অপহরণ (গল্প-শেষ পর্ব)। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাক এর জন্য।
প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এলো সাদিয়া এখনো বাড়িতে ফিরছে না দেখে ওর মা খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পরলো। অজানা বিপদের আশঙ্কায় তার বুক কাঁপতে লাগলো। তার শুধু বারবার বখাটে খোকনের কথা মনে পড়ছিল। মেয়ের কোন বিপদ হলো কিনা সেই চিন্তায় সে অস্থির হয়ে উঠলো। সাদিয়ার বাবা বাসায় ফিরে যখন দেখল সাদিয়া এখনো আসেনি তখন সে সাদিয়ার মাকে জিজ্ঞেস করল সাদিয়া কোথায়? সাদিয়ার মা জানালো ও এখনো বাড়িতে ফেরেনি। তখন সাদিয়ার বাবা বলল ওর নাম্বারে ফোন দিয়ে দেখো কোথায় আছে। তখন সাদিয়ার মা বলল ওর মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি।
ছবির সোর্স- লিংক
তখন সাদিয়ার বাবা দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো সাদিয়াকে খুঁজতে। বান্ধবীদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ করলো কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারলো না। সাদিয়ার বান্ধবী শিরিন জানালো ক্লাস শেষে সাদিয়া তো বাড়ির দিকে চলে গিয়েছিল। অনেক রাজ রাত পর্যন্ত খোঁজাখুঁজি করেও সাদিয়ার বাবা সাদিয়াকে কোথাও খুঁজে পেল না। ক্লান্ত শরীরে যখন বাড়ি ফিরে এসেছে। এসে দেখে সাদিয়ার মা কান্নাকাটি করছে। তখন তারা দুজন মিলে থানায় গেল পুলিশের সাহায্য চাইতে।
পুলিশ প্রথমে তাদের কাছে জিজ্ঞেস করল সাদিয়ার কি কারো সাথে সম্পর্ক ছিল কিনা? তারা দু'জনই বলল না। সাদিয়ার কারো সাথে কোন সম্পর্ক ছিল না। তখন পুলিশ অফিসার মুচকি হেসে বলল আপনারা কিভাবে নিশ্চিত হলেন যে আপনার মেয়ের সাথে কারো সম্পর্ক ছিলোনা? তখন তারা বলল কিছুদিন আগে এলাকার এক বখাটে মাদকসেবী সাদিয়াকে হুমকি দিয়েছিল তার ক্ষতি করবে বলে। সেজন্য তারা খুবই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে আছে। তখন পুলিশ সেই বখাটের নাম এবং তার বাবার নাম জিজ্ঞেস করল। যখন তারা খোকনের বাবার নাম পুলিশের কাছে বলল তখন পুলিশের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা গেলো।
পুলিশ অফিসারটি তখন তাদেরকে বলল আপনারা একটু বাইরে বসুন। আমি একটু পর আপনাদের কে ডাকছি। পুলিশ অফিসার তখন খোকনের বাবাকে ফোন করলো। খোকনের বাবার সাথে কথা শেষ হওয়ার পর পুলিশ অফিসারটি সাদিয়ার মা-বাবাকে আবার ভেতরে ডাকলো। সাদিয়ার মা-বাবা পুলিশের সামনে এসে বসার পর হঠাৎ পুলিশ অফিসারের চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল। সে খুবই রাগী ভাবে তাদেরকে বলতে লাগল মেয়ে তার প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গিয়েছে। আর আপনারা এসেছেন একটি সম্ভ্রান্ত লোকের সম্মান নষ্ট করতে। যদি এক্ষুনি থানা থেকে চলে না যান তাহলে আপনাদের নামে মানহানির মামলা করা হবে। সাদিয়ার মা পুলিশের এই হঠাৎ পরিবর্তন হওয়া দেখে অবাক হয়ে গেল। কিন্তু সাদিয়ার বাবা সবই বুঝতে পারল। সে বুঝতে পারল পুলিশের কাছ থেকে তারা কোনরকম সাহায্য পাবে না। তারা ক্ষোভে দুঃখে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে আসলো।
সাদিয়ার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সে নিজেকে একটি ঘরে বন্দি দেখতে পেল। তার হাত বাধা রয়েছে কিন্তু তার মুখ খোলা। ঘরটি পুরো অন্ধকার হয়ে আছে। কোথাও কোনো আলো নেই। সাদিয়া চিৎকার করে ডাকতে লাগল কোথাও কেউ আছেন আমাকে সাহায্য করুন। প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন। কিন্তু অনেকক্ষণ চিৎকার করার পরও কারো কোন সাড়া শব্দ পেল না সাদিয়া। বুঝতে পারল তাকে নির্জন কোন জায়গায় আটকে রাখা হয়েছে। সাদিয়া হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল এবং চরম বিপদের আশঙ্কায় উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়ল। কাঁদতে কাঁদতে সাদিয়া ঘুমিয়ে পরল।
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে সাদিয়ার ঘুম ভেঙে গেলো। কেউ একজন ঘরে ঢুকে লাইট জাললো। লাইট জালানোর পর ঘর আলোকিত হয়ে উঠল। সাদিয়া দেখল খোকন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ঘরে ঢুকেছে। সাদিয়া প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেল। সে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে খোকন এখন তার চরম সর্বনাশ করবে। কিন্তু খোকন তার কাছে এসে বলল আমাকে বিয়ে না করে তোমার কোন উপায় নেই। রাজি থাকলে বল এখনি কাজী ডেকে তোমাকে বিয়ে করবো।
সাদিয়া বললো আমি মরে গেলেও তোর মত কুলাঙ্গার কে বিয়ে করবো না। তখন খোকন বলল আমি এখন চাইলে এক মিনিটেই তোর সমস্ত কিছু ধ্বংস করে দিতে পারি। তোকে দুদিন সময় দিলাম। এই দুই দিনের ভেতর যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজি না হোস। তাহলে আমি তোকে রেপ করব। খোকন বললো এখানে তোকে সাহায্য করার জন্য কেউ আসবে না। তুই যতই চিৎকার চেঁচামেচি করিস কোন লাভ হবে না। কেউ শুনতে পাবে না। সাদিয়া ভয়ে কেঁপে উঠলো। তারপর খোকন আবার বাইরে চলে গেলো। যাওয়ার সময় দরজাটা বাইরে থেকে আবার লাগিয়ে দিয়ে গেলো।
সাদিয়া এখন বুঝতে পারছে না সে কি করবে। তবে এখন তার একটা সুবিধা হয়েছে সে ঘরটা ভালোভাবে দেখতে পাচ্ছে। তবে সাদিয়া এটা বুঝতে পারছে যদি সে এখান থেকে পালাতে না পারে তাহলে তার সামনে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না। সাদিয়ার তার পরিবারের কথা চিন্তা করে কান্নায় ভেঙে পড়ল। আর কখনো তাদের সাথে দেখা হবে কিনা সে কথা চিন্তা করে সে হাউমাউ করে কান্নাকাটি করছিল।
কিছুক্ষণ পরে খোকন আবার এলো কিছু খাবার নিয়ে। সাদিয়া তখন বুদ্ধি করে তাকে বলল হাত বাধা থাকলে কিভাবে খাবো? তখন খোকন সাদিয়ার হাত খুলে দিলো। সাদিয়ার মাথায় তখন একটাই চিন্তা খেলা করছে। যেভাবে হোকে এখান থেকে পালাতে হবে। যেহেতু খোকন এখানে একাই আছে। কোনভাবে যদি তাকে কাবু করা যায়। তাহলে হয়তো সে পালানোর একটা সুযোগ পাবে।
সাদিয়া আনমনে এটা চিন্তা করছিল। তখন খোকন তাকে তাড়া দিয়ে বলল। তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ কর। তোমার খাওয়া শেষ হলে তোমার হাত আবার বেঁধে রেখে যাবো। সাদিয়া তখন বুদ্ধি করে খোকন কে বলল দেখো আমার পক্ষে তোমার সাথে শক্তিতে পারা সম্ভব না। তাই আমার হাত খোলা থাকলেও তো তোমার ভয় পাওয়া উচিত না। এই কথাটায় খোকনের অহমে ঘা লাগলো। তখন খোকন উত্তেজিত ভাবে বলল আমি তোকে মোটেই ভয় পাই না। ঠিক আছে তোর হাত খোলা থাক। খেয়েদেয়ে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়বি। তোর হাতে শুধু কালকের দিনটাই সময় আছে। কালকে যদি আমাকে বিয়ে করতে রাজি না হোস। তাহলে আমি কি বলেছি সেটা তো তোর মনে আছে নিশ্চয়ই?
এই কথা বলে খোকন ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। সাদিয়ার প্রচন্ড খিদা পেয়েছিল। সেই সকালে কিছু নাস্তা করে কলেজে গিয়েছিলো। এখন অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। এর ভেতরে পেটে কিছুই পড়েনি। তাই সে দ্রুত সমস্ত খাবার শেষ করল। খাওয়ার পর সাদিয়ার মনে কিছুটা শক্তি ফিরে পেল। সে দ্রুত চিন্তা করার করতে লাগল যে কি করা যায়। খোকনকে কিভাবে কাবু করা যায়। সে তখন ঘরের চারপাশে তাকিয়ে ভালোভাবে দেখতে লাগলো। কোথাও তেমন কিছু পেল না যা দিয়ে খোকনকে আঘাত করে দুর্বল করা যাবে।
হঠাৎ করে সাদিয়া যে খাটে বসে ছিল খাট থেকে নেমে খাটের নিচে উঁকি দিল। দেখল সেখানে দু-তিনটি লাঠি আছে। তখন সাদিয়া হামাগুড়ি দিয়ে খাটের নীচে গিয়ে একটি লাঠি বের করে আনল। সাদিয়া মনে মনে একটি পরিকল্পনা করে ফেলল। যে আগামীকাল সকালে যখন খোকন আসবে তখন সে দরজার আড়ালে লুকিয়ে থাকবে। খোকন ঘরে ঢোকার সাথে সাথে পিছন থেকে খোকনের মাথায় আঘাত করবে। তারপর সেখান থেকে পালিয়ে যাবে। যদিও সাদিয়া জানে না যে তাকে কোথায় এনে রাখা হয়েছে। তার পরেও সে চিন্তা করে দেখলো এছাড়া তার কাছে আর কোন পথ খোলা নেই। সে উত্তেজনায় কাঁপছিল। বারবার তার মাথায় এই পরিকল্পনাটা ঘুরছিল। সে ঘরের ভেতর কয়েকবার রিহার্সেল ও করে নিলো এই ঘটনার। তারপর যথারীতি একসময় ক্লান্ত দেহে ঘুমিয়ে পড়ল।
সকালে হঠাৎ করে দরজা খোলার শব্দে সাদিয়ার ঘুম ভেঙে গেল। সাদিয়া খাট থেকে লাফ দিয়ে নেমে লাইটের সুইচটা বন্ধ করে দিল। তারপর পরিকল্পনামতো দরজার আড়ালে লাঠি নিয়ে লুকিয়ে থাকলো। খোকন ঘরে ঢুকে দেখে যে সাদিয়া খাটে নেই। যখনই সে পেছনে ঘুরতে যাবে তখনই সাদিয়া জোরে খোকনের মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করলো। খোকন চিৎকার করে মাটিতে পরে গেল। সাদিয়া দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিলো। তারপর সেখান থেকে এক দৌড়ে বাইরে চলে এলো। বাইরে এসে দেখে শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরে একটি নির্জন জায়গায় তাকে বন্দি করে রেখেছিল। পরে সেখান থেকে সে কিছু লোকের সহায়তায় বাড়ি ফিরে আসে। সাদিয়ার মা-বাবা সাদিয়াকে ফিরে পেয়ে বারবার সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করতে থাকে। (সমাপ্ত)
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩
আমি রূপক। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি বাঙালি। আমি বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করতে ভালোবাসি। আমি আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিকেও ভালোবাসি।
ভাইয়া আপনার গল্পটা পড়ে আমি খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম ভেবেছিলাম শেষের অংশটুকু এবং ফলাফলটা অনেক খারাপ হবে সাদিয়ার জন্য, তাই ভেবে কষ্ট পাচ্ছিলাম। তবে এটা জেনে অনেক ভালো লাগলো যে সর্বশেষে সাদিয়া সুস্থভাবে বাড়িতে ফিরতে পেরেছে। সে বাবা-মার কাছে আসতে পেরেছে।বাবা মা অনেক খুশি হয়েছে এটা জেনে আমার খুবই ভাল লাগল। তাই এই অপহরণ গুলো আমাদের সমাজ থেকে দূর করার জন্য সকলের প্রচেষ্টা নিয়ে কাজ করতে হবে। গল্পটি আমার খুবই ভালো লেগেছে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আপনাকে ও অসংখ্য ধন্যবাদ।
আসলে এটা খুবই দুঃখজনক আমার খুবই খারাপ লাগছে। আসলে গল্পের চরিত্র সাদিয়ার সাদিয়ার বাবা সব জায়গায় মেয়েকে খুঁজলো। বান্ধবীর বাসায় খুঁজলো কোথাও পেল না। খালি হাতে একা বাড়িতে যখন ফিরল সত্যিই এটি একটি হৃদয়স্পর্শক মুহূর্ত ছিল।সত্যি কথা বলতে একসময় অপহরণ প্রায় চলত মেয়েরা ঠিকমতো বাইরে চলাচল করতে পারতো না। স্বাধীনতা ছিল না এখনো নাই তাও আগের থেকে অনেক কমে গিয়েছে। যাক এত কিছুর পরেও সাদিয়া নিজের সাহস রেখে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে।সবচেয়ে লাস্টে অনেক কিছু পাড়ি দিয়ে নিজের বাড়িতে পৌঁছাতে পেরেছে। খুবই ভালো একটি গল্প ছিল ভাইয়া।
ভাইয়া অসাধারণ ভালো লাগলো আপনার অপহরণের গল্পটি পড়ে। গল্পটি পড়ে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগলো যে সাদিয়া নিজ প্রচেষ্টায় নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছে। আমাদের সব সময় সতর্ক ও সচেতন ও তার সাথে পথ চলা উচিত এবং সাবধানতার সাথে বন্ধু নির্বাচন করা উচিত। ভাই আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
সাদিয়ার গল্পটা বেশ ভালই লিখেছ কিন্তু এই শেষ তো শেষ নয়। আমাদের সমাজে সাদিয়ার মত মেয়েরা কখনোই নিরাপদ নয়। খোকনের হাত থেকে সাময়িকভাবে মুক্তি পেলেও খোকন আবার ফিরে আসবে
ভাইয়া আপনার লেখা গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। গল্পের শেষটা খুবই সুন্দর ছিল। এই গল্পটি দ্বারা প্রমাণিত হয়, একজন নারী চাইলে পৃথিবীর সমস্ত যুদ্ধ একাই জয় করতে পারে। একজন নারী তার আত্মবিশ্বাস ও বুদ্ধির জোরে নিজের সম্মান নিজেই রক্ষা করতে জানে। আমাদের সমাজে সাদিয়ার মত এমন অনেক নারীই এই ধরনের অপহরণের শিকার হচ্ছে। আমাদের সমাজ থেকে এই ধরনের অপহরণ রুখতে হলে আইন ব্যবস্থা আরো কঠোর করতে হবে এবং প্রত্যেকটি আইন রক্ষাকারীকে সৎ হতে হবে। আমাদের দেশ উন্নত হচ্ছে দেশের মানুষ শিক্ষিত হয়ে উঠছে, সবকিছুই আধুনিকতার ছোঁয়া পাচ্ছে কিন্তু আমাদের এই নিষ্ঠুর সমাজে নারীরা আজও নিরাপদ নয়।
ভাইয়ের গল্পটা খুবই মজার, মনে হচ্ছে এটাকে যদি ফিল্ম সিনোপসিস হিসেবে ব্যবহার করা হতো তাহলে খুব ভালো হতো
চমৎকার হয়েছে গল্পটি এবং আপনার বর্ণনাভঙ্গি অসাধারণ ছিল। আমি কেবল চিন্তা করছিলাম সাদিয়া ঠিকঠাক ফিরে আসুক। শেষ পর্যন্ত লেখক হিসেবে আপনাকে ধন্যবাদ কারন সাদিয়াকে আপনি ঘরে ফিরিয়ে এনেছেন।