একলা চলো রে- নিঃসঙ্গ ঘোরাঘুরির অভিজ্ঞতা (চতুর্থ পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


গত পোস্টে আপনাদেরকে বলেছি। বিমানবাহিনী জাদুঘরে ঢোকার পর বিমানগুলো দেখে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কিছু বিমানের ভেতরে ঢুকে দেখবো। তবে সেখানে বেশিরভাগ বিমান ছিল ছোট আকৃতির। আর অল্প কিছু ছিল বড় আকৃতির বিমান। সেজন্য প্রথমে সিদ্ধান্ত নিলাম জাদুঘরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একবার ঘুরে দেখবো। তার ভেতরে যে বিমানগুলো পছন্দ হবে সেখান থেকে দু একটা বিমানের ভেতরটা ঘুরে দেখবো। তাই আমি জাদুঘরের শুরু থেকে শেষ মাথা পর্যন্ত প্রতিটি বিমান দেখতে লাগলাম।

IMG_20221123_143100.jpg

IMG_20221123_143546.jpg

একদম যখন শেষ প্রান্তে গেলাম তখন একটি বিমান দেখতে পেলাম যেটি অন্য বিমানগুলোর তুলনায় কিছুটা আধুনিক। সেটি ছিল একটি ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্রাফট। তবে সেই বিমানের কাছে যাওয়ার কোন সুযোগ ছিল না। কারণ সেই বিমানে যাওয়ার রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা ছিলো। যাতে বিমানের কাছে কেউ যেতে না পারে। জাদুঘরে যে বিমানগুলো ছিল তার বেশিরভাগই অনেক পুরনো। আমার সেগুলো দেখে মনে হচ্ছিল সাথে দু একটা অত্যাধুনিক বিমান থাকলে ভালো হতো। তাহলে আমরা অত্যাধুনিক বিমানগুলি সম্বন্ধেও কিছুটা ধারণা নিতে পারতাম।

IMG_20221123_142047.jpg

IMG_20221123_143718.jpg

IMG_20221123_143829.jpg

IMG_20221123_143819.jpg

যাই হোক শেষ মাথা পর্যন্ত যাওয়ার পর যখন ফিরে আসছিলাম। তখন একটি ডাকোটা বিমান দেখতে পেলাম। যেটির ছবি আমি গতকালকে আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। সেই বিমানটি তুলনামূলক বেশ বড় আকারের ছিলো। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম এই বিমানটির ভিতর থেকে ঘুরে দেখার। যে বিমান গুলির ভেতরে মানুষের ঘুরে দেখার সুযোগ আছে। সেই বিমান গুলির পাশে টিকিট কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। আমি যখন সেই বিমানটিতে ওঠার জন্য টিকিট কাটতে যাবো। তার আগে দেখতে পেলাম কয়েকজন মানুষ টিকিট কেটে সেই বিমানের ভেতর ঢুকছে। আমিও তাদের সাথে সাথে টিকিট নিয়ে ঢুকে গেলাম।

IMG_20221123_144400.jpg

IMG_20221123_144429.jpg

তবে বিমানের ভেতর ঢুকে দেখলাম প্রচন্ড গরম। যদিও সেখানে একটি এসি বসানো হয়েছে ভেতরটা ঠান্ডা করার জন্য। আমি যে বিমানটিতে প্রথম উঠেছিলাম সেই বিমানটি ছিল ইন্ডিয়ার সরকারের দেয়া বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে একটি উপহার। এই বিমানটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিল শত্রুপক্ষের উপর বোমা বর্ষণের কাজে। যদিও এটি একটি প্যাসেঞ্জার বিমান ছিলো। কিন্তু এটিকে মডিফাই করে বোমা বর্ষণের উপযোগী করে তৈরি করে নিয়েছিল আমাদের বিমান বাহিনীর সদস্যরা। বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়ার ভেতরের চমৎকার সম্পর্কের উদাহরণ হয়ে আছে এই বিমানটি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ইন্ডিয়ান সরকার আমাদেরকে যে সাহায্য সহযোগিতা করেছিল সেটা আসলে কখনো ভুলবার নয়।

IMG_20221123_141335.jpg

যাই হোক সেই বিমানটিতে ওঠার পর আমি সোজা চলে গেলাম বিমানের ককপিটে। কারণ বিমানের ককপিটের প্রতি আমার আগাগোড়া একটা দুর্বলতা কাজ করে। তবে বিমানের ককপিটে ঢুকে দেখতে পেলাম দুটি বাচ্চা পাইলটের চেয়ারে বসে বিভিন্ন জিনিস নাড়াচাড়া করছে। আমি তাদেরকে নিষেধ করলেও তাদের সেদিকে কোন খেয়াল ছিল না। তবে ককপিটে প্রচন্ড গরম থাকায় আমি সেখানে বেশিক্ষণ থাকতে পারিনি। আর এই বিমানটি বড় হলেও এটার ককপিট ছিল একেবারে ছোট। সেই বিমানের ভেতরটি দেখার পর আমি সেখান থেকে নেমে দেখতে লাগলাম এখন কোন বিমানে ওঠা যায়।

IMG_20221123_141318.jpg

আমার অনেক দিনের শখ ছিল একটি ফাইটার প্লেনের ককপিট দেখার। তাই বেছে বেছে এমন একটি প্লেন বের করলাম। যেটির ককপিটে ওঠার ব্যবস্থা রয়েছে। যদিও বিমানটি মান্ধাতা আমলের। তারপরে আবার এটি ছিলো সিঙ্গেল সিটার ট্রেনিং এয়ারক্রাফট। বিমানটির পাশে বসে থাকা বিমানবাহিনীর সদস্যকে আমি জিজ্ঞেস করলাম এই বিমানের ককপিটের সাথে কি সত্তিকারের বিমানের মিল আছে কিনা? তিনি আমাকে জানালেন প্রায় একই রকম দেখতে ককপিট গুলো। দেখতে আমি তার কাছ থেকে এটা জানার পর টিকেট কেটে সেই ফাইটার প্লেনের ককপিটে উঠে বসলাম।

IMG_20221123_141305.jpg

যদিও সেখানে বসতে আমাকে একটু কষ্ট করতে হয়েছিল। তবে সেই ফাইটার প্লেনের ককপিটে বসে আমার অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল। ফাইটার প্লেনগুলোর পাইলটের জন্য একটা সেফটি অপশন থাকে সেটা হচ্ছে ইজেক্ট আউট করার। পাইলট যখন বিপদে পড়ে তখন সে তার সিট সহ বিমান থেকে বের হয়ে যেতে পারে। তারপর একটি প্যারাসুট অটোমেটিক খুলে যায়। আমি খুজে দেখছিলাম সেই অপশনটি কোথায়। যদিও খোঁজাখুঁজি করে সেটি না পেয়ে। আমি প্লেনের ককপিট থেকে নেমে বিমান বাহিনীর সেই সদস্যকে জিজ্ঞেস করলাম এই প্লেনে সেই সুবিধাটা আছে কিনা? তিনি আমাকে জানালেন হ্যাঁ এই প্লেনে পাইলটের জন্য সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। যাই হোক দুটো প্লেনে ওঠার পর আমার কাছে বেশ ভালই লাগছিল। এরপর আমার ইচ্ছা ছিল একটা হেলিকপ্টার ওঠার। তবে যে হেলিকপ্টারটিতে আমি উঠতে চেয়েছিলাম। সেটার পাশে কোন লোক না দেখতে পেয়ে আর সেই ইচ্ছাটা পূরণ করতে পারিনি। এই বিমান বাহিনী জাদুঘরের একটা পাশে শিশু পার্কের ও ব্যবস্থা রয়েছে। আগামী পর্বে আপনাদের সাথে সেটা নিয়ে কিছু কথা বলব। (চলবে)

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে নতুন একটি পর্ব নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানআগারগাঁও

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 
বিমান জাদুঘরের কথা অনেক শুনেছি। আমার যাওয়ার অনেক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যাওয়া হয়নি এখনও। তাই আপনার পোস্ট পড়লাম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। জাদুঘরের অনেক ধরনের বিমান আছে। এটা ঠিক বলেছেন এই পুরনো বিমানের পাশাপশি কিছু আধুনিক বিমান থাকলে অনেকেই আধুনিক বিমান সম্পর্কে জানতে পারত।বিমানের ককপিট দেখার একটি দারুণ দুর্বলতা আমার মধ্যেও আছে। তবে আমার একবার সৌভাগ্য হয়েছিল ককপিট অ্যাট এ গ্ল্যান্স দেখার। সেই ককপিটের সাথে আপনার ছবির ককপিটের ছবি মিলালে অনেক চেঞ্জ আছে। ওখানে আরো অনেক কিছু ছিল। আমার মনে হয় বিমানের ভিতরসহ আরো অনেক কিছু ডেভেলপ করা উচিৎ। এতে করে মানুষের আগ্রহ বাড়বে এবং অনেক কিছু জানতে পারবে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
 2 years ago 

আপনার ব্লগটি পড়ে আরো অনেক কিছু জানতে পারলাম ভাইয়া।যুদ্ধ চলাকালীন সময় ইন্ডিয়ার সরকার যে বিমান দিয়েছিল তাও এই যাদুঘরে আছে জেনে ভাল লাগলো। দুই দেশের মধ্যে পারস্পারিক সেতু হয়ে আছে বিমানটি ✈। আপনার ব্লগের মাধ্যমে সব জানতে পারলাম। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া। শেয়ার করে দেখার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

 2 years ago 

আপনার অনেকগুলো ব্লক দেখেছি, তবে আজকের ব্লগটি ছিল একেবারেই ব্যতিক্রম। বিমান সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম এবং ভারতের দেওয়া উপহার বাংলাদেশের মধ্যে একটা ভালোবাসা নিদর্শন হিসেবে রয়েছে সেটা যেন আরো বেশি ভালো লাগলো। শিরোনামটা পড়ে একটা গানের কথা মনে পড়ে গেল। যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে। অসাধারণ ছিল আপনার বিমানের ফটোগ্রাফি গুলো। আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য শুভেচ্ছা রইল ভাইয়া।

 2 years ago 

তুমি তাহলে বিমানের ভিতরেও প্রবেশ করেছ। আমি অবশ্য বাইরে থেকে দেখেছি ভেতরে যেতে ইচ্ছে করেনি। বুঝলাম না তোমার সাথে কেন যেন আমার টিইমিং হচ্ছেনা । আশা করি অ্যাভাটার একসাথে দেখতে পরব।

 2 years ago 

অনেক ভাগ্যবান হলেই হয়তো ফাইটার প্লেনের ককপিটে কেউ বসতে পারে।আমার তো কোনদিনও দেখার সুযোগও হয়নি। কেমন হয় সবসময়ই ছবিতেই দেখে গেলাম।নরমাল যে যাত্রীবাহী প্লেন তারই ককপিট দেখতে পেলাম না,আর তো ফাইটার প্লেন। তাও আবার যার একটা ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। আপনি খুবই ভাগ্যবান দাদা যে এরকম প্লেনে উঠেতে পেরেছেন। সে যতই মিউজিয়ামের সংরক্ষিত হোক। আর আমরাও ভাগ্যবান যে আপনার এই শেয়ার করা অভিজ্ঞতাটা পড়তে পেরেছি।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 68156.06
ETH 3517.56
USDT 1.00
SBD 2.81