জীবনে হঠাৎ ছন্দপতন(২য় পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


পূর্ববর্তী পর্বের লিংক

মাথা নিচু করে বাড়ি ফিরে এসে শহিদুল তার স্ত্রীকে বলল আজকে রাতটা কোনরকমে পার করো। কালকে দেখি কোন ব্যবস্থা করা যায় কিনা। পরদিন সকালে শহিদুল চাকরি খোঁজা বাদ দিয়ে বিভিন্ন দোকান এবং হোটেলে কাজের চেষ্টা চালালো। কিন্তু শিক্ষিত লোক দেখে হোটেলে তাকে রাখতে চাইলো না। তারা বলল আপনাকে রেখে আমাদের লাভ নেই। কারণ আপনি কয়েকদিন পরে এখান থেকে চাকরি ছেড়ে চলে যাবেন। শহিদুল যতই তাদের বোঝানোর চেষ্টা করুক যে সে তাদের কোন অসুবিধায় ফেলে যাবে না। কিন্তু তারা মানতে একেবারেই নারাজ।

Polish_20220807_192055306.jpg

এভাবে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেলো। শহিদুল নিজেও গতকাল থেকে না খেয়ে আছে। কারণ তার পকেটে একটি টাকাও নেই। কিন্তু নিজের ক্ষুধা তৃষ্ণার কথা ভুলে সে শুধু সন্তান দুটোর কথা চিন্তা করছে। এতোটুকু ছোট বাচ্চা দুটো কাল থেকে প্রায় না খেয়ে আছে। মান-সম্মানের ভয়ে শহীদুলের পক্ষে ভিক্ষা করা সম্ভব না। শহিদুল সারাদিন অনেক চেষ্টা করল একটি কাজ খোজার। কিন্তু সারাদিন খোঁজার পরেও সে কোন কাজ জোগাড় করতে পারলো না।

সন্ধ্যার সময় যখন সে বাড়িতে ফিরে গেল তখন তার স্ত্রী জিজ্ঞেস করল টাকা পয়সা কোন ব্যবস্থা করতে পেরেছ? শহিদুল মাথা নেড়ে জানালো সে এখনো কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি। শহিদুলের বউ চিৎকার চেঁচামেচি করতে লাগলো। বলতে লাগলো বাচ্চা দুটো আর কতক্ষণ না খেয়ে থাকবে? দুপুরে পাশের বাসা থেকে কিছু খাবার চেয়ে এনেছিলাম ওদের খাওয়ানোর জন্য। সেটা খেয়ে আপাতত একটু শান্ত আছে ওরা। কিন্তু রাতে কি খাবে?

এই কথা শুনে শহিদুল মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ বসে থাকলো। পরে সে রান্না ঘরে ঢুকে ফল কাটার একটি ছুরি লুকিয়ে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো। বাইরে বের হওয়ার সময় তার স্ত্রী তাকে জিজ্ঞেস করল কোথায় যাচ্ছো? শহিদুল বলল দেখি কোন টাকার ব্যবস্থা করতে পারি কিনা। শহিদুল মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। অনেক চেষ্টা করেছে সে চাকরি-বাকরি খোঁজার। কিছুই হয়নি কিন্তু তার পক্ষে আর সন্তানদের অনাহারে দেখা সম্ভব না। তাই সে প্রয়োজন হলে ছিনতাই করবে। সেজন্য সে চাকু নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছে।

বাসা থেকে বের হওয়ার পর শহিদুল চিন্তা করতে লাগলো কোথায় গেলে সহজেই ছিনতাই করে যেতে পারে? শহিদুল কখনো জীবন চিন্তাও করেনি তাকে এই ধরনের কাজ করতে হতে পারে। পরে ভেবে চিন্তে সে একটি নির্জন জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল। সেখান দিয়ে মাঝে মাঝে দু একজন করে লোকজন পার হচ্ছিল। একটি লোককে দেখে তার মনে হল এই লোকের কাছে টাকা পয়সা থাকতে পারে। শহিদুল সেই লোকের কাছে গিয়ে চাকু ধরে বলল যা কিছু আছে বের করে দেন। না হলে কিন্তু আপনার সমস্যা হবে।

লোকটি হঠাৎ করে শহিদুলকে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছে। সে দ্রুত পকেট থেকে তার মানিব্যাগটা বের করে দিলো। শহীদুল মানিব্যাগটা নিয়ে সেখান থেকে টাকা পয়সা গুলো রেখে দিয়ে মানিব্যাগটা লোকটাকে ফেরত দিয়ে দিলো। লোকটাকে বলল আপনি এখন সোজা এখান থেকে চলে যান। এই কথা বলে শহিদুল দ্রুত তার বাড়ির দিকে রওনা দিলো। কিন্তু কিছুদূর আসার পরই সে হঠাৎ করে পিছন থেকে ছিনতাইকারী চিৎকার শুনতে পেলো। তার পেছনে অনেকগুলো লোক দৌড়ে আসছে তাকে ধরার জন্য। তারা তাকে ধরে মারধর করে পুলিশের কাছে দিয়ে দিলো।

শহিদুল পুলিশের কাছে ধরা পড়েছে এই খবর তার স্ত্রী জানার পর। তার স্ত্রী পাশের বাসার মহিলার সাথে থানায় এসেছে কি ঘটেছে সেটা জানার জন্য। শহিদুল ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়েছে এটা শুনে তার স্ত্রীর কিছুতে বিশ্বাস করছিল না। তাদের পাশের বাড়ির বাসার মহিলাও কথাটা বিশ্বাস করতে পারছিল না। তারা চিন্তা করতে পারছিল না শহিদুলের মত একজন নিরীহ মানুষ কিভাবে ছিনতাইকারী হতে পারে? শহিদুলের স্ত্রী পুলিশের কাছে অনেক অনুনয় বিনয় করল তাকে ছাড়ার জন্য। কিন্তু পুলিশ তাকে জানালো জনগণ তাকে হাতেনাতে ধরে ছিনতাইয়ের টাকা সহ পুলিশের কাছে তুলে দিয়েছে। এখন তাদের কিছু করার নেই।

শহিদুলের স্ত্রী থানার বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলো। এর ভিতর এক কনস্টেবল এসে তাকে বলল যদি কিছু টাকা পয়সার ব্যবস্থা করতে পারেন। তাহলে আপনার স্বামীকে ছাড়াতে পারবেন। শহিদুলের স্ত্রী তখন পুলিশ কনস্টেবল কে বলল কত টাকা লাগবে? পুলিশ কনস্টেবল তখন বলল এক লাখ টাকা হলে আপনার স্বামীকে ছাড়াতে পারবেন। শহিদুল স্ত্রী তার কাছে কান্নাকাটি করে বলতে লাগলো ভাই বিশ্বাস করেন আমার কাছে একটি টাকাও নেই। আমি এত টাকা কোথায় পাবো? দীর্ঘদিন ধরে ওর চাকরি-বাকরি নেই। দুদিন ধরে বাচ্চারা প্রায় না খেয়ে আছে। সেজন্যই হয়তো এই কাজ করতে গিয়েছিলো। শহিদুলের স্ত্রী পুলিশ কনস্টেবল এর কাছে অনেক অনুরোধ করলো তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু পুলিশ কনস্টেবল তাকে সাফ জানিয়ে দিল টাকা ছাড়া তাকে কিছুতেই ছাড়া যাবে না। শহিদুলের স্ত্রী থানার বারান্দায় বসে কান্না করতে লাগলো। (চলবে)

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

জীবন বড় কঠিন ভাই আমরা এখনো সেরকম পরিস্থিতিতে পড়িনি বলে বুঝতে পারছি না। কিন্তু শহিদুলের ঘটনাটি পড়ে এখন আমাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়েও বেশ চিন্তা হচ্ছে। আমরা বর্তমানে যে কঠিন সময় পার করছি সেটা আরো কতটুকু ভয়াবহ হবে বুঝতে পারছি না। শহিদুলের মত হয়তো অনেকেই জীবিকার তাগিদে ছিনতাই করতে বের হবে।

 2 years ago 

দেশের পরিস্থিতি যেদিকে আগাচ্ছে। তাতে এমন হাজার হাজার শহীদুল এর জন্ম হবে দেশে।

 2 years ago 

সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে শহিদুলকে অন্যায় কাজ করতে বাধ্য হল । যার জন্য তাকে পুলিশ থানায় নিয়ে গেল । কিন্তু পুলিশ জানেনা আসল রহস্যটা আসলে কি ছিল । পুলিশ তাকে ছাড়বে না এক লাখ টাকা না দিলে হয়তো । পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া।

 2 years ago 

আমাদের এই সমাজ শুধু মানুষের অপরাধটা দেখে। সেই অপরাধের পেছনের কারণটা কেউ জানতে চায় না।

 2 years ago 

ক্ষুধার জ্বালা বড় জ্বালা, পেটের দ্বায়ে মানুষ কতকিছুই না করে। শহিদুলের অবস্থা দেখে খুব খারাপ লাগছে তার স্ত্রীর কাছে এত টাকা কি করে থাকবে যে কিনা পেটের দ্বায়ে ছিনতাই করতে বেড়িয়েছিল। টাকার কাছে মানুষ কত অসহায়। পরের গল্পের জন্য অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন টাকার কাছে মানুষ খুবই অসহায়।

 2 years ago 

জীবনের একটি ভুল সিদ্ধান্ত যে আমাদেরকে কতটা অথই সমুদ্রে ফেলতে পারে এই গল্পটি তার একটি উদাহরণ । হয়তো অভাবে পড়ে সে ৫০০ টাকা ছিনতাই করেছিল । এখন তার জন্য দিতে হবে ১ লাখ জরিমানা । তবে এটি আমাদের দেশের আইন প্রয়োগের ভুল কে ও চিহ্নিত করে ।

 2 years ago 

যথার্থই বলেছেন। এই ধরনের ঘটনাকে আমার কাছেও আইনের ভুল প্রয়োগ মনে হয়।

 2 years ago 

অভাব এই জীবনের বড় একটা কষ্টের দিক। অভাব মানুষ পরিস্থিতি সব বদলে দিতে পারে। ভালো লাগলো। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

 2 years ago 

কথায় আছে না অভাবে স্বভাব নষ্ট।

 2 years ago 

হ্যাঁ। এক্সাক্টলি।

 2 years ago 

সত্যি ভাইয়া ক্ষুধার জ্বালা মানুষের সবচাইতে বড় কষ্টের। আর মানুষ টাকার কাছে কত অসহায়। শহিদুলের অবস্থা সত্যি আমার মনকে খারাপ করে দিল। অসাধারণ সুন্দর একটি গল্প উপহার দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

 2 years ago 

গল্পটি যে আপনার কাছে ভালো লেগেছে জেনে অত্যন্ত খুশি হলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.16
JST 0.030
BTC 65970.60
ETH 2685.59
USDT 1.00
SBD 2.86