জীবনে হঠাৎ ছন্দপতন।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


শহিদুল থানা হাজতের এক কোণে বসে জীবনের হিসাব মেলানোর চেষ্টা করছে। পুরনো দিনের কথা তার একে একে মনে এসে ভিড় করছে। কিন্তু কিছুদিন আগেও তার স্বাভাবিক একটা জীবন ছিলো। হাসি, কান্না, দুঃখ কষ্ট সবকিছুই ছিল সেই জীবনে। কিন্তু এখন সে তার জীবনের এমন এক মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে যেখান থেকে আবার আগের জায়গায় ফিরে যাওয়া আর সম্ভব না।

Polish_20220807_192055306.jpg

মাত্র দু'বছর আগেও তার ছোট্ট একটি সুখী সংসার ছিলো। এই সংসারে তার স্ত্রী ছাড়াও ছিল একটি ছেলে এবং মেয়ে। হয়তো সে ধনী ছিলো না। কিন্তু যতটুকু ছিল সেটা নিয়েই সে সন্তুষ্ট ছিলো। মধ্যবিত্তের টানা পোড়েন থাকা সত্ত্বেও জীবনটা ভালই কেটে যাচ্ছিলো। হঠাৎ করেই করোনা নামক দানবের ছোবলে তার জীবনেও বাকি পৃথিবীর মতো ছন্দপতন ঘটে। একদিন তার অফিসে হঠাৎ করে মিটিং ডেকে তাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয় সামনের মাস থেকে তাদের বেতন কম দেয়া হবে। চারপাশের অবস্থা দেখে সবাই সেটা মেনেও নেয়।

কিন্তু কয়েক মাস যাওয়ার পর তাদের প্রতিষ্ঠান লোক ছাটাই শুরু করে। প্রথম ধাপে টিকে গেলেও দ্বিতীয় ধাপে শহিদুল চাকরি হারাই। হঠাৎ করে চাকরি হারিয়ে শহিদুল দিশেহারা হয়ে পড়ে। তবুও সে নিজের মনকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করে যে অল্প কিছুদিনের ভিতর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে তখন হয়তো আবার সে তার চাকরি ফেরত পাবে। কিছু জমানো টাকা ছিল সেটা দিয়ে সংসার চালাতে থাকে সে। কিন্তু দেখতে দেখতে প্রায় ছয় মাস পার হয়ে যায়। শহিদুলের চাকরির আর কোন ব্যবস্থা হয় না।

এদিকে জমানো টাকা পয়সা সব শেষ হয়ে গিয়েছে। বাড়িওয়ালার ভাড়াও বাকি পড়ে গিয়েছে কয়েক মাস। শেষ পর্যন্ত তার স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে বাড়িওয়ালার ভাড়া পরিশোধ করে শহিদুল। চাকরি বাকরি ব্যবস্থা না হওয়ার কারণে শহিদুল পরিবার নিয়ে তুলনামূলক কম ভাড়া যে সমস্ত এলাকায় সেখানে গিয়ে বাসা ভাড়া নেয়। কিন্তু সেখানেও তো তাকে সংসার চালাতে হবে। গ্রামের বাড়িতে যে ফিরে যাবে সে উপায়ও নেই। বছর তিনেক আগে গ্রামে তার ভাগে ভিটা বাদে জমিজমা যতোটুকু ছিল সব বিক্রি করে ঢাকায় একটা প্লটের বুকিং দিয়েছে।

শহিদুলের অনেক স্বপ্ন ছিল ঢাকায় নিজের ছোট্ট একটা বাড়ি হবে। সেজন্য দীর্ঘদিন থেকে কিছু কিছু টাকা সে জমিয়েছিলো। কিন্তু এখন কিভাবে তার দিনকাল চলবেই এই চিন্তায় শহিদুল সারা শহর ভরে উদভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়ায়। বহু জায়গায় চাকরির চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোন জায়গায় শেষ পর্যন্ত চাকরি হয়নি। অনেকে আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু সেটা ওই পর্যন্তই। নতুন জায়গায় বাসা নেয়ার পর দু-তিন মাস টেনে-টুনে জন্য চলতে পেরেছে তার বউয়ের গহনা বিক্রি টাকা দিয়ে। যখন সে টাকাও শেষ হয়ে গেলো তখন তাদের চলার সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে গেলো।

এদিকে এখানেও বাড়ি ভাড়া কিছু বাকি পড়ে গিয়েছে। ঘরে বাজার নেই। শহিদুল পাগলের মত কাজ খুজছিলো। কিন্তু কোন জায়গা থেকে কোন আশার আলো দেখতে পাচ্ছিল না। প্রতিদিনের মত শহিদুল সকাল বেলায় তার সমস্ত কাগজপত্র নিয়ে চাকরি খোঁজার উদ্দেশ্যে বের হচ্ছিলো। তখন তার স্ত্রী তাকে জানালো ঘরে একটা দানা পানিও নেই। বাচ্চারা কাল থেকে প্রায় না খেয়ে আছে। এই কথা শুনে শহিদুল বাসার কাছের একটি দোকানে গেলো কিছু জিনিসপত্র বাকিতে কেনার জন্য। কিন্তু দোকানদার তাকে সাফ জানিয়ে দিল আগের বাকি পরিশোধ না করলে নতুন করে আর তাকে কোন বাকি দেয়া হবে না। ছেলে মেয়ে দুটোর কথা চিন্তা করে শহীদুলের চোখ দিয়ে জল গড়াতে লাগলো। (চলবে)

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

গল্পের কাহিনী শুরু হলো জেলখানা থেকে । পড়তে শুরু করলাম এবং কাহিনীর মাঝে আটকে গেলাম । পরবর্তী ঘটনা গুলো জানার আগ্রহ বোধ করছি ।

 2 years ago 

আশা করছি পরবর্তী ঘটনাগুলো জানতে পেরেছেন।

 2 years ago 

ঢাকায় আসার সময় মানুষ এক বুক স্বপ্ন নিয়ে আসে।
কিন্তু যখন এরকম পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যখন জীবন চলে যায় তখন জীবনটাই বৃথা মনে হয়। এরকম ঘটনাগুলো খুবই কষ্ট দেয় আমাকে।

 2 years ago 

এমন অসংখ্য ঘটনা আমাদের আশেপাশে ঘটে চলেছে। আমরা কজনেরই বা খবর রাখি?

করোনার থাবায় অনেক পরিবার অনেক কষ্টে দিন পার করছে।।
কিন্তু জেল খানায় কিভাবে আসলো, যদিও আন্দাজ করা যাচ্ছে কিছু,,,
গল্পের পরের পার্ট সেয়ার করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

 2 years ago 

আশা করি এতক্ষণে জানতে পেরেছেন কিভাবে সে থানায় আসলো।

 2 years ago 

করোনা মহামারী চলাকালীন সময়ে শহিদুলের মত হাজারো মানুষ নিজের চাকরি হারিয়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে দিন কাটিয়েছে অনেকে। জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে অনেকের। হয়তো সেই সময়টা অনেকটা দুঃস্বপ্নের মত। আপনার এই পোস্ট পড়ে অনেকটা অতীতের মাঝে হারিয়ে গিয়েছিলাম। সেই সময়টাতে সবাই অনেক কষ্ট করেছে। আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো ভাইয়া। ❤️❤️

 2 years ago 

ঠিকই বলেছেন করোনা মহামারী আমাদেরকে খুব কঠিন বাস্তবতা দেখিয়েছে।

 2 years ago 

করোনা আসার পরে অনেকের জীবনেই ছন্দপতন ঘটে। আপনার গল্প পড়ে অনেক ভালো লাগলো আবার শহিদুলের জন্য খারাপও লাগছে পরবর্তী গল্পের জন্য অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

উত্থান পতন নিয়েই তো মানুষের জীবন।

 2 years ago 

করোনা ভাইরাস মহামারির সময় অনেকেরই চাকরি হারিয়ে তাদের জীবন এলোমেলো হয়ে গেছে। আপনার গল্পটি পড়ে শহিদুলের কথাগুলো জানতে তোমার খুবই খারাপ লাগলো। আপনার লেখাগুলো বরাবরই অনেক সুন্দর।

 2 years ago 

ঠিকই বলেছেন মহামারীর সময়ে অসংখ্য পরিবার নিঃস্ব হয়ে গিয়েছে।

 2 years ago 

ভীষণ ভালো লাগলো আপনার আজকের এই লেখাটি পড়ে। পরবর্তী পোস্টের অপেক্ষায় রইলাম।

 2 years ago 

গল্পটি আপনি পড়েছেন জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে।

Coin Marketplace

STEEM 0.30
TRX 0.12
JST 0.031
BTC 57410.43
ETH 2916.25
USDT 1.00
SBD 3.67