রহিমের জীবন এবং সর্বনাশা পদ্মা নদী (গল্প--২য় পর্ব)। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


Polish_20211129_105115834.jpg

প্রথম পর্বের -লিংক

নদীভাঙ্গনের এই ভয়াল রূপ দেখে রহিম আর রহিমের মা ধীর পায়ে বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়িতে ঢুকেই রহিমের মা হঠাৎ করে পড়ে যায়। রহিম দৌড়ে মার কাছে আসে। সে চেষ্টা করে তার মাকে টেনে উঠানোর। কিন্তু তার গায়ের জোরে কুলায় না। রহিম তার মাকে জিজ্ঞেস করে মা তোমার কি হয়েছে? তার মা বলে পানি খাবো। রহিম দৌড়ে যায় পানি আনতে। পানি এনে দেখে মা আর নড়াচড়া করছে না।

ছোট্ট রহিম কিছু বুঝতে না পেরে দৌড়ে গিয়ে পাশের বাড়ির লোকজনকে ডেকে নিয়ে আসে। কিছুক্ষণ পর রহিমের বাবা বাড়িতে ফিরে আসে। বাড়িতে ঢুকে এত লোকজনের ভিড় দেখে সে অস্থির হয়ে পড়ে। সে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? পরে রহিম কাঁদতে কাঁদতে তার কাছে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে। ততক্ষণে চরের একমাত্র ঔষধের দোকানের দোকানি ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেছে। তিনি এসে চেক করে বলেন এখনই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু দুর্গম চর থেকে হাসপাতালে নিয়ে সহজ ব্যাপার নয়।

প্রথমে তারা একটি ঘোড়ার গাড়িতে করে রহিমের মাকে ঘাটে নিয়ে যায়। সেখান থেকে নৌকায় করে শহরে পৌঁছায়। শহরে হাসপাতালে যাওয়ার পর সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। রহিম হাউমাউ করে মায়ের লাশ জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। তারপর গ্রামের লোকজন যারা সাথে গিয়েছিল সবাই মিলে রহিমের মার লাশ নিয়ে ফিরে এলো। লাশ নিয়ে চলে ফেরার পর নতুন আলোচনা শুরু হল কোথায় কবর দেয়া যায়। কারণ চরের একমাত্র কবরস্থান কয়েকদিনের ভিতরে নদীগর্ভে চলে যাবে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হলো চরের একদম শেষমাথায় কবর দেয়া হবে। সেই অনুযায়ী কাজ শুরু হলো।

মা মারা যাওয়ায় রহিমদের তিন ভাইবোনের জীবনে নেমে এল চরম অন্ধকার। ওদের বাবা আপাতত রান্নার দায়িত্ব নিল। সে চরম দুর্ভাবনায় পরল তিনটে ছেলে মেয়ে নিয়ে কি করবে। আবার কয়েকদিনের ভিতরে তাদেরকে নতুন মাথাগোঁজার ঠাঁই খুঁজতে হবে সে চিন্তাও করতে হচ্ছিল তাকে।রহিমের ছোট্ট একটা বোন আছে। সে এখন শুধু সারাদিন কান্না করে। রহিম সারাদিন তাকে কোলে করে রাখে। রহিম এটা বোঝে এই অবুঝ শিশুটির সে ছাড়া আর কেউ নেই। কয়েক দিন পরে রহিম এবং তাদের প্রতিবেশীরা যতদূর সম্ভব জিনিসপত্র নিয়ে নতুন আশ্রয়ের খোঁজে রওনা দেয়। শহরে পৌঁছে শেষ পর্যন্ত তাদের আশ্রয় হয় শহররক্ষা বাঁধের উপর।

রহিমদের শুরু হয় কঠোর সংগ্রামের জীবন। মাথার উপরে ছাদ নেই, পেটে খাবার নেই। তার উপরে মমতাময়ী মা তাদেরকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে রহিম শুধু সারাদিন একটু পরপর কান্না করে। ওর ছোট বোনটা সারাদিনই কাঁদতে থাকে। কয়েকদিন পর একটি সাহায্য সংস্থা থেকে ওরা একটা তাবু পায়। সেই তাবুটা পেয়ে রহিম খুবই খুশি হয় ওদের। আপাতত ঠাঁই হয় সেই তাঁবুর ভেতরে। দিনে এক বেলা করে খাবারের ব্যবস্থা ও হয়েছে। প্রতিদিন দুপুরে নদী ভাঙ্গন এলাকার লোকজনের জন্য খিচুড়ি খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে একটি সংস্থা থেকে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই সেই রান্নার আয়োজন এর পাশে ঘুরঘুর করতে থাকে কারণ রহিম। সে জানে এখান থেকে খাবার না নিতে পারলে তাদের সকলকে না খেয়ে থাকতে হবে।

কিছুদিন পর রহিমের বাবা রিক্সা চালানো শুরু করে। তারপর থেকে রহিমদের অন্তত তিন বেলা খাবার ব্যবস্থা হয়। তারপর তারা শহররক্ষা বাঁধ থেকে শহরের একটি বস্তিতে গিয়ে ওঠে। রহিম সেখানে গিয়ে বেশ খুশি হয়। কারণ সেখানে তার বয়সি আরো কয়েকজনের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে। যদিও সেই বস্তির পরিবেশ রহিমের মোটেও পছন্দ হয় না। তার শুধু বারবার মনে পড়ে তাদের চরের জীবনের কথা। সেখানে কি চমৎকার খোলা মাঠ, পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদী। এসব কিছু রহিমকে খুবই টানে। এর ভেতরে রহিমদের জীবনে নতুন সমস্যা নেমে আসে।

একদিন রহিমের বাবা এক মহিলাকে বিয়ে করে ঘরে নিয়ে আসে। সেই মহিলা তাদেন তিন ভাইবোনকে একদমই দেখতে পারেনা। রহিমের বাবার নতুন বউ এসেই তাদেরকে সাথে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করে। রহিমের বড় ভাই একদিন তার খারাপ ব্যবহারে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। রহিমের মন খুবই খারাপ হয়। রহিম তার ছোট বোনটাকে সব সময় আগলে রাখে। একদিন রহিম তার বন্ধুদের সাথে খেলতে যাওয়ার সময় তার ছোট বোনটাকে তার নতুন মায়ের কাছে দিয়ে যায়।

যখন সময় খেলাধুলা করে ফিরে আসে তখন এসেদেখে তার ছোট বোনটা বাড়িতে নেই। তার মায়ের কাছে বোনটার কথা জিজ্ঞেস করে। তার মা তাকে জানায় বাচ্চাটাকে সে বাইরে বসিয়ে রেখে ঘরে এসেছিলো একটা কাজে। ঘর থেকে ফিরে এসে দেখে বাচ্চাটা নেই। রহিম চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। সে সব জায়গায় তন্নতন্ন করে তার ছোট বোনটাকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু ছোট রহিম আর কখনোই তার বোনকে ফিরে পায় না। রহিম বাড়ি ফিরে এসে রাগত স্বরে তার মাকে বলে আপনি আমার বোনকে কোথায় রেখেছেন বলুন? আপনি আমার বোনকে মনে হয় কারো কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন । এ কথা বলার পর তার নতুন মা তাকে প্রচণ্ড মারধোর করে। রাতে যখন রহিমের বাবা ফিরে আসে তখন রহিমের নতুন মা তার কাছে রহিমের নামে নানা রকম অভিযোগ করে এবং বাচ্চা হারিয়ে যাওয়ার মিথ্যা ঘটনা বানিয়ে বলে। রহিমের বাবা তখন রহিমকে আরো একচোট মারধর করে।

সেই রাতেই রহিম বাড়ি ছেড়ে বের হয়ে যায়। পরে চরের একজনের সাথে দেখা হলে রহিম তার সাথে চরে চলে যায়। তারপর থেকে রহিমকে সব সময় দেখা যায় নদীর পাড়ে বসে থাকতে হয়তো। হয়তো সেখানে বসে সে তার মা আর ছোট বোনের ফেরার অপেক্ষা করে। কিন্তু এই অপেক্ষার তো কোনো শেষ নেই। (সমাপ্ত)

@tanuja বৌদি।

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok


Polish_20211012_184119287.jpg

আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি।

Sort:  
 3 years ago 

সত্যিই মানুষ যখন নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে তখন আপনজনের জন্য বারবার তার মন কেঁদে ওঠে।গল্পটির নাম দেখতেই আমার "পদ্মা নদীর মাঝি"উপন্যাসের কথা মনে পড়ে গেল।গল্পটি খুব সুন্দর লিখেছেন ভাইয়া।পড়ে ভালো লাগলো।ধন্যবাদ আপনাকে।

ধন্যবাদ আপনাকে দিদি।

 3 years ago 

গল্পটি পড়ে খুব খারাপ লাগলো তবে কেনো জানিনা খুব খারাপ ও লাগলো।প্রথমে মা চলে গেলো,এরপর ঘর চলে গেলো এরপর ভাই, বোন সকলেই। তার যেনো সব থেকেও নেই হয়ে গেলো।আসলে বাস্তবেও এমনটাই হয় বেশিরভাগ সময়। খুব সুন্দর লিখেছেন ভাইয়া

ধন্যবাদ আপু।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.20
JST 0.034
BTC 90479.14
ETH 3094.57
USDT 1.00
SBD 2.93