দ্বিতীয় জীবন (২য় পর্ব)। ১০% সাই-ফক্স।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


পূর্ববর্তী পর্বের লিংক

রাকিবের বাবা কিছুটা মন খারাপ করে রাকিবের কাছ থেকে চলে গেলো। প্রতিদিনকার মত সে জামা কাপড় ছেড়ে হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসলো। খাওয়ার টেবিলে রাকিবের মা কে বললো রাকিব পিকনিকে যেতে চায়। কিন্তু সেখানে ওকে পাঠাতে হলে অনেকগুলো টাকা লাগবে। এত টাকা আমি কিভাবে জোগাড় করবো? ছেলেটা এত করে যেতে চাইছে। কখনো তো আমি আমার সন্তানদের নিয়ে কোথা থেকে ঘুরে আসতে পারিনি। আজকাল সবাই দেখি পরিবার-পরিজন নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যায়।

Polish_20220614_194457548.jpg

রাকিবের মা তখন তাকে জানায় আমার কাছে হাজার খানেক টাকা জমানো আছে। তুমি আর ১০০০ টাকা দিও তাহলেই হয়ে যাবে। একথা শুনে রাকিবের বাবা খুবই খুশি হয়। সে জলদি খাওয়া শেষ করে গিয়ে দেখে রাকিব টেবিলে মন খারাপ করে বসে আছে।তখন সে রাকিবকে বলে তোমাকে যেতে দিতে পারি এক শর্তে। সেটা হচ্ছে তুমি পানিতে নামতে পারবে না। পাড়ে দাঁড়িয়ে সমুদ্র দেখবে। রাকিব বলে কিন্তু বাবা আমি তো সাঁতার জানি।

রাকিবের বাবা তখন তাকে বলে সমুদ্রে সাঁতার জানা তেমন কোনো কাজে দেয় না। সমুদ্রের পানি যখন তোমাকে টান দিয়ে নিয়ে যাবে তখন আর তুমি কিছুই করতে পারবে না। এইজন্য যদি তুমি আমাকে কথা দাও তুমি পানিতে নামবে না। তাহলে আমি তোমাকে যেতে দিতে পারি। এই কথা শুনে রাকিব খুশি হয়ে লাফ দিয়ে উঠে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। ছেলের এই খুশি দেখে তার বাবার চোখে পানি চলে এলো। তখন সে তার ছেলেকে জিজ্ঞেস করলো। কবে যাচ্ছ তোমরা পিকনিকে? রাকিব তখন বলল আগামী পরশু টাকা জমা দেয়ার শেষ দিন। তার দুদিন পরে আমরা পিকনিকে যাবো। রাকিবের বাবা তখন তাকে বলল ঠিক আছে তুমি আস্তে আস্তে গোছগাছ করতে থাকো।

রাকিব তো মহা খুশি। তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। সমুদ্র দেখা নিয়ে তার ভেতরে প্রচন্ড আগ্রহ কাজ করে। যখনই তার বন্ধুরা সমুদ্রের কাছ থেকে ঘুরে এসে গল্প করে। সে মন্ত্রমুগ্ধের মতো সেই গল্প শোনে। কিছুদিন আগেও তাদের ক্লাসের চারটে ছেলে কক্সবাজারে গিয়েছিলো। তাদের কাছ থেকে খরচের কথা শুনে রাকিব একদম জমে গিয়েছিলো। তারা জানিয়েছিল তাদের চারজনের প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল এই ট্যুরে।

রাকিব জানে তার পক্ষে কোনদিনও এত টাকা দিয়ে ঘুরতে যাওয়া সম্ভব না। তার পরেও সে তার বন্ধুদের কাছ থেকে তাদের কক্সবাজার ভ্রমণের সমস্ত খুঁটিনাটি খুব আগ্রহ নিয়ে শুনেছে। আজ সে নিজেই সেই বিশাল সমুদ্র দেখতে যেতে পারবে। উত্তেজনায় আর রাকিবের সেদিন ঘুম হচ্ছিল না।

পরদিন সকালে উঠে নাস্তা করে রাকিব কলেজে চলে গেলো। গিয়ে ওর সবচাইতে ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে বলল আমার টাকা জোগাড় হয়ে গিয়েছে। আমিও তোদের সাথে কুয়াকাটা যাচ্ছি। এই কথা শুনে রাকিবের বন্ধু সজল খুবই খুশি হলো। কারণ রাকিব হচ্ছে সজলের সবচাইতে ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সজল কদিন থেকে চিন্তা করছিলো যদি এই ট্যুরে রাকিব না যেতে পারে। তাহলে সে ও যাবে না। কারণ রাকিবকে ছাড়া কোথাও ঘুরতে গিয়ে তার ভালো লাগেনা।

যদিও ক্লাসে তার আরো কিছু বন্ধুবান্ধব আছে। কিন্তু তাদের কারো সাথেই রাকিবের মতো এতোটা ঘনিষ্ঠ নয় সে। তারা দুজন তাদের সমস্ত কথা শেয়ার করে। সজল জানে রাকিবের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। যার ফলে সে ধরেই রেখেছিল রাকিব এই পিকনিকে যেতে পারবেনা। কিন্তু এখন যখন সে রাকিবের কাছ থেকে শুনলে রাখিব পিকনিকে যাচ্ছে। তখন সেও অত্যন্ত খুশি হলো। দেখতে দেখতে তাদের পিকনিকে যাওয়ার দিন প্রায় চলে এলো। রাকিব ইতিমধ্যে টাকা জমা দিয়ে দিয়েছে।

রাকিবের মা রাকিবকে আরও কিছু বাড়তি টাকা দিয়েছে। কারণ রাকিব তার মাকে বলছিলো সবাই টুকিটাকি কিছু কেনাকাটা করছে ট্যুরে যাওয়ার জন্য। আবার সেখানে গিয়ে কিছু টাকা হাতখরচও প্রয়োজন। রাকিবের মা পাশের বাড়ির মহিলার কাছ থেকে আরও হাজার খানেক টাকা ধার করে এনে রাকিব কে দিয়েছে। রাকিব একদিকে যেমন খুশি হয়েছে তেমনি আবার এটাও চিন্তা করছে যে হঠাৎ করে বাবা-মাকে এত চাপে ফেলা ঠিক হলো না। (চলবে)


logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করার সুবাদে আমি রাকিবের বিষয়টি অনুধাবন করতে পারছি। যাক শেষ পর্যন্ত রাখিব যেতে পারছে এটাই বা কম কিসের। সকলের মতো এমন বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। কারণ রাকিব যেতে পারবেনা জেনে সেও না যাওয়ার পরিকল্পনা করছে। পিকনিকে কুয়াকাটা ভ্রমণ পরবর্তী পর্বে কি ঘটে সেটা জানার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

 2 years ago 

এরকমই হয়, বাবার ইচ্ছা থাকে আর মা সেই ইচ্ছা বাবার আগেই পূরণের জন্য 100% ভূমিকা পালন করে। অসাধারণ পর্ব নিয়ে রাকিবের ও অনেক ছাত্র-ছাত্রীর জীবনের বাস্তব ঘটনা শেয়ার করতেছেন। একসাথে অনেক জন শিক্ষকের সাথে কোন জায়গায় ভ্রমণের মজাটাই আলাদা। শিক্ষকরা অভিভাবক তারা দায়িত্ব নিয়ে সকলকে ডেকে দেওয়া এবং প্রয়োজনে বাধা দেওয়া সব মিলায় আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.031
BTC 60578.94
ETH 2625.05
USDT 1.00
SBD 2.54