হঠাৎ থমকে যাওয়া (শেষ পর্ব)।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


পূর্ববর্তী পর্বের লিংক

তারপর একটি অ্যাম্বুলেন্স ঠিক করে তারা সবাই মিলে রাহিলকে ঢাকা নিয়ে গেল। কিন্তু ঢাকা পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাহিল অনেকটা নিস্তেজ হয়ে গিয়েছিলো। ঢাকায় গিয়ে রাহিলকে একটি হসপিটালে ভর্তি করা হলো। হাসপাতালে ডাক্তাররা রাহিলকে পরীক্ষা করে সরাসরি তাকে আইসিইউতে পাঠিয়ে দিলো। রাহিলের মা চিন্তা করছিল তার সুস্থ স্বাভাবিক ছেলেটার হঠাৎ করে কি এমন হয়ে গেলো ? তিনি ডাক্তারের সাথে কথাবার্তা বললে ডাক্তার তাকে জানালেন আপনার ছেলের দুটো কিডনি প্রায় ড্যামেজ হয়ে গিয়েছে। এই ধরনের পেশেন্টের বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম।

Polish_20221115_004948543.jpg

রাহিলের মা চিন্তা করতে লাগলেন হঠাৎ করে কিভাবে একটা মানুষের দুটো কিডনি ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে? ডাক্তার তাকে বললেন আসলে এটা হঠাৎ করে হয়নি। অনেকদিন থেকে আপনার ছেলের সমস্যা হচ্ছিল। হয়তো সে বিষয়টাতে গুরুত্ব দেয়নি। একমাত্র সন্তানের এই অবস্থা দেখে রাহিলের মা একেবারে ভেঙে পড়লেন। রাতে তিনি আইসিইউ এর সামনে বসে ছিলেন। সাথে রাহিলের বন্ধুরাও ছিলো। হঠাৎ তিনি দেখতে পেলেন দুজন ডাক্তার তরিঘড়ি করে আইসিইউ এর ভিতর ঢুকছেন।

তিনি বাইরে থেকে উকি দিয়ে দেখলেন রাহীলের বেডের কাছে কয়েকজন ডাক্তার এবং নার্স জড়ো হয়ে উদ্বিগ্ন ভাবে তাকিয়ে আছে। উনি ভিতরে যেতে চাইলে সিকিউরিটি গার্ড তাকে বাধা দিলেন। একটু পরে একজন ডাক্তার বাইরে আসলেন। তখন তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে আমার রাহিলের? তখন ডাক্তার বললেন পেশেন্টের অবস্থার আরো খারাপ হয়েছে। তাকে এখনই লাইফ সাপোর্ট দিতে হবে। এজন্য আপনাদের সিদ্ধান্ত জানা দরকার। তখন রাহিলের মা বলল ওর জন্য যেটা ভালো হয় আপনারা সেটা করুন।

তখন ডাক্তার তাকে বললেন লাইফ সাপোর্টে রোগী রাখতে কিন্তু অনেক টাকা খরচ হয়। আপনারা কি সেই খরচ বহন করতে সক্ষম? রাহিলের মা ডাক্তারকে বললেন আপনি টাকা পয়সা নিয়ে চিন্তা করবেন না। যেভাবে হোক আমি টাকা ম্যানেজ করব। আপনারা শুধু দেখুন আমার ছেলের চিকিৎসায় যেন কোন ত্রুটি না হয়। ডাক্তার তাকে আশ্বস্ত করে বলল এটা নিয়ে আপনি চিন্তা করবেন না।

তার কিছুক্ষণ পরেই রাহিলকে আইসিইউ থেকে লাইফ সাপোর্টে দেয়া হলো। রাহিলের মা এতক্ষণ মনে করেছিল রাহিল হয়তো ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবে। কিন্তু যখন তাকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হলো তখন তিনি বুঝতে পারলেন। ছেলেকে বোধহয় তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। কাঁদতে কাঁদতে তার চোখের জল শুকিয়ে গিয়েছে। রাহিলের বন্ধুরা তাকে ক্রমাগত সান্ত্বনা দিচ্ছিলো। কিন্তু মায়ের মন কিছুতেই শান্ত হচ্ছিল না। এভাবে রাতটা কেটে গেলো। পরদিন সকালে ডাক্তাররা রাহীলের মাকে জানালো রাহিলের অবস্থা এখন কিছুটা ভালো মনে হচ্ছে। রাহিলের মা নতুন করে আশায় বুক বাধলেন। তিনি সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্রমাগত তার সন্তানের জন্য দোয়া করতে লাগলেন।

এদিকে রাহিলদের আত্মীয়-স্বজন এর ভেতর অনেকে হসপিটালে এসেছে রাহিলকে দেখতে। সবার সাথে কথা বলে রাহিলের মার কিছুটা ভালো লাগছিলো। সবাই তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছিল এ যাত্রায় হয়তো রাহিল বেঁচে যাবে। কিন্তু হঠাৎ করে দুপুর বেলায় একজন নার্স এসে রাহিলের মাকে ডেকে নিয়ে গেল রাহিলের বেডের কাছে। সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পেলেন কয়েকজন ডাক্তার এবং নার্স রাহিলের বেডের পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। তারা তাকে জানালেন এইমাত্র রাহিল মারা গিয়েছে। এ কথা শুনে রাহিলের মা জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন।

ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

ভাইয়া রাহিলার জন্য আমার বেশ কষ্ট হচ্ছে। ওর মা কিভাবে যে ওর মৃত্যুটা সহ্য করছে। মায়ের সামনে সন্তানের মৃত্যু। আর আপনার আজকের গল্পটি শেষ পর্ব পড়ে আমার নিজেরই একজন আত্মীয় এর কথা মন পড়ে গেছে। যদিও ছেলেটির দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তারপরও সে বর্তমানে একটি কিডনি নিয়ে বেঁচে আছে।

 2 years ago 

ভাইয়া, রাহিলের শেষ পরিণতি জানার জন্য অধীর আগ্রহে আপনার এই পোষ্টের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু যখন পোস্ট পড়ে রাহিলের শেষ পরিণতি মৃত্যু জানতে পারলাম, তখন আর বলার মত কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। বুকের ভিতরে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। রাহিলের মা তো রাহিলের মৃত্যুর কথা শুনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। আমিও এরকম বাস্তব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম আর সেজন্যই হয়তো রাহিলের পরিণতি পড়ে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছি না। শুধু ভাবছি, রাহিলের মা রাহিলকে হারানোর শোক কিভাবে কাটিয়ে উঠবে।

 2 years ago 

ভাইয়া রাহিলের মারা যাওয়ার কাহিনী পড়ে আমার বাবার কথা মনে পড়ে গেল। আমার আব্বুও একই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে। কিভাবে যে কি হয়ে গিয়েছে বুঝতেই পারিনি। চোখের সামনে সন্তানের এমন মৃত্যু দেখলে মায়ের কি অবস্থা হতে পারে বুঝতে পারছি।ভাইয়া আপনার শেষ পর্ব পড়ে অনেক খারাপ লাগছে।

 2 years ago 

কি কারনে কিডনি ড্যামেজ হলো তার কারন কি জানা হলো না।তাও দুইটি কিডনি একসাথে,এজন্যই কি তার খাওয়ার রুচি বেড়ে গিয়েছিলো।আর ধীরে ধীরে মোটা হচ্ছিলো। যাই হোক রাহিলের মত এই রকম অনেক মানুষ আছে,রাহিলের মা এখন কি নিয়ে বাঁচবে 😭।শেষের পর্বটা বেশ কষ্টের ছিলো।ধন্যবাদ

 2 years ago 

ভাই আপনার গল্পটি খুবই বেদনা দায়ক ছিল। আর আপনি এমন একটি গল্প লিখেছেন যা অনেক মানুষের জীবনের সাথে মিলে যায়। তবে এই কষ্টগুলো সহ্য করা খুবই কঠিন। সন্তানের জন্য মায়ের আর্তনাদ একমাত্র আল্লাই জানে। আমাদের মাঝে এত সুন্দর একটি গল্প উপহার দেওয়ার জন্য শুভেচ্ছা রইল।

 2 years ago 

প্রথম পর্বে রাহিল বেশ চঞ্চল এমনকি খুবই সুন্দর প্রকৃতির মানুষ ছিল। যে কিনা আনন্দের সাথে দাওয়াত খেতে যাচ্ছে। এই পর্বে রাহিলের এই পরিণতি দেখে ভীষণ কষ্ট পেলাম। বিশেষ করে দুইটা কিডনি একসাথে ডেমেজ হয়ে যাওয়া বিষয়টি বুঝলাম না। তার উপর আবার লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে, তাও বাঁচাতে পারল না রাহিলকে। রাহিলের মা এখন একা কী নিয়ে বাঁচবে। সত্যি ওর মায়ের জন্য সব থেকে বেশি কষ্ট লাগছে।

 2 years ago 

ভাইয়া, রাহিলের কথা শেষ অব্দি পড়ে খুব খারাপ লাগছে।শেষে এত অল্প বয়সে সে মারা গেল।সত্যি কথা কি বেশি খেয়ে নয় বরং কম খেয়ে মানুষ বাঁচে।তার দুটি কিডনিই ডেমেজ হয়ে গেছে।আহারে, মায়ের জন্য কষ্ট লাগছে।ছেলের জন্য সারাজীবন চোখের জল ফেলবেন,আর কি করবেন।

 2 years ago 

দাদা এই ঘটনাটা কি সত্যিই? নাকি একটা গল্পের মতই লিখলেন? আসলে দ্বিতীয় পর্বের কথা টা মনে পড়ছিল যখন ও খাচ্ছিল আর বন্ধুরা বলছিলো খাস না পেট ফেটে যাবে। ও বলল ওর কিছু হবে না
সেই ছেলেই এই ভাবে মায়ের কোল খালি করে চলে গেলো।হায় রে নিয়তি!

 2 years ago 
যদিও আগের পর্ব পড়া হয়নি।তবে শেষ পর্বটা পড়ে রাহিলের মা জন্য কষ্ট লাগলো। তিনি এখন একা হয়ে গেলেন।সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে,মা-বাবার আগে সন্তান দুনিয়া থেকে চলে গেলে মা-বাবার কষ্ট সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়ে থাকে।কিন্তু লাইফ সার্পোট নেয়ার পর ডাক্তার যখন বলেছি কিছুটা ভালো।ভেবেছিলাম সুস্থ হয়ে যাবে।কিন্তু দুপুর বেলা হঠাৎ রাহিলের মাকে ডেকে নিয়ে মৃত্যুর খবর শুনানো হয়।তখন তিনি ভেঙে পরেন।আসলে শেষের দৃশ্যটা খুবই কষ্টকর ছিল।সর্বোপরি,আল্লাহ তায়ালা যেন রাহিলের মাকে ধৈর্য্য ধারন করার শক্তি দান করেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.033
BTC 64041.25
ETH 2762.17
USDT 1.00
SBD 2.66