সমুদ্র দর্শনের উদ্দেশ্যে কুয়াকাটা ভ্রমণ (পঞ্চম পর্ব)। ১০% সাই-ফক্স।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


পূর্ববর্তী পর্বের লিংক


কুয়াকাটা ভ্রমণ এর দ্বিতীয় দিনে আমরা সকাল দশটা সাড়ে দশটার দিকে বের হয়ে সমুদ্রসৈকতে চলে গিয়েছিলাম। তারপর সেখান থেকে গোসল শেষ করে দুইটা আড়াইটার দিকে রুমে ফিরেছিলাম। তারপর খাওয়া দাওয়া করে কিছুক্ষণ হোটেল রুমে কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম। আগের দিনই আমাদের পরিকল্পনা ঠিক করা হয়েছিল যে আজ বিকালে কয়েকটি দর্শনীয় স্পট ঘুরতে যাবো।

IMG_20220602_155549.jpg

IMG_20220602_160143.jpg

IMG_20220602_155142.jpg

আমরা যথা সময়ে সমুদ্রসৈকতে পৌছালাম। সেখানে কিছুক্ষণ ঘুরেফিরে বেড়ানোর পর আমাদের কাঙ্খিত বাহনটি চলে এলো। তারপর আমরা সেটিতে চড়ে বসলাম। শুরু হল আমাদের ঘুরে বেড়ানো। প্রথমে আমরা চিন্তা করেছিলাম সমুদ্র সৈকত ধরেই চলবো। কিন্তু খেয়াল করে দেখলাম আমাদের ভ্যানটি অন্য একটি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। আমি তখন ভ্যানওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি এদিক দিয়ে কেন যাচ্ছেন। উনি তখন বললেন সমুদ্র সৈকতের কাছের রাস্তা খারাপ। তাই ভেতর দিয়ে যাচ্ছি।

IMG_20220602_154925.jpg

IMG_20220602_155337.jpg

IMG_20220602_154948.jpg

IMG_20220602_155347.jpg

তখন আমি তীব্র আপত্তি জানালাম। আমি তাকে বললাম আমরা তো কুয়াকাটা শহর ঘুরে দেখতে চাচ্ছি না। আমরা সমুদ্রের পাড়ে ঘুরতে যাচ্ছি। সেখানে যে সমস্ত দর্শনীয় স্থান আছে সেগুলো দেখতে চাচ্ছি। অতএব আমাদেরকে সমুদ্রের পাড় ধরে নিয়ে যান। আমাদের আপত্তি জন্য পরে সে দিক পরিবর্তন করলো। কিন্তু কিছুদুর পর বুঝতে পারলাম সে কেন অন্য দিকে যেতে চাচ্ছিলো। আমরা যে রাস্তাটা দিয়ে যাচ্ছিলাম সে রাস্তাটার অবস্থা ছিলো খুবই খারাপ। যাইহোক কিছুক্ষণ সে রাস্তায় চলার পরে একটি জায়গা ধরে আমাদের সৈকতের দিকে নেমে গেলাম।

IMG_20220602_161009.jpg

IMG_20220602_154834.jpg

IMG_20220602_154836.jpg

সমুদ্রের পার ধরে যখন চলছিল তখন আমরা অত্যন্ত খুশি হলাম। সমুদ্রের পাড় ধরে এভাবে ছুটে চলার ভেতর এক অন্যরকম মজা আছে। ব্যাটারিচালিত হলেও বেশ জোরে চলছিলাম আমরা। সমুদ্রের পাড় ধরে যাচ্ছিলাম আর সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম। আমাদের আজকের গন্তব্য ছিল লাল কাকড়ার চর, লেবুর চর আর তিন নদীর মোহনা। আমাদের ভ্যানওয়ালা বেশ জোরে চালাচ্ছিলো। আমি তাকে বললাম কিছুটা আস্তে চালাতে।

IMG_20220602_160526.jpg

IMG_20220602_160356.jpg

পথের মধ্যে একটি জায়গা দেখে আমাদের খুবই পছন্দ হলো। আমরা সেখানে ভ্যান থামিয়ে পানিতে পা ভেজাতে লাগলাম। জোয়ারের সময় কিছুটা পানি এসে বিচের একদম শেষ মাথার দিকে আটকে গিয়েছে। সেখান থেকে একটু একটু করে পানি আবার সমুদ্রে ফিরে যাচ্ছে। যার ফলে সুন্দর একটি দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। সেখানে স্বচ্ছ পানির নিচে বালি দেখতে খুবই সুন্দর লাগছিলো। আমরা সেই পানিতে পা ভেজালাম এবং কিছু ছবিও তুললাম।

IMG_20220602_164143.jpg

IMG_20220602_163126.jpg

সেখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে আবার সামনের দিকে রওনা দিলাম। আরো কিছুদূর যাওয়ার পর আমরা পৌঁছালাম লাল কাকড়ার চর। আমি অনেক আগে যখন কুয়াকাটা এসেছিলাম তখন এখানে প্রচুর লাল কাঁকড়া দেখেছিলাম। কিন্তু এবার লাল কাঁকড়া সংখ্যা দেখলাম খুবই কম। অল্প কিছু দেখা যাচ্ছিলো। কিন্তু সেগুলোর ছবি তোলার কোন উপায় ছিল না। কারণ আমরা ছবি তোলার জন্য কাছে যেতেই সবগুলি গর্তের ভেতর চলে যাচ্ছিলো। সে এক অদ্ভুত ব্যাপার। আমাদের ভ্যান চালক অনেক চেষ্টা করল একটি লাল কাঁকড়া কে তার গর্ত থেকে বের করার জন্য। কিন্তু অনেক খোড়াড় পরও লাল কাঁকড়া সন্ধান পাওয়া গেল না। আমরা দেখে খুবই অবাক হলাম যে এত দ্রুত এত গভীরে চলে যেতে পারে লাল কাঁকড়া। লাল কাকড়ার ছবি তুলতে না পেরে কিছুটা হতাশ হয়ে আবার সামনের দিকে এগোতে থাকলাম।

IMG_20220602_163039.jpg

কিছুক্ষণ পর পৌছালাম লেবুর চর নামক স্থানে। সেখানে দেখলাম বেশ কিছু দোকান আছে। যারা পর্যটকদের ডাকাডাকি করছিলো মাছ ভাজা খেতে। এখানকার মাছ ভাজা শুনেছি অনেক মজা হয় খেতে। কিন্তু গত রাতের কথা মনে পড়ে আর খাওয়ার ইচ্ছে হলো না। সেখানে না থেমে আমরা আরও সামনে এগিয়ে চললাম। একটি জায়গায় পৌঁছানোর পর আমাদের ভ্যানওয়ালা বলল এটি হচ্ছে তিন নদীর মোহনা। জায়গাটা দেখে আমার কাছে ভালই লাগলো।

IMG_20220602_161520.jpg

আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখান থেকে সুন্দরবন মোটামুটি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। আমরা সমুদ্র সৈকত থেকে একটু ডানদিকে ভিতরের দিকে ঢুকে ততক্ষণে একটি নদীর পাড়ে দাড়িয়ে আছি। সেই নদীর ওপারে সুন্দরবন দেখতে পাচ্ছিলাম। এত কাছে সুন্দরবন দেখে মনে আফসোস হচ্ছিল। ইস যদি সেখান থেকে একটু ঘুরে আসতে পারতাম। যদিও জানি সেটা আপাতত সম্ভব নয়। তবে ভবিষ্যতে কোনো একসময় সুন্দরবন ঘুরতে যাবো। সেই নিয়ত করে সেখান থেকে আমরা আবার ফিরতি পথ ধরলাম।

IMG_20220602_164910.jpg

IMG_20220602_160656.jpg

সেখান থেকে আমরা কুয়াকাটা পৌঁছে ভ্যানওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম এখান থেকে রাখাইন পল্লী কতদূর? সেখানে এখন যাওয়া যাবে কিনা? সে বললো একটু দূরে আছে কিন্তু যাওয়া যাবে। আমরা ওনাকে বললাম তাহলে চলুন আমরা সেখান থেকে ঘুরে আসি। কিন্তু রাখাইন পল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে পড়লাম বিপদে। সেখানে যাওয়ার রাস্তাটা বিচ্ছিরি রকমের খারাপ। আমরা চলছিলাম তো চলছিলাম কিন্তু রাখাইন পল্লীর দেখা পাচ্ছিলাম না। এদিকে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায় যায়। আবার যে রাস্তাটা ধরে যাচ্ছিলাম সেখানে জনমানুষের সংখ্যা খুবই কম। যারফলে কিছুটা ভয় করছিলো। যেহেতু সাথে পরিবার আছে তাই এই ধরনের নির্জন জায়গায় আসার জন্য আমার বেশ ভয় পেয়েছিলাম।

IMG_20220602_161151.jpg

IMG_20220602_161009.jpg

যাইহোক সন্ধ্যার অল্প কিছুক্ষণ আগে সেখানে পৌছালাম। কিন্তু সেখানে পৌছে খুবই হতাশ হলাম। কয়েকটি দোকান আছে যেখানে আদিবাসীদের তৈরি কিছু জিনিসপত্র দেখতে পেলাম। জামা কাপড় ব্যবহার্য জিনিসপত্র এগুলি। তাছাড়া তেমন কিছু নেই সেখানে দেখার। যেহেতু প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে তাই আমরা সেখানে সময় বেশি নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে রওনা দিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্জন জায়গাটুকু পার হওয়া। যাই হোক পরবর্তীতে কোন রকম সমস্যা ছাড়াই আমরা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের ফিরে আসি।

আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোন নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok
স্থানকুয়াকাটা

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

দাদা, এত সুন্দর মায়াময় পরিবেশ। কি অপরূপ আমাদের পৃথিবী । আপনার আট নম্বর ছবিটি এত সুন্দর হয়েছে, বলে বোঝাবার নয়। এমন শান্ত নিরিবিলি ,শুধু সমুদ্রের ঢেউ এর আওয়াজ। আহা ভেবেই কি যে শান্তি হয়!!! দারুন ঘুরেছেন।ভালো থাকুন দাদা।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.13
JST 0.029
BTC 57886.34
ETH 3104.72
USDT 1.00
SBD 2.54