিটা টুকু। যতদিন ফরিদ মিয়ার বাবার কাছে পয়সা ছিল ততদিন তার বন্ধু-বান্ধবের অভাব ছিল না। কিন্তু যেই সে অভাবি ব্যক্তিতে পরিণত হলো তখন তাকে ছেড়ে সবাই চলে গেল।
সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পরে ফরিদ মিয়ার বাবার হুশ ফিরলো। সচ্ছল মানুষ থেকে অভাবী মানুষে পরিণত হয়ে ফরিদ মিয়ার বাবা চোখে মুখে অন্ধকার দেখতে লাগলো। একসময় যার বাড়িতে বেশ কিছু কৃষক কাজ করত। আজ তাকেই অন্যের জমিতে কৃষক হিসেবে কাজ করতে হয়। আর এলাকাবাসীর প্রতিনিয়ত নানা রকম কথা তো রয়েছেই। ফরিদ মিয়ার বাবা সব মুখ বুজে সহ্য করতে লাগলো। কারণ সে জানে ভুলটা তারই হয়েছে। সে মাঠে কাজ করে আর বিড়বিড় করে নিজেকে গালাগাল করে। কেন সে এই ধ্বংসের পথে পা বাড়িয়েছিল। সেই কথা চিন্তা করে তার আফসোসের সীমা থাকে না।
এভাবেই তাদের দিনকাল কাটছিল। এর ভেতরে ফরিদ মিয়া কৈশোর থেকে যৌবনে পা দিয়েছে। হঠাৎ করে তার বাবা একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ল। অসুস্থ হয়ে পড়লেও তার চিকিৎসা করানোর মত কোন ব্যবস্থা ফরিদ মিয়ার ছিল না। কারণ তখন অভাবের সংসার ফরিদ মিয়ার। বাবা মাঠে কাজ করে যা পেতো সেটা দিয়ে তাদের খাওয়া-দাওয়া চলত। কিন্তু তিনি ঘরে পড়ে যাওয়ায় এখন তাদেরকে রীতিমতো অনাহারে থাকতে হচ্ছিল। এই অবস্থা সহ্য করতে না পেরে ফরিদ নিজেই কাজ করতে শুরু করলো। শুধু যে তাকে সংসার চালাতে হবে তা নয়। সাথে তার বাবার চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতে হবে। আদরে যত্নে বড় হওয়ায় ফরিদ মিয়ার কাজ করার খুব একটা অভিজ্ঞতা ছিল না।
কিন্তু প্রয়োজন যখন দুয়ারে এসে দাঁড়ায় তখন আর অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। এভাবে কিছুদিন পার হওয়ার পর ফরিদ মিয়ার বাবা মারা গেল। তার বাবা মারা যাওয়ার কিছুদিন পর রোগে শোকে ফরিদ মিয়ার মাও মারা গেল। এদিকে তার দুই বড় ভাই ছিল। তারা আগেই শহরে চলে গিয়েছে কাজের উদ্দেশ্যে। বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর তারা আর বাড়ীর সাথে কোন যোগাযোগ করেনি। মা মারা যাওয়ার পর ফরিদ মিয়াও চিন্তা করতে লাগলো। সে এখন এখানে বসে থেকে কি করবে? (চলবে)
ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইস | হুয়াই নোভা 2i |
---|---|
ফটোগ্রাফার | @rupok |
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness
OR
এই জুয়ার জন্য মানুষের দিনে দিনে অপর্কম,সংসারে অভাব, অশান্তি লেগেই থাকে।আসলে এটা একটা লোভ,অতি লোভে যে তাঁতি নষ্ট হয়।যাই হোক
প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ কত কি করে।গল্পের বাকি অংশের অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ
জুয়া আসলেই সর্বনাশা। এই গল্পের মত বাংলাদেশের অসংখ্য পরিবার জুয়ার কারণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
আশা করি ইতিমধ্যে পরবর্তী পর্ব পড়েছেন।
স্বচ্ছল থেকে অস্বচ্ছল! মাঝখানে জোয়াখেলা দায়ী আমার মনে হচ্ছে। এখন ফরিদ মিয়া ঠিকই বুঝতে পারছে। মা মারা গেছে, এখন কেউ তাকে কাজ করার জন্যও বলবে না আবার জোয়া খেলতেও নিষেধ করবে না। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম,
আপনি সম্ভবত গল্পটা ভালোভাবে পড়েননি। ফরিদ মিয়া জুয়া খেলেনি। তার বাবা জুয়া খেলতো।
ঠিকই বলেছেন আসলেই অতি আদরে মানুষ বাঁদর হয়।