দুঃসময়ের বন্ধুই প্রকৃত আপনজন (শেষ পর্ব?)

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


কিন্তু ছোট ভাইয়ের বাসায় কয়েকদিন থাকার পর। যখন তার বউ বুঝতে পারল যে বড় ভাই আর এখান থেকে যাচ্ছে না। তখনই তার সাথে চরম দুর্ব্যবহার শুরু করলো। সেই দুর্ব্যবহার এর মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছল যে তার পক্ষে আর সেখানে থাকা সম্ভব হলো না। তার ছোট ভাই সবকিছু দেখেও চুপ করে থাকতো। যার ফলে সালাউদ্দিন সাহেব বুঝতে পারল যে তার ছোট ভাইও চাচ্ছে না সে এখানে থাকুক। নিরুপায় হয়ে সালাউদ্দিন সাহেব তার ছোটবোনের বাড়িতে গিয়ে উঠলো।

Polish_20221020_193952888.jpg

প্রথম কয়েকদিন ছোট বোন বেশ আদর যত্ন করলো। কিন্তু কিছুদিন পার হওয়ার পর যখন সেও বুঝতে পারল যে তার বড় ভাই আর এখান থেকে যাবে না। তখন তারও ব্যবহারে পরিবর্তন এলো। এর মধ্যে সালাউদ্দিন সাহেব একদিন শুনতে পেলো তার ছোট বোনের জামাই তার বোনকে বলছে। তোমার ভাই আর কতদিন এভাবে এখানে পড়ে থাকবে। তাকে চলে যেতে বলো। এই কথার উত্তরে সালাউদ্দিন সাহেবের ছোট বোন তার জামাইকে বলল। আমার আপন বড় ভাই। আমি তার মুখের উপর কিভাবে তাকে এখান থেকে চলে যেতে বলি? তার থেকে এমন একটা বুদ্ধি বের কর যাতে সে এখান থেকে চলে যায়। এই কথা শুনে সালাউদ্দিন সাহেবের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। সেদিনই সে কাউকে কিছু না বলে তার ব্যাগ নিয়ে ছোট বোনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।

তারপর থেকেই সালাউদ্দিন সাহেব পার্কে পার্কে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পার্কের বেঞ্চে বসে সালাউদ্দিন সাহেব তার জীবনের হিসাব মিলানোর চেষ্টা করছিল। সে চিন্তা করছিল ভুলটা তার কোথায় হয়েছে? যে ভাই বোনকে সে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবেসেছিলো। আজ তারা তাকে দেখতে পারে না। জীবনের শেষ সময়ে এসে সালাউদ্দিন সাহেবের এখন যাওয়ার কোন জায়গা নেই। সহায় সম্বল সব কিছুই ভাইবোনদের পেছনে বিসর্জন দিয়েছে। আজ সেই সমস্ত ভাই-বোনেরা তার কোন খবর নেয় না। এই যে সে তার ছোট বোনের বাড়ি থেকে বের হয়ে এসেছে। তারা একটিবারের জন্য ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করেনি সে কোথায় গিয়েছে বা কেন গিয়েছে?

দুঃখে অভিমানে সালাউদ্দিন সাহেবের চোখ দিয়ে শুধু অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো। পার্কের বেঞ্চে বসে সালাউদ্দিন সাহেব আনমনে এসব কিছু চিন্তা করছিল। হঠাৎ করে একজনের ডাকে তার সম্বিত ফিরলো। সালাউদ্দিন সাহেব তাকিয়ে দেখে তার বয়সী একজন মানুষ তাকে উদ্দেশ্য করে বলছে। তুই সালাউদ্দিন না? সালাউদ্দিন সাহেব প্রথমে তাকে চিনতে পারল না। কিছুক্ষণ পর তার কথা বলার ভঙ্গি দেখে বুঝতে পারল এই লোকটি আর কেউ নয়। তার বাল্যবন্ধু রমিজ। ছোটবেলায় তারা একই গ্রামে থাকতো।দুজনের ভেতর গলায় গলায় খাতির ছিল। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুজন একসাথেই থাকতো।

কিন্তু জীবনের এক পর্যায়ে এসে দুজন দুদিকে চলে যায়। তারপর থেকে আর তাদের ভেতরে কোন যোগাযোগ নেই। এতদিন পর পুরনো বন্ধুকে দেখে সালাউদ্দিন সাহেব তাকে জড়িয়ে ধরল। রমিজ সাহেব ও তার ছোটবেলার বন্ধুকে পেয়ে অনেক খুশি। সালাউদ্দিন সাহেবের পাশে ব্যাগ দেখে রমিজ সাহেব জিজ্ঞেস করল এই ব্যাগ কার ? সালাউদ্দিন সাহেব বলল আমার। রমিজ বলল তুই ব্যাগ নিয়ে পার্কের বেঞ্চে বসে আছিস কেন ? সালাউদ্দিন সাহেব বলল সে অনেক কথা। তোকে অন্য আর একদিন বলব। রমিজ সাহেব সালাউদ্দিন সাহেবের পাশে বসতে বসতে বলল। আমার কোন তাড়া নেই। তুই বল আমি শুনবো। রমিজ সাহেবের কথা বলার ভঙ্গি দেখে সালাউদ্দিন সাহেব হেসে উঠল। বলল তুই আগের মতই আছিস।

তারপর সালাউদ্দিন সাহেব তার বন্ধুর কাছে সবকিছু খুলে বলল। সবকিছু শুনে রমিজ সাহেবের চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। কিছুক্ষণ পর চোখ মুছে রমিজ সাহেব সালাউদ্দিন সাহেবের ব্যাগ হাতে নিয়ে বলল চল আমার সাথে। সালাউদ্দিন সাহেব বললো কোথায় যাব? সে বললো এখন থেকে তুই আমার কাছেই থাকবি। বয়স তো অনেক হল। কথাবার্তা বলার তেমন কোন লোকজন নেই। দুটো ছেলে মেয়ে দুজনই দেশের বাইরে থাকে। এখানে শুধু আমি আর আমার বউ আছি। বিশাল বাড়িতে দুজন মানুষ থাকি। সময় কাটতে চায় না। তুই থাকলে আমার সময়টা ভালোই কাটবে। দুই বন্ধু আবার ছোটবেলার মতো একসাথে ঘুরে ফিরে বেড়াবো।

সালাউদ্দিন সাহেব তার বন্ধুকে বলল তোকে ধন্যবাদ বন্ধু। কিন্তু আমি হুট করে কিভাবে তোর সংসারে গিয়ে হাজির হবো। তখন রমিত সাহেব বলল কোন সমস্যা নেই। আর তোর কথা আমার বউ জানে। তার কাছে অনেক গল্প করেছি তোকে নিয়ে। কোন সমস্যা হবে না। আমি তোর কোন কথাই শুনবো না। তুই এখন থেকে আমার কাছেই থাকবি। গত কয়েকদিন ধরে সালাউদ্দিন সাহেব চোখ দিয়ে ক্রমাগত পানি পড়ছিল। সেটা ছিল দুঃখের অশ্রু। বন্ধুর এমন চমৎকার ব্যবহার দেখে সালাউদ্দিন সাহেবের চোখ দিয়ে পানির পড়ার পরিমাণ বেড়ে গেলো। তবে এটা ছিল আনন্দের অশ্রু। (সমাপ্ত)

ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

আসলে ভাই পৃথিবীটা এমন ই মে নিজের জীবনের সবকিছু বিসর্জন দিয়ে তাদের জীবন চলার পথ সুন্দর করে গড়ে দিল সে আজ তাদের বোঝা হয়ে গেল। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। তবে আমি মনে করি এরকম ভাই বোন থাকার চাইতে না থাকাটাই অনেক ভালো। সালাউদ্দিন সাহেব এই কষ্টের বা এই আঘাতের ফলে তাদের জীবন কি আদৌ সুন্দর হবে? তা আমি জানিনা সেটা সৃষ্টিকর্তাই ভালো বলতে পারবেন। যদিও আপনার গল্পটা আগের পর্বগুলো পড়েনি শেষের অংশে যা বুঝতে পারলাম, পড়তে পড়তে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না। বিশেষ করে ওই সময়টায় যখন বোন তার স্বামীকে বলল ভাইকে বের করার কোন একটা উপায় বের করার জন্য।

 2 years ago 

ভালো সময়ে কখনোই মানুষ চেনা যায় না। এটা একেবারেই নির্মম বাস্তব ভাই। সালাউদ্দিন সাহেব তার খারাপ সময়ে ভাই বোনের ব‍্যবহার দেখে যেটা বুঝেছিলেন। কিন্তু বাল‍্যবন্ধু রমিজ ঠিকই তাকে আশ্রয় দেয় আশ্বাস দেয়। বেশ শিক্ষনীয় ছিল গল্পটা কীভাবে কাছের মানুষ পর এবং দূরের মানুষ আপন হয়ে যায়।।

 2 years ago 

সালাউদ্দিন সাহেবের জীবনের কাহিনীটা শুনে সত্যি ভীষণ খারাপ লাগলো। আসলে বাস্তবিকভাবে বলতে গেলে এখন এইরকম ধরনের ঘটনা অহরহ। যে ভাই বোনের জন্য এত কিছু করলো, সে ভাই বোন আজ তাকে সহ্য করতে পারছে না। এমনকি তাকে তাদের সাথে রাখতে ও রাজি নয়। বোনের বাসা থেকে না বলে চলে আসার পরেও কেউ একবারও খোঁজ-খবর নিল না। কথাগুলো পড়তে পড়তে আমার নিজেরই যেন চোখে জল চলে আসলো। কিন্তু বন্ধু তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এটা দেখে সব থেকে বেশি ভালো লাগলো। একদম ঠিক বলেছেন বিপদের বন্ধুই প্রকৃত বন্ধু।

 2 years ago 

রমিজ সাহেবের মত এমন বন্ধু পাওয়া বেশ ভাগ্যের ব্যাপার।কয়টা বন্ধু এভাবে শেষ বয়সে থাকার জায়গা দিতে পারে।অথচ যাদের জন্য সারা জীবন এমনকি শেষ সম্বল টুকু উজার করে দিয়েছে,তারাই আজকে দূরে ঠেলে দিয়েছে।আসলে সার্থপর মানুষগুলো এমনই হয়।যাই হোক গল্পের শেষের অংশ বেশ ভালো লাগলো।আসলে সৃষ্টিকর্তা কোন না কোন ভাবে মানুষকে পথ দেখায় ধন্যবাদ

 2 years ago 
সালাউদ্দিন এর জীবনের কাহিনী টা শুনে ভীষণ খারাপ লাগলো। বাস্তবিক পক্ষে,এ ধরনের ঘটনা কিন্তুু অহরহ ঘটে চলেছে আমাদের সমাজে।যে ভাই-বোনদের জন্য,সে নিজের সারাটা জীবন উজার করে বিলিয়ে দিল।আর সেই ভাই বোনে তাকে দুর দুর করে দূরে ঠেলে দিল। তাকে তো বাড়ি থেকে বের করে দিলই আবার কখনো তাকে খোঁজ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধটুকু করল না। এই দুর্দশার সময় তার বন্ধু তাকে পাশে নিয়েছিল। প্রকৃত বন্ধু তো সেই, যে দুঃসময়ে পাশে থাকে।
 2 years ago 

সালাউদ্দিন সাহেবের ঘটনাটি পড়ে খুবই খারাপ লেগেছিল প্রথম পর্বটি যখন পড়েছিলাম সত্যিই নিজের কাছে অনেক বেশি খারাপ লাগছিল। আজকের অংশটুকু প্রথম দিকে খুবই খারাপ লেগেছিল বিশেষ করে তার বোন যখন বলেছিল তার জামাইকে একটা বুদ্ধি বের কর যাতে করে তাকে এখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া যায়। যাদের জন্য সে তার সবকিছু হারিয়েছে তারাই তাকে এখন কোথাও ঠাঁই দিচ্ছে না। তবে রমিজ সাহেব এর এ রকম উদার মন দেখে সত্যি খুবই ভালো লাগলো এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সমাজের বুকে এরকম অনেক বন্ধু আছে যারা বিপদে বন্ধুর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়, এরকম বন্ধু খুঁজে পাওয়া আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার। অবশেষে সালাউদ্দিন সাহেব রমিজ সাহেবের কাছে খুবই ভালো থাকবে বলে আশা করি। বন্ধুত্বের চিরবন্ধন অটল থাকুক এভাবেই।

 2 years ago 

বন্ধুত্ব এমনই হওয়া উচিত। প্রকৃত বন্ধু কোনদিন তার বন্ধুকে ফেলতে পারেনা। এটার দৃষ্টান্ত উদাহরণ রমিজ মিয়া। সালাউদ্দিন সাহেব কঠিন ভুল করেছিল তার স্বজনদের জন্য সবকিছু শেষ করা। এ থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি আমাদেরকে ভবিষ্যতে কিভাবে চলতে হবে। অসাধারণ ভাই আপনার গল্প। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।

 2 years ago 

এই পৃথিবীর বাস্তবতা যে কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে সেটা আরেকবার মিলে গেল আপনার লেখাটা পড়ার পর। তবে বিশ্বাস করেন ভাই অবাক হই নি একটুও,, কারণ এরকম ঘটনা আমি নিজেও দেখেছি এবং শুনেছি। আপনজন যদি এভাবে দূরে পাঠিয়ে দেয় তাহলে পুরো পৃথিবীটাই যেন মাথার উপরে ভেঙে পড়ে। তবে কথায় আছে প্রকৃত বন্ধু শত বিপদেও সব সময় পাশে থাকে। রমিজ সাহেব ঠিক তার প্রকৃত বন্ধুত্বের পরিচয়টাই দিয়েছেন। আর সেই দিক থেকে সালাউদ্দিন সাহেব সত্যিই অনেক ভাগ্যবান।

তখন রমিত সাহেব বলল কোন সমস্যা নেই।

ভাই এখানে রমিজ সাহেব হবে সংশোধন করে দিবেন কেমন।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 68501.73
ETH 2459.44
USDT 1.00
SBD 2.63