কন্যাকে নিয়ে নদীতে গোসলের অভিজ্ঞতা। ১০% সাই-ফক্স।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


আমি আমার শৈশবের কথা মনে করি আর এখনকার বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে খুব আফসোস করি। সোনালী একটা শৈশব কাটিয়েছি আমরা। আর এখনকার বাচ্চারা একটা বন্দী জীবন যাপন করছে। যদিও শহরের বাচ্চাদের তুলনায় গ্রামের বাচ্চাদের জীবন অনেকটা মজার। আমরা শহরে যারা আছি তাদের বাচ্চাদের জীবনটা ইট-পাথরের দেয়ালে বন্দি হয়ে আছে। সবসময় ঘর বন্দী হয়ে থাকতে হয় তাদেরকে। কখনো স্কুলে বা কখনো বাসায়।

IMG_20220518_132050.jpg

বিনোদন বলতে আছে টেলিভিশন, মোবাইল, ট্যাব এ সমস্ত যন্ত্র। কিন্তু এগুলো তো শিশুর মনোজগতের বিকাশের পথে বাধা হিসেবে পরিগণিত হয়। সেজন্য আজকালকার বাচ্চাদের মানসিক বিকাশ পরিপূর্ণ হচ্ছে না বলে আমি মনে করি। অথচ আমরা কি চমৎকার সময় কাটিয়েছি। সমবয়সীদের সাথে দিগ্বিদিক ছুটে বেরিয়েছি। যখন ইচ্ছা পুকুরে বা নদীতে গোসল করেছি, খেলাধূলা করেছি।

কিন্তু এখন একটু খোলা জায়গা খুঁজতে হলে বাসা থেকে বেশ অনেকটা দূর পর্যন্ত যেতে হয়। কারণ যান্ত্রিক এই শহরে মানুষের জন্য একবিন্দুও ফাঁকা জায়গা নেই। যেখানে আপনি দু'দণ্ড বসে নিজের একাকীত্ব উপভোগ করতে পারেন। অন্য আর দশজনের মত আমার বাচ্চাও এভাবেই বেড়ে উঠছে। যদিও আমি এখনো বিভিন্নভাবে নিজের জীবনটা উপভোগ করার চেষ্টা করি। বন্ধুবান্ধবের সাথে ঘোরাফেরা আড্ডা দেয়ার সুযোগ পেলেই এগুলোতে মেতে উঠি।

IMG_20220518_131917.jpg

আর আমার পছন্দের এবং প্রশান্তির একটি জায়গা হচ্ছে নদী। সেটা যে নদীই হোক। আমার বাচ্চা গত কিছুদিন ধরেই বলছে তুমি শুধু একা একা ঘুরতে যাও। আমাকে কখনো নাওনা। আমি তাকে কথা দিয়েছিলাম ঠিক আছে তোমাকে একদিন নদী থেকে ঘুরিয়ে আনবো। আমি যে ভাবে গোসল করি সেদিন তুমিও সেভাবে গোসল করতে পারবে। আমার ইচ্ছা ছিলো তাকে সাঁতার শেখানোর। কারণ এখন যদি তাকে সাঁতার শেখাতে না পারি তাহলে ভবিষ্যতে হয়তো আর সময় হবে না।

IMG_20220518_131941.jpg

এজন্য কয়েকদিন থেকেই পরিবার নিয়ে পদ্মা নদীতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু একেক দিন একেক সমস্যার কারণে আর যাওয়া হয়ে উঠছিল না। শেষ পর্যন্ত কয়েক দিন আগে আমি আমার স্ত্রী এবং মেয়ে তিনজন পদ্মা নদী থেকে ঘুরে এসেছি। প্রথমে পদ্মার পাড়ে পৌঁছানোর পরে আমাদেরকে বেশ খানিকটা রাস্তা হাঁটতে হয়েছে নদীর পানি পর্যন্ত পৌঁছাতে। কারণ নদীর পাড় থেকে বেশ বড় একটা চর পড়েছে। সেই চর পার হলে পানির দেখা পাওয়া যায়।

IMG_20220518_132012.jpg

সেদিন ছিলো বেশ গরম। রোদ্রের তাপে বালি একদম আগুনের মত গরম হয়েছিলো। তার ভিতর দিয়ে হেঁটে আমরা পানির কাছে পৌঁছালাম। সেখানে পৌছে আমরা এক সমস্যার সম্মুখীন হলাম। আমি আর আমার মেয়ে নদীতে গোসল করবো। আমার স্ত্রী যেহেতু পর্দা করে তাই তার পক্ষে এভাবে খোলা জায়গায় গোসল করা সম্ভব নয়। কিন্তু তার দাঁড়ানোর মতো কোন জায়গা দেখতে পাচ্ছিলাম না। রোদের ভিতর সে কতক্ষন আর দাঁড়িয়ে থাকবে? হঠাৎ মাথায় একটা বুদ্ধি এলো।

IMG_20220518_132001.jpg

আমি দেখলাম একদম কাছেই একটি স্পীডবোট ভেড়ানো আছে জেলা পুলিশের। আমি আমার স্ত্রীকে বললাম তুমি এই স্পিডবোটের ভিতরে গিয়ে বসো। আর আমরা গোসল করতে থাকি। আইডিয়াটা তার পছন্দ হলো। স্পিড বোর্ড পর্যন্ত যেতে খুব একটা বেশি পানি নেই। গোড়ালির একটি উপর পর্যন্ত পানি ছিলো সেখানে। যার ভিতর দিয়ে সে গিয়ে স্পিডবোটে উঠলো। সেখানে আমাদের সাথে গোসল করার জন্য যে জামা কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে গিয়েছিলাম সেটাও রাখলাম।

IMG_20220518_132033.jpg

তারপর আমি আর আমার মেয়ে পানিতে নেমে গেলাম। আমার মেয়ে প্রথম প্রথম একটু ভয় পাচ্ছিলো। কারণ সে এর আগে জীবনে কখনই কোন নদী বা পুকুরের নামেনি। কিন্তু অল্পক্ষণের ভেতরে তার ভয় কেটে গেলো। নদীর ভেতরে অনেক বড় চর পড়ে যাওয়ায় বেশ খানিকটা জায়গায় অল্প পানি ছিলো। আমার মেয়ে তার ভেতরে হেঁটে বেড়াতে লাগলো। আমি আর আমার মেয়ে দুজন মহা আনন্দে গোসল করছিলাম। এই প্রচন্ড গরমের ভেতর নদীর শীতল পানির মজা অনুভব করছিলাম দু'জনে। আমার মেয়ে এত খুশি হয়েছিল যে তাকে এত আনন্দিত এর আগে খুব কমই দেখেছি।

IMG_20220518_132054.jpg

পরে তাকে আমি কিছুক্ষণ সাঁতার শেখানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারলাম আজকে সে প্রথম দিন পানির ভেতরে নেমেছে। আজ তাকে সাঁতার শেখানো যাবে না। তাকে আগে পানির সাথে কিছুটা ধাতস্থ হতে দিতে হবে। তারপর সাঁতার শেখানোর চেষ্টা করতে হবে। আমি তার পানির ভয় কাটানোর চেষ্টা করছিলাম। তাকে আমি বারবার পানির নিচে ডুব দিতে বলছিলাম। যদিও আমি জানি কাজটা খুব একটা সহজ নয়। বিশেষ করে তার মতো যে জীবনে আজ প্রথম পানিতে নেমেছে তার পক্ষে।

তারপরও অনেক জোরাজুরি করার ফলে সে দুটি ডুব দিয়েছে। এর ভিতর একবার সে আমার হাতের উপর সাঁতার কাটতে গিয়ে কিছুটা পানি খেয়ে ফেলে। পানি পেটে যাওয়ার ফলে সে বমি করে দেয়। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার পর সে আবার পানির ভেতরে খেলতে শুরু করে। এদিকে আমাদের দুজনের পানির ভেতরে মজা করা দেখে আমার স্ত্রীর আর তর সইছিল না। সেও আমার কাছে বারবার জিজ্ঞেস করছিল যে সে পানিতে নামবে কিনা।

আমি আশেপাশে দেখলাম খুব একটা লোকজন নেই। পরে তাকে বললাম সমস্যা নেই তুমিও নেমে গোসল করে নাও। গোসল শেষ হলে স্পিডবোট এর ভিতরে উঠে বোরখা পড়ে নেবে। তাহলে আর সমস্যা হবে না। যেহেতু এখানে কাপড়-চোপড় পাল্টানোর কোন ব্যবস্থা নেই। একথা শোনার পর সেও খুশিমনে পানিতে নেমে গেলো। তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল সময়টা খুবই উপভোগ করছে। যদিও খোলা জায়গায় গোসল করার কারণে তার ভেতরে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করছিলো। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ গোসল করে তারপর আমরা পানি থেকে উঠে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানপদ্মার পাড়

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

আমি আমার শৈশবের কথা মনে করি আর এখনকার বাচ্চাদের কথা চিন্তা করে খুব আফসোস করি। সোনালী একটা শৈশব কাটিয়েছি আমরা।
আর এখনকার বাচ্চারা একটা বন্দী জীবন যাপন করছে।

ভাইয়া,একদম ঠিক কথা লিখেছেন আমাদের শৈশব জীবন টা ছিল খুবই আনন্দময় যেখানে সেখানে ঘুরে বেড়াতাম নদীতে পুকুরের পানিতে সারা দিন ঝাঁপিয়ে গোসল করতাম আর আনন্দ করতাম। কিন্তু এখনকার শিশুরা সেই আনন্দ গুলো উপভোগ করতে পারে না বলতে গেলে অনেক টা বন্দী জীবনযাপন করে শিশুরা। বিশেষ করে যারা আমাদের মত শহরে থাকে। ভাইয়া, আপনার মেয়েকে নিয়ে নদীতে গোসল করার আনন্দের মুহূর্ত শেয়ার করার জন্য আমি মন থেকে ধন্যবাদ জানাই ধন্যবাদ।ভাইয়া,প্রতিটা বাবা-মায়ের প্রয়োজন যারা শহরে থাকে তারা তাদের শিশুকে বিনোদন দেওয়ার জন্য আপনার মত করে সময় দেওয়া নিজের আদরে সন্তান কে। নদীর পানিতে যেহেতু ভাইয়া, আপনার মেয়ে প্রথম নেমেছে সেহেতু খুবই আনন্দ উপভোগ করেছে আমার মনে হচ্ছে এবং আপনার লেখা পড়ে বুঝতে পেরেছি। ভাইয়া, মামনি কে তাড়াতাড়ি সাঁতার শিখিয় ফেলেন সাঁতার শেখা টা খুবই জরুরী ।ধন্যবাদ ভাইয়া, এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।।

 2 years ago 

আমিও সে চেষ্টাই করছি। দেখি সাঁতার শেখাতে পারি কিনা শেষ পর্যন্ত।

 2 years ago 

বাবু তো বাহানা করবেই, আপনি যখন সময় পান আপনার বন্ধুকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে যান। মাঝে মাঝে নিজের বাচ্চার আবদার পূরণ করবেন। তবে ঠিক বলেছেন বর্তমানে বাচ্চাদের জীবন চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি রয়েছে। আমাদের শৈশবকাল টি কেটেছিল মাঠেঘাটে, নদীনালায়, সেই দিন গুলো অনেক মিস করি ভাই।

এর ভিতর একবার সে আমার হাতের উপর সাঁতার কাটতে গিয়ে কিছুটা পানি খেয়ে ফেলে।

এমন আমি ও অনেক বার খেয়েছি ভাই, তবে একটু সতর্ক থাকা ভালো।

 2 years ago 

আমি তাকে বলেছি একটু পানি না খেলে সাঁতার শেখা যায় না। এ কথা বলে তাকে আপাতত বুঝ দিয়েছি।

 2 years ago 

একেবারেই ঠিক বলেছেন, এই যান্ত্রিকতার ভেতরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ আমাদের একেবারেই হয় না।তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে আমি নিজেও এখনো পুকুরে ডুব দিতে পারিনি, কখনোই পারিনি। কারণ আমার অসম্ভব ভয় লাগে।

 2 years ago 

এইজন্য অভিভাবকদের উচিত বাচ্চাদের ছোট বেলা থেকেই পানির ভয়টা কাটানোর চেষ্টা করা। কারণ একবার আপনি সাঁতার শিখে গেলে আর কখনোই ভুলবেন না।

 2 years ago 

খুবই ভালো একটি কাজ করেছেন বলে আমি মনে করি। আপনি আজকে কন্যাকে নিয়ে নদীতে গোসলের জন্য নিয়ে গিয়েছেন এবং নদীর চমৎকার কিছু ফটোগ্রাফি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। আসলেই এসব জায়গায় যদি মাঝে মাঝে ঘুরতে যাওয়া যায়, তাহলে কিন্তু আসলেই অনেক ভালো লাগে। আর আপনি আপনার বাচ্চাকে কিছুক্ষণ সাঁতার শেখানোর চেষ্টা করেছেন, আসলেই আমাদের সন্তানকে সাঁতার শেখানো উচিত।

 2 years ago 

নদীমাতৃক দেশে আমরা বসবাস করি। সাঁতার শেখা প্রতিটি মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যই আমি চেষ্টা করছি আমার মেয়েকে সাঁতার শেখানোর।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 61042.80
ETH 2605.92
USDT 1.00
SBD 2.65