সমুদ্র দর্শনের উদ্দেশ্যে কুয়াকাটা ভ্রমণ (তৃতীয় পর্ব)। ১০%সাই-ফক্স।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


পূর্ববর্তী পর্বের লিংক

সমুদ্রে দীর্ঘক্ষন ঝাপাঝাপির ফলে শরীরটা খুব ক্লান্ত লাগছিলো। তাই হোটেল রুমে ফিরে সবাই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। তখন আর মনে হচ্ছিল না যে আর কোথাও যাই। দেরিতে নাস্তা করার ফলে খাবার খাওয়ার খুব একটা তাড়া ছিলো না। কিন্তু যতই ক্লান্ত লাগুক বিকালে সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য দেখার একটা তাগিদ ছিলো মনের ভেতরে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম কিছুক্ষণ রুমে রেস্ট নিয়ে একবারে বিকালে রুম থেকে বের হবো। তাতে ক্লান্তিও কিছুটা কেটে যাবে। তখন সমুদ্রের সৌন্দর্য ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবো। যাইহোক ঘন্টাখানেক আমরা বিশ্রাম নিলাম। তারপর তৈরি হয়ে সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলাম।

IMG_20220601_182000.jpg

প্রথমে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম সৈকতে মানুষজনের চলাফেরা যেখানে বেশি। সেই এলাকাটা ঘুরেফিরে দেখবো। তারপর আশেপাশে আর কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায় সে ব্যাপারে খোঁজখবর নেবো। সেই উদ্দেশ্যে আমরা সমুদ্র সৈকতে গিয়ে পৌঁছলাম। পৌঁছে কোথায় কোথায় দর্শনীয় স্থান আছে সেগুলোর খোঁজ নিতে শুরু করলাম। অনেকেই দেখলাম মোটরসাইকেল ভাড়া নিয়ে সবগুলো দর্শনীয় ঘুরে দেখার জন্য বেরিয়ে পড়ছে।

IMG_20220601_173636.jpg

মূলত কুয়াকাটায় দর্শনীয় স্থানগুলি দেখার জন্য তিন ধরনের বাহন আছে। মোটর সাইকেল, ভ্যান এবং অটোরিকশা। যদিও আমি আগে থেকেই কিছুটা ধারণা নিয়ে রেখেছিলাম দর্শনীয় স্থান গুলোর ব্যাপারে। তার পরেও কয়েকজন মোটরসাইকেল চালকের সাথে কথাবার্তা বলে আরো পরিষ্কার একটা ধারণা নিলাম। আমরা সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম। সুবিশাল আদিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্রের সামনে নিজের ক্ষুদ্রতা অনুভব করেও একধরনের আনন্দ হচ্ছিলো।

IMG_20220601_173705.jpg

বেশ কিছুক্ষণ আমরা সমুদ্র সৈকতে হাটাহাটির পর একটি ইঞ্জিনচালিত ভ্যানে করে ঝাউবন দেখতে গেলাম। জায়গাটি সমুদ্র সৈকত এর মূল অংশটা থেকে খুব একটা দূরে নয়। কিন্তু সমুদ্রের পাড়ে যখন ভ্যানে করে আমরা সেখানে যাচ্ছিলাম তখনকার অনুভূতিটা ছিল অসাধারণ। আমরা ঝাউবনে পৌঁছে সেখানকার সৌন্দর্য উপভোগে ব্যস্ত ছিলাম। সাথে কিছু ছবিও তুলেছিলাম। ঝাউবনে পৌঁছে দেখতে পেলাম সেখানকার সমুদ্রসৈকতে অসংখ্য গাছের গুঁড়ি পড়ে আছে। এই উপরে পড়া গাছগুলি নাকি কোন এক ঝড়ের সাক্ষী। সেখানকার লোকজন জানালো আগে আরো অনেক দূর পর্যন্ত বন ছিলো। কিন্তু সিডড়ে সেই বনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সেই ক্ষতি এখন পর্যন্ত জায়গাটি কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

IMG_20220601_173631.jpg

সেখানে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আমরা আবার আগের জায়গায় ফিরে এলাম। একটি জিনিস খেয়াল করে দেখলাম কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের যেখানটায় মানুষ সবচাইতে বেশি সেই জায়গাটা সবচাইতে নোংরা। কিন্তু আশেপাশে সমুদ্র সৈকত গুলো একদম ঝকঝকে। হয়তো মানুষ না আসার কারণেই এই সৈকতগুলো এত ভালো রয়েছে। আমরা সেখান থেকে ফেরার সময় ভ্যানওয়ালার সাথে আলোচনা করছিলাম কিভাবে দর্শনীয় স্থানগুলি তে ঘুরতে যাওয়া যায়? কারণ আমাদের সাথে যেহেতু আমার মেয়ে আছে তাই মোটরসাইকেলে যেতে আমি ইচ্ছুক নই।

IMG_20220601_173628.jpg

তখন সে আমাদের আমাকে পরামর্শ দিল একটু বড় আকারের শক্তিশালী ইঞ্জিনের এক ধরনের ইঞ্জিন চালিত ভ্যান আছে। সেগুলো নিয়ে ঘুরতে যেতে। সেই ভ্যানগুলো সমুদ্র সৈকতে বালির ভেতরে চলাফেরা করতে পারে। যার ফলে আমরা যদি সেই ভ্যানে ঘুরতে যাই তাহলে কোন রকম সমস্যা হবে না। আমরা সমুদ্র সৈকতের আগের জায়গায় ফিরে গেলাম। যে ভ্যানে ঘুরতে যাওয়ার পরামর্শ আমাকে আমাদের ভ্যানওয়ালা দিয়েছিল তার সাথে দেখা হয়ে গেলো। পরে তার কাছ থেকে তার মোবাইল নাম্বার নিয়ে আমরা সমুদ্র সৈকতে সময় কাটাতে লাগলাম।

IMG_20220601_174641.jpg

সমুদ্র সৈকতে থাকাকালীন সময়ে টুকিটাকি এটা-ওটা খাচ্ছিলাম। প্রথমে খেলাম পেয়ারা মাখা এবং আম মাখা। তারপর আরো বিভিন্ন জিনিস খেলাম সেখান থেকে। সেই সময়ে আমরা পরিকল্পনা করলাম রাতে সামুদ্রিক মাছ ভাজা খাবো। শুনেছি সমুদ্রসৈকতে সন্ধার পরে অনেকগুলি দোকান বসে যারা বিভিন্ন রকম মাছ ভেজে বিক্রি করে। আমরা দাঁড়িয়ে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম আর ছবি তুলছিলাম। এর ভেতরে আমার মেয়ে বায়না ধরল সে ঘোড়ার পিঠে চড়বে। কিন্তু এত ছোট মানুষকে ঘোড়ার পিঠে চড়তে দিতে আমার মোটেই ইচ্ছা করছিলো না। কারণ সেখান থেকে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

IMG_20220601_181852.jpg

এর ভেতরে আমরা একটি সুন্দর ঘোড়ার গাড়ি দেখতে পেলাম। গাড়িটি দেখে আমাদের সকলের পছন্দ হলো। দরদাম করে আমরা ঘোড়ার গাড়িতে উঠে বসলাম। ঘোড়ার গাড়ির এই জার্নি ছিলো খুবই স্বল্প সময়ের জন্য। সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ মিনিট হবে। কিন্তু এই প্রতিটা মুহূর্ত আমরা অত্যন্ত উপভোগ করেছি। একদম সমুদ্র ঘেঁষে ঘোড়ার গাড়ি চলছিলো। সমুদ্র সৈকতের ঠান্ডা বাতাসের ঝাপটায় আমাদের খুবই ভালো লাগছিলো।

IMG_20220601_181847.jpg

দেখতে দেখতেই ঘোড়ার গাড়িতে চড়ার সময় শেষ হয়ে গেলো। যদিও গাড়ি থেকে নামতে ইচ্ছে করছিলোনা। মনে হচ্ছিল আরও কিছুক্ষণ সেই গাড়িতে করে ঘুরি। কিন্তু দেখলাম আরো বেশ কিছু লোক অপেক্ষা করছে এই গাড়িটিতে ঘোরার জন্য। গাড়িটির চাহিদা বেশি হওয়ার কারণ হচ্ছে পুরো সমুদ্র সৈকতে এই ধরনের গাড়ি আছে শুধু একটি। যাইহোক ঘোড়ার গাড়িতে চরা শেষ হলে আমরা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন মার্কেটে গেলাম জিনিসপত্র দেখতে।

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে এই ভ্রমণের আরো একটি পর্ব নিয়ে সে। পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানকুয়াকাটা

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

ভাইয়া আপনার কুয়াকাটা ভ্রমণ তৃতীয় পর্ব পড়ে অনেক বিষয়ে ধারনা পেলাম। কুয়াকাটা গেলে অভিজ্ঞতা গুলো কাজে লাগাতে পারবো। ঝাউ বন টা দেখলে আসলে একটু কষ্ট হয় অনেক গুলো গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

ছবিতে যা দেখা যাচ্ছে তার থেকে অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে সেখানে। কিন্তু সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ খুবই উদাসীন।

 2 years ago 

কুয়াকাটা ভ্রমণের পোস্টগুলো যতই পড়ছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি। আমি কখনো ঘোড়ার গাড়িতে উঠি নি
,তবে উঠার ইচ্ছে আছে।মাছ ভাজা খেতে নিশ্চয়ই অনেক মজা। যাই হোক ভালো ছিলো ভাইয়া।ধন্যবাদ আপনাকে

 2 years ago 

মাছ ভাজা খেয়ে একেবারেই মজা পাইনি। মনে হচ্ছে টাকাটাই পানিতে গিয়েছে।

 2 years ago 

হা হা,কি বলেন ঐখানের মাছ মজা হবে না,কেমনে কি।

 2 years ago 

ভাইয়া কুয়াকাটা যাওয়ার তৃতীয় পর্ব আজ আমাদের মাঝে খুব সুন্দর ভাবে শেয়ার করেছেন। আসলে আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম এখনে চলাফেরার জন্য মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা ও ভ্যান ব্যবহার করা হয়। পরবর্তীতে আমরা গেলেও এই তথ্য জানা থাকবে। আর ঝাউবনের ছবিটি অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। পরবর্তীতে দেখলাম অনেক কিছু খাবার দাবার করেছেন। আসলে ঘোরাফেরা করার সময় টুকিটাকি খেলে অনেক ভালো লাগে। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

 2 years ago 

ঝাউবনের এই দিকটা দেখতে আসলে অনেক সুন্দর। কক্সবাজারের বিচের সাথে আপনি এটার মিল পাবেন না।

 2 years ago 

সমুদ্র সৈকতের বিকেলের দৃশ্য দেখতে আসলেই অনেক বেশি মনমুগ্ধকর হয়। আর আপনার এই সমুদ্র সৈকতের ভ্রমণের ফটোগ্রাফি ও মুহূর্তের কথাগুলো পড়ে আসলে খুবই ভালো লাগলো মনে হচ্ছে আমি এখনই চলে যাই। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এই মুহূর্তগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য

 2 years ago 

সমুদ্র আমাকে সবসময়ই টানে। আমি এই পর্যন্ত বেশ কয়েকবার কক্সবাজার গিয়েছি। কুয়াকাটা গেলাম এবার দিয়ে দুবার। তার পরেও সমুদ্র দর্শনের আকর্ষণ আমার একটুও কমেনি।

রূপক ভাই কুয়াকাটা যাওয়ার সৌভাগ্য এখনো হয়ে ওঠে নাই। তবে ইচ্ছা আছে যাওয়ার। আপনার পোষ্টগুলো দেখে বেশ ভালো একটা অভিজ্ঞতা হল। ঘোড়ার গাড়ি টা সত্যিই অনেক মজার ছিল। সাধারণত আমরা যে ধরনের দেখে থাকি ঘোড়ার গাড়ি তার থেকে কিছুটা আলাদা। কিন্তু শুধুমাত্র একটা ঘোড়ার গাড়ি! এই জিনিসটা সত্যিই বেমানান। সংখ্যাটা আরেকটু বেশি হলে অনেক পর্যটক হয়তো তাদের ইচ্ছেমত সময় কাটাতে পারত ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে। ঘোড়ার গাড়িতে ঘোরাঘুরি করার মজাটাই আলাদা। ভালো লাগলো ভাই পুরো লেখাটা।

 2 years ago 

ঘোড়ার গাড়ি একটা হওয়ার কারণেই সেটাতে চড়তে অনেক বেশি টাকা নিচ্ছে। আরো কয়েকটা হলে এই সুযোগটা পেতো না। সুযোগ পেলে একবার কুয়াকাটা থেকে ঘুরে আসুন। ভাল লাগবে।

Coin Marketplace

STEEM 0.15
TRX 0.12
JST 0.026
BTC 56095.11
ETH 2533.38
USDT 1.00
SBD 2.23