অপহরণ(গল্প) । ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য।

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


সাদিয়ার মেজাজটা আজ খুবই খারাপ। এই প্রচন্ড রোদের ভেতর তাকে হেঁটে কলেজে যেতে হচ্ছে। সে দরদর করে ঘামছে আর মাঝে মাঝে রুমাল দিয়ে ঘাম মুছছে। বাড়ি থেকে কলেজ বেশ খানিকটা দূরে। প্রায় দুই কিলোমিটার হবে। এতোখানি পথ এই প্রচণ্ড গরমে পাড়ি দেয়া খুবই কষ্টের ব্যাপার। তারপরও নিজেদের অর্থনৈতিক সমস্যার কথা চিন্তা করে সাদিয়া হেঁটেই যাওয়া আসা করে কলেজ থেকে।

42335586455_a3ff4d5a58_b.jpg

ছবির সোর্স- লিংক

কলেজে যাওয়ার রিকশা ভাড়া ৩০ টাকা। আসতে খরচ হবে আবার ৩০ টাকা। প্রতিদিন ৬০ টাকা বাসা থেকে তাকে রিকশা ভাড়া দেবে না সেটা সে জানে। চৈত্রের এই গরমের সাথে নতুন যুক্ত হয়েছে এলাকার বখাটে মাদকসেবী খোকনের উৎপাত। সে এলাকার রাস্তার মোড়ে বসে থাকে। কলেজ যাওয়া আসার সময় তাকে নানাভাবে জ্বালাতন করে। অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে। তাই সাদিয়ার এখন কলেজে যেতে আসতে ভয় করে।

সাদিয়া তার মায়ের কাছে সব বলেছে। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। সাদিয়ার মা সাদিয়াকে সাবধানে চলাফেরা করতে বলেছে। খোকন এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার ছেলে। তার বিরুদ্ধে কোন কিছু বলা বা করার ক্ষমতা সাদিয়ার পরিবারের নেই। তাই সাদিয়ার মুখ বুজে সহ্য করা ছাড়া কিছু করার নেই। এর ভিতরে একদিন ভয়াবহ একটা ব্যাপার ঘটেছে। কলেজ থেকে ফেরার পথে খোকন সাদিয়ার পথ রোধ করে দাঁড়িয়েছে। তারপর সে সাদিয়াকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। সাদিয়া মুখের উপর না করে দিয়ে চলে এসেছে। খোকন পেছন থেকে তাকে হুমকি দিয়ে বলেছে যদি সাদিয়া তার প্রস্তাবে রাজি না হয় তাহলে সে সাদিয়াকে তুলে নিয়ে যাবে। তাই সাদিয়া এখন খুবই ভয়ে ভয়ে কলেজে যাতায়াত করে।

কলেজে পৌঁছতে প্রায় বেলা ১১ টা বেজে গেলো। এগারোটার সময় সাদিয়ার একটা ক্লাস আছে। কলেজে পৌছে ক্লাসে যেতে সাদিয়ার ৫ মিনিট লেট হয়ে গেল। তাই ক্লাসে ঢোকার সময় স্যার দুটো কটু কথা শুনিয়ে দিল তাকে। সাদিয়া ক্লাসে ঢুকে যথারীতি তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী শীরিনের পাশে গিয়ে বসলো। শীরিন তাকে জিজ্ঞেস করল কিরে তোর এত দেরি হল কেন? সাদিয়া তখন বলল এতটা পথ হেঁটে আসতে একটু সময় তো লাগবেই। ক্লাস শেষে সাদিয়া আর শিরিন কলেজের মাঠে গিয়ে বসলো।

শিরিন সাদিয়াকে জিজ্ঞেস করল কিরে তোর সেই রোমিওর কি অবস্থা? সাদিয়া শীরিনের উপর কিছুটা বিরক্ত হলো। বলল উল্টাপাল্টা কথা বলিস না। ওই রকম একটা জঘন্য ধরনের ছেলেকে কিছুতেই রোমিও বলা যায় না। শিরিন জানে সাদিয়া খোকনকে মোটেই দেখতে পারেনা। তাই সাদিয়াকে লাগানোর জন্য সে এই কথা বলেছে। সাদিয়া কাকে পছন্দ করে শিরিন সেটা খুব ভালোভাবেই জানে।

ওদের ক্লাসে একটি ছেলে আছে। ছেলেটির নাম অভি। ফর্সা হ্যাংলা পাতলা করে দেখতে ছেলেটি। চোখে পুরু লেন্সের চশমা পড়ে।ছেলেটির পড়ালেখা ছাড়া অন্য কোন দিকে নজর নেই। ছেলেটি চশমা ছাড়া প্রায় কিছুই দেখতে পায় না। এই জন্য সবাই তাকে কানা বলে সম্মোধন করে। তবে যে যাই বলুক অভি কখনো রাগ করে না। সে সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলে।

সাদিয়া শিরিনকে সেদিনের সেই ভয়াবহ ঘটনার কথা বলল। শিরিন সাদিয়াকে জিজ্ঞেস করল তুই কি বাসায় এটা জানিয়েছিস? সাদিয়া বললো না এখনো বলিনি। শীরিন বলল কাজটা ভালো করিসনি। তোর উচিত ছিল বাসায় অবশ্যই জানানো। যাইহোক সাবধানে চলাফেরা করিস। কারণ খোকনকে দিয়ে কোন বিশ্বাস নেই। ও যে কোনো রকম খারাপ কাজ করে ফেলতে পারে। কিছুক্ষণ দুজনে আড্ডা দিয়ে সাদিয়া বাড়ির পথ ধরল।

এখন মধ্যদুপুর। রাস্তাঘাটে লোকজনের সংখ্যা খুবই কম। মফস্বল শহরগুলোতে এই সময়ে মানুষজন খুব একটা বের হয় না। সাদিয়া দ্রুত হেঁটে বাড়ির দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু ওর মনের ভিতরে ভয় কাজ করছে। যে খোকন আসলেই কি ওর কোন ক্ষতি করবে কিনা। নানা রকম দুশ্চিন্তা সাদিয়ার মনের ভেতর খেলা করছিল। হাঁটতে হাঁটতে সাদিয়া বাড়ির বেশ কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে।

এর ভেতরে হঠাৎ করে পিছন থেকে এসে একজন মানুষ সাদিয়ার মুখ চেপে ধরে ওকে উঁচু করে ফেলল। ঠিক তখনই একটি মাইক্রোবাস এসে ওদের পাশে ব্রেক করলো এবং সাথে সাথেই মাইক্রোবাসের দরজা খুলে গেলো। লোকটি সাদিয়াকে নিয়ে মাইক্রো বাসে উঠে পরল। মাইক্রো বাসে ওঠার পর একজন সাদিয়ার মুখে টেপ লাগিয়ে দিল। আরেকজন সাদিয়ার হাত বাঁধতে লাগলো। পিছন থেকে সাদিয়া পরিচিত একটা গলা শুনতে পেলো। সে বলল ওর মোবাইলটা সুইচ অফ করে ফেল। এই কথা শোনার পর একজন সাদিয়ার থেকে ওর মোবাইলটা নিয়ে বন্ধ করে ফেলল। আরেকজন সাদিয়ার চোখে একটি কাপড় বেঁধে দিলো। সাদিয়া ভয় আর টেনশন এ জ্ঞান হারালো। (চলবে)

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok


Polish_20211012_184119287.jpg

আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি।

Sort:  
 3 years ago 

আপনার গল্পটি পড়ে আমার খুবই ভালো লাগছে। আপনার গল্পটি আসলে আমাদের জন্য শিক্ষানীয়। আসলে আমাদের সমাজে এরকম অনেক বকাটে ছেলে আছে। যারা মেয়েদের স্কুল কলেজে যাবার পথে ডিস্টার্ব করে। তাদের কারনে আজ মেয়েরা কলেজেতে একা যেতে ভয় পাই। এই সকল দৃষ্টিভঙ্গি এবং খারাপ মানুষদের সমাজ সমাজ থেকে সরাতে পারলেই সমাজ শান্তিময় হবে। তাহলে মেয়েরা তাদের অধিকার ফিরে পাবে। তাই এইসব বখাটে ছেলেদের শাসন করতে হবে এবং তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

 3 years ago 

আসলে এই কাহিনীটা গল্পের মতো হলেও কাহিনীর মূল বিষয়টা সেটা আমাদের সমাজের জন্য একেবারেই সত্যি কথা। কারণ আমাদের চারপাশে আজকাল এই কাহিনী গুলো অনেক বেশী হচ্ছে। আপনি খুব বাস্তব একটা কাহিনী আমাদের সামনে গল্পের আকারে তুলে ধরেছেন। খুব ভালো লাগলো ভাইয়া গল্পটি পড়ে।

 3 years ago 

উহ ভাই ভয় ধরিয়ে দিলেন ।এখন একা পাঠাতে ভয় পাই বোনকে ।খুবই সুন্দর ছিলো গল্পোটি ।এমন কিছু বকাটে ছেলেদের জন্য আজ মেয়েরা সেইভে নেই ।তারা স্বাধীন ভাবে কিছু করতে পারে না ।ভাই আশায় থাকলাম পরবর্তী ধাপ পড়ার জন্য ।ধন্যবাদ ভাই ।

 3 years ago 

গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি লাইন পড়লাম।গল্পের পরের অংশটি সম্ভবত আমাদের জানা। এই ধরনের গল্প আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে। কোন গল্প আমরা শুনতে পাই কোন গল্প আমাদের কান পর্যন্ত পৌঁছে না। যাই হোক গল্প লেখায় তুমি যে হাত পাকিয়েছো এটা বেশ বোঝা যাচ্ছে।

 3 years ago 

ধন্যবাদ তোমাকে।

 3 years ago 

আমার কাছে আপনার গল্পটি পাড়ে অনেক ভালো লেগেছে। গল্পটি একদম বাস্তব ধর্মী। আশা করি খুব তারা তারি পরের অংশ পড়তে পারবো।
অনেক ধন্যবাদ এমন বাস্তব ধর্মী গল্প উপহার দেওয়ার জন্য।

 3 years ago 

গল্পটা ভালো লেগেছে, পড়তে ভালো লেগেছে, সফলতা সব সময় আপনার জন্য

 3 years ago 

ভাই আপনার লেখা গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। এই গল্পের সাথে আমাদের বাস্তব সমাজের কিছু চরিত্রের মিল রয়েছে। এমন অনেক সাধারন মেয়ে এই ধরনের প্রভাবশালী বখাটে ছেলেদের জন্য নানা বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই ধরনের কুরুচিসম্পূর্ণ কাজ করা সত্ত্বেও তারা ক্ষমতার জোরে শাস্তির হাত থেকে বেঁচে যাচ্ছে। এটা সত্যি খুবই দুঃখজনক।

 3 years ago 

আপনার বর্ণনাভঙ্গি সত্যিই অসাধারণ এবং মুগ্ধ হয়ে পড়ছিলাম। কিন্তু এমন একটা জায়গায় এসে থামালেন আগামী পর্ব টা পড়া ছাড়া কোনো গতি নেই। পারলে মেনশন দিয়েন ভাই।

 3 years ago 

ভাই এই হচ্ছে দ্বিতীয় পর্ব। ধন্যবাদ আপনাকে ভাই।

https://steemit.com/hive-129948/@rupok/cbzau

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 57344.91
ETH 3100.39
USDT 1.00
SBD 2.42