জোবেদা বেগম এর পথ চলা। ১০% সাইফক্স।
জোবেদা বেগম গাছের ছায়ায় কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়ালো। চৈত্র মাসের প্রচণ্ড রোদে এত দূর হাঁটা খুবই কষ্টকর ব্যাপার। গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে জোবেদা বেগম শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখের ঘামটা মুছে নিলো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলে পানি খাওয়ার ব্যবস্থা আছে কিনা। প্রচন্ড তৃষ্ণা পেয়েছে তার। এই রোদের ভিতর অনেকক্ষণ ধরে হাঁটছে সে। এখনো আরো অনেকটা পথ যেতে হবে।
স্বামী পরিত্যক্তা জোবেদা বেগমের মেয়ে এবং মেয়ের দুই সন্তান নিয়ে সংসার। তার মেয়ে অল্প কয় টাকা বেতন একটি অফিসে ঝাড়ুদার হিসেবে কাজ করে। মাত্র পনেরশো টাকা বেতন পায় সে। এই দুর্মূল্যের বাজারে পনেরশো টাকায় চারজনের সংসার কিছুতেই চালানো সম্ভব না। তার উপর আবার ৫০০ টাকা দিতে হয় ঘর ভাড়া। বাকি এক হাজার টাকায় ৪ জনের এক সপ্তাহের খাবার হওয়াও মুশকিল।
টাকার অভাবে নাতি দুটিকে স্কুলে দিতে পারেনি সে। মেয়ের অল্পকিছু বেতনের টাকা। সাথে জোবেদা বেগম তার পরিচিত লোকজনের কাছ থেকে পাওয়া সাহায্য দিয়ে সংসার চালায়। এখন সে সাহায্যের আশায় তার পুরনো এলাকার দিকে যাচ্ছে। একসময় সেখানেই তাদের বাড়িঘর ছিলো। জীবনের বেশিরভাগ সময় সেখানে কাটিয়েছে সে। রাস্তার পাশে বসে জোবেদা বেগম তাঁর অতীতের কথা চিন্তা করছে।
তার জীবন এমন কষ্টের ছিল না। ছোটবেলা থেকেই প্রাচুর্যের ভেতর মানুষ হয়েছে সে। বাবা ছিল শহরের নামকরা ব্যবসায়ী। এজন্য ছোটবেলা থেকেই সে ভালো খেয়ে ভালো পড়ে অভ্যস্ত। কিন্তু তার বাবার জুয়ার নেশায় আস্তে আস্তে করে তাদের সব শেষ হয়ে যায়। জুয়ার নেশায় পড়ে তার বাবা সম্পত্তি বিক্রি করতে করতে শেষ পর্যন্ত তাদের বসতভিটা ও বিক্রি করে দেয়।
জোবেদা বেগম এর অল্প বয়সে একজনের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হওয়ায় সেই ব্যক্তির সঙ্গে তার সঙ্গে সংসার টেকেনি। তারপর থেকেই তাঁর জীবনের সংগ্রাম শুরু। বিত্তশালী পরিবার থেকে হঠাৎ বস্তিতে এসে পড়ায় তার জীবনে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। যে মানুষ ছোটবেলা থেকে কখনো অভাব দেখেনি সে হঠাৎ করে চারপাশে অভাবের তান্ডব দেখতে পেলো।
তারপর থেকেই তাঁর মানুষের কাছে হাত পেতে চলার শুরু। আর কয়েক দিন পর ঈদ। কিন্তু ঘরে কোনো খাবার নেই। প্রতিবছর ঈদের এই সময়টাতে সে তার পুরনো এলাকায় গিয়ে মানুষের কাছে সাহায্য চায়। কারণ এই সময়ে সবাই যাকাত এবং ফিতরার টাকা দেয়। যার ফলে এই সময়টাতে বেশ কিছু টাকা পাওয়া যায়। যদিও তার প্রথম প্রথম খুব লজ্জা লাগত এই এলাকাতে আসতে।
কারণ একসময় সেখানে সে অনেক ভালো জীবনযাপন করেছে। এলাকার সবচাইতে বনেদি পরিবার ছিলো তার। এখন তাকে সেই এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সাহায্য ভিক্ষা করতে হয়। যদিও দীর্ঘদিন এভাবে চলার ফলে তার লজ্জা এখন অনেকটাই কেটে গিয়েছে।
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আমাদের সমাজে জোবেদা বেগমের মতো অনেক মহিলাই আছে যারা জীবনের তাগিদে মানুষের কাছে ভিক্ষাবৃত্তি করে বেড়ায়। যদিও জোবেদা বেগমের আগের দিনগুলো ভালো ছিল। কিন্তু অভাবের তাড়না যে কত কঠিন সেটা পরিস্থিতিতে পড়লেই বোঝা যায়। আমাদের উচিত জোবেদা বেগমের মতো মানুষের পাশে দাড়াঁনোর। খুবই ভালো লাগলো ভাইয়া 😍
এ ধরনের মানুষ আমাদের আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু আমরা কজনই বা এদের খবর রাখি?
খবর রাখতে হবে ভাইয়া 🙂
বাস্তব বড়ই কঠিন ভাইয়া। আর এই বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়েছে জোবেদা বেগম কে। জোবেদা বেগম সচ্ছল পরিবারের সন্তান হয়েও তার বর্তমান দিনকাল কাটছে এখন বস্তিতে। তার বাবার ভুলের কারণে সন্তান হিসেবে জোবেদা বেগম কে এখন এই বাস্তবতার নির্মম পরিহাসের শিকার হতে হচ্ছে। মানুষের কাছে হাত পেতে কিছু চাওয়া, এটা কতটুকু লজ্জার তা শুধু জোবেদা বেগমই উপলব্ধি করতে পারছে। কিন্তু নিরুপায় হয়ে জোবেদা বেগম আবার সেই মানুষের কাছেই দু'হাত পেতে সাহায্য চাইছে। ভাইয়া আমি এরকম জোবেদার মত দুই একজনকে স্বচক্ষে দেখার অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। পরিশেষে বলতে চাই এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে জোবেদা বেগমকে সামনের দিকে এগিয়ে চলতে হচ্ছে। এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আমাদের আসলে সকলেরই উচিত এই ধরনের লোকদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। তাহলে হয়তো এরা এই ধরনের অমানবিক পরিস্থিতি থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পাবে। ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য।
আমাদের সমাজে এরকম অসংখ্য জাবেদা বেগম আছে। যাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের সংসার ভেঙে যায়। খুব সুন্দর ভাবে সমাজের কিছু চিত্র আমাদের সামনে আপনার গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।